somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড. ইউনুসের পদত্যাগের পথ: রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন কি ?

০৩ রা নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাজনীতির মাঠে কখনোই সহজ সমীকরণ দেখা যায় না। সাধারণ মানুষের চোখে দুই আর দুই মিলে চার হয়, কিন্তু রাজনীতিবিদদের চোখে সেই চার থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে যায়। শামীম ওসমানের সেই কথাটা আবার মনে করিয়ে দেয রাজনীতিবিদরা দুই আর দুই মিলে বাইশ দেখতে পারে। হাসনাত আবদুল্লাহ, রাজনীতিতে প্রবেশের পর থেকে যেন এই ‘সুপার পাওয়ার’-এর ভরসা নিয়েছেন। শুধু তিনি নয়, আকতার, নাহিদ, পাটোয়ারী—সবাই এখন দুই আর দুই মিলে বাইশ দেখতে পারেন। তাদের দাবি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্য কারও মাধ্যমে জারি হলে তা মানা হবে না।

তাদের এই অবস্থান আপাতদৃষ্টিতে জুলাই বিপ্লবের ম্যান্ডেটকে প্রধান উপদেষ্টার হাতে কেন্দ্রীয়করণের প্রয়াস বলে মনে হলেও, এর পেছনে লুকিয়ে আছে এক গভীর কৌশল। কারণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন থেকে শুরু করে যাবতীয় কার্যক্রমে দেশের বিদ্যমান সংবিধানকে অনুসরণ করে চলছে। সেই হিসাবে, প্রধান উপদেষ্টার একক আদেশে সনদ বাস্তবায়ন করা সাংবিধানিকভাবে দুর্বল এবং প্রশ্নবিদ্ধ। এই জায়গায় এনসিপি রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর ওপর 'ফ্যাসিবাদের অনুচর' ট্যাগ লাগিয়ে তার মাধ্যমে আদেশ জারির সম্ভাবনাকে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। এটি কেবল একটি রাজনৈতিক বিরোধ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে নিশ্চিত করার এক সূক্ষ্ম চাপ।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা এবং এনসিপির এই নির্দিষ্ট আবদার আসলে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক চিত্রনাট্য তৈরির একটি অংশ। একটি সম্ভাবনাময় পরিস্থিতি হলো, রাষ্ট্রপতি চুপ্পু যদি দ্রুত পদত্যাগ করেন, তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হতে পারেন। কিন্তু এই পদক্ষেপে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং সেনাবাহিনীর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডারদের নীরব সম্মতি পাওয়া আবশ্যক, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা বজায় রাখা এবং প্রধান উপদেষ্টার সাংবিধানিক রীতিনীতি উপেক্ষা করে আদেশ জারির সম্ভাবনা নিয়ে নীরবতা: সবই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে নেপথ্যে কোনো গভীর রাজনৈতিক বোঝাপড়া চলছে।

এনসিপি কেন জেনে বুঝে এই অসাংবিধানিক পথে হাঁটতে চাইছে? তারা কি দেশের আইন-কানুন সম্পর্কে অবগত নয়? অবশ্যই তারা অবগত। এই অবস্থানে থাকার মূল কারণ সম্ভবত দূর ভবিষ্যতে প্রফেসর ইউনূসকে নির্বাচিত সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। বর্তমান পরিস্থিতিতে উপদেষ্টাদের ভবিষ্যতে লাভজনক পদ গ্রহণে যে নিষেধাজ্ঞা আনার কথা ছিল, ছাত্র উপদেষ্টাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে তা স্থগিত রাখা হয়েছে। এটি প্রফেসর ইউনূসের জন্যেও ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকারের রাষ্ট্রপতি হওয়ার একটি রাস্তা খোলা রেখেছে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি সহজেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে পারবেন এবং এতে এনসিপির দাবি পূরণ হবে।

এনসিপির এই 'বাইশ' দেখার হিসাবটি তাই স্পষ্টতই একটি বড় নেগোসিয়েশনের দিকে ইঙ্গিত করে। এই নেগোসিয়েশনের মূল দাবি হতে পারে: 'আমরা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসানোর পথ সুগম করব, বিনিময়ে রাষ্ট্রপতি পদে আমাদের পছন্দের ব্যক্তিকে নিশ্চিত করতে হবে এবং সংসদে এনসিপির জন্য প্রয়োজনীয় আসন বা প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।' এই কৌশলগত চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে এনসিপি একদিকে জুলাই বিপ্লবের ম্যান্ডেটকে ধরে রাখতে চাইছে, অন্যদিকে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে বসিয়ে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে নিজেদের প্রভাব নিশ্চিত করতে চাইছে ।



সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×