রেসিডেন্ট ভাঁড় - মতান্তরে ব্লগের সবচেয়ে সুবিধাজনক পদগুলোর একটি.......যুগে যুগে আর কালের ধারাবাহিকতায় সৃষ্টির প্রথম প্রহর থেকেই সামহোয়্যার মুখরিত হয়েছে রেসিডেন্ট ভাঁড়দের পদচারণায়। ব্লগের এই বিশেষ পদটির সৃষ্টি হয়েছিলো প্রয়োজনের তাগিদে, নিতান্তই শখের বশে নয় - তাই প্রোফেশনালিজম এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়। আর তাই ব্লগের এই বিশেষ পদটি দাবী রাখে প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশি আলোচনার। আজকের আলোচনাটি শুধু একটি টিউটোরিয়ালই নয়, একইসাথে একটি মিনি হ্যান্ডবুকও বটে।
প্রথমেই জেনে নেই আসুন রেসিডেন্ট সম্পর্কে কিছু সাধারণ প্রশ্নাবলী (FAQ) ও তাদের উত্তর:
১. কারা রেসিডেন্ট?
উঃ কর্তৃপক্ষের বিশেষ আনুগত্য লাভকারী ব্লগারগণ যারা ব্লগে দৃপ্ততার সাথে বিচরণ করেন ও কর্তৃপক্ষের জন্য ক্লিয়ার জোন সৃষ্টি করেন ও বিনিময়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নানারকম সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকেন। সমার্থক শব্দ: রেসিডেন্ট, ভাঁড়।
২. রেসিডেন্ট হয়ে কি লাভ?
উঃ রেসিডেন্ট হলে আপনাকে ব্লগে ব্যান খাওয়ার চিন্তা করতে হবে না, যা খুশি তাই ও যেভাবে খুশি বলবার অধিকার আপনি পাবেন। এবং শুধু ব্লগেই নয়, ব্লগের বাইরের জীবনেও এর সুফল আপনি পাবেন।
৩. কি কি বিষয়ের উপর রেসিডেন্ট হওয়া না হওয়া নির্ভর করে?
উঃ আপনার আর্থ-সামাজিক অবস্থান, সোশ্যাল স্ট্যাটাস, কর্মজীবন, মামুর জোর প্রভৃতি বিষয়াদির উপর রেসিডেন্ট হওয়া না হওয়া নির্ভর করে।
৪.কর্তৃপক্ষ কেন রেসিডেন্টদের নিয়োগ দেন?
উঃ ব্লগে কর্তৃপক্ষের নিজের অবস্থানটা বেশ টালমাটাল। তারা নিজেরা আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে গেলে ব্লগারদের দাউড়ানি খেয়ে ২পা পিছিয়ে আসেন। আর তাই প্রয়োজন হয় রেসিডেন্ট নামক এইসব Inside manদের। এরা সাধারণ ব্লগারদের ভিড়ে নিজেদেরকে মিশিয়ে (শেষ অব্দি অবশ্য পারেন না. ল্যান্ঞ্জা ঠিকই দেখা যায়) কর্তৃপক্ষের সাফাই গান এবং কর্তৃপক্ষের নিতান্তই কোন অবাঞ্ছিত পদক্ষেপেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন যাতে করে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তটি তথাকথিত জনসমর্থণ পায়।
৫. রেসিডেন্টদের জীবন কি কষ্টকর?
উঃ যদিওবা অধিকাংশ রেসিডেন্টই এই ব্যাপারটি গোপন রাখতে চান তথাপি রেসিডেন্টদের জীবনটা আসলে বেশ কষ্টের। তারা কখনোই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধচারণ করতে পারেন না আবার সাধারণ ব্লগারদের সাথে নিজেকে পুরোপুরি মিশিয়েও ফেলতে পারেন না - উপরন্তু তাদের দ্বারা ক্ষণিকে ক্ষণিকে লাঞ্ছিত হন। দুই নৌকায় পা রেখে কখনোই শান্তিতে কাজ করা যায় না। But that's how it goes - you can't have better of the both worlds. কিছু পেতে হলে, কিছু হারাতেও হয়।
৬. রেসিডেন্টদের আর কোন বিশেষ ক্ষমতা আছে কি?
উঃ উপরোল্লখিত ক্ষমতাবলী ছাড়াও রেসিডেন্টদের আরো কিছু বিশেষ ক্ষমতা আছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্টিকি পোস্ট নির্ধারণী ক্ষমতা। রেসিডেন্ট ভাঁড়গণ কোন সাধারণ পোস্টে গিয়ে - "স্টিকি করা হোক" কথাটি উচ্চারণ করা মাত্রই ব্লগে যেনো ঝড় বয়ে যায় এবং মিনিটখানেকেও মধ্যেই পোস্টটি স্টিকি হয়। কবে আরো এক্ষেত্রে আরো বেশি কার্যকর হলো কর্তৃপক্ষকে ফোন করে স্টিকি করতে বলার পদ্ধতিটি। ঠিক এই একই কাজটিই কয়েকশ' ব্লগার মিলে গলা ফাটিয়ে, চিল্লিয়ে বা মেইল করে কর্তৃপক্ষকে জানালেও এ্যাকশন নিতে কর্তৃপক্ষের একযুগ সময় লাগে। রেসিডেন্টদের আরো একটি বিশেষ ক্ষমতা হলো সীমিত আকারে মোডারেশন ও ব্লগ পরিচালনার ক্ষমতা। অতীত সাক্ষী আছে, ব্লগের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে এইসব রেসিডেন্টদের অঙ্গুলীর নির্দেশেই শত শত নির্দোষ ব্লগার জেনারেল, ওয়াচ অথবা ব্যানড হয়েছিলেন, মুছে ফেলা হয়েছিলো শত শত পোস্ট। এই বিশেষ ক্ষমতাটি প্রয়োগে রেসিডেন্টকে মুখের কথাটি কর্তৃপক্ষের কানে ঢালার কাজটিই করতে হয় শুধু। কর্তৃপক্ষও ব্লগে নিয়োগদানকৃত তাদের এইসব এজেন্টদের মতামত দ্বারা প্রভাবিত হয়েই মোডারেশন ও ব্লগ পরিচালনা করেন।
৭. আমিও কি রেসিডেন্ট হতে পারবো?
উঃ এ প্রশ্নটির উত্তর দেয়া মুশকিল। কেননা রেসিডেন্ট কেউ হয় না, বানানো হয়। তাই পুরো ব্যাপারটিই নির্ভর করছে কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা ও পছন্দের উপর। ব্লগের সব রেসিডেন্ট একই রকম নন, বিশেষ বিশেষ ও সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনেই মূলতঃ তাদের সৃষ্টি। তবে রেসিডেন্ট হবার সকল যোগ্যতাবলী ও কর্তৃপক্ষের সুনজর থাকলে - কেন নয়? আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন পূর্ণাঙ্গ রেসিডেন্ট ভাঁড়।
আসুন এবারে এক নজরে দেখে নেই রেসিডেন্ট ভাঁড় হওয়ার প্রক্রিয়াসমূহ:
পূর্বশর্ত:
১. যেকোন একটি কর্পোরেট বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বা ফার্মে স্থায়ী চাকরী।
২. জন্মগত পা-চাটা/চামচামির স্বভাব।
৩. দৃপ্ত মানসিকতা ও আত্মবিশ্বাসী ব্যাক্তিত্ব।
৪. ব্লগ সিস্টেমের ফাঁক-ফোঁকরগুলো সম্বন্ধে সম্যক ধারণা।
৫. প্রশাসনে ও বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে মোটামুটি উপরের লোক হাত হাতে থাকা, ফোনবুকে তাদের সকলের নম্বর সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনে ফোন করে কাজ করিয়ে নেওয়ার গুণ।
৬. সুমিষ্ট হাসি যা যে কাউকে প্রভাবিত করে ফেলবে (অপশনাল)
ব্লগে কর্তব্যসমূহ:
১. নোটিশবোর্ডের প্রতিটি পোস্টে কমপক্ষে একটি প্রশংসামূলক কমেন্ট করা চাই এবং সম্ভব হলে প্রথম কয়েকটি কমেন্টের একটি।
২. কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধচারণকারী ব্লগারদের ঠ্যাঁটানি দিতে বা নিজের বাক্তিগত শত্রুতার প্রতিশোধ নিতে ব্লগারদের পোস্টে গিয়ে হুমকি-ধমকি, একাধিক নিকের ব্যবহার করে মন্তব্য প্রদান ও প্রয়োজনে গালির বর্ষণ (কর্তৃপক্ষের পিকনিকে যাওয়ার শর্তসাপেক্ষে)।
৩. কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ব্লগে চুপচাপ থাকা বা সরব হওয়া।
৪. মাঝে মাঝেই বিভিন্ন জনকল্যাণকর (!) পোস্ট দিয়ে ব্লগজাতিকে উপকৃত করা।
৫. ব্লগে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা কর্তৃপক্ষের বডিগার্ডগিরী করা।
৬. বিভিন্ন বিতর্কিত পোস্টে কমেন্ট করে ব্যাক্তিনিকধারী কর্তৃপক্ষ/নোটিশবোর্ডের জন্য কমেন্ট করার উপযুক্ত পরিবেশ তথা Clear Zone সৃষ্টি করা।
৭. আঙ্গুলের ইশারায় বা তাৎক্ষণিক ফোনকলের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে কোন ব্লগারকে ব্যান/জেনারেল করার বা পোস্ট মুছে ফেলার ঔদাত্ম আহবান জানানো।
৮. কর্তৃপক্ষের উদ্দ্যোগসমূহে প্রয়োজনীয় সাহায্য করার আশ্বাস ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। (এটার কিছু ভালো দিক আছে)
ব্লগের বাইরের দায়িত্বসমূহ:
১. ব্লগের বিভিন্ন উদ্দ্যোগ, উৎসব বা আয়োজনে নিয়মিতভাবে আবির্ভূত হওয়া।
২. শুধু ব্লগের ভেতরেই নয়, ব্লগের বাইরেও কর্তৃপক্ষের সাথে সুহৃদ সম্পর্ক বজায় রাখা।
অতিরিক্ত দায়িত্বসমূহ:
১. মডুর বাজার করে দেয়া।
২. বিভিন্ন কাজে মডুকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।
রেসিডেন্ট হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরো জানতে আপনি "ভাঁড় হয়েছি, ভার লয়েছি" নামক বইটির সাহায্য নিতে পারেন। বইটি লিখেছেন বিশিষ্ট রেসিডেন্ট টাকিলা। বইটি বাজারে এনেছে না.ই. প্রকাশনী। ৪২৫ পৃষ্ঠার এই বইটির মূল্য মাত্র ৩৮০ টাকা।
* পোস্টটি ব্লগার কায়েস মাহমুদ এর অনুরোধে লেখা
পূর্বের টিউটোরিয়াল সমূহ:
১. টিউটোরিয়াল - কেমনে হইবেন পেশাদার ব্লগীয় ছাগু
২. টিউটোরিয়াল - কেমনে হইবেন পেশাদার ব্লগীয় লুল
৩. টিউটোরিয়াল - কিভাবে নিজেকে মডুদের হাত থেকে রক্ষা করবেন
৪. টিউটোরিয়াল - কিভাবে লিখবেন স্টিকিযোগ্য পোস্ট
৫. টিউটোরিয়াল - কিভাবে হবেন পেশাদার ব্লগীয় গুলবাজ/গুজবকারী/রটনাকারী
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৫৮