ঠিক কোথায় থেকে কীভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। সত্যি বুঝতে পারছি না, সূচনায় কি আসা উচিত? কেন জানি না ইদানীং নতুন কিছু লিখতে ভয় লাগে, বিভ্রান্ত লাগে। ব্যাপারটা আজ আর মোটেও সহজ নয় আমার কাছে। অথচ একসময় এই আমিই তুচ্ছাতিতুচ্ছ কোনও বিষয়েও হাজার শব্দ লিখে গেছি টানা। এটা দারুণ শান্তিদায়ক ছিলো আমার জন্য। লেখালেখি প্রাণের সুস্বাদু খাবারে পরিণত হয়েছিলো। মনের মতো মানোত্তীর্ণ ভালো কিছু লেখার জন্য ব্যগ্র হয়ে থাকতাম সবসময়। আহা, আজ সম্পূর্ণ পরিবর্তিত আমি এখানে লিখছি! সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি সঙ্কট ফের ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রীতিমতো যুদ্ধ। প্রচুর মানুষ হতাহত হয়েছে ইতোমধ্যে। ক্ষতিগ্রস্তদের নব্বই ভাগই বেসামরিক লোকজন। যেমন হয় প্রতি যুদ্ধে। অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি বেশুমার। সেসব নির্ঘাত দূর অদূর ভবিষ্যতে মানুষের বাসযোগ্য পৃথিবীতে (আদৌ যদি থাকে) পূরণ করা যাবে। কিন্তু প্রতিটি নিষ্পাপ প্রাণের এরকম অকারণ ঝরে যাওয়া যে অপার্থিব শূন্যতা তৈরি করে, তা পূরণ হবার নয়। একজন মানুষের সাথে আরও কিছু মানুষের স্বপ্ন আকাঙ্খা ভালবাসারও মৃত্যু হয়। আর যুদ্ধ কেবল এ সংখ্যার বিস্তার ঘটাতে পারে। এক থেকে ক্রমে শত, হাজার, লক্ষ, কোটি। সবটাই গোঁয়ার বর্বর বিপথগামী একদল দুর্বৃত্তের অনাসৃষ্টি।
যথারীতি আমাদের দেশে ইসরায়েল ইহুদিদের ধ্বংস চেয়ে জিহাদি প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে সর্বত্র। অনেকে তো পারলে হাতের কাছে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র যা আছে, ওগুলো নিয়েই ইহুদি কতলে লুঙ্গি গায়ে খালি পায়ে দৌড় লাগায় ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে। ব্লগ ফেসবুক, মিডিয়া, হোটেল রেস্তোরাঁ, চা’র দোকান, পাড়ামহল্লার ক্লাব, পাবলিক পরিবহন সর্বত্র জিহাদি জোসে টগবগ ফুটছে মানুষ। ইসরায়েল ইসলামের শত্রু। ইসরায়েল ধ্বংস হোক। ইহুদিরা অভিশপ্ত। ইহুদিরা ধ্বংস হোক। নিপাত যাক। আর পৃথিবীজুড়ে মুসলমানদের এ ভুল আবেগেরই বলি আজ সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। নরক নেমে এসেছে তাদের জীবনে। কিন্তু এর জন্য ইসরায়েল কোনওরকমেই দায়ী নয়। এক শতাংশও দোষ নেই ইসরায়েলের। সমস্ত দোষ জঙ্গি হামাস ও এদের পিছনে ধনবলে ইন্ধন যোগানো মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ইহুদি ইসরায়েলবিরোধী কট্টর ইসলামি জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো। ইরান সৌদিআরবসহ দুয়েকটা দেশ সরাসরি যুক্ত। অন্তরালে কলকাঠি নাড়ছে তারাই। এতোসব অত্যাধুনিক ভারি অস্ত্রশস্ত্র হামাসকে যোগান দিচ্ছে কারা? অর্থের যোগানদাতা কারা? কাছাকাছি মোটামুটি বেশ দীর্ঘ সময় শান্তি বিরাজ করছিলো। সাম্প্রতিক গাজার উন্নয়নে প্রচুর ইনভেস্ট করেছে ইসরায়েল। সাধারণ ফিলিস্তিনিরা ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছে সেসব থেকে। এ পর্যায়ে তারা বুঝতে পারছে যে, সভ্য উন্নত রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকাই মঙ্গলজনক। হামাসসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সাধারণ ফিলিস্তিনিদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছিলো ক্রমশ। দীর্ঘ অশান্তির পর অবশেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছিলো। বহু আগে কখনও ইহুদি খ্রিস্টান মুসলমান মিলেমিশে বসবাস করতো। আবার সে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো। সাময়িক অশান্তির ইতিহাস ভুলে শান্তিকামী সাধারণ ফিলিস্তিনিরা ইহুদিদের সঙ্গে মিলেমিশে সুখী নিরাপদ জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলো। এসময় ইসরায়েলের ভিতরে যেয়ে হামাসের ইসরায়েলিদের ওপর এই কাপুরুষোচিত বর্বর পাশবিক আক্রমণ, অত্যাচার। শান্ত মধ্যপ্রাচ্যকে আবার নরক বানানোর ঘৃণ্য অপচেষ্টা। এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা সফলও। ইসরায়েল এবার আর নমনীয় হবে বলে মনে হচ্ছে না। সবরকম ক্ষতি স্বীকার করতে প্রস্তুত তারা। প্রতিশোধের আগুনে ফুঁসছে সারা ইসরায়েল। গাজার অভ্যন্তরে হামাসসহ ইসরায়েল বিরোধী সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে নিশ্চিহ্ন করতে সামরিক অভিযান শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এসপার উসপার লড়াইয়ে নেমেছে ইসরায়েল। হামাসের হাতে আটক তাদের বেসামরিক বন্দীদের সেক্রিফাইস করতেও প্রস্তুত। যা অভাবনীয়। ইতিপূর্বে কখনও এরকম হয়নি। এতেই বোঝা যায় কতোটা দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ইসরায়েলের। কতোটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি সামনে আরও বহু ভীতিকর হতে পারে। এসব ভেবে আমি আতঙ্কিত। সস্তা আবেগে না ভেসে, নিরপেক্ষভাবে মধ্যপ্রাচ্যের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে, এতে ইসরায়েলের চুল পরিমাণও দোষ পাওয়া যাবে না। তাদের জন্য এটা অস্তিত্বের সঙ্কট।
সবমিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল। যুদ্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এরকম হলে, এর বলি হবে সাধারণ মানুষই। যেমন গাজার সাধারণ ফিলিস্তিনিরা এখন নরকযন্ত্রণা ভোগ করছে। মধ্য প্রাচ্যের এই সঙ্কট আরও কী অভিশাপ নিয়ে আসতে চলেছে সামনে কে জানে! গাজার সাধারণ ফিলিস্তিনিদের জন্য আমি ব্যথিত। একটি সভ্য উন্নত আলোকিত রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে সুখী জীবনযাপনের সুযোগ থেকে বরাবর বঞ্চিত করে রেখেছে তাদের অবশিষ্ট মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়াশীল উগ্র কট্টর প্রভাবশালী একটি অংশ। ইসরায়েল রাষ্ট্রটি বিশ্ব ও মানবসভ্যতার জন্য বিরাট আশীর্বাদ। তথ্যপ্রযুক্তি বিজ্ঞান মানবসম্পদ উন্নয়নে পৃথিবীতে আজ তাদের অবস্থান চমকপ্রদ, ঈর্ষনীয়। অথচ চরম প্রতিকূল বিরূপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তারা সম্ভব করেছে। আরও বহু লেখা যেতো, কিন্তু আপাতত এখানেই শেষ করছি। হয়তো এর ওপর আরও কিছু লিখবো আগামীতে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫০