১ম খন্ড ২য় খন্ড ৩য় খন্ড ৪র্থ খন্ড ৫ম খন্ড
দিন দিন অবস্থা আরো খারাপ হয়। আমাকে তার বাসায় গিয়ে দেখা করে আসতে হয়। মানসিক অসুস্থতার জন্য সে হয় গৃহবন্দী। ডাক্তার বলেছে কোন ছেলের সাথে তার যোগাযোগ যেন না থাকে। তাহলে সে নাকি আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে। বিদায়ের সময় দরজায় দাড়িয়ে সে আমার সাথে দূরে কোথাও চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। অনেকক্ষণ আমি না বলতে পারি না। এই সুযোগে সে রিক্সা ডেকে চুপিচুপি তাতে চেপে বসে। আগ্রহ নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করে। তার পাশের দৃশ্যমান শূণ্যস্থানটুকু আড়াল করে যে অদৃশ্য শূণ্যতা সুকঠিন প্রাচীর তোলে তা আমি ভাঙতে পারি না। পারিনা তাই প্রাচীরের ওপাশে দুখী এক রাজকন্যাকে উদ্ধার করতে, তার অন্ধকার জীবনে এতটুকু আলোর সন্ধান দিতে। তবুও সে নিজে নিজেই আগ্রহের পিদিম জ্বালিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করে। এই দুঃখ আমি কোথায় রাখি ! এই ব্যর্থতা আমি কি দিয়ে ঢাকি !
একসময় যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হল। সে অসুস্থ। ভীষণ অসুস্থ। আমার আবির্ভাবই নাকি প্রায় গুছিয়ে ওঠা তার জীবনটাকে এলোমেলো করেছে। আমি সরে যাই। শেষ মুহূর্তে আমি তাকে কিছু কথা বলেছি। আমি জানি সেকথা শুনে সে একদিন সুস্থ হবেই।
তার বেশ কদিন পরের কথা। খবর নিতে তার বাসায় ফোন করলাম। জানতাম অন্য কেউ ধরবে। ভারী একটা পুরুষের গলা। হয়তো তার বাবাই হবে। আমি হড়বড় করে অনেক কথাই বললাম। তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। অগোছাল সেই কথাগুলো শুনে কি ভাবলেন কে জানে । আমার নিজের উপরই রাগ হল। কি বলছি নিজেই তো বুঝতে পারছি না। উনি বুঝবেন কি করে?
অনেকক্ষণ কোন কথা নেই। তারপর একসময় তিনি ধীরে ধীরে বললেন, ও মারা গেছে।
ফোনটা এরপর কে রাখলো তা মনে নেই। শুধু মনে হচ্ছিল কষ্টের ঘুড়ি টা সুতো কেটে উদ্দাম বেগে হারিয়ে গিয়ে লাটাই ধরার যন্ত্রণা থেকে আমাকে মুক্ত করে দিয়ে গেল। কিন্তু সেই মুক্তির মাঝে কোথাও একটা অতি আপনজন হারানোর মর্মন্তুদ হাহাকার ছিল। বিশাল বটবৃক্ষের শীতল ছায়া উপেক্ষা করে কেউ আর আমার ক্ষীণ প্রলম্বিত ছায়ায় এসে দাড়াবে না। বর্ষার ঘোর বর্ষণে মুক্তোর মত পড়তে থাকা বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ধরতে যখন আমি নদীতে ঝাপ দিতে যাবো তখন কেউ আর পেছন থেকে আমার শার্টের কলার খামচে ধরবে না। রাস্তা পার হওয়ার সময় এতটা আবেগ দিয়ে কেউ আর আমার শরীরের সাথে ঘন হয়ে হাটবে না।
সেই দিন থেকে আমার আর কিছুই ভাল লাগে না। (পরের পর্বে শেষ)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



