somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন: বাংলাদেশের জেন-জি বিপ্লব কি ব্যর্থ হচ্ছে ?

০৮ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


( লেখাটি ফাইনান্সিয়াল টাইমসের "Is Bangladesh’s Gen Z revolution falling apart?" শীর্ষক নিবন্ধ থেকে অনুপ্রাণিত)

এক বছর আগের গল্প মনে আছে? যখন বাংলাদেশে একটি যুগান্তকারী বিপ্লব হয়েছিল। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন শেষ হয়েছিল। তরুণ প্রজন্ম রাস্তায় নেমেছিল। বিশ্ব মিডিয়া এটিকে একটি "মুনসুন রেভোলিউশন" বলেছিল। এটি ছিল আশার এক নতুন সূর্যোদয়। কিন্তু এখন Financial Times লিখছে - এই বিপ্লব "একটি মিথ্যা ভোর" হয়ে উঠছে। এবং এই বার্তা শুধু একটি সংবাদ নয়, এটি একটি রাজনৈতিক খেলা।

Financial Times-এর লেখা শুরু হয় আরমান নামের একজন আইনজীবীর গল্প দিয়ে। তিনি আট বছর একটি নিরাপদ কারাগারে বন্দী ছিলেন। তার অপরাধ কী? তিনি তার বাবা মীর কাসেম আলীকে আইনি সাহায্য করছিলেন। মীর কাসেম আলী জামায়াত-এর একজন নেতা। এবং শেখ হাসিনার সরকার তাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল। এই গল্পটি কঠিন। এটি মানুষের আবেগকে ছুঁয়ে যায়। আট বছর একা, অন্ধকারে। এবং এই গল্পের মাধ্যমে Financial Times বলছে - শেখ হাসিনা একজন অত্যাচারী, একজন একনায়ক। তিনি মানুষকে গুম করতেন। মারা হতো। তার শাসন ছিল "ফ্যাসিবাদী"। এটি একটি স্পষ্ট বার্তা। হাসিনা খুবই খারাপ ছিল। তার পতন ভালো ছিল। এবং বাংলাদেশ সঠিক করেছে যখন তারা তাকে বের করে দিয়েছে।

এরপর Financial Times বলে - এই বিপ্লব একটি "ঐতিহাসিক মুহূর্ত"। এটি ন্যায্য ছিল। প্রয়োজনীয় ছিল। ১৪০০ মানুষ মারা গেছে, কিন্তু লেখা এটিকে একটি "প্রয়োজনীয় ত্যাগ" হিসেবে চিত্রিত করছে। এটি বলছে - এই বিপ্লব সঠিক ছিল। এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি একটি প্যাটার্ন। প্রথমে খুব খারাপ মানুষ (হাসিনা), তারপর একটি ন্যায্য বিপ্লব। এটি খুবই সহজ গল্প। খুবই স্পষ্ট। কিন্তু অপেক্ষা করুন - গল্প এখানে শেষ নয়।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি interim সরকার গঠিত হয়েছিল। সবাই ভেবেছিল এটি নতুন বাংলাদেশ আনবে। কিন্তু সরাসরি অভিযোগ করে Financial Times বলে না। পরিবর্তে, সূক্ষ্মভাবে প্রশ্ন তুলেছে। "সামাজিক ঐক্য গড়ে তোলা ড. ইউনূসের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে" - এর মানে, তিনি এটি পারছেন না। "ড. ইউনূসের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠছে" - এর মানে, তারা দুর্নীতিগ্রস্ত। "সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দানা বাঁধছে" - এর মানে, সমাজ ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এবং চূড়ান্ত আঘাত: "গণঅভ্যুত্থানকে অনেকেই একটি মিথ্যা ভোর হিসেবে বিশ্বাস করা শুরু করেছেন"। যে বিপ্লব এত প্রতিশ্রুতিশীল ছিল, সেটি এখন ব্যর্থ হতে চলেছে। এবং এর দায় interim সরকারের উপর।

Financial Times সবচেয়ে চতুরতা দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ কে নিয়ে । লেখা বলে - "আওয়ামী লীগ বলে বেড়াচ্ছে যে, তাদের কিছু নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে"। "বলে বেড়াচ্ছে" শব্দটি ব্যবহার করে Financial Times যেন বলছে - এটি শুধু একটি দাবি। কিন্তু একই সাথে, এটি উল্লেখ করছে। এটি বলছে - এটি সত্যও হতে পারে। এর মাধ্যমে কী বার্তা যাচ্ছে? এটি বলছে - interim সরকার হাসিনার প্রতিশোধ নিচ্ছে তো ঠিক, কিন্তু এখন তারা আওয়ামী লীগের লোকদের মেরে ফেলছে। এরা অত্যাচারী হয়ে উঠছে। এভাবে আওয়ামী লীগ "ভিকটিম" হয়ে উঠছে। এবং interim সরকার "নতুন অত্যাচারী" হয়ে উঠছে।

Financial Times একটি আন্তর্জাতিক পত্রিকা। যখন এটি লেখে "বাংলাদেশে সমস্যা হচ্ছে", তখন বিশ্ব শোনে। বিনিয়োগকারীরা শোনে। রাজনীতিবিদরা শোনে। সবাই ভাবে - "বাংলাদেশ অস্থিতিশীল"। এবং এখানে আসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় - "কট্টর ইসলামপন্থীদের উত্থান"। Financial Times বলছে, এই অস্থিতিশীলতার সুযোগে চরমপন্থীরা বাড়ছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। এবং এটি একটি গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে।এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ ? কারণ এটি একটি বৈশ্বিক সিগন্যাল। যখন পশ্চিমা মিডিয়া লেখে "চরমপন্থা বাড়ছে", তখন পশ্চিমা সরকারগুলো চিন্তিত হয়। তখন তারা ভাবে - "এই সরকার নিরাপত্তা দিতে পারছে না। তাহলে আমরা কেন সাহায্য করব?"

Financial Times যেসব বিষয় নিয়ে লিখছে - হাসিনার অত্যাচার, আওয়ামী লীগের ভিকটিমিজেশন, interim সরকারের ব্যর্থতা, চরমপন্থার উত্থান - এসব কিছুই রাজনৈতিক। কিন্তু Financial Times একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করছে না। এটি কথা বলছে না চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে interim সরকারের সফল অপারেশন সম্পর্কে। কেন? কারণ এটি interim সরকারকে ইতিবাচক দেখাবে। এটি দেখাবে যে তারা সফল। কিন্তু Financial Times এটি চায় না। এই "নির্বাচনী নীরবতা" খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি বলছে - "আমরা শুধু সমস্যা বলছি, সাফল্য নয়।" এটি একটি পরিকল্পিত বর্ণনা।

সবকিছু মিলিয়ে, Financial Times-এর এই লেখা একটি বার্তা পাঠাচ্ছে। "হাসিনা খুব খারাপ ছিল। তার পতন ভালো। কিন্তু interim সরকার সফল হতে পারছে না। তারা দুর্বল। সম্ভবত দুর্নীতিগ্রস্ত। এবং চরমপন্থা বাড়ছে। বাংলাদেশ অস্থিতিশীল। হয়তো পুরানো রাজনীতি ফিরে আসা উচিত।" এই বার্তা কার উপকার করছে? সম্ভবত হাসিনা-সমর্থকদের। সম্ভবত আওয়ামী লীগের। তারা যুক্তি দিতে পারে - "দেখো, interim সরকার ব্যর্থ। আমরা ফিরে আসতে পারি।" এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, বিশ্ব চিন্তিত হয় যে বাংলাদেশ অস্থিতিশীল। এর ফলে ক্ষমতা হস্তান্তর ঘটে। বড় শক্তিগুলি বাংলাদেশে আরও হস্তক্ষেপ করে। এটি একটি বৈশ্বিক কৌশলগত খেলা। এবং Financial Times সেই খেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ইত্তেফাক ডিজিটাল ডেস্ক : বাংলাদেশের জেন জি বিপ্লব কি ব্যর্থ হচ্ছে ?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×