somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝলমলে সোভিয়েত শৈশব: আপেল

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুভ মধ্যাহ্ন। এই দুপুরে ঘুমঘুম চোখে খুব সহজেই কিন্তু শৈশবে ফিরে যাওয়া যায়। আমার দিব্যি মনে আছে দুপুরের খাওয়ার পর রাশিয়ান বই পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে যেতাম খুব ছোট বেলায়। সেই অসংখ্য বই ছবি আর গল্পের ভিড়ে আজ একটি ঝকঝকে শৈশব নিয়ে এলাম।


লাল বইয়ের মলাটে জড়ানো অদ্ভুত সুন্দর এক শৈশবের বই 'গল্প আর ছবি।' লাল মলাটের এই বইটি নিমেষেই শৈশব কে রাঙিয়ে দিতো চমৎকার কিছু চকচকে ছবিতে।রাশিয়ান শিশুতোষ বই গুলোর ছবি গুলো যে কি সুন্দর হতো , এই বই না দেখলে বোঝা যাবে না। 'গল্প আর ছবি' এর আরো একটা ছবি গল্প আজ নিয়ে এলাম।

যখন ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলাম তখন মনে হতে লাগলো, আচ্ছা রাশিয়ান শিশু সাহিত্যের গল্প গুলো শুধুই কি গল্প ছিল ? শুধুই কি ছোটদের ?


এই কাঁটা -মাথা লাল বুট পড়া সজারু , বইয়ের ছবি থেকে বের হয়ে এসে আমাকে সঙ্গ দিতো খুব। আমার প্রথম বন্ধু। সেই বন্ধু আমার সাথেই থাকে।

প্রগ্রতি প্রকাশনের ছাপাখানা বন্ধ হয়েছে বহু বছর আগে।এখনকার বাচ্চাদের কাছে সেই বই গুলো নেই। অনেকে শৈশবের মহামূল্যবান সম্পদ গুলো আজ আগলে রেখেছেন , বুক সেলফে রঙিন সেই শৈশব সবচেয়ে বেশি ঝলঝল করে , ঝকঝকে সোভিয়েত শৈশব।
আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস বাচ্চা এবং বাচ্চার বাবা মায়ের জন্য। আমার মত যারা এখনো বাচ্চা আছেন তাদের জন্য।সবার জীবনে শৈশব আসুক ফিরে ----------


আজকের আয়োজন : আপেল



হেমন্তের শেষাশেষি।গাছ থেকে পাতা ঝরে গেছে অনেকদিন , শুধু বুনো আপেল গাছটার মাথায় ঝুলছিল একটিমাত্র আপেল।
এই সময় বনে ছুটে বেড়াচ্ছিল খরগোস। দেখে কি , আপেল।
কি করে পাড়ি ? অনেক ডগায় , লাফ দিয়ে ছোঁয়া যাবে না।
'কা-কা !'
তাকিয়ে দেখে ফার গাছের ওপর দাঁড়কাক। বসে বসে হাসছে।
খরগোস হেঁকে বললে, ' দাঁড়কাক , আপেলটা পেড়ে দে !'
উড়ে গিয়ে আপেল পাড়লে কাক, কিন্তু ঠোঁটে ধরে রাখতে পারল না।
পড়ে গেল নিচে।




'ধন্যি তুই দাঁড়কাক,' এই বলে আপেল কুড়তে যাবে খরগোস। হঠাৎ জ্যান্তের মত ফোঁস করে উঠল আপেল , ছুটে পালাল।
এ কি কান্ড ?
ভয় পেয়ে গেল খরগোস, পরে বুঝলে : গাছের তলায় গা গুটিয়ে ঘুমিয়েছিল সজারু।
আপেলটা পড়েছে তারই গায়ে। ঘুম ভেঙে ধড়মড়িয়ে ছুটে দিয়েছে সজারু , আপেলটা তার কাঁটায় গাঁথা।
'দাঁড়া , দাঁড়া ! আমার আপেল নিয়ে চললি কোথায় ?'


সজারু থেমে বলে :
'এটা আমার আপেল , গাছ থেকে পড়েছে , আমি ধরেছি। '
সজারুর কাছে খরগোস ছুটে গিয়ে বলে :
' এখুনি দিয়ে দে আমার আপেল , ওটা আমার !'
দাঁড়কাক উড়ে এল তাদের কাছে।
বলে, ' তর্ক আবার কি, ওটা আমার , আমি ঠুকরে ফেলেছি।'
কেউ কারো মত মানে না , সবাই চেঁচায় :
'আমার ! আমার !'
বন জুড়ে চেঁচামেচি। শুরু হয়ে গেল মারামারি। সজারুর নাকে ঠোকর দিলে কাক। খরগোস কে কাঁটার খোঁচা দিলে সজারু , আর দাঁড়কাককে চাঁট মারলে খরগোস....


এমন সময় দেখা দিল ভালুক। হেঁড়ে গলায় বলে :
' কি ব্যাপার এতো গোলমাল কিসের ?'
সবাই তাকেই সালিস মানল।
' তুমি ভালুক , বনের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো , সবচেয়ে বুদ্ধিমান। ন্যায়মত বিচার করো। যার পক্ষে রায় দেবে , সেই পাবে।'
সব কথা বললে তারা ভালুককে।


ভালুক ভেবে কান চুলকালে।
বলল :

'কে প্রথম দেখেছিল ?'
খরগোস বললে , 'আমি!'

'আর কে পাড়লে ?'
'আমি', বলে কা-কা করলে কাক।

'বেশ , কিন্তু কে কুড়ল?'
'আমি , বললে সজারু।



ভালুক রায় দিলে , 'সবাইকারই অধিকার আছে তাহলে , প্রত্যেকেরই পাওনা আছে। '
' কিন্তু আপেল যে একটা ', বললে খরগোস সজারু দাঁড়কাক।
'সমান সমান তিন ভাগ করো , এক একজনে নেবে এক এক ভাগ। '
সবাই সমস্বরে বলে উঠল :
'সত্যিই তো, কথা মনেই হয় নি। '


আপেলটা নিয়ে চার ভাগ করলে সজারু।
এক ভাগ দিলে খরগোসকে :
' এটা তোর জন্যে , তুই প্রথম দেখেছিলি। '
দ্বিতীয় ভাগটা দিলে দাঁড়কাককে :
'এটা তোর জন্যে কাক , তুই পেড়েছিলি। '
'এটা আমার , আমি কুড়িয়েছিলাম।'
চতুর্থ ভাগটা সজারু ভালুকের থাবায় রাখলে :
'এটা তোমার জন্যে ভালুক....'
'আমায় কেন?' অবাক হল ভালুক।
' কারণ ঝগড়া মিটিয়ে দিলে তুমি , বুদ্ধি দিলে ভালো। '
সবাই যে যার ভাগ খেলে আনন্দ করে , কেননা ন্যায্যমতো ভাগ করেছে ভালুক , কাউকে ঠকায় নি। '




আপেল : গল্প এখানেই শেষ হলো। আগামীতে অন্য কোন ছবি গল্প নিয়ে আসবো বাচ্চা আর বাচ্চার বাবা মায়েদের জন্য। ভালো থাকুন। শৈশব ফিরে আসুক।


মাঝে মাঝে শৈশবের সেই রাশিয়ান বইগুলো বুকের মাঝখান থেকে আচমকা বের হয়ে আসতে চায় লেখায়। খুব ছোটবেলায় যখন আব্বা আমাকে বই পড়ে শোনাতেন , যখন আমি বানান করেও পড়তে পারতাম না , যখন আমি স্কুলেও যেতাম না -- তখন থেকেই রাশিয়ান বইগুলো আবার সাথেই আছে। তাই সেই 'ছোটমানুষের ' বইগুলোকে মাঝে মাঝে আমি শৈশবের স্কুল বলে ডাকি !


আরো সোভিয়েত শৈশব :

ঝলমলে সোভিয়েত শৈশব: বিপদ তারণ পাঁচন
রাশিয়ান শৈশব: ছবি ব্লগ ( বাচ্চা এবং বাচ্চাদের বাবা মায়েদের জন্য )
রুটির ফুল --- আমার সোভিয়েত শৈশব (আমার শৈশবের স্কুল !)
সাত বন্ধু ইয়ুসিকের - ( আমার সোভিয়েত শৈশব )
রূপের ডালি খেলা - (আমার সোভিয়েত শৈশব)
জ্যান্ত টুপি (আমার সোভিয়েত শৈশব)
সভ্য হওয়া - (আমার সোভিয়েত শৈশব)
মালপত্র (আমার সোভিয়েত শৈশব)
শেয়ালের চালাকি ১ (আমার সোভিয়েত শৈশব)
মোরগ ভাইটি (আমার সোভিয়েত শৈশব)
বীরব্রতী ভাসিয়া -- আমার সোভিয়েত শৈশব (আমার শৈশবের স্কুল !)
আমার সোভিয়েত শৈশব - আমার শৈশবের স্কুল !
শুনছি , ঘাস বাড়ছে...
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩১
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার বাকস্বাধীনতা সব সময়ই ছিলো, এখনো আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৯



ছোটকালে ক্লাশে অপ্র‌য়োজনীয় কথা বলে, অকারণ অভিযোগ করে, অন্যকে কটু কথা বলে শিক্ষকের মার খেয়েছিলেন নাকি? আমি অপ্রয়োজনীয় কথা বলে ক্লাশে কিংবা সহপাঠিদের বিরক্তির কারণ হইনি; ইহার পেছনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিডলাইফ ক্রাইসিস: বাঁচতে হলে জানতেই হবে

লিখেছেন মন থেকে বলি, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০০



"ধুর ছাই!
কিচ্ছু ভাল্লাগে না।
বা**, কী করলাম এতোদিন।
সব ফালতু।"


ক্যালেন্ডার কী বলছে? চল্লিশ পেরিয়েছে?

তাহলে দশটা মিনিট দিন। কারণ ব্যাপক সম্ভাবনা ৯৯% যে এই মুহূর্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের বাড়ির কাজের বুয়া যদি ব্লগে আসত ! :D

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:২৩

কয়েক বছর আগের কথা। আমাদের বাড়ির দীর্ঘদিন এক মহিলা কাজ করেছেন । তারপর তার ছেলেদের অবস্থা একটু ভাল হয়ে গেলে আর তাকে কাজ করতে দেয় নি। তবে অভ্যাসের কারণে বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি ১১ বছর ১ সপ্তাহ

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৪২


গত কয়েকমাস যাবত চাকরিগত ঝামেলায় ব্লগে তেমন সময় দিতে পারিনি। দেশের পরিস্থিতির মতো আমার পরিস্থিতিও ছিল টালমাটাল। আগের চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরি টিকিয়ে রাখতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলেছি। অফিসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩০

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা.........

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার বিষাদময় গ্লানির সঙ্গেই বোধকরি বেশি সম্পর্ক। কদাচিৎ কোনো বড় দলকে পরাজিত করার পর আমরা পুরো বাংলাদেশ এখনো আবেগে আপ্লুত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×