somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপন্যাস - কুষ্ঠ নিবাস - পর্ব - ০৮

০৫ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




রহমত মিয়া হা হয়ে গেল। এটা তার মাথায় আসে নি। ইউসুফ আলী খানকে এ জন্যই সে এত শ্রদ্ধা করে। এ লোক খাঁটি বুদ্ধির।
রহমত মিয়া জিজ্ঞেস করল, ‘অহন কেমনে মানুষটারে ধরন যায় ?’
‘কাউরে সন্দেহ হয় নিহি ?’
‘আবু মিস্ত্রিরে সন্দেহ হয়। কয় দিন আগে যহন ক্যাশ থিকা দশ হাজার ট্যাকা হারাইল, তহন ওই ব্যাটাই অফিসে ঢুকছিল।’
ইউসুফ আলী খান নাক চুলকাতে চুলকাতে বললেন, ‘যাউক গা, তুমি এক কাম কর। তোমার সব কর্মচারী ছাটাই কইরা দেও। তুমি যহন বুজতে পারতাছ না বদমাইশ কেডা, তহন এইডাই হইল সহজ বুদ্ধি।’
রহমত মিয়া ভেবে দেখল বুদ্ধিটা মন্দ না। অপরাধীকে যখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, তখন সবাইকে বিদায় করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। একের পাপে দশের শাস্তি। সব সময় এটাই হয়। একজন বদমাশের জন্য দশ জন ভালো লোক কষ্ট পায়। সব পুরোনো লোক বদলে ফেললে ভবিষ্যতে আর এমন হবে না।
রহমত মিয়া উঠে দাঁড়াল, ‘তাইলে আমি অহন যাই।’
ইউসুফ আলী খান তার দিকে তাকালেন। বললেন, ‘যাইবা ? রাইতে খাইয়া যাও।’
‘না, তাড়াতাড়ি ফিরতে হইব। মিলে আজগর আলীরে থুইয়া আইছি। আর ফাহমিদারে কয় দিন পর নিয়া যামুনে, বেড়াউক কয় দিন।’
‘ঠিক আছে, বেড়াউক। তুমি খায়া গেলে খুশি হইতাম।’
‘না, আমি অহন যাই।’
‘কাইল সকালে আমি মিলে যামু নে।’
‘আচ্ছা।
রহমত মিয়া শ্বশুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সা নিল। একবার বাড়িটার দিকে তাকাল। তার মনে হল, কোন না কোন জানালা থেকে ফাহমিদা তাকিয়ে আছে। রহমত মিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ফাহমিদাকে এখন না ঘাটানোই ভালো। কয় দিন পর এমনিতে ঠিক হয়ে যাবে। রহমত মিয়া রিক্সা নিয়ে সোজা স মিলে চলে এল।
আজগর আলী অফিস বন্ধ করে গেটে বসে আছে। তাকে দেখে উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘স্যার, আমি সিদ্ধান্ত নিছি, আজ থিকা মিলেই থাকমু। শুধু দাড়োয়ানের উপর নির্ভর করা যায় না।’
রহমত মিয়া সানন্দে রাজি হল। ভালোই হল। বেশ খানিকটা নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। আজগর আলী বিশ্বাসী লোক। কিন্তু এই বিশ্বাসী লোককেও রাখা যাবে না। সব কর্মচারী বদলাতে হবে। সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
বাসায় ফিরে কিছুই খেল না রহমত মিয়া। ক্ষুধা নেই। টিভি দেখতেও ভালো লাগছে না। ক্যাসেট আছে। লাগালে হয়। কিন্তু ওই সব ছবি এখন দেখতে ইচ্ছে করছে না। খামোখা সোফায় বসে থেকে থেকে রাত ১১টা বেজে গেল। সে বাতি নিভিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। ঘুম আসছে না।
হঠাৎ মনে হল কলিংবেল বাজছে। আজগর আলী ফিরে এল নাকি ? কে হতে পারে ভাবতে ভাবতে সে বিছানা ছেড়ে নামল। আলো জ্বেলে দরজা খুলে থমকে গেল। একজন মহিলা। ফর্সা সুন্দরী একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপাশে।
‘কারে চান ?’, রহমত মিয়ার চোখে বিস্ময়।
‘আপনেরে।’
মহিলা চট করে ভেতরে ঢুকে পড়ল। রহমত মিয়া তাকে আটকানোর আগে মহিলা হাঁটতে হাঁটতে ড্রয়িং রুম পেরিয়ে গেল। রহমত মিয়া বোকা হয়ে গেল। রাতের বেলা এ কী ঝামেলা শুরু হল।
মহিলা বেড রুমে চলে গেছে। রহমত মিয়া দ্রুত হাতে দরজা লাগাল। ফিরে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনে কই থিকা আইছেন ?’
ভদ্র মহিলা বুকের উপর থেকে কাপড় ফেলে দিল। মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘অহনই বুজবেন কই থিকা আইছি। কী বুজবেন না ?’
রহমত মিয়া ঢোক গিলল। মহিলার বুকের ওপর থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। অদ্ভুত সুন্দর ফর্সা বুক। মহিলা ব্লাউজের হুক খুলছে।
রহমত মিয়ার ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। তবু সে বুদ্ধি হারাল না। আগে সব বুঝতে হবে। এ ঘটনা কেন ঘটছে ? খামোখা এই রকম খারাপ মেয়ে মানুষ তার কাছে আসতে পারে না।
মহিলা খেঁকিয়ে উঠল, ‘কী হইল, ট্যাকা ফালান।’
‘কিয়ের ট্যাকা ?’, রহমত মিয়া বোকা হয়ে গেল।
‘রাইত দুইফরে আফনের লগে মস্করা করতে আইছি। কিয়ের ট্যাকা বুজেন না ?’
রহমত মিয়া সাবধান হয়ে গেল। এ মেয়ে লোক তাকে বিপদে ফেলতে এসেছে। একে না ঘাটানোই ভালো। বুঝিয়ে সুজিয়ে বিদায় করতে হবে। ঝামেলা যত এড়ানো যায়, ততই মঙ্গল।
রহমত মিয়া মহিলাকে বোঝানোর চেষ্টা করল, ‘আমার কতাডা হুনেন। আমি আপনেরে চিনি না। আপনেরে তো ডাইকা আনি নাই।’
‘চুপ খানকীর পুত। ডাইকা আইন্যা ট্যাকা না দিয়া বাইচ্যা যাইবি ? জানোস, আমার চেহারা দেখতে হইলে হাজার ট্যাকা দেওয়া লাগে। ক্যা, তুই পুরুষ না ?’
গালি শুনে রহমত মিয়ার মেজাজ খিচড়ে গেল। সে রাগে ফেটে পড়ল, ‘হারামী মাগী, বাইর হ। আমি তরে ডাকি নাই। বাইর হ।’
‘এত সোজা ! ট্যাকা না দিলে যামু না। কী করবি তুই ? কী করবি ?’
‘দ্যাখ, কী করি।’
রহমত মিয়া জোর করে মেয়ে লোকটিকে বের করে দিতে চাইল। মেয়ে লোকটিও বাধা দিল। ধস্তাধস্তিতে মেয়ে লোকটির শাড়ি ছিঁড়ে গেল। রহমত মিয়া ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাকে বের করে দিল।
‘খানকীর পুত, ট্যাকা নাই তয় মউজ করনের হাউস হয় ক্যা ? ট্যাকা ছাড়া মউজ ছুটাইয়া দিমু।’
দরজার বাইরে মেয়ে লোকটি গজরাচ্ছে। যে কোন সময় পাশের ফ্লাট থেকে লোক বেরিয়ে আসতে পারে। রহমত মিয়া এক মুহূর্ত দিশেহারা বোধ করল। পর মুহূর্তে এক লাথি মেরে মেয়ে লোকটিকে সিঁড়ি থেকে ফেলে দিল।
‘হারামীর বাচ্চায় আমারে মাইরা ফালাইছে রে। দাঁড়া খানকীর পুত, তরে বুজাই কত ধানে কত চাইল।’
মেয়ে লোকটি সিঁড়ি ভেঙ্গে চলে যাচ্ছে। রহমত মিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। মহিলাটি কি চলে যাবে, নাকি আবার ফিরে আসবে ? সঙ্গে কি লোকজন নিয়ে আসবে ? রহমত মিয়া সিঁড়িতে ওৎ পেতে দাঁড়িয়ে রইল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রহমত মিয়া শুনতে পেল মেয়ে লোকটির উত্তেজিত কণ্ঠস্বর। রাস্তায় দাঁড়িয়ে খারাপ মেয়ে লোকটি তাকে গালি দিচ্ছে। রহমত মিয়া নিজেকে বিপন্ন বোধ করল। সে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল।
সে ব্যস্ত হাতে তালা লাগিয়ে বেরিয়ে এল। হারামী মাগী লোক জড়ো করছে। ইজ্জত সম্মান থাকবে না। রহমত মিয়া দ্রুত সিঁড়ি ভেঙ্গে ছাদের দিকে চলে গেল।
যাশ্ শালা ! ছাদের তালা বন্ধ। সিঁড়িতে পদশব্দ পাওয়া যাচ্ছে । কী হবে এখন ? রহমত মিয়া উপরের দিকে তাকিয়ে দেখল, সিঁড়ি কোঠার টিনের চালের একটা অংশ নেই। কিছু দিন আগে ঝড়ে উড়ে গেছে। রহমত মিয়া সেই ছিদ্রপথে মাথা গলিয়ে দিল।
ছাদে এসে সে হাপাতে লাগল। উহ, অল্পের জন্য তার ইজ্জত বেঁচে গেল। সে তৎক্ষণাৎ তওবা কেটে ফেলল। হে খোদা, আর কোন দিন কোন পাপ করব না। আর কোন দিন না। খোদা, তুমি পরম দয়ালু।
কিছুক্ষণ পরে রহমত মিয়া বুঝতে পারল, খোদা তাকে বাঁচিয়েছে ঠিকই কিন্তু একটা লোক তাকে বিপদে ফেলতে চাইছিল। এই লোকটা কে ? এ লোকটাকে চেনা দরকার।

চলবে .....


প্রথম পর্বদ্বিতীয় পর্বতৃতীয় পর্বচতুর্থ পর্ব পঞ্চম পর্ব ষষ্ঠ পর্ব সপ্তম পর্ব নবম পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:১৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×