somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপন্যাস - কুষ্ঠ নিবাস - পর্ব - ০৯

০৬ ই আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্বদ্বিতীয় পর্বতৃতীয় পর্বচতুর্থ পর্ব পঞ্চম পর্ব ষষ্ঠ পর্ব সপ্তম পর্ব অষ্টম পর্ব দশম পর্ব
পাঁচ
নুরু মিয়া দোকানটা চমৎকারভাবে সাজিয়েছে। ছোট দোকান কিন্তু খুবই চমৎকার। এত চমৎকার যে, মাঝে আজগর আলীরই বিশ্বাস হতে চায় না, এটা তার নিজের দোকান। নিজেকে এ দোকানের কর্মচারী বলে মনে হয়।
আজ বিকেলে দোকানের শুভ উদ্বোধন। বিশেষ কোন আয়োজন নয়, শুধু একটু মিলাদ। কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির কিছু নেতাকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। সমিতির সভাপতি হাকিম সাহেব দোকান উদ্বোধন করবেন।
নুরু মিয়ার আসার কথা সাত-সকালে। এখন সকাল নয়টা, তার খবর নেই। চট করে খবর হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। নুরু মিয়া সদাব্যস্ত মানুষ। এ গুরুত্বপূর্ণ কাজে না এলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। তার সব কাজই গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক ভেবে চিন্তে আজগর আলী রিক্সা নিল। ইয়া তাগড়া জোয়ান রিক্সাওয়ালা। কিন্তু তার রিক্সাটা কুঁজো। এমন কুঁজো যে সিটে বসা যাচ্ছে না। পিছলে রাস্তায় পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। আজগর আলী রিক্সার হুড উঠিয়ে দিল।
অজগর আলী সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সে রহমত মিয়ার কাছে যাবে কি না। তার নিজের যাওয়ার ইচ্ছে নেই। কিন্তু নুরু মিয়ার ঠ্যালা তাকে পেছন থেকে দাবড়ে বেড়াচ্ছে। তার যুক্তি, রহমত মিয়াকে দাওয়াত না দিলে সবাই সন্দেহ করবে, তাই রহমত মিয়াকে অবশ্যই দাওয়াত দিতে হবে। নুরু মিয়ার যুক্তি কাছে হেরে বাধ্য হয়ে তাকে যেতে হচ্ছে ।
রহমত মিয়াকে তার ভয় নেই। ভয় ইউসুফ আলী খানকে। লোকটা অসম্ভব হিসেবী এবং ধূর্ত। সে দিনই সে এই ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে। কী ভয়টাই না পেয়েছিল সে দিন !
সে দিন পুরো দিনই আজগর আলীর কেটেছে উৎকণ্ঠায়। রহমত মিয়া কী করছে কিংবা নুরু মিয়া কী করবে - এ সব ভেবে তার মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হয়েছিল। কেন সে এমন অকাজ করল ? উহ, এখন ধরা পড়ে গেলে কী হবে ? মার আর জেলের ঘানি। তাছাড়া নুরু মিয়া মাথা গরম মাস্তান। কী করতে গিয়ে কী করে ফেলে কে জানে ।
রাতে অফিসের টেবিলে শুয়ে তার কিছুতেই ঘুম আসছিল না। সীমাহীন ভয়, আশঙ্কা এবং উৎকণ্ঠায় তার পেট নেমে গেল। সে বার বার উঠ বস করতে লাগল। গরমে হাস ফাস করতে লাগল। মাথার উপর ঘুরন্ত ফ্যানটাকে মনে হল অকাজের জিনিস। ঘুরছে কিন্তু বাতাস নেই। কয়েক বার টয়লেটে যাওয়ার পরও তার মনে হল পেট পরিষ্কার হয় নি। জীবনে পরিষ্কার হবেও না। শুধু মাত্র বড় হতে চেয়ে সে এ কী বিপদে পড়ল ! তার চেয়ে বড় হতে না চাইলেই হত। উহ, কী বিপদ !
পর দিন সকালে ইউসুফ আলী খান সাহেব উপস্থিত। সারা রাতের নির্ঘুম দুশ্চিন্তায় তার মাথা ভোঁতা হয়েছিল, ইউসুফ আলী খান সাহেবকে দেখে সে ভড়কে গেল।
‘স্যার, আপনে এত সকালে ?’
‘কাজ আছে বইলাই আইতে হইল ।’
যে জায়গাটা হতে মাল খোয়া গেছে, ইউসুফ আলী খান প্রথমে সে জায়গাটা দেখলেন। তারপর আজগর আলীকে রাজ মিস্ত্রি আনতে পাঠালেন। আজগর আলীর মনে হতে লাগল এই বুঝি সে ধরা পড়ে যায়।
রাজ মিস্ত্রি নিয়ে এসে আজগর আলী যে দৃশ্য দেখল, তাতে তার বুক শুকিয়ে গেল। মিলের মিস্ত্রিদের তলব করা হয়েছে এবং প্রত্যেককে জেরা করা হচ্ছে। জেরা শেষে এক মাসের বেতন অগ্রিম দেয়া হচ্ছে এবং সে মুহূর্তে তাদের চাকুরি চলে যাচ্ছে। আজগর আলীর হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসতে লাগল। বুঝতে পারল সে ধরা পড়ে গেছে । এত নাটক শুধু তাকে ফাঁসানোর জন্য। জীবনটা শেষকালে বরবাদ হল। হা কপাল !
যখন অফিস রুমে তার ডাক পড়ল, তার হাত পা কাঁপতে লাগল। হাত পায়ের কাঁপুনি থামাতে গিয়ে শরীর কাঁপছে। শরীরের কাঁপুনিতে মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে।
‘আজগর আলী, মিস্ত্রি আইছে।’
‘জ্বি , স্যার।’
‘পুকুরের পাড়টা দেয়াল তুইল্যা বন্ধ কইরা দিতে হইব। তুমি কামটা বুঝায়া দেও। আমি আইতাছি।’
আজগর আলী প্রথমত বুঝতে পারল না সে কিছু শুনেছে কি না। যখন বুঝল, দ্রুত বেরিয়ে এল। বেরিয়ে এসে তার মনে হল, এই মাত্র তার নরকমুক্তি ঘটেছে।
রাজ মিস্ত্রিকে কাজ বুঝিয়ে দিতে দিতে ইউসুফ আলী খান এলেন। আজগর আলীকে দ্বিতীয়বার বেরুতে হল দেয়ালের জন্য মাল মসলা কিনতে। এক দিনেই দেয়াল দাঁড়িয়ে গেল।
সন্ধে বেলা যখন ইউসুফ আলী খান তাকে ডেকে পাঠাল, তখন সে মোটামুটি নিশ্চিত এবার শ্বশুর বাড়ি যাওয়া লাগবে - জেলের ঘানি। সে দুরু দুরু বুকে কাচুমাচু ভঙ্গিতে গিয়ে দাঁড়াল।
ইউসুফ আলী খান তার দিকে চারটা পাঁচ শ টাকার নোট বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘এই লও, তোমার অগ্রিম বেতন। বাকি কতাডা তোমারে কইলাম না। বুজতে পারছ তো ?’
আজগর আলী ভয়ে ভয়ে মাথা দুলাল, ‘জ্বি, বুজতে পারছি।’
ইউসুফ আলী খান তাকে দ্বিতীয় কথা বলতে না দিয়ে মিলে তালা লাগালেন। ইতিমধ্যেই নতুন দাড়োয়ান এসে পাহারা দেয়া শুরু করেছে। ইউসুফ আলী খান কোন কথা না বলে চলে গেলেন।
আজগর আলী বাজপড়া লোকের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইল। তার স্নায়ু কাজ করছে না। এ রকম কিছু ঘটবে, সে ধরতেই পারে নি। সে কি ধরা পড়েছে নাকি ধরা পড়ে নি ? পুরো ব্যাপারটা কি সাজানো নাটক ? পাতানো খেলা ? গভীর ফাঁদ ? তার মনে হতে লাগল, সে কোন অতিকায় প্রাণীর খাদ্যে পরিণত হয়ে গেছে।

চলবে ......


প্রথম পর্বদ্বিতীয় পর্বতৃতীয় পর্বচতুর্থ পর্ব পঞ্চম পর্ব ষষ্ঠ পর্ব সপ্তম পর্ব অষ্টম পর্ব দশম পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×