
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা বর্তমানে দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মাহমুদুল হাসান শান্ত নামের এক যুবক ফেসবুকে প্রেমে পড়েন 'সামিয়া' নামের এক মেয়ের। প্রেমের টানে গত ৭ জুন শান্তর বাড়িতে চলে আসেন সামিয়া। এরপর পরিবারের সম্মতি ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ধর্মীয় রীতিতে তাদের বিয়ে হয়। দেড় মাস ধরে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সংসারও করে। কিন্তু গত শুক্রবার জানা যায়, যাকে সবাই 'নববধূ' সামিয়া বলে জানত, সে আসলে একজন পুরুষ—মো. শাহিনুর রহমান। এই ঘটনায় শুধু চাঞ্চল্য নয়, বরং আমাদের সমাজের বেশ কিছু গভীর ক্ষত উন্মোচিত হয়েছে।
প্রথমেই প্রশ্ন আসে, এই ঘটনা কি নিছকই প্রতারণা? শাহিনুর ওরফে সামিয়া কি শুধুই শান্তকে ধোঁকা দিয়েছে? নাকি এর পেছনে রয়েছে আরও জটিল কোনো বাস্তবতা? ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর শাহিনুর দাবি করে, তার হরমোনজনিত সমস্যা আছে, তাই নিজেকে মেয়ে ভাবতে ভালো লাগে। এই দাবিটি হয়তো একটি ট্রান্সজেন্ডার বা জেন্ডার ডিসফোরিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির করুণ মানসিক অবস্থা তুলে ধরে।
তবে, এই দাবির আড়ালে একটি ভিন্ন চিত্রও লুকিয়ে থাকতে পারে। আমাদের সমাজে সমকামিতা একটি ট্যাবু। ইসলাম ধর্ম অনুসারেও এটি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এমন অবস্থায়, শান্ত এবং শাহিনুর যদি একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে, তবে তাদের পক্ষে সমাজের সামনে নিজেদের সম্পর্ক প্রকাশ করা অসম্ভব। তাই তারা বিয়ের নাটক সাজিয়েছিল, যাতে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে একসঙ্গে থাকতে পারে। যখন পরিবারের সন্দেহ বাড়তে থাকে এবং তারা ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে, তখন এই নাটকীয় প্রতারণা'র ঘটনা সাজানো হয়। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের সমকামী সম্পর্ককে আড়াল করার চেষ্টা করে।
বিয়ের সময় মৌলভি ডেকে ধর্মীয় রীতিতে যে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়েছিল, তা আসলে ইসলামের পবিত্র বিধানের চরম লঙ্ঘন। ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন, যা নারী ও পুরুষের মধ্যে নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে সম্পন্ন হয়। এর প্রধান শর্তই হলো পাত্র-পাত্রী ভিন্ন লিঙ্গের হতে হবে। শাহিনুর যেহেতু একজন পুরুষ, তাই এই বিয়ে ধর্মীয়ভাবে কখনো বৈধ হতে পারে না। এখানে মৌলভির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। একজন ধর্মীয় নেতা কিভাবে পাত্রীর পরিচয়পত্র, অভিভাবক বা আত্মীয়স্বজন ছাড়া শুধু মুখের কথায় বিয়ে পড়িয়ে দিলেন? এটি ধর্মীয় প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের সমাজের উদাসীনতা ও অজ্ঞতাকে প্রকাশ করে।
শান্ত এবং তার পরিবার দেড় মাস ধরে একজন পুরুষকে বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিয়েছিল। এটি তাদের চরম অসচেতনতা প্রমাণ করে। একজন অপরিচিত ব্যক্তি, যার কোনো পরিচয়পত্র নেই, যার কোনো অভিভাবক নেই, তার সম্পর্কে কোনো খোঁজখবর না নিয়েই কিভাবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো ? কিছু মানুষ সমাজের চোখকে ফাঁকি দিতে ধর্মের মতো পবিত্র বিধানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ।
এই ঘটনাটি কেবল একটি প্রতারণার গল্প নয়। এটি একটি গভীর সামাজিক সংকটের প্রতিচ্ছবি। এটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, একটি নিষিদ্ধ ভালোবাসাকে আড়াল করতে মানুষ কতটা মরিয়া হতে পারে এবং সেই কাজে ধর্ম ও সমাজকে কিভাবে ব্যবহার করা হয়।
ইত্তেফাক: দেড় মাস সংসার করার পর জানাজানি, নববধূ আসলে পুরুষ ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ৮:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




