নরকের দরজায় বিরাট হট্টগোল। আমি পেছন থেকে কিছু বুঝতে পারছিলাম না। সামনে যে এগিয়ে যাব তারও উপাই নেই। বিশাল বিশাল শরীর নিয়ে ভৃগুদা, পদাতিক দা, ভুয়া মফিজ সাহেবরা দাঁড়িয়ে আছে। আরো অনেক পরিচিত মুখের ব্লগারকে দেখলাম আমাশয় রোগীর মতো মুখ করে অপেক্ষা করছে।
আমি পাশের একজনকে গুঁতো দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই, গেট পাস দিতে এতো দেরি করতেছে ক্যান’। নিশ্চিত বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে কার ভালো লাগে। স্মার্টফোনটা থাকলেও সময়টা কাটত। কিছুদিন আগে টারজান০০০০৭ কিবা করে একটি ম্যানেজ করে দিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য- নরকের প্রহরী সেটা দেখতে পেয়ে বাজেয়াপ্ত করেছে। এবং শাস্তি হিসেবে ৩ বেত্রাঘাত। কিংবা বলা চলে পিলারাঘাত। মানে হচ্ছে এই বেত্রাঘাত জীবিত থাকাকালীন রাম মজিদ স্যারের বেতের আঘাতের মতো নয়। এখানে বেত্রাঘাত মানে পদ্মা ব্রিজের লোহার পাইলের মতো ভীষণ একটি বস্তু দিয়ে দরমুশ কষানো। এক আঘাতে পৃথিবীর ভেতরের কোর পর্যন্ত বিনা টিকিটে ঘুরে আসা যায়।
চাঁদগাজীকে দেখছি নরকের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে নাতিদীর্ঘ জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দিচ্ছে। কয়েকদিন আগে উনি নাকি কোনো এক দেবতাকে ‘পিগমি ও ডোডোপাখি’ বলায় ‘কড়াই পড়া’ দেওয়া হয়েছিল। মানে হচ্ছে আলুর চিপসের মতো করে ৫০০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ৪১ সেকেন্ড ভাজা। কড়াই পড়ার পর এখন কিছুটা দেবতাদের বকা দেওয়াতে সংযত হয়েছেন শোনা যাচ্ছে। মনোযোগী শ্রোতা হিসেবে রাজীব নুরসহ অনেককে দেখলাম এইসব বিষয় শুনতে। আমিও ইতিউতি তাকিয়ে যোগ দিলাম।
এর আগে ইন্দ্ররাজ আমাদের প্রাথমিক বিচার সমাপ্ত করেছেন। তারই কিছু চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা হলঃ
@আখেনাটেনের বিচার
দেবতাঃ তোর নাম কিরে?
আখেনাটেনঃ মানবতার, আমি আখেনাটে...।
দেবতাঃ থাক, থাক। বুঝতে পারছি। তুই ঐ সামু না কি যেন একটা ‘জাতীয় সবার্থ পরিপন্থী’ ভ্যাজালা জিনিস ছিল ওটাতে ওল্টাপাল্টা লিখতিস।
আখেনাটেনঃ জী হুজুর।
দেবতাঃ তোর তো পাপের ফর্দি এতই বিশাল যে আমি মেশিন লার্নিং টুলস ব্যবহার করেও হিসাব মিলাতে পারলাম না। তা আমার মিশরের দোস্তের নামের সাথে নাম রেখে ভং ধরছিস ক্যান।
আখেনাটেনঃ না মানে। আমিও উনার ভক্ত ছিলাম হুজুর।
দেবতাঃ তোর ভক্তগিরি ছুটানোর ব্যবস্থা করতেছি দাঁড়া।
আখেনাটেনঃ হুজুর, নরকে প্রবেশের আগে আমার একটি আর্জি ছিল।
দেবতাঃ কি আর্জি বল শুনি।
আখেনাটেনঃ হুজুর, আমি খোঁজ নিয়েছি। আমার নেফারতিতি এখন স্বর্গবাসী হুর হয়ে অন্যের মনোরঞ্জন করছে। ক্যামনে…? একবার যদি আমার নেফারতিতির সাথে মোলাকাত করতে দিতেন। খালি একটাই প্রশ্ন করতাম...। এরপর আমার নরকে যেতেও আপত্তি নেই, হুজুর।
দেবতাঃ ওরে কে কোথায় আছিস! এই পাপিষ্ট কি কয়! এ নাকি নরকবাসী হয়ে হুরের সাথে দেখা করবে। তাৎক্ষণিক ৩ বেত্রাঘাতের ব্যবস্থা কর এই নাদানের।
@টারজান০০০৭’র বিচার
দেবতাঃ নাম বল?
টারজান০০০৭ঃ আজ্ঞে হুজুর, টারজান…
দেবতাঃ কি বললি, টারজান। তা তুই বনে-বাদাড়ে না থেকে নরকে কি করছিস?
টারজান০০০৭ঃ হুজুর, পুরোনাম টারজান০০০৭। সামুতে লিখি।
দেবতাঃ হুম, এবার বুঝছি; তা তোর তো নরকে আসার কথা নয়।
টারজান০০০৭ঃ মানবতার, কিছু পাঁঠা প্রমাণ সহ আপনার দরবারে আমার নামে নালিশ করেছে । তাই নরকের প্রহরীরা আমাকে এখানে আটকে রেখেছে।
দেবতাঃ তোর বিপক্ষে আবার কী প্রমাণ? তুই তো আমার গুণগানই গাইতিস।
টারজান০০০৭ঃ না মানে, হুজুর; ব্লগের অনেক পাঠাঁর আমি বিচি ফেলেছিলাম। কোন এক পাঠাঁ নাকি সেই বিচিগুলো কুড়িয়ে একসাথে করে এনে আপনার দরবারে প্রমাণসহ তাদের কষ্টের কথা অন্য দেবতাদের জানিয়েছি। সেই জন্য..।
দেবতাঃ ইন্টারেস্টিং তো। ওগুলো আবার কুড়িয়ে জড় করে প্রমাণও হাজির করেছে। পাঠাঁদের এলেম আছে বলতে হয়। যাহোক, তুই চিন্তা করিস না, ব্যাপারটার আমি ফারদার ইন্টারোগেশন করে তোকে জানাচ্ছি। এখন যা। নেক্সট উইকে তোর ব্যাপারটা সুপ্রীম আদালতে তোলা হবে। পাঠাঁরা দেখছি এখানেও গ্যাঞ্জাম লাগায়ে দিছে।
@রাজীব নুরের বিচার
দেবতাঃ এই তুই! তোর নাম কিরে!
রাজীব নুরঃ হুজুর, আমার নাম রাজীব নুর।
দেবতাঃ হুম; আর বলতে হবে না। তোকে তো আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। তুই তো সকালে আমাকে গালি দিস আবার বিকেলে সালাম দিস। তোর হাড্ডি চামড়া ছিলে যদি লবণ লাগাতে না পারছি তাইলে কিসের আমি ইন্দ্ররাজ।
রাজীব নুরঃ মানবতার, আপনি সাত আসমানের মালিক, এগুলো সবই ঘৃন্য ষড়যন্ত্র! আমি ভালা মানুষ সত্তেও কিছু হালার পো আমার পেছন দিকে মোটা...।
দেবতাঃ চুপ, বেয়াদপ। আমার সাথেও তর্ক। তুই কি জিনিস, সেটা আমি ভালো করেই জানি। শোন, এটাতো জানিস তোর বউ-বেটিরা স্বর্গবাসী। ওদের ওছিলায় তোকে মাফ করা যায় কিনা ভাবছিলাম। কিন্তু তোর ভ্যাজাল কথাবার্তাতে মত পাল্টাতে বাধ্য হলাম। এই কে আছিস, এই পাপিষ্টকে নিয়ে যা। একে ‘নরকে কালা কুমকুম’র নিচের চেম্বারে রাখবি।
@চাঁদ্গাজীর বিচার
দেবতাঃ তোর পরিচয় দিতে হবে না। তোর লেখা সামুতে আমিও পড়েছি। পড়েছি আর কেঁদেছি; কেঁদেছি আর রেগেছি; রেগেছি আর নেচেছি। আগে বল আমার প্রতি তোর এত রাগ ক্যান!
চাঁদ্গাজীঃ আগে ভদ্রভাবে কথা বলুন। তুই-তোকারি বাদ দিন। আপনার বালছাল কথা শুনার মতো আমার সময় নেই। আপনাদের মতো ডোডোপাখীদের চেনা আছে।
দেবতাঃ (বিস্মিত ও টাস্কিত; দেবালয়ে এসে কেউ তার মুখের উপর এভাবে বলতে পারে কিছুতেই ভাবতে পারছে না। নিজের শক্তিমত্তা নিয়ে নিজেরই সন্দেহ শুরু হচ্ছে এই লোকের কথায়; বিস্ময় সামলে)...ক্ষেপে গিয়ে তোতলাতে তোতলাতে, ‘সাত আসমানের কসম, তোকে যদি আমি অনন্তকাল ধরে কড়াই পড়া না দিয়েছি তো আমিও…...।’
চাঁদ্গাজীঃ (মনে মনে-- এখনও তুই-তোকারি করছিস; দাঁড়া মজা দেখাচ্ছি) নরকের ভয় দেখাচ্ছিস বড়। ব্লগেও এরকম আপনার মতো পিগমি, লিলিপুটিয়ানদের দৌড়ের উপরে রেখেছিলাম। জীবনে তো আর কম প্যাঁওপ্যাঁও শুনলাম না। এইসব বালছাল শোনার টাইম নাই। এবার শোনান আপনার ফালতু বিচার।
দেবতাঃ (কিছুক্ষন থম মেরে থেকে-- দেখে মনে হচ্ছে ঐ সব শুনে নিজের উপরেই আস্থাহীনতায় ভুগছেন ইন্দ্ররাজ, শরীরটাও চক্কর দিয়ে উঠছে...) এই কে আছিস? এই পাপাত্মাকে রোজার সময় যেমন বেগুনীর জন্য পাতলা করে ফেড়ে বেসনে চুবিয়ে কড়া তেল চুপচুপে ভাজা করা হয়, একেও এই ট্রিটমেন্ট দিবি। সাতদিন পর আবার আনবি আমার সামনে। তারপর দেখি কোনো উন্নতি হয়েছি কিনা !
আচ্ছা, থাক। এই জিনিস থেকে আমাকেও দূরে রাখবি। না হলে আমিও ভুলভাল করে ফেলব বিচারে। আজকের মতো বিচার সমাপ্তি। মাথা কাজ করছে না।
চাঁদ্গাজীঃ (নরকের প্রহরীরা নিয়ে যাওয়ার সময় পিছন ফিরে...) প্রশ্নফাঁস করে দেবতা হয়েছিলেন নাকি। ডোডো একটা।
(পরের দিন দেবতা ইন্দ্ররাজের মেজর ওপেন হার্ট সার্জারী জরূরী ভিত্তিতে করতে হয়েছে আকস্মিক…)
ছবি: অন্তর্জাল
*************************************************************************************
আখেনাটেন/আগস্ট-২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৩৭