somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনা ভাইরাস, আমাদের গার্মেন্টস শিল্প ও অর্থনীতি

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাগর মহাসাগর দাপিয়ে বিভিন্ন দেশকে ভয় দেখিয়ে বেড়াত যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার USS Roosevelt. সেই এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের সৈনিকদের মধ্যে করোনা দেখা গেল। এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারকে বেইজে ঢোকার অনুমতি দেয়া হলো না। মাঝ সমুদ্রে পড়ে থাকল।

এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের ক্যাপ্টেন পেন্টাগনে চিঠি লিখলেন। চিঠিতে বললেন, এখন তো যুদ্ধ চলছে না। তাহলে আমার সৈনিকেরা সাগরের মাঝে মারা যাবে কেন?

চিঠির উত্তরে পেন্টাগন ঐ ক্যাপ্টেনকে অপেশাদার আচরণের অজুহাতে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিল।

আর USS Roosevelt এর সৈনিকেরা বনের খেয়ে বনের মোষ মেরে সেটা নিয়ে আসত ঘরে। সেখান থেকে তাদের অল্প কিছু জুটত। আমাদের দেশেও মোটামুটি এই অবস্থাই চলছে এখন। চাকরি বাঁচাতে পেটের দায়ে হাজার হাজার শ্রমিক এখন ঢাকামুখী। নিজের দায়, পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতেই তারা ছুটে আসছে। তবে পার্থক্যটা হচ্ছে, এদের পেটে যদি ভাত না জোটে, এই দেশের পেটেও ভাত জুটবে না।

বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির বাইরের দেয়ালগুলোতে দেখবেন বিশাল ভেন্টেলেটর ফ্যান দেয়া আছে। ঐ ফ্যানগুলোর সামনে আপনি দুই মিনিটও দাঁড়াতে পারবেন না।

বাংলাদেশ পুরোটা দাঁড়িয়ে আছে গার্মেন্টস শিল্পের উপরে। জিডিপির প্রায় পুরোটাই আসে এখান থেকে। বৈদেশিক যে রিজার্ভ আছে তারও বেশিরভাগটাই এখান থেকে আসে। এই যে বিশাল জিডিপি, বিশাল রিজার্ভ- পুরোটা এসেছে এই গার্মেন্টস কর্মীদের হাত ধরেই। ঐ আগুন গরম ফ্যাক্টরীতে বসেই তারা এই দেশের অর্থনীতির ভিত দাঁড় করিয়েছে, বিশাল রিজার্ভ দিয়েছে, বিশাল জিডিপি দিয়েছে। আর আপনার আমার পক্ষে সেই ফ্যাক্টরির বাইরেই টেকা সম্ভব না।

বিনিময়ে তারা কি পায় জানেন? খুব সামান্য কিছু টাকা বেতন পায়। দুপুরে পাখির মতো উড়তে উড়তে বাসায় গিয়ে নাকে-মুখে দুটো গুঁজে আবার ফ্যাক্টরীতে চলে আসে। ফ্যাক্টরীতে আগুন লাগলে মেইন গেটে তালা দিয়ে দেয়া হয়। কারণ, আগুন লেগেছে এই গুজব ছড়িয়ে বানানো পোশাক গুলো নিয়ে যেতে পারে তারা। ২০০৬-৭ এর দিকে হবে হয়তো। টঙ্গীতে এক গার্মেন্টস শ্রমিককে তো পিটিয়ে মেরেই ফেলা হয়েছিল । অপরাধ- ফ্যাক্টরী থেকে নিজের বানানো একটি পোলো টি-শার্ট গায়ে দিয়েছিল সে।

এই রিজার্ভ আর জিডিপি এসেছে আমাদের এই গার্মেন্টস শ্রমিক ভাই-বোনদের রক্ত আর ঘাম বিক্রি করে। এদেশের যে প্রাইভেট সেক্টরের এত চাকুরীর সুযোগ হয়েছে, তাও এই গার্মেন্টেসের হাত ধরেই। বিশাল শপিং কমপ্লেক্স হয়েছে একের পর এক, ঢাকা শহর ফুলে ফেঁপে উঠেছে। কাদের জন্য? এই গার্মেন্টস কর্মীদের জন্যই।

করোনা হানা দেয়া পর থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। যারা এই পোশাকগুলো কিনত, তারাই তো হাসপাতালে। পোশাক কিনবে কে? এই যে যারা আজ ফেরী বোঝাই করে ফিরছে, এদের কিছু হলে এদেশ কি টিকবে? কোন শিল্পই টিকবে না। একটাও না। শ্রমিক না থাকলে শিল্পও যে টিকবে না।

গার্মেন্টসগুলো খোলা রাখতে এক প্রকার বাধ্য মালিকশ্রেণী। অর্থের লোভ তো আছেই। আর কাজ না করলে শ্রমিকের পেটেও ভাত জুটবে না। কাকে ছেড়ে কাকে দোষ দিবেন? আপনার ব্যবসায় ১০ টাকা লাভ হলে সেখান থেকে না আপনি আপনার কর্মচারীর বেতন দিবেন। নিজের পকেট থেকে তো আর দিবেন না।

মালিকশ্রেণী এই ঘাম আর রক্তের টাকায় ফুলে ফেঁপে উঠেছে। কিন্তু যারা ঘাম দিল, রক্ত দিল তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। এদের দিকে সরকার বলুন আর মালিকশ্রেণী বলুন, কেউই ফিরে তাকায়নি কোনদিন। মালিকশ্রেণী সব সময় দায়সারা গোছের একটা ক্ষতিপূরণ গছিয়ে গেছে। তাজরিন ফ্যাশনস থেকে রানা প্লাজা, মারা গেছে আমার এই শ্রমিক ভাই-বোনেরাই। আর দিয়ে গেছে বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ।

এই ঢাকা শহরে আজ থেকে ২০ বছর আগেও কয়জন মানুষ ছিল? এখনকার মতো এত লোক ছিল না। আর এখন ঢাকা শহর শুরু হয়েছে জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে, আর শেষ হয়েছে নরসিংদীতে গিয়ে। আল্লাহপাক যদি করোনার হাত থেকে আমাদের রক্ষা করেন, তাহলে এই শহরের ব্যপ্তি আরও বাড়বে। শপিং মল হবে, রিয়েল এস্টেট বাড়বে। কিন্তু যারা এই ঘাম রক্ত দিয়ে এই দেশটাকে গড়ে দিয়ে গেল, তাদের ভাগ্য পাল্টাবে না। এইযে এতগুলো লোক একজনের ঘাড়ের উপর উঠে আরেকজন আসছে, কাল আল্লাহ না করুক এদের কিছু হলে এদের দেখবে কে? এদের কিছু হলে এদেশটাও যে বসে যাবে।

একবার ভাবুন এদের কথা।
প্লিজ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:২৪
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×