ভারত বিরোধিতার নামে ধর্ম ব্যবসার রাজনীতি করা বিএনপি-জামাতি জোট ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ১৯৯২ সালের এপ্রিল মাস থেকে বাংলাদেশে ডিশ এ্যান্টেনার চালু করে। এর মাধ্যমে দেশের প্রতিটা এলাকায় সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের ঘরে ভারতীয় ও হলিউডের অপসংস্কৃতি প্রবেশ করে। পাকিস্তানী চ্যানেলেও বাদ ছিলো না।
এসব চ্যানেলের প্রায় প্রতিটা অনুষ্ঠানই ছিলো অর্থহীন, ক্ষতিকর ও নৈতিকতা ধ্বংসকারী এবং চলচ্চিত্রের অশ্লীল নাচ-গান বিষয়ক। এছাড়া টিভি ধারাবাহিকগুলির প্রায় প্রতিটার বিষয়ই ছিলো পরকিয়া ।
সুস্থ বা শিক্ষামূলক প্রায় কোনোকিছুই সেখানে ছিলো না।এরপর থেকেই দেশের সংস্কৃতি জগত এবং মানুষের আচরণে বিপদজনক পরিবর্তন দেখা দিতে শুরু করে। দেশে শুরু হয় মডেলিং, ফ্যাশন শো, সুন্দরী প্রতিযোগিতা-ইত্যাদি।
তবে সাথে সাথেই নারী নির্যাতন বর্তমানের মতো ভয়ংকর পর্যায়ে পৌছায়নি। প্রথমে শুরু হয় কম বয়সী ছেলে-মেয়েদের অবাধ সম্পর্ক।
আগে ছেলে-মেয়ে সাধারণত বিয়ের উদ্দেশ্যে প্রেম করতো, যাদের বলা হতো প্রেমিক-প্রেমিকা। কিন্ত ২০০৫ এর মধ্যেই বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড সংস্কৃতি পুরোপুরি চালু হলো, যার আসল উদ্দেশ্য শুধু শারীরিক সম্পর্ক। প্রেমের কোনো পবিত্রতা এর মধ্যে ছিলো না।
এদের প্রায় কেইউ বিয়ে করতো না।। এসময় লম্পট বয়ফ্রেন্ডদের ফাদে পড়ে বা স্বেচ্ছায় ৯-১০ এ পড়া মেয়েদেরও অনেককিছু হারাতে দেখেছি। গ্রামেও এই অসভ্য সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়লো। মনে হলো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার আসল উদ্দেশ্যই অবৈধ সম্পর্কের জন্য একটা বা একাধিক সঙ্গী জোগাড় করা।
সেইসাথে বিবাহিতরাও ভারতীয় হিন্দি ধারাবাহিকগুলির অনুকরণে পরকিয়া শুরু করলো। ২০১০-১২ তে পরকিয়ার কারণে মা-সহ সন্তানদের আত্মহত্যা ও মায়ের নিজের সন্তানকে হত্যা করার মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছিলো, যেগুলির সাথে মদ বা মাদকের কোনো সম্পর্ক ছিলো না।
এক ব্লগার তার লেখায় বলেছেন,যে সমস্ত পশ্চিমা দেশে বহু সংখক ইমিগ্রান্ট বাস করে ওই সমস্ত দেশের ধর্ষণের হার বেশি, তারা যদি ওই সমস্ত মাইগ্রেন্ডদের বের করে দেয়, তখন দেখা যাবে ধর্ষণের মাত্রা অনেক কমে গেছে।- তার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, পশ্চিমে বাংলাদেশের মতো দলবদ্ধভাবে অপহরণ করে বা বনে-জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা খুব কম হলেও সেখানে অফিস,সিড়ি. লিফট বা-যেকোনো জায়গায় সুযোগ পেলেই মেয়েদের ধর্ষণ করাই সংস্কৃতি।
ট্রাম্প এক লেখিকাকে পোষাক পাল্টানোর কক্ষে ধর্ষণ করেছে।
পোষাক এজন্য দায়ী না হোক, কিন্ত কারিনা, মালাইকা,ক্যাটরিনা,জিসম, মার্ডার,ফেভিকল, শীলা কি জওয়ানি, দিপিকা, সানির অর্ধ-নগ্ন আইটেম নাচ-গান ভারতে এই অপরাধ বাড়ানোর জন্য বিরাট ভূমিকা রেখেছে।
এসব দেখে দূর্বল ধরণের লোকদের নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিনএবং এগুলি নারীকে ভোগ্যবস্ত বলেই প্রচার করছে।
গানের কথা শোনেন।
Mai to tanduri-murgi hu yaar
একটা নষ্ট নারী নিজেকে অর্ধ-নগ্ন অবস্থায় তন্দুরী মুরগী..বলছে। এর মাধ্যমে তার বার্তা কি?????
নবাব পরিবারের শতকোটি টাকার মালিকের স্ত্রীর যদি নারীদের প্রতি সন্মান না থাকে, তাহলে সেদেশের নাম ধর্ষণের কারণে রেন্ডিয়া ছাড়া কি হবে?
ভারতীয় চলচ্চিত্র, টিভি, নাচ, গান, বিজ্ঞপনচিত্র সবকিছুই নারীকে শুধু শুধু ভোগ্যবস্ত হিসেবে প্রদর্শন করছে।
ভারতের নষ্ট হিন্দি সংস্কৃতির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নৈতিকতা রক্ষার জন্য অবশ্যই কঠোর কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে।
একটা জাতির আচার আচরণ অনেকটাই সেদেশর সংস্কৃতি ও গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে।এজন্য সিঙ্গাপুরের মতো দেশেও ৯০-এর দশকে ডিশ এ্যান্টেনা নিষিদ্ধ ছিলো। চীন এখন পর্যন্ত ফেসবুক বন্ধ রেখেছে।
সেখানে বাংলাদেশের মতো আইনের শাসন বিহীন দেশে কোনো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছাড়াই প্রথমে ভিডিও প্রযুক্তি, তারপরা ডিশ এন্টেনা এং পরে ইন্টারনেট অবাধ করা হয়েছে। এসবের মাধ্যমে শিশুরাও অভিভাবকদের অগোচরে বা প্রকাশ্যেই তাদের জন্য ক্ষতিকর অনুষ্ঠান অবাধে দেখছে।
দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মাকে এসবের কুপ্রভাব থেকে মুক্ত করতে চাইলে অবিলম্বে দেশে ডিভিডি বা অন্য মাধ্যমে বাজারজাত হওয়া সব বিদেশী ছবির উপর সেন্সর ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যেটা উন্নত দেশগুলিতে অনেক আগে থেকেই চালু আছে। ১৯৯৪ সালে দৈনিক সংবাদ-এ প্রকাশিত এক লেখায় এই উপদেশ দিয়েছিলাম, কিন্ত হিন্দি ছবিভক্ত খালেদা ও তার সরকার সেটা শোনেনি।
সব অশ্লীল হিন্দি ও ইংরেজী চ্যানেলের প্রচার নিষিদ্ধ করতে হবে।
একটা দেশের মানুষের উপর সংস্কৃতির প্রভাব যে কতোটা , সেটা ভারতীয় সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থা খুব ভালোভাবেই জানে।
এজন্যই বাংলাদেশের চ্যানেলগুলিতে প্রচারিত ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী অনুষ্ঠানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেশের জনগণকে রক্ষা করার জন্য এবং ভারতে বাংলাদেশের সংস্কৃতির প্রচার বন্ধের জন্যই সেদেশে এদেশের চ্যানেলগুলির অনুষ্ঠান প্রচার করতে দেয়া হয় না।
একইসাথে দেশের যেসব চ্যানেল মডেলিং, ফ্যাশন মো, সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নারীর মেধার পরিবর্তে তাদের পণ্য হিসেবে প্রদর্শন করে,সেসব চ্যানেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইন্টারনেটে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ অরোপ করেত হবে। ফেসবুকের মতো বাংলাদেশেও নিজস্ব একটা এ্যাপ চালু করতে হবে, যেখানে ইনবক্স নাই। চীনারা গুগল ও ফেসবুকের পরিবর্তে বাইদু এবং উইচ্যাট নামে নিজেদের এ্যাপ ব্যব্হার করে।
ওয়েব সিরিজের নামে অশ্লীল অনুষ্ঠান তৈরীকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়াও দেশের প্রতিটা এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বই পড়া, শরীরচর্চা, খেলাধুলা ও সংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। একটা সুস্থ ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন জাতি গড়ে তোলার জন্য এ প্রত্যেকটা বিষয়ই অপরিহার্য।
অতীতে দেশে এসব চালু ছিলো।
এগুলির পরিবর্তে ডিশ এ্যান্টেনা ও ইন্টারনেট বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হওয়ার পরই দেশের মানুষের নৈতিকতা ধ্বংস হতে শুরু করেছে। খুব কম পরিবারই বাড়িতে দৈনিক পত্রিকা রাখে কিন্ত টিভি থাকার পরও ডিশ এন্টেনার সংযোগ নাই, এমন বাড়ি কম আছে। জামাতিরা এসবের সবচেয়ে বড় দর্শক।
এছাড়া দেশকে অবিলম্বে মদ-মাদকসহ সব ধরণের নেশামুক্ত করতে হবে।
সব মদের দোকান বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ খারাপ ছাড়া মাদকের মতো মদেও ভালো কিছু নাই।
এ ব্যাপারে প্রত্যেকের অংশগ্রহণ ও সমর্থন প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৩:৩৯