চলে গেল ২০১৯। আমাদের জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল আরেকটি বছর, আর একইসঙ্গে আমাদের প্রত্যেকের বয়স গেল এক বছর বেড়ে। যাইহোক, এই বছরে আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের দৃষ্টিআকর্ষনী ঘটনাগুলো হলো,
- ২০শে ফেব্রুয়ারী চকবাজার অগ্নিকান্ড। এটা আমাদেরকে আবার মনে করিয়ে দিয়েছে আমাদের প্রশাসনের সীমাহীন লোভ আর কান্ডহীনতার কথা।
- ১৮ই মে আয়ারল্যান্ডে ট্রাই-নেশান সিরিজ জয়লাভ। বাকী দল দু‘টো ছিল আয়ারল্যান্ড আর ওয়েষ্ট ইন্ডিজ। একইসঙ্গে দেশে-বিদেশে প্রথম শিরোপা।
- ২৪শে সেপ্টেম্বর দেশে ক্যাসিনোগুলোর উপর প্রশাসন হামলা শুরু করে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এর আগে তারা জানতোই না যে দেশে ক্যাসিনোভিত্তিক জুয়ার প্রচলন আছে!!!
- ৭ই অক্টোবর ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা বুয়েটের হলে এক সন্দেহভাজন (???) দেশবিরোধী ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করে। সবাই বলেন, জয় বাংলা!!!
- ১ থেকে ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাফ গেমসে তীরন্দাজ ইতি খাতুন এবং রোমান সানা দশটা ইভেন্টের সবগুলোতেই সোনা জেতেন। এবার নিশ্চিতভাবেই এ‘দুজনের হারিয়ে যাওয়ার পালা!
চলুন, এবার দৃষ্টি ফেরাই বাকী বিশ্বের দিকে,
- জানুয়ারীতে কাতার ওপেক থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। সৌদি শয়তানি আর কতো সহ্য করা যায়!!
- মার্চে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইষ্টচার্চে এক শেতাঙ্গ উগ্রবাদী সন্ত্রাসী মসজিদে হামলা চালিয়ে ৫১ জন মুসল্লীকে হত্যা করে। একটু কোতাকুতি করে পশ্চিমা বিশ্ব স্বীকার করে নেয় যে, এটা একটা সন্ত্রাসী হামলা।
- এপ্রিলে প্যারিসের বিখ্যাত নটরডাম গীর্জায় এক অগ্নিকান্ডে এর অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়। ভাগ্যিস আমি আগেই দেখে ফেলেছিলাম!!
- অক্টোবরে ইউএস স্পেশাল ফোর্স তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের আবু বকর আল-বাগদাদীকে হত্যা করে। সেইসাথে তাদের সৃষ্ট আরেকটা ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের জীবনাবসান হয়।
- ডিসেম্বরে বৃটিশ পার্লামন্টে শেষ পযন্ত ৩১শে জানুয়ারী ২০২০ এ ব্রেক্সিটের পক্ষে মত দেয়। এর ফলে গ্রেট বৃটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যাগ এখন নিশ্চিত। এই একলা চলার নীতি কতোটুকু সুখকর হবে তা ভবিষ্যতই বলে দিবে।
সত্যি বলতে দেশ-বিদেশের এসব ঘটনা আমাকে নাড়া দিয়েছে কিছু সময়ের জন্যে। মানব চরিত্র অনুযায়ী এক সময় এগুলোর প্রভাব হাল্কা হয়েছে; তারপর এক সময়ে হারিয়ে গিয়েছে কালের আবর্তে। নতুন অন্য ঘটনা জায়গা করে নিয়েছে পুরাতনকে সরিয়ে দিয়ে। এটাই তো চিরাচরিত অমোঘ পরিণতি যে কোনও ঘটনার! তবে এ‘বছরের ১৭ই ফেব্রুয়ারী যে অনাকাঙ্খিত ঘটনার শুরু, সেটার প্রভাব এখনও আমার কাটেনি পুরাপুরি। ঠিক ধরেছেন, আমাদের ব্লগ ব্লকের কথাই বলছি। পর্ণো এবং জুয়ার সাইট নিষিদ্ধের সাথে সাথে আমাদের এই ব্লগকেও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করে দেয় সরকার, আর দুঃখজনকভাবে ব্লগারদের ভাষা কেড়ে নেয়ার এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয় ভাষার অধিকার আদায়ের মাসে। হয়তো আশা ছিল, এর ফলে ব্লগাররা হতাশ হয়ে একসময়ে ব্লগের আশা ছেড়ে দিবে, ফলে ব্লগ পর্যায়ক্রমে আপনাআপনিই বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এরপরেই ঘটে অভূতপূর্ব ঘটনা। দেশে ব্লগারগণ বিকল্প পন্থা ব্যবহার করে ব্লগকে সজীব রাখেন; প্রবাসী ব্লগারদের যদিও তেমন সমস্যায় পরতে হয়নি, তবুও দিনরাত তারা ব্লগে লগডইন থেকে, বিভিন্ন পোষ্ট দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জারী রাখেন। একইসাথে ব্লগ কর্তৃপক্ষও সময়ানুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া অব্যাহত রাখেন। এই বহুমুখী কার্যকলাপের ফলে সরকার একসময়ে নিজেরাই দিশেহারা হয়ে দীর্ঘ আটমাস পর ব্লগকে আবার মুক্ত করতে বাধ্য হন। সেই আনন্দময় ঘটনাটি ঘটে ২৩শে অক্টোবর ২০১৯ এ।
আজ বছরের শেষে এসে আমি তৃপ্ত এই ভেবে যে, ব্লগের সেই সংকটকালীন আটটি মাস অন্য অনেকের মতো আমিও ব্লগকে সজীব রাখতে কিছুটা ভূমিকা পালন করতে পেরেছি। আমাদের ব্লগারদের এই পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া, ব্লগের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা চালু থাকবে আগামী বছরগুলোতেও……এটাই আমার এ'বছরের ব্লগীয় প্রত্যাশা।
এ'বছর ঘটে যাওয়া আরেকটি আনন্দদায়ক ঘটনার বয়ানের মাধ্যমে শেষ করছি আমার এ'বছরের সর্বশেষ পোষ্ট। সেটা ঘটে ২৫শে ডিসেম্বর। না, নিশ্চিতভাবেই আমি খৃষ্টমাস উদযাপনের কথা বলছি না, বলছি আমাদের ব্লগ ডে উদযাপনের কথা। সুদীর্ঘ আটমাসের অবরোধের পর এই উদযাপন যে অসাধারন হবে এটা অনুমিতই ছিল। আমি নিজে উপস্থিত না থাকতে পারলেও অন্য সবার উৎসাহ-উদ্দীপনা হাজার হাজার মাইল দুরে বসে ঠিকই উপলব্ধি করেছি। রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করেছি ছবি ব্লগের। ব্লগারদের একেকজনের হাস্যোজ্জল চেহারা দেখে আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছি। এই সুখানুভূতি আসলে বলে বোঝানো যাবে না, কাজেই সে চেষ্টা বাদ।
যে কোনও পোষ্টই সময়ের পরিক্রমায় একসময়ে হারিয়ে যায়। চাইলেও পরে অনেক সময় এ'গুলোকে সহজে খুজে পাওয়া যায় না। তাই আমার এই সুখস্মৃতিকে অম্লান রাখার জন্যে আমি ছবি ব্লগগুলোকে একজায়গায় জড়ো করেছি। করেছিলাম আমার নিজের জন্যই, একেকটা পোষ্ট আমার কাছে একেকটা ফটো এলবামের মতো। পরে ভাবলাম, আপনাদের সাথেও এটা শেয়ার করি। সো, হিয়ার দে আর!
view this link - নীলসাধু
view this link - স্বপ্নের শঙ্খচিল
view this link - সাহাদাত উদরাজী
view this link - কাজী ফাতেমা ছবি
view this link - প্রামানিক
view this link - গিয়াস উদ্দিন লিটন
view this link - তারেক_মাহমুদ
view this link - কাজী ফাতেমা ছবি
view this link - কাজী ফাতেমা ছবি
view this link - কাজী ফাতেমা ছবি
আমার চোখে এ‘কটাই পড়েছে। কোনটা বাদ পরলে, এবং কারো জানা থাকলে আমাকে বললে এড করে দেবো। আর স্বাভাবিকভাবেই ভবিষ্যতে আরো এলে আপডেট করা হবে। এই পোষ্টগুলো যারা যারা কষ্ট করে আমাদের জন্য তৈরী করেছেন, পোষ্ট করেছেন……..সবার প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ!!!
আমার ধারনা, টুয়েন্টি টুয়েন্টি ক্রিকেটের মতোই বিশ্বব্যাপি টান টান উত্তেজনার বছর হবে ২০২০, যার আলামত বেশ কিছুটা ইতোমধ্যেই পাওয়া গিয়েছে। সবশেষে একটা অনুরোধ…...সবাই নববর্ষ উদযাপন করেন, আনন্দ-ফুর্তিও করেন, তবে পরিমিতভাবে। এই দুর্দান্ত হাড়-কাপানো শীতে দেশের উন্নয়নের মহাসড়কের পাশে রাতে শুয়ে কষ্ট পাওয়া লাখ লাখ দরিদ্র মানুষের কথাও স্মরণ রাখবেন দয়া করে।
সবাইকে ইংরেজী নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
বিদায় ২০১৯, স্বাগতম ২০২০।।
ফটো ক্রেডিটঃ গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:০৪