somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাউল সমাজ বনাম তৌহিদি জনতার সংঘর্ষ নিয়ে উত্তাল বাংলাদেশ !

২৪ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"একটা একটা বাউল ধর, ধইরা ধইরা জ*বা*ই কর" - এই স্লোগানে আজকে উত্তাল ছিলো মানিকগঞ্জ। তৌহিদি জনতার বিক্ষোভ মিছিল থেকে বাউল সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ সমাবেশের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। মানিকগঞ্জের বাউল সমাজ বাউল আবুল সরকারের মুক্তির দাবীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছিলো। ধর্ম অবমাননার দায়ে বাউল আবুল সরকারকে জেলে ভরে পুলিশ।

বাউলদের উপর মামলা-হামলার ঘটনা এই প্রথম নয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও বাউলদের উপর হামলা হয়েছিলো। এটা কেবল তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। যখনই দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হতে থাকে তখন তৌহিদি জনতার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তবে এবার যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে উহাদের মেজাজ খারাপ হয়েছে সেটা নিয়েও আলোচনা করার বিশেষ অবকাশ রয়েছে।

বাউল আবুল সরকার বাংলাদেশের কোন এক জেলায় পালাগানের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সেখানে তিনি কুরআন-হাদিস, আল্লাহ এবং নবীকে নিয়ে উনার নিজের কিছু দৃষ্টিভংগী ব্যাখ্যা করেছেন। একজন বাউল মানুষ সাধারণত দেহতত্ত্ব নিয়ে ভালো জ্ঞান রাখার সম্ভাবনা আছে। যদি লালন ফকির কিংবা শাহ আবদুল করীমের গানের কথা চিন্তা করি। বাউল আবুল সরকার কোনো হাদিস কুরআন বিশারদ নন। উনার কুরআন-হাদীস বিষয়ক কোনো কিছু জানার আগ্রহ থাকলে কিংবা না বুঝলে একজন বিজ্ঞ আলেমের কাছ থেকে সেটা বুঝে নিতে পারেন। নিজের অজ্ঞতা নিয়ে স্টেজে উঠে এমন কোনো বক্তব্য রাখা উচিত নয় যা অন্যজনের মনে আঘাত করে।

খুব সম্ভবত বাউল আবুল সরকার মানিকগঞ্জের বাহিরে কোথাও পালাগানের জন্য আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি আল্লাহ এবং রাসুল কে নিয়ে যে সব কথা বলেছেন উহা খুবই বিভ্রান্তিকর একজন সাধারণ মুসলিমের জন্য। এক্ষেত্রে বাউল আবুল সরকারের আঞ্চলিক কথার টোনও এই বিভ্রান্তি বাড়িয়ে তুলেছে যা নিয়ে সবার অতি সত্ত্বর দৃষ্টিপাত করা উচিত।

একটি ইউটিউব ভিডিওতে দাবী করা হচ্ছে আবুল সরকার উক্ত কথার কারণে তৌহিদি জনতার রোষের স্বীকার হয়েছেন। আবুল সরকার বলেছিলেন, "তিনি নাকি কুরআনে আল্লাহর একেক সময়ে একেক কথার কারণ বুঝতে পারছেন না"। "কখনো আল্লাহ বলেছেন নুরের কথা, আবার কখনো বলেছেন রুহের কথা, আবার কখনো বলেছেন ইশকের কথা"। সম্ভবত সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন "আল্লাহর কথার আগা-গোআ তিনি কিছুই বুঝতে পারেন নি"। এখানেই যত বিপত্তি বেধেছে। তিনি আগা-গোড়া উচ্চারণ না করে আগা-গোআ উচ্চারণ করেছেন। সাধারণ দৃষ্টিতে তিনি আল্লাহকে কটাক্ষ করেছেন। যে কোনো সাধারণ মুসলিম এটা নিয়ে প্রতিবাদ করবেই। তৌহিদি জনতা তো কড়া মুসলিম!

বিগত শেখ হাসিনার আমলে কোন এক ক্লাসের ইসলাম শিক্ষা বইয়ের শেষ পাতায় হিন্দুদের দেবী দূর্গার ছবি ছাপানো ছিলো। বাংলাদেশের বেশিরভাগ পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ তখন ভারত পেত। যারাই ইসলাম শিক্ষা বইতে এমন ছবি দেখেছিলো সবাই ক্ষুব্ধ হয়েছে। অনেকে বলতে শুরু করে শেখ হাসিনা মোদির হিন্দুত্ববাদের পথে নিয়ে যেতে চায় কোমলমতিদের। ভারত থেকে বই ছাপাবেন ভালো কথা কিন্তু আপনি কেবল ইসলাম শিক্ষা বইয়ের পিছনের পৃষ্ঠায় দেব-দেবীর ছবি রাখবেন উহা দুরভিসন্ধিমূলক বলেই বিবেচিত হবে। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনি ভয়ে সেই বই সমস্ত ইশকুল থেকে পুনরায় ফিরিয়ে নেয়। এই ঘটনায় সাধারণ মুসলিমরাই যে পরিমাণ প্যানিক আচরণ দেখিয়েছেন বাউল আবুল সরকারের বক্তব্য তারচেয়ে বেশি প্যানিক এটাক আসার মতো।

আবুল সরকার একই পালাগানের অনুষ্ঠানে দাড়ি কাটা নিয়ে বক্তব্য প্রদান কালে আবারো একই কাজ করলেন। তিনি নবীজীর হাদিস বর্ণনা করলেন এইভাবে, "এক হাদিসে এসেছে নবীজি জনৈক ব্যক্তির থুতনীতে মাত্র একটা দাড়ি দেখে হাসতে লাগলেন, এতে অনেকে ভাবলেন যে নবীজী বুঝি লোকটির উপর নাখোশ হয়েছেন। পরদিন সবাই মিলে জনৈক ব্যক্তির সেই একটি মাত্র দাড়ি কেটে আবার নবীজীর সামনে হাজির করলেন। এবার নবীজীর মুখ বেজার হয়ে গেল। সবাই জিজ্ঞাসা করেছে কি হলো হুজুর? তিনি বললেন লোকটির একটি মাত্র দাড়িতে ৭০ জন ফেরেশতা ঝুলছিলো।"

আবুল সরকার এরপর নিজের দাড়িতে হাত ধরে বলতে শুরু করলেন, "আগে দাড়ি ছিলো না, এখন রাখছি। দাড়ি চাছলে ফেরশেতাদের গোআ কেটে যাবে!" আবার অদ্ভুত এবং বেয়াক্কেল মারকা কথা বলে বসলেন। গোড়া না বলে গোআ বললেন বাউল মিয়া। আবার সেই সময় তিনি হাসছিলেন। ব্যস এরপর শুরু হলো গেঞ্জাম।

আবুল মিয়া আসলে আল্লাহ এবং ফেরেশতাদের নিয়ে কি বলতে চেয়েছিলেন সেটা আরো ভালো করে শোনা দরকার। এক্ষেত্রে উনার আঞ্চলিক টোন কে বিবেচনায় নেয়া উচিত। আমাদের বাংলাদেশে রংপুর অঞ্চলের মানুষ "র" উচ্চারণ সঠিক ভাবে করতে পারেন না। তারা রংপুরকে অনেক সময় অংপুর উচ্চারণ করে থাকেন। গুগলে খোজ খবর করে জানতে পারলাম মানিকগঞ্জের কিছু উপজেলা, যেমন শিবালয়, ঘিওর, সাটুরিয়া ও হরিরামপুরের মানুষ "র" এর স্থলে "অ" ব্যবহার করেন। "রা" কিংবা "ড়া" এর স্থলে তারা যে "আ" ব্যবহার করতে পারেন সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

কথায় আছে এক দেশের বুলি অন্যদেশের গালি। মানিকগঞ্জের বাহিরে খুব কমসংখ্যক মানুষ বাউল আবুল সরকারের বলা কথার মর্মার্থ বুঝতে পারবেন। আবুল সরকারের দোষ হচ্ছে সে তার অজ্ঞানতার সাথে নিজের জ্ঞান মিলিয়ে জনসাধারণের সামনে কথা বলছেন। উনার কিছু জানার থাকলে অবশ্যই আগে এলেম আছে এমন মানুষের সাথে কথা বলা উচিত। যে বিষয়ে উনার জ্ঞান নেই তা নিয়ে কথা বলা অনুচিত।

ইন্টেরিম সরকার যাতে তুষের আগুন ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সাথে সাথে গ্রেফতার করে বাউল আবুল সরকারকে। কিন্তু এমন ঘটনা বাউল সম্প্রদায়কে ক্ষেপিয়ে তুলেছে যার ফলশ্রতিতে তারা মাঠে নেমেছিলেন। তৌহিদি জনতা ইন্টেরিম সরকার যে আসলে তাল পাতার সেপাই সেটা বুঝে গেছে। আবার সুশীলরা ও গণমাধ্যম যেভাবে বাউলদের পক্ষে লিখছে উহারা তাতে ক্ষিপ্ত হয়েছে। কিন্তু আরেকজনের শান্তিপূর্ণ মিছিলে গিয়ে তারা ছাত্রলীগ স্টাইলে হামলা করে ভুল কাজ করেছে । বাউলদের পাছায় লাথি মেরে পানিতে ফেলে দিয়েছে। সরকার বরাবরের মতো মৌখিক কড়া শাসন করেই দায়িত্ব শেষ করে ফেলবে। তবে বাউল আবুল সরকার মজহার লাইনের লোক বলে বেশ কানাঘুষা আছে বিধায় উনার সরাসরি পক্ষ নিতে পারছি না।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১:১৪
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×