somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেখ হাসিনার উল্টো পুরাণ : আমেরিকার হাত ছিলো না

১৪ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ক্ষমতাচ্যুতির প্রায় ১৫ মাস পর এসে আওয়ামী লীগ প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পূর্বের অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছেন। গত বছরের জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন হওয়ার পর থেকেই তিনি এবং তাঁর দলীয় নেতা-কর্মীরা বারংবার যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোকে ষড়যন্ত্রের জন্য দায়ী করে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেই প্রচারিত সব 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব'কে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে তিনি সম্পূর্ণ বিপরীত সুর তুলেছেন।

সিএনএন-নিউজ এইটিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন না যে তাদের পতনের পেছনে আমেরিকা বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তির সরাসরি ভূমিকা ছিল। বরং তিনি জোর দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের 'ভালো ও স্থিতিশীল সম্পর্ক' বজায় রয়েছে। তাঁর এই মন্তব্যের ফলে, ১৫ মাস ধরে তাঁর দলের অভ্যন্তরে প্রচার পাওয়া সেই "ওয়াশিংটন বা কোনো বিদেশি শক্তি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়াদিতে সরাসরি জড়িত" থাকার দাবিটি ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হলো।

হাসিনার এই 'উল্টো সুর' এমন এক সময়ে এলো, যখন তাঁর দলের নেতারাও পুরোনো অভিযোগে অনড় ছিলেন। ক্ষমতা হারানোর পরপরই গত বছরের আগস্টে ভারতের 'ইকোনমিক টাইমস' পত্রিকাকে উদ্ধৃত করে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, শেখ হাসিনা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে, কারণ তারা বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ চায়। এমনকি সবশেষ গত ৮ নভেম্বর রাশিয়ান সংবাদমাধ্যম 'আরটি'-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও তাঁর সরকারের বহুল বিতর্কিত মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠান ইউএসএআইডি ও ক্লিনটন পরিবার জড়িত ছিল। ফলে, দলের সর্বস্তরে যখন আমেরিকার হাত থাকার বিশ্বাসটি বদ্ধমূল, ঠিক তখনই প্রধান নেতার এমন অস্বীকৃতি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিদেশি শক্তিকে সরাসরি দায়মুক্ত করার পাশাপাশি শেখ হাসিনা তাঁর পতনের পেছনে একটি নতুন যুক্তিও তুলে ধরেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস পশ্চিমা বিশ্বে প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। তবে তাঁর মতে, পশ্চিমা বিশ্বে প্রভাবশালী শ্রেণি ড. ইউনূসের প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক ভাবমূর্তিকে ভুলভাবে গণতান্ত্রিক যোগ্যতা হিসেবে দেখেছেন এবং এভাবেই তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। এছাড়া তিনি এও দাবি করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক বজায় ছিল।

ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধানের এই 'ষড়যন্ত্র তত্ত্বের' বারবার পরিবর্তন বা নাকচ করে দেওয়া হয়তো রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে, কিন্তু এটি সেই নির্মম সত্যকে আড়াল করতে পারেনি যা তাঁর পতন ঘটিয়েছিল। গত বছরের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু সেই আন্দোলনকারীদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'রাজাকারের নাতিপুতি' বলে কটূক্তি করলে পরিস্থিতি দ্রুত সহিংস হয়ে ওঠে। আন্দোলন দমনে রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বশক্তি এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের ব্যবহার করা হয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, জুলাই-আগস্টের ওই অভ্যুত্থান চলাকালে ১ হাজার ৪০০-রও বেশি মানুষ নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত ও হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হন। অভ্যন্তরীণ গণরোষ, রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই ঘটনাই শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছে।

হাসিনার সরকারের পতনের কারণ নিয়ে রাজনৈতিক বয়ানে এত পরিবর্তন এলেও, জুলাই-আগস্টের ওই দমন-পীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের আইনি প্রক্রিয়ার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিবিসি-তে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং অনুসারে, জুলাইয়ের আন্দোলনকালে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি তিনি নিজেই দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। এই মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং একটি মামলার রায় আগামী ১৭ নভেম্বর (সোমবার) ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই 'উল্টো সুর' ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধানের এক প্রকার আত্মরক্ষামূলক অবস্থান বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি নতুন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে। কিন্তু এটি ভুলে গেলে চলবে না যে, ক্ষমতাচ্যুতি কেবল কোনো বিদেশী শক্তির ষড়যন্ত্রের ফল ছিল না, বরং তা ছিল দেশের ভেতরে তীব্র জনরোষ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক অনিবার্য পরিণতি।

মুল সংবাদ : হাসিনার উল্টো সুর, এখন বলছেন—‘উৎখাতের পেছনে আমেরিকার হাত নেই-বাংলা নিউজ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×