♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)

(ছবি নেট হতে নিয়ে এডিট করা)
প্রিয় আপা,
আপনাকে লিখতে সবচাইতে বেশি ভয় পাচ্ছি। হয়তো এটা পড়ে হাসছেন। কিন্তু সত্যি বলতে আপা ব্লগে এই প্রথম এতো অল্প সময়ে কারো প্রতি এতোটা আবেগী হয়েছি। জানিনা আপনি কি জাদু জানেন। আপনার লিখা পোস্ট বা মন্তব্য যতো পড়ছি ততোই অবাক হয়ে চলেছি। একজন মানুষ কিভাবে এতোটা সাধারণের মাঝেও অসাধারণ হতে পারে ভেবে পাচ্ছি না! আপনার ব্লগিং-এর বয়স এবং পরিসংখ্যান যথেষ্ঠ্য ভারি হবার পরও আপনার সান্নিধ্য পেতে এতোটা বছর সময় লাগলো যা আমার চরম ব্যার্থতা বা দূর্ভাগ্যই বলা চলে। আপনাকে একটা সত্যি কথা বলি। নাম পড়ে ব্যক্তিত্ব ধারণা করার একটা বদ অভ্যাস আমার আছে। আর যাদের নাম ব্লগের লিস্টের শুরুর দিকটায় আছে তাদের যথেষ্ঠ্য গুণী এবং গম্ভীর ব্যক্তি বলে ধারণা হয়। আপনার নামের মাঝে কেমন যেনো একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার-স্যাপার আছে বলে আমার মনে হয়। এতো বড় নাম মনে হয় না ব্লগে আর কারো আছে। এই যে আপনার নামের মাঝে একটা খানম তথা খান্দানি ভাব-সাব আছে তাতে আপনাকে খুব মুডি মনে করেছিলাম। তাছাড়া আমি যখন ব্লগে নিয়মিত তখন আপনি অনেকটা অনিয়মিতই বলা চলে। তাই আপনি ছিলেন আকাশের চাঁদ, যা আমার ধারণা করা গাম্ভীর্যপূর্ণতাকে আরো গাড়ো করে। মন বলে, আপনি যথেষ্ঠ্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো দায়িত্বে নিয়োজিত। মন্ত্রী পরিষদের কেউ হতে পারেন। মাঝে হালকা সময় পেলে একটু অবকাশ যাপন করেন ব্লগে এসে। এসব আকাশ-কুসুম ভেবে আপনার সাথে দূরত্ব হয়ে যায়।
হে মহৎ প্রাণ,
সেদিন আপনার রম্য কবিতা পড়ে ভয়ে ভয়েই সেই রম্য মন্তব্য করেছিলাম। ভেবেছিলাম আপনার এতো ব্যস্ততার মাঝে হয়তো পাত্তা পাবোনা। কিন্তু আপনার প্রতিমন্তব্যটি সত্যিই আমার সব ভাবনাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। এতো সহজে আইস ব্রেক করবে কখনো ভাবিনি। সেইসঙ্গে আরো অবাক হয়েছি আপনার প্রতিমন্তব্যের বদন্যতা দেখে। তখন বেশ অনেকবার প্রতিমন্তব্যের সঙ্গে নামটি মিলিয়ে দেখছিলাম সব ঠিক আছেতো? নিজেকে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। এখনও মনে হলে বিশ্বাস হয়না। কি ভেবেছি, আর কি দেখছি! সত্যি বলতে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে যেমন, আমার অবস্থাও তার চাইতে কম নয়। চিমটি কেটে পরখ করার দরকার ছিলো। সত্যিই হিসাব মিলেনা যে, “লাইলী আরজুমান খানম লায়লা” নামের মানুষটি এতো মিশুক প্রকৃতির! নাম দেখে ধারণা করার যে অভ্যাস সেটা তখন চরমভাবে নড়ে উঠে। এখনো বলছি, আপনার নামটির মাঝে অন্যরকম একটা বিষয় আছে। নামটি পড়লেই মনে কেমন যেনো একটা শিহরন খেলা করে। বিটিভি-তে বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানের যে এনাউন্স করা হতো, তাতে প্রচারিত কোনো নাম বলে মনে হয়।
হে মনোহারিণী,
তারপর আপনার মন উজার করা মন্তব্যগুলো যতো পড়ি, ততো হারিয়ে যাই। এই ইট-পাথরের যুগে নরম মনের মৃত্যু হয়েছে প্রায় বলে যে একটা ধারণা ছিলো, সেটাও যেনো ভূমিকম্পে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আপনার বর্ণগাঁথার জাদুতে মন আবেশিত হয়ে যায়। মনে হয় যেনো, অনেক সাধনার পর মনের মতো কিছু পেলাম। সত্যি বলতে আপা, সামুতে আছি ঠিকই। কিন্তু যা চাই তা পাইনি। মন উজার করে ভালো মানুষের ভীড়ে ধারণা শেয়ার করার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে সামুকে আপন করেছিলাম। কিন্তু যাত্রার শুরুতেই হোঁচট খাই। যখন নতুন ছিলাম তখন এসে এখানের পরিবেশ আমার যেনো কেমন কেমন লাগে। যা ভেবেছি তার সঙ্গে কিছুর মিল পাচ্ছিলাম না। মনের কথা যতো খুলে বলতে চেষ্টা করি ততোই যেনো আটকে যেতে থাকি। পরে বুঝলাম এখানে ডুয়েল মিনিং কথা-বার্তা চলে। আমি যা বলি, অন্যের কাছে তা সেভাবে ডিকোড হয় না। আর তখন বুঝিনি সামু যে রাজনীতির এক বিশাল আখড়া। ভেবেছিলাম সামু সাহিত্যের স্থান। তাই শুরুর দিকে শুরু করেও আর সেভাবে কন্টিনিউ করা হয়নি। তবে তখন আরেকজন খান্দানি আপার সান্নিধ্য লাভ করেছিলাম বলেই ঝরতে ঝরতেও আজ অবধি টিকে গেছি। তিনি হলেন “শেহজাদী”। যদিও তার মূল আইডি'র সান্নিধ্য অদ্যবধি পাচ্ছি, তবুও সেই “শেহজাদী” আপাকে আজও ভুলতে পারিনি। তারপর ঘটনাচক্রে ধীরে-ধীরে কাজী ফাতেমা ছবিপ্পা, ফারহানা শারমিনাপি, দেয়ালিকা বিপাশাপি, জুনাপি প্রমুখদের সুসান্নিধ্য লাভ করে ধন্য হয়েছি। এই লিখাতে আর ভাইদের নাম যুক্ত করে বড় করছি না বলে ক্ষমাপ্রার্থী। পরিশেষে ধন্য হলাম আপনার সান্নিধ্যে।
হে হৃদয় উজারি,
কেউ আমাকে মূল্যায়ণ করলে চেষ্টা করি তারচেয়ে বেশি মূল্যায়ণ তাকে করি। অদ্যবধি কারো সাথে এ নিয়ে তেমন প্রতিযোগিতায় পরিনি। কিন্তু আপনার সঙ্গে যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে! সত্যি আপনার সুবর্ণগাঁথা মুক্তোরমালা, সুসজ্জিত কথামালা, সুগঠিত বাক্যসম্ভার আমাকে বাকরুদ্ধ করে দেয়। কোনো উত্তর খুঁজে পাইনা। যা লিখি তাই তুচ্ছ মনে হয়। আপনার সঙ্গে এ খেলায় পাল্লা দেওয়া নিতান্তই অসম্ভব। আপনার কথার আবেশে মন যেনো হিপনোটাইজড্ হয়ে যায়। সত্যি আপনি মহাকথক। আপনার সান্নিধ্য যদি কেউ সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়, তবে তার শিক্ষায় যথেষ্ঠ্য ঘাটতি থেকে যাবে। কিন্তু কষ্ট কি আপা জানেন? এ যুগে এমন দামী কথার মূল্যায়ণ করতে কেবল হাতে গোনা কিছু মানুষই পারে। বকিরা আধুনিকতা নামক জঞ্জালে আবদ্ধ হয়ে একে তোষামোদি বা চাটুকারিতা বলে। তখন ভীষণ কষ্ট লাগে। হয়তো বলবেন যুগের হাওয়া। কিন্তু আপা, এমন যুগতো আমরা চাইনি। আমরা চেয়েছি আমাদের সন্তানেরা যেনো থাকে দুধে-ভাতে। তাই বলে তারা হারাম বাঘের দুধ খাবে, সেটাওতো আশা করিনি।
হে কথার জাদুকর,
আপনার বাক্য নিয়ে এতো কথা এজন্যেই বলছি কারণ আপনার বাক্যের মাঝে সঞ্জীবনী শক্তি রয়েছে। নতুন প্রজন্মের জন্য এর বড্ড প্রয়োজন। কিন্তু আমরা পুরাতন প্রজন্মের বেশির ভাগই কেনো যেনো বড্ড স্বার্থপর। নতুনদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার না ঘটিয়ে অঙ্কুরে বিনষ্ট করে দিতে চাই আমাকে ছাপিয়ে যাবে এই ভয়ে। এ কথা বলতে গিয়ে আরেক ব্লগারের কথা মনে এলো। “নিবর্হন নির্ঘোষ” কে চিনতেন? সেও অনেক আশা-আকাঙ্খা নিয়ে ব্লগে এসেছিলো। তার মাঝে অনেক ট্যালেন্টও আছে। কিন্তু এই অঙ্কুর বিনষ্ট করার যাঁতাকলে পরে চরম ঘৃণা নিয়ে ব্লগ ত্যাগ করেছে। যদি এভাবে নতুনেরা ঝরে যায়, তবে নবজাগরণের গান কিভাবে গাইবে? তখনই ভাবি, যদি সবাই আপনার মতো করে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করতাম, তবে একটি অঙ্কুরও বিনষ্ট হতোনা। কতোইনা দূর্ভাগা তারা যারা আপনার মতো কারো থেকে সঞ্জীবনী সুধা পান করতে পারেনি! তবে আমরা যার অঙ্কুর বিনষ্ট করার চেষ্টা করছি, তারা কি করবো যখন এসব অঙ্কুর সাঈদ বা মুগ্ধ হয়ে ফিরে আসবে? আর এই ফিরে আসার পেছনে পর্দার আড়ালে থেকে যাচ্ছে আপনার মতো দিশারীগণ।
হে মহাকথক,
হয়তো ভাবছেন এ কোন পাগলের পাল্লায় পরলেন! আপনার মূল্যবাণ সময় নষ্ট করার জন্য দুঃখিত। পারলে ক্ষমা করে দেবেন। কথাগুলো না বলে পারলাম না। আর আমার হতে আপনার যে আশা তা জানিনা পূর্ণ করতে পারবো কিনা। কারণ, সবার সাধ আর সাধ্যের সম্মিলন ঘটেনা। ভার্চুয়ালি আমার ভাবনার সঙ্গে যেমন বাস্তব আচরণ মিলেনা, তেমনি ভার্চুয়াল জীবন আর বাস্তব জীবনের মাঝে বিরাট তফাৎ। ব্লগে আমাকে যতোটা উচ্ছাসিত দেখেন, বাস্তবে তারচেয়ে অনেক বেশি নিগৃহীত। মিথ্যা বলবো না, আল্লাহ্ প্রতিভা দিয়েছেন। কিন্তু পারিবারিক আর পারিপার্শ্বিক কারণে সেই প্রতিভা কাজে লাগাতে পারিনা। জীবন পার করছি পুল সিরাতে দাঁড়িয়ে। নিজের আপনজন হয়ে আছে নিজের সবচেয়ে বড় শত্রু। প্রতিটি দিন মনে হয় জীবনের শেষদিন। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিভার কদর কিভাবে করি? তাই আপনিসহ সবার দোয়া চাই। আল্লাহ্ আমাদের সকলের সহায় হোন। আল্লাহ্ সবাইকে সুখী-সুন্দর জীবনের সন্ধান দিন। আল্লাহ্ হাফিজ।
পূর্বে যাদের লিখেছি
মহাজাগতিক চিন্তা আংকল
জনারণ্যে একজন
সামু
সত্যপথিক
মডু
গোফরান
নতুন নকিব ভাই
পদাতিক ও গেঁয়ো ভূত ভাই
শেরজা তপন ভাই
সোনাবীজ ভাই
জুল ভার্ণ ভাই
সাড়ে চুয়াত্তর ভাই
ছবি আভী

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


