somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা (২৫)

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রীষ্টানরা। মসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রীষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা যার মূলে থাকে খ্রষ্টীয় বৃটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন বৃটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। "Confession of British Spy and British enmity against Islam" গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ।

২৫তম পর্ব

সচিব আরো বললেন, ওহাবী নজদীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করবে। আমাদের এজেন্টের সাথে তার ইস্পাহানে খোলামেলা কথা হয়েছে এবং সে শর্তসাপেক্ষে আমাদের ইচ্ছাপূরণ করতে রাজি হয়েছে।

সে যে শর্তগুলো আরোপ করেছে তা এরকমঃ তার মত, পথ ব্যাক্ত করার পর যখন সে নিশ্চিতভাবে তার দেশ এবং আলিম উলামা দ্বারা আক্রমণের সম্মুখীন হবে তখন সেই সম্ভাব্য বাঁধা এবং আক্রমণ থেকে রক্ষা করার প্রয়োজনে তাকে যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ ও অস্ত্রবল দিয়ে সাহায্য করতে হবে।

ছোট আকারে হলেও তার আদর্শ অনুযায়ী তার দেশে তার জন্যে একটি শাসন ব্যবস্থা চালু করে দিতে হবে। মন্ত্রণালয় তার এই শর্ত মেনে নেয়।
যখন আমি (হেমপার) এ সংবাদ পেলাম তখন খুশীতে মনে হচ্ছিল আমি আকাশে উড়ছি। আমি সচিবকে প্রশ্ন করলাম আমার এ ব্যাপারে কি করা উচিত। তার উত্তর ছিল “ওহাবী নজদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্যে মন্ত্রণালয় থেকে একটা স্কীম তৈরী করা হয়েছে। স্কীমটা হলোঃ
১. ওহাবী নজদীকে বলতে হবে তার মতাদর্শে বিশ্বাসী ছাড়া সবাই কাফির। ফলে এ সকল কাফিরদের হত্যা করা, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, সম্ভ্রমহানি করা, লোকদের ক্রীতদাস বানিয়ে মেয়েদের রক্ষিতা হিসেবে বাজারে ক্রয় বিক্রয় করা হালাল।

২. তাকে আরও বলতে হবে, কা’বা ঘর মাটির তৈরী এবং মূর্তির অনুরুপ (নাঊযুবিল্লাহ) ফলে তা ধ্বংস করে ফেলতে হবে। হজ্জ পালনের মত ইবাদত বন্দেগী নষ্ট করার লক্ষ্যে বিভিন্ন গোত্রের হাজীদের উপর চড়াও হয়ে তাদের মালামাল লুণ্ঠণ এবং কতল করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

৩. খলীফাকে মানার ব্যাপারে মুসলমানদেরকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। খলীফার বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য তাদেরকে প্ররোচিত করতে হবে। এ ব্যাপারে তাকে সৈন্যদল প্রস্তুত করতে হবে। হিজাজের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এবং তাদের সম্মানে আঘাত হানতে তাকে সকল সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

৪. তাকে এই বলে লোকদের প্ররোচিত করতে হবে যে, মাযার, সমাধি এবং মুসলিম দেশগুলোতে অবস্থিত সব পবিত্র স্থানসমূহ হচ্ছে পৌত্তলিকতার নিদর্শন। ফলে, এসব ধ্বংস করে ফেলতে হবে। ওহাবী নজদীকে আরও ব্যবস্থা নিতে হবে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীন এবং সকল মাযহাবের ইমামগণের শানের খিলাফ কিছু করা বা বলার ব্যাপারে।

৫. সকল মুসলিম দেশগুলোতে অরাজকতা, অত্যাচার এবং বিপ্লব-বিদ্রোহকে উসকে দেয়ার জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।

৬. তাকে (ওহাবী নজদী) কুরআন মজীদে নতুন সংযোজন এবং বিয়োজনের চেষ্টা করতে হবে। যেমনটি হাদীছ শরীফ-এর ক্ষেত্রে করা হয়েছে।

এই ছয়টি স্কীম ব্যাখ্যা করে সচিব আরও বলেন, তবে এই কর্মসূচীর মাধ্যমে কোন আতঙ্ক সৃষ্টি করা যাবে না। কারণ আমাদের কর্তব্য হচ্ছে ইসলামকে ধ্বংস করে দেয়ার বীজ বপন করা। পরবর্তী প্রজন্ম এসে বাকী কাজ শেষ করবে। বৃটিশ সরকার ধাপে ধাপে এগুতে চায় এবং ধৈর্য্য ধারণের একটা অভ্যাস গড়ে তুলতে চায়।

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো একটা জাগরণ এনেছিলেন। ওহাবী নজদীও একটা বিপ্লব সৃষ্টি করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
কয়েকদিন পর আমি (হেমপার) মন্ত্রী ও সচিবের নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে এবং আমার পরিজনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বসরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। যখন বিদায় নিচ্ছিলাম, আমার ছেলে বললো, বাবা তাড়াতাড়ি চলে এসো। আমার চোখ ভিজে গিয়েছিল। অনেক কষ্টের পর রাতের বেলায় বসরায় পৌছি। যখন আবু রিদার বাড়ীতে পৌছলাম তখন সে ঘুমে আচ্ছন্ন। ঘুম থেকে জেগে আমাকে দেখে খুব খুশী হলো। সে আমাকে আতিথেয়তা প্রদর্শন করলো। তার ওখানেই রাত অতিবাহিত করি। পরদিন সকালে সে বললো, ওহাবী নজদী আমার এখানে এসেছিল। সে তোমাকে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠি খুলে পড়লাম।

ওহাবী নজদী লিখেছে, সে তার দেশ নজদে চলে যাচ্ছে। সেখানে তার ঠিকানাও উল্লেখ করেছে। আমি তখনি তার দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
অত্যন্ত ক্লান্তিকর ভ্রমণ শেষে আমি তার ওখানে পৌঁছলাম। আমি তাকে বাড়ীতেই পেলাম। তার ওজন অনেক কমে গিয়েছিল। অবশ্য সে ব্যাপারে তাকে কিছু বলিনি। পরে জানলাম সে বিয়ে করেছে।
আমরা নিজেরা ঠিক করে নিলাম যে, সে মানুষের কাছে আমাকে তার ভৃত্য হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিবে এবং আমাকে তার কাজে কোথাও পাঠিয়েছিল সেখান থেকে ফিরেছি। ওহাবী নজদী সেভাবেই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল।

আমি দু’বছর ওহাবী নজদীর সঙ্গে অবস্থান করেছিলাম। তার দাওয়াত প্রচারের বিষয়ে আমরা একটা কর্মসূচী নেই। শেষ পর্যন্ত হিজরী ১১৪৩ মোতাবেক ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে আমি তাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হই। ওহাবী নজদী তার চারপাশে কিছু সমর্থক যোগাড় করে তার ঘনিষ্ট লোকজনদের মধ্যে দাওয়াত প্রচার করতে লাগলো। দিনে দিনে তার কার্যক্রম বাড়তে থাকলো। আমি তার চারপার্শে¦ দেহরক্ষীর ব্যবস্থা করলাম শত্রুর আক্রমণ মোকাবেলা করার জন্যে। তারা যা চাইতো সে রকম অর্থ এবং সম্পদ দিতে থাকলাম। যখনই শত্রুরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতো আমি তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতাম। তার আহ্বান যত বাড়তে থাকে তত তার শত্রুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। মাঝে মাঝে সে তার এই দাওয়াতের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে চাইতো।

বিশেষত তার উপর ঘন ঘন আক্রমণ হতে দেখে ভীষণ হতাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু আমি তাকে ছেড়ে কখনো যাইনি বরং তাকে উৎসাহিত করতে থাকি। আমি প্রায়শঃ বলতাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার চেয়ে অনেক বেশী কষ্ট সহ্য করেছেন। তুমি জেনে রাখ সে পথেই রয়েছে সম্মান ও প্রতিপত্তি। যে কোন বিপ্লবীদের মত তোমাকেও কিছু দুর্যোগ পোহাতে হবে।

আমি জানতাম তার উপর যেকোন মুহূর্তে শত্রুর আক্রমণ হতে পারে তাই শত্রুপক্ষের ভিতর গোয়েন্দা নিয়োগ করেছিলাম। যখন শত্রু তার ক্ষতি করতে চাইতো, গোয়েন্দারা আমাকে জানিয়ে দিত এবং আমি তা প্রতিহত করতাম। একবার জানলাম, শত্রুরা ওহাবী নজদীকে মেরে ফেলার চেষ্টায় আছে। আমি তখনি তাদের সকল প্রচেষ্টা নষ্ট করে দেয়ার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেই। যখন ওহাবী নজদীর চারপাশের লোক তাকে হত্যার প্রচেষ্টার খবর জেনে যায় তখন তারাও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের ঘৃণা ও নিন্দা করতে থাকে। এতে করে হত্যা লিপ্সু ব্যক্তিরা নিজেরা নিজেদের ফাঁদে আটকে যায়।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

এথান থেকে পরুন পর্ব- ১
এথান থেকে পরুন পর্ব- ২
এথান থেকে পরুন পর্ব- ৩
এথান থেকে পরুন পর্ব- ৪
এথান থেকে পরুন পর্ব- ৫
এথান থেকে পরুন পর্ব- ৬
এথান থেকে পরুন পর্ব- ৭
এথান থেকে পরুন পর্ব- ৮
এথান থেকে পরুন পর্ব- ৯
এথান থেকে পরুন পর্ব- ১০
এথান থেকে পরুন পর্ব- ১১
এথান থেকে পরুন পর্ব- ১২
এথান থেকে পরুন পর্ব- ১৩
এথান থেকে পরুন পর্ব- ১৪
এথান থেকে পরুন পর্ব- ১৫
এথান থেকে পরুন পর্ব- ১৬
এথান থেকে পরুন পর্ব- ১৭
এথান থেকে পরুন পর্ব- ১৮
এথান থেকে পরুন পর্ব- ১৯
এথান থেকে পরুন পর্ব- ২০
এথান থেকে পরুন পর্ব- ২১
এথান থেকে পরুন পর্ব- ২২
এথান থেকে পরুন পর্ব- ২৩
এথান থেকে পরুন পর্ব- ২৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×