somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কর্পোরেট জগত ও খট্টাঙ্গ পূরাণ: গল্পে গল্পে কর্পোরেট চিনি

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কর্পোরেট জিনিসটা কী-আমি আজও তার সংজ্ঞা জানি না। আপনাদের জানা থাকলে জানাবেন। কর্পোরেট নিয়ে আমি ভুড়ি ভুড়ি কথা বলেছি। সব আজকাল মনেও নেই। তবে কর্পোরেট ও তার কর্তাদের খাসলত নিয়ে রঙ্গ-মশকরার ছলে কিছু সত্যি কথা আজ বলব। ব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে পড়লে আপনি কিছুটা হলেও রস আস্বাদন করতে পারবেন।

বয়ে চলা কর্পোরেট কপোট্রনিক নগর সভ্যতায় ব্রান্ডিং, সেলফি, সেলফ মার্কেটিং এবং মেনটরিং এর ঝড় দেখে মাঝে মাঝে ভয় হয়। ভয় হয় পিছিয়ে পড়ার। ভয় হয় তলিয়ে যাবার।

স্বাভাবিক। আপনি যদি দেখেন, আপনার সব ইয়ার বন্ধু-বান্ধব ও সামাজিক প্রতিবেশীরা শনৈশনৈ গতিতে সমাজের সব পদ পোস্ট বাগিয়ে, একেকজন কেউকেটা হয়ে বসেছেন, তাতে আপনার গান্ধিজীর সমান সংযমও টলে যেতে বাধ্য।

তবে আপনার মতো হতভাগাদের জন্য সান্তনাও আছে। “আগে গেলে বাঘে খায়, পিছে গেলে সোনা পায়।” (যদিও বাঘ সবসময় পেছনেরটাগেই টারগেট করে।)

মস্করা বাদ। গল্পে গল্পে আজ কর্পোরেটের কিছু নোংরা বাস্তবতা ও ভেতরের খবর শুনুন। গল্পগুলো শোনা, বা অনেক আগে পঠিত, বিধায় গড়বড় থাকবে। তবে গল্পের ভাষাগত ও তথ্যগত মিলের চেয়ে এর মেসেজটাই বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। দেখুন তো, লেসনগুলো ধরতে পারেন কিনা। পারলে জানাবেন কমেন্টে।

গল্প-১: দেগে দেখা

গোপাল ভাঁড়ের ভাতিজার বিয়ের কথা চলছে।

কণেপক্ষ ছেলের ঘরবাড়ি দেখতে এসেছেন (পাত্রের চেহারা ও কেশের দৈর্ঘ বা আরবী পড়তে পারা যাচাই করা পাত্রী পক্ষের অধিকারে পড়ে না।)। পাত্র গন্ডমূর্খ। তো পাত্রের রূপ, বংশ, পসার দেখা শেষ। হঠাৎ করে একজন মুরব্বী অনধিকার জিজ্ঞেস করে বসেন, “তা বাবা তুমি লিখতে পড়তে পারো?”

”আজ্ঞে, দাগিয়ে দিলে পারি।” [হালকা করে মার্ক করে দিলে, তার ওপর দিয়ে হাত ঘোরানো।]

কণেপক্ষ তো উঠে হাঁটা ধরলেন পাত্রের জ্ঞানের বহর দেখে।

গোপাল পেছন হতে চিৎকার করে বলতে লাগল,

“দাগিয়ে দিয়ে দেখতি, ভাতিজা আমার কেমন দিগগজ। দাগিয়েই তো দেখাতে পারলি না।”

গল্প-২: খট্টাঙ্গ পূরাণ

আরেকবার।

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে জব্দ করার জন্য একবার মুর্শিদাবাদের নবাব তাকে একটা অদ্ভুৎ কাজ দিয়ে বসলেন যার কোনো মাথামুন্ডু নেই। কাজটা হল,

“পৃথিবীর ভূত, ভবিষ্যত গুণে বলে দিতে হবে।”

কৃষ্ণচন্দ্র পড়লেন মহাবিপদে। গোপাল রাজাকে আশ্বস্ত করল। তো গোপাল নির্দিষ্ট দিনে নবাবের দরবারে একটা বিশাল পুটলি করা জিনিস ঘাড়ে নিয়ে ঢুকল।

লাল ও সবুজ শালু কাপড়ে মোড়ানো সেই পুটলী। তো নবাব তাকে একটা প্রশ্ন করেন, গোপাল সেই পুটলীর এক পরত শালু কাপড় সরায় আর প্রশ্নের একটা জবাব দেয়।

এভাবে এক এক করে সে সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে বসল। নবাব তো মহাখুশি হয়ে তাকে প্রচুর ইনাম দিলেন।

তো, সেখান থেকে ফিরলে রাজা তাকে আরেক দফা উপহার দেবার পরে জিজ্ঞেস করলেন, ওই পুটলীর ভেতরে কী ছিল আর কীভাবেই বা গোপাল পুটলীর সাহায্যে প্রশ্নের উত্তর দিলো। জবাবে গোপাল বলল,

“আসলে ওটা ছিল খট্টাঙ্গ পূরাণ।”

সভায় কেউ, এমনকি রাজপন্ডিতও কখনো খট্টাঙ্গ পূরাণের নাম শোনেননি। এটা কী জিনিস-তা জানতে চাইলে গোপাল সেই শালু কাপড় মোড়ানো বস্তু হতে আস্তে আস্তে সব কাপড় সরালো।

শেষে দেখা গেল, মূলে একখানা খাটের ভাঙা পায়া। তাতেই কাপড় জড়ানো ছিল।

“মহারাজ, আমার একখানা খাটের ভাঙা পায়ার সাথে সাত পরত শালু কাপড় মুড়ে এই পূরাণ তৈরী।

খাট+অঙ্গ=খট্টাঙ্গ পূরাণ।”

সারা দরবার হেসে কুটি কুটি।

আজকাল উপরের দুটো গপ্প খুব বেশি মনে পড়ে। দাগিয়ে দেখাতে না পারায় (মানে C model, D model, E model, P model, তমূক কী ওয়ার্ডস আর ব্রান্ডিং নামের ঢোল বাজাতে না পারায়, অনেক জ্ঞানী ও উপযুক্ত প্রোফেশনাল নামকাম কামাতে পারছেন না। তারা থাকছেন পাদপ্রদীপের আড়ালে। আর সেই সুযোগে অনেকেই দাগিয়ে বেড়াচ্ছেন।

গুরু ও গরু-দুইই বনে যাচ্ছেন।

যত বড় HR গুরুই হোন, যত কাবেল রিসোর্স পারসনই হোন, যতই আপনি কাগু হোন, হালজামানার চোস্ত সব জারগন আর 3P model, 7P theory, 17D method এইসব যদি চালভাজার মতো জনসম্মুখে ফটফট ভাজতে না পারেন আর পিপিটি না পারেন, আপনি সেই ধইন্যাপাতাই। ধইন্যা হল ধইঞ্চার বড়-দা ভাই।

অনেকে আবার ওই খট্টাঙ্গ পূরাণ হতে বিদ্যা হাসিল করে বেশ দুপয়সা ও দুআনা ব্রান্ডিং কামিয়ে নিচ্ছেন। কার ঘটে সত্যি সত্যি বিদ্যা কতটা আছে, সেটা আজকাল কেউ আর তলিয়ে দেখে না।

ফেসবুকে কতটা দাপটের সাথে বিচরন-সেটাই আজকাল যোগ্যতার বড় পরিচায়ক।

[জনাব Molla Mohammad Faruque Ahsan সাহেব বুদ্ধিজীবী হবার তরিকা নিয়ে এক ফেসবুক পোস্ট লিখেছিলেন, প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় সেটি হুবহু তুলে দিলাম। ”বুদ্ধিজীবী হতে হলে যে শব্দগুলো ব্যবহার করতে হবে: হেবারমাস, লাকা, পাবলিক স্ফিয়ার, ন্যারেটিভ, স্টুয়ার্ট হল, মিজ-অ-সিন, আইডিয়ালিস্টিক, ইনফ্রাস্ট্রাকচার, ইন্সটিটিউশনালাইজড, ডিসকোর্স;

জিজেক, ফুকো, নিৎশে, পোস্টমডার্নিস্টিক এপ্রোচ, ইন বিটুইন দ্যা লাইন, স্কুল অফ থটস, ইগালেটারিয়ান, টোটালিটারিয়ান, অর্থডক্স, এপলিটিকাল, হোমি ভাবা, নন্দনতাত্ত্বিক মতবাদ;

স্ট্রম্যান, তালাল আসাদ, রেডহেরিং, নুয়ান্স, কনটেক্সট, অক্সিমোরোন, এপিস্টেমোলোজি, অন্টোলোজি, টিলিওলজি, হেজিমনি, নিওলিবারেল, বিউপনিবেশায়ন, পোস্ট কলোনিয়াল, বুদ্ধিবৃত্তিক এপ্রোচ, ইত্যাদি।”]

গল্প-৩: ডিজিটাল যুগের ঈশপ

যুগের সাথে সাথে নাকি সবকিছু বদলায়। ঈশপ যদি এই যুগে পয়দা হতেন তবে তার গল্পগুলো নিশ্চই অন্যরকম হত। না, শিরোনাম দেখে ভাববেন না আমি ঈশপকে নিয়ে বা তার গল্পের ডিজিটালাইজেশান নিয়ে গল্প ফেঁদে বসব। আমি শুধু পুরোনো গল্প নতুন কাসুন্দি দিয়ে পরিবেশন করব। তবে এই অংশটুকু সাধু ভাষায় রচিত, যেহেতু ঈশপ নিজেও সাধুদের জামানার।

একদা কোনো এক দেশে এক চোর বাস করিত। তাহার বংশ ছিল সৈয়দ।

কোনো একদিন সে কোথাও চুরি করিতেছিল। কী করিয়া জানি না, থানাওয়ালারা খবর পাইয়া কতিপয় পুলিশ সদস্যকে তথায় প্রেরণ করিল। পুলিশের দলে একজন ছিল পূর্বে তাহার বংশ ছিল নিচু। অন্য পুলিশেরা তথায় পৌছিয়া দেখিল যে, সৈয়দ সাহেব চুরি করিতেছেন। তাহারা বংশ মর্যাদার কারণে তাহাকে ধরিল না।

কিন্তু নিচু বংশীয় পুলিশ মহোদয় সততার মহান মন্ত্রে উজ্জিবীত হইয়া তাহার কলার চাপিয়া ধরিল। তাহাকে হিড়হিড় করিয়া টানিয়া থানায় হাজির করিল। সে ভাবিল এইবার তাহার এহেন কর্মে প্রীত হইয়া সরকার মহাশয় তাকে দারোগা করিয়া দিবে।

বিচার সভা বসিল চোরের বিচারার্থে। কিন্তু সবাইকে বেকুব বানাইয়া চোর মহাশয় তীব্রস্বরে কহিল,

“কেন সৈয়দ বংশের চোরকে নীচু জাতের পুলিশ ধরিল, কেন তাহাকে যথেষ্ট সম্মান সহকারে অ্যারেষ্ট করা হয় নাই, কেন তাহার কলার ধরা হইল, চুরি করার কালে তাহার মানবাধিকার রক্ষিত করিয়া তাকে ধরা হয় নাই” ইত্যাদি ইত্যাদি।

(অতঃপর বিচার সভা এই বলিয়া সমাপ্ত হইল যে, পরবর্তীকালে চোর ধরিবার কালে পুলিশ যেন বংশমর্যাদা রক্ষা করিয়া এবং চোরের মর্যাদাহানি না করিয়া, মানবাধিকার রক্ষা করিয়া তাকে সসম্মানে ধৃত করে।) ..........

জনগণ বেকুব হইল।

গল্প-৪: উল্টো যাত্রা

এই গল্পটি আমার এক বন্ধুর নিকট হতে তার চাক্ষুস অভিজ্ঞতা হতে ধার করা, একটু এডিট করে, এবং গুরুগম্ভীর বিষয় হওয়ায় এটাও সাধুতে বললাম।

পুরাকালে কোনো এক প্রতিষ্ঠানে একজন বিলাতি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দোর্দন্ড প্রতাপে কাজ করিতেন। তাহার অধীনে কিছু জুনিয়র কর্মী কাজ করিতেন।

জুনিয়র লোকজনের কর্মমূল্যায়ন করিয়া তাহাদের বেতন নির্ধারন করিয়া তাহার উচ্চপদস্থকে দিতেন। উচ্চপদস্থ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনো জ্ঞান রাখিতেন না। কিন্তু নিজের অজ্ঞতাকে ঢাকিতে এক অভাবনীয় পন্থা অবলম্বন করিতেন।

তিনি তাহার জুনিয়র যাহাই সুপারিশ করিতেন, তাহা হইতে ৫০-১০০ টাকা কাটিয়া দিতেন। কিছুকাল যাইতেই তাহার এই চাতুর্য জুনিয়ররা ধরিয়া ফেলিলেন।

একদিন এক জুনিয়র কি করিল এক ব্যক্তির মূল্যায়নপত্রে ৫,০০০ সুপারিশ করিয়া তাহার উচ্চপদস্থকে দিল। তিনি যথারীতি আধাঘন্টা ভাব ধরিয়া, মাথায় কলম ঠুকিয়া, হুমহাম করিয়া, জুনিয়রের দিকে তাকাইয়া হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া, “তোমরা খি যে খরো......” করিতে করিতে ২০০ কাটিয়া তাহা ৪,৮০০ করিয়া দিলেন।

জুনিয়র বাহিরে গিয়া একই লোকের মূল্যায়ন আবার একটা কাগজে ৫,২০০ সুপারিশ লিখিয়া ’উচ্চপদস্থ’কে দিল। তিনি এই চাতুর্য ধরিবার পর্যায় হইতে অনেক উর্দ্ধের মানুষ ছিলেন।

বেকুবি ঢাকার চিরাচরিত পন্থাগুলি অবলম্বন করিয়া এবার কাটিয়া লিখিলেন ”৫,১০০”।

জুনিয়র তাহার পূর্বের ও পরের কাগজ দুটি কপি করিয়া (পয়েন্ট নেয়ার দুরাশায় ও উচ্চপদস্থের কেরেদ্দারী ধরাইয়া দিবার দুরাশায়) কাগজ দুটি লইয়া তৎক্ষনাৎ বড়বাবুর কক্ষে লইয়া গিয়া তাহাকে দেখাইয়া নালিশ ঠুকিল। ভাবিল এইবার আর তাহাকে পায় কে?

আপনারা কী ভাবিলেন? বড়বাবু কর্তৃক উচ্চপদস্থকে বিতাড়ন আর জুনিয়রকে প্রমোশন? মিসটেক করিলেন।

বড়বাবু জুনিয়রকে এই অযুহাতে ততক্ষনাৎ চাকুরীচ্যুত করিলেন, এই অপরাধে, যে, নিজের কাজ বাদ দিয়া উচ্চপদস্থের খূুঁত ধরিতে তোমায় কে বলিয়াছিল?

গল্প-৫: শোনা গপ্পে নয়া শিক্ষা

একবার পাশাপাশি দুটো প্রতিযোগী গ্রামে দু’জন মাস্টার এলো। একজন হাতুড়ে। খুব বেশি কিছু জানে না। তবে গ্রামের পলিটিকস ও গিরীঙ্গি ভালই জানে।

আরেক গ্রামের মাস্টার সত্যিকারে শিক্ষিত, বিএ পাশ। তবে গ্রামের কূটিল বিদ্যা তার নেই।

তো একবার দুই গ্রামের মাস্টারের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ-তা নিয়ে একটা বচসা উঠল। বচসা ও বিতর্ক এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেবার উপক্রম।

তো গ্রামের বিচক্ষন মানুষেরা রায় দিলেন, বরং, একদিন দুই মাস্টারের মধ্যে কুইজ ও বাহাস হবে। যে জিতবে, সেই বড় ও বিদ্বান।

তো ওই অশিক্ষিত ও কূটিল মাস্টার তো জানে, কী করে কাউকে ঘায়েল করতে হয়। কিন্তু শিক্ষিত ও যোগ্য মাস্টারতো তা জানে না।

সে নির্দিষ্ট সময়ে তার প্রশ্ন করল। (ধরে নিন, সেই প্রশ্ন ছিল-”বলুন তো, রুড গুলিতের মাথার চুলে কয়না বেণী ছিল?”

আগের হাতুড়ে মাস্টারের তা ভাগ্যক্রমে জানা থাকায় সে সহজেই উত্তর দিল। এবার শিক্ষিত মাস্টারের পালা।

তাকে ওই গেঁয়ো শিক্ষক জিজ্ঞেস করল, “I don't know”এর অর্থ কী?

স্বাভাবিকভাবে বিএ পাশ মাস্টার সরল মনে উত্তর দিল, “আমি জানি না”।

ব্যাস, আর যায় কোথায়? মুহূর্তের মধ্যে ওই গ্রামের মানুষ চিৎকার করে উঠল। পারে না, পারে না, জানে না, জানে না।

ধূর্ত হাতুড়ের প্ল্যানমতো এই সুযোগে তার সাগরেদরা ঢোল, করতাল, ভুভুজেলা বাজিয়ে হইচই লাগিয়ে দিল। ব্যাস, এরপর ওই মাস্টার যতই ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষনের চেষ্টা করে তাতে কি আর কাজ হয়?

ফলাফল, অপমান মেনে তার গ্রাম ত্যাগ।

এই শোনা গপ্পের মাজেজা জানতে চান? যদি হজম করতে পারেন, তবে বলি।

কিছু বিশেষজ্ঞ ও বিশেষ অজ্ঞ প্রোফেশনাল যে করেই হোক, কিছু একটা করে খাচ্ছেন। নাম ভাঙিয়ে বা দাম ভাঙিয়ে। আমি ওঁদের বলি “Key & Lead" বিশেষজ্ঞ। (সবাই না।) তাদের কাছে সত্যিকারের বিশেষজ্ঞরা খাবি খাচ্ছে রোজ। ওই মাস্টারের মতো। আর বলব না। মার খাবার সম্ভাবনা আছে।

গল্প-৬: কর্পোরেট কড়চা:

এবারের গল্পটি লিখেছেন জনাব এমরানুল হক।

একদা নবীন শিক্ষক জটিল এক বিষয় নিয়ে হাজির হলে প্রবীন গণিত শিক্ষকের কাছে। বিষয়টি ছিল- স্কুলে শহর থেকে বিশেষ অতিথিগণ পরিদর্শনে আসবেন। সংখ্যায় ৪ জন।

তাদের জন্য উপহার কিনতে সভাপতি মহোদয় ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। ৩ জনের জন্য উপহার কেনা হয়েও গেছে।
এখন ৪র্থ জনের জন্য কত টাকার মধ্যে উপহার কিনবে, এই বিষয়টি নবীন শিক্ষক বুঝতে পারছেন না। বড্ড জটিল ও গোলমেলে হিসেব।

প্রবীন সহকারী প্রধান শিক্ষক বললেন, ৩ জনের কেনা হলে বাকিটুকুই তো ১ জনের বাজেট, এতে জটিলতার কি আছে?
নবীন বললেন, অনেক জটিল, আমায় লিখে বুঝিয়ে দিন। প্রবীন আবারো বললেন, বাছা ৪ জনের জন্য ৫ হাজার, ৩ জনের কিনে ফেলেছ, তো বাকিটুকু দিয়ে ১ জনকে কিনে দাও, ল্যাঠা চুকে গেল।

এই কথা শুনে নবীন চলে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এসে বললো, আমি হিসেব মিলাতে পারছি না। আপনি একটু খুলে বলুন তো?

প্রবীন এবার খুলে বলতে চেষ্টা করলেন। বললেন ১ম জনের জন্য কত দিয়েছ? উত্তর ১৬০০ টাকা। ২য় জনের জন্য কত দিয়েছ? উত্তর ১৪০০ টাকা। ৩য় জনের জন্য কত দিয়েছ? উত্তর ১২০০ টাকা। তা বাছা, তোমার কাছে মোট কত ছিল? আজ্ঞে ৫০০০ টাকা।

তো ৫০০০ হাজার থেকে ৩ জনকে দিয়ে যা আছে তাই তো ৪র্থ জনের বাজেট!!! খুবই সহজ।। এবার যোগ-বিয়োগ করে নিজে -নিজে বের করে নাও।। হা হা হা।

এবার নবীন মুখ গোমড়া করে বললেন, দাদা একটু লিখে বুঝিয়ে দিন না, কি কঠিন করে বলছেন, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

প্রবীণ কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, এরচেয়ে সহজ করে কিভাবে বুঝাতে হয়, তা আমার জানা নেই বাপু, আমায় ক্ষমা কর।

নবীন চলে গেল। পরদিন পুরো স্কুল জানলো- প্রবীণ শুধু বয়সেই বেড়েছে, জ্ঞানে বাড়েনি। একটি সহজ বিষয় তিনি সহজ করে বুঝিয়ে দিতে পারেননি। আর যারা এক কাঠি সরেস, তারা জানলো, প্রবীণ ইচ্ছে করেই হিসেব শিখাননি। তিনি শুধু নামেই গণিত শিক্ষক, আদতে তিনি সরল অংকই জানেন না।

গল্প-৭: উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে

দবির ছবিরের সংগৃহিত এই গল্পটি বলতেন আমার একজন সাবেক সহকর্মী মি. ইকবাল।

দবির যদি ছবিরকে প্রহার করে তবে দবিরের দোষ নয়, দোষ হইল ছবির কেন পিঠ পাতিয়া দিল?

আম যদি বোটা হইতে ঝরিয়া পড়ে তবে আমের দোষ নয়, বোটা কেন তাহাকে ধরিয়া রাখিতে পারিল না সেটা তারই দোষ।

একা পথে তরুনীকে কোনো বখাটে টিজ করিলে বখাটের দোষ নয়, তরুনী কেন একা বাহির হইল, তাহারই সব দোষ।

গল্প-৮: জাল তুলে ফেল

গোপালের আরেকটি গল্প। (স্বভাবতই অনেক আগে পঠিত, বিধায় কিঞ্চিত গড়বড় থাকতে পারে।)

গোপালের পিশতুঁতো দাদা ভরদ্বাজ। বয়স হয়েছে ৪৩, তবু বিয়ে হয়নি। বিয়ে না হবার কারন, তার পিঠে বিশাল এক কুঁজ, যার ভারে সেও কুঁজো হয়ে হাঁটে। তো, একবার এক পাত্রীপক্ষ আসবে বরের বাড়িঘর দেখতে। ঠিক হল, সোফার পেছনে একটা গর্ত তৈরী করে ভরদ্বাজকে সেখানে বসিয়ে রেখে কুঁজ লুকোনো হবে।

তো, কণেপক্ষ এলো। পাত্রকে তার সাথের লোকজন মোটামুটি লুকিয়ে চুরিয়ে চালান করবার ব্যবস্থা করে ফেলল।

কণেপক্ষ মোটামুটি সিগনাল দিলেন, তারা সম্বন্ধ করবেন। গোপাল চিৎকার করে চাকরকে ডেকে বলতে লাগল, “ওরে, ন্যাপা, জলদি পুকুরে জাল ফেল। বড় মুরগাটাকে ধর............” ইত্যাদি। কথা চলতে থাকল।

কিন্তু, হঠাৎ করেই কী এক রসিকতা বা বাদানুবাদে উদ্বেলিত হয়ে দাদা ভরদ্বাজ স্থান-কাল-পাত্র ভুলে আসরের মধ্যে লাফ দিয়ে উঠলেন আর তার কুঁজ প্রকাশিত হয়ে পড়ল। কণেপক্ষ প্রতারনা ধরে ফেললেন। তারা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে পাত্রের বিষয়ে তাদের অসন্তোষ জানিয়ে তক্ষুণি বিদায় নিতে উদ্যত হল। গোপাল আবার চিৎকার করে চাকরকে ডাকতে লাগল, ”ওরে, ন্যাপা, জাল তুলে ফেল, তুলে ফেল।”

আজকের মতো গল্প এখানে শেষ করছি। যাবার আগে কর্পোরেটের সবচেয়ে মজার রসিকতাটি জানিয়ে যাই।

কর্পোরেট আপনার সামনে সবসময় একটি মুলা ও চুলা ঝুলিয়ে রাখবে। মুলার লোভ আর চুলায় জ্বলার ভয় আপনাকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে কর্পোরেটের উদগ্র বিজনেস স্বার্থের পানে।

কর্পোরেট আপনাকে আকর্ষক একটা পে করবে, যেটা দিয়ে আপনি লোভনীয় একটি আরামের জীবন যাপন করবেন, আর সেই আরামের লোভ আপনাকে কখনো চাকরি ছেড়ে স্বনির্ভর হতে দেবে না। আবার, কর্পোরেট কখনো এত বেশিও আপনাকে দেবে না, যেটা হতে বড় অঙ্ক জমিয়ে আপনি একদিন কর্পোরেটের দাসত্ব হতে বেরিয়ে যাবার সাহস করবেন। ফলাফল.................রেখো মা দাসেরে মনে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×