somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

''আফগানিস্তানে তালেবান" - শাসনের এক বছর । তালেবান শাসনের এক বছরে কি পেল আফগানিস্তান এবং কোথায় ও কেমন আছে এখন !!! ( তালেবানদের কাবুল দখল পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট - ৯ )।

১৮ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি - আল জাজিরা

আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা এবং পশ্চিমা বিশ্বের অবমাননাকর পশ্চাদপসরণ এবং কাবুল থেকে বিশৃঙ্খল প্রস্থান করার পর তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে ২০২১ সালের ১৫ ই আগস্ট। ইতিমধ্যেই,তালেবানদের ক্ষমতা দখলের এক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই ১ বছরের দীর্ঘ সময়েও তারা বিদেশের কোন দেশের স্বীকৃতি, সমর্থন কিংবা সাহায্য পায়নি। এ সময়ে পশ্চিমারা তাদেরকে স্বীকৃতি না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে নানা শর্তের বেড়াজালে। আফগানদের কৃষিই প্রধান উপজীবিকা ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সিংহভাগ বিদেশী অনুদান অর্থ্যাৎ দেশটির জিডিপির ৪০ শতাংশই পশ্চিমা সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল এবং সেই সাহায্য গত এক বছর ধরে বন্ধ। আফগানিস্তানের ১০ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আমেরিকা আটকে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ আফগানিস্তানের জন্য তাদের জরুরি ঋণের নির্ধারিত কিস্তি স্থগিত করে দিয়েছে। আটকে দেয়া এসব টাকা এখন তালেবানের ওপর প্রভাব খাটানোর জন্য আমেরিকা এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের প্রধান অস্ত্র। তারা বলছে, নারীদের শিক্ষা এবং কাজের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। নারী এবং আফগান সমাজের বিভিন্ন অংশকে ক্ষমতার ভাগ দিতে হবে,তবেই মিলবে বিশ্বব্যাপী তাদের সমর্থন ও স্বীকৃতি। আর এসব সমস্যা ও শর্তের কারনে আফগান অর্থনীতি টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত ধুকছে আর তালেবানরা চেষ্টা করছে সেই সব সমস্যার পাহাড় থেকে বের হয়ে আসতে তবে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তাদের কোন প্রচেষ্টাই ফলপ্রসু হিসাবে বিবেচিত হচছেনা।

এমনকি পাকিস্তান, রাশিয়া, ইরান সহ প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকেও স্বীকৃতি এবং সমর্থনের শর্ত হিসাবে সরকারে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী, সংখ্যালঘু এবং নারী প্রতিনিধিত্বের দাবি করা হয়েছে। অন্যদিকে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য চীন ও রাশিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে কাবুল তথা তালেবানরা। আমেরিকার দখলদারিত্ব থেকে ২০ বছর পরে কাবুলে গত বছর ১৫ ই আগস্ট তালেবানরা যে ক্ষমতা কেড়ে নেয়, তার প্রথম বার্ষিকী ছিল গত (১৫/০৮/২০২২) সোমবার। এই এক বছরে তালেবান শাসকদের সামনে পড়ে আছে সমস্যার হাজারো পাহাড়,যদিও তারা দেশের প্রাণহীন অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে। চেষ্টা করছে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নের। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার ফলে এ লড়াইয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হচ্ছে না। আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা তথা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নানাভাবে তাদের সাহায্য করা দরকার। বার বার তাদের আবেদন জানানো ও নানারকম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি দেয়নি বিশ্বের কোনো দেশ। পশ্চিমাদের মূল কাজই যেন এখন তালেবানদের শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সহযোগীতা কিংবা তালেবানদের সফলতা নয় বরং অশান্তি-অস্থিতিশীলতায় সহযোগিতা প্রদান করা এবং তালেবানদের ব্যর্থতাই যেন তাদের মূল চাওয়া।এ যেন অনেকটা " আমি থাকতে পারিনি তুমি কিভাবে থাকতে পার তা দেখে নেব"- এর মতই। অর্থ্যাৎ,পশ্চিমারা ব্যর্থ হয়েছে আর তাই তাদের এখন একটাই চাওয়া তালেবানদের ব্যর্থতা । অথচ আফগানদের সমস্যার জন্য তালেবানরা যতটা না দায়ী তার থেকে বহুগুণ বেশী দায়ী এ পশ্চিমারাই । এদিকে তালেবানদের অভিযোগ তাদের সরকারকে স্বীকৃতি না দিয়ে ২০২০ দোহা চুক্তি লঙ্ঘন করছে যুক্তরাষ্ট্র।


ছবি - news.un.org

তালেবান শাসনের ১ বছরে সহিংসতা কমেছে আফগানিস্তানে

বিভিন্ন তথ্য ও সূত্র মতে, আফগানিস্তানে গত বছর তালেবানদের হাতে পশ্চিমা-সমর্থিত ঘানি সরকারের পতনের পর থেকে সহিংসতার হার দ্রুত হ্রাস পেয়েছে সেই সাথে পাল্লা দিয়ে দেশটিতে বাড়ছে দারিদ্র্যতা। তবে দেশটিতে দারিদ্র্যতা বাড়লেও রাজনৈতিক সহিংসতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এমন একটি এনজিওর আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন এন্ড ইভেন্ট (অ্যাকলেড) অনুসারে, ২০১১ সাল থেকে তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতা গ্রহণের পর বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ৫০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। ড্রোন এবং বিমান হামলা হ্রাস পেয়েছে ৯৬ শতাংশ। ল্যান্ডমাইন এবং ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) এর বিস্ফোরণ কমেছে ৭৩ শতাংশ এবং গোলাগুলি ও সমর যানের আক্রমণ কমেছে ৯৭ শতাংশ। তবে এসব সাফল্য ম্লান হয়ে যাচছে দারিদ্রতার কষাঘাতে ।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য তৎপর তালেবান তবে তারা যা করছে তা কি যথেষ্ট আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য -

কাবুলে বিদেশি, বিশেষ করে প্রভাবশালী কয়েকটি আঞ্চলিক দেশের প্রতিনিধিদের সাথে সাহায্য স্বীকৃতি নিয়ে কথা বলতে তালেবানরা তৎপর। প্রতিদিনই বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু বিদেশিদের দেওয়া শর্ত নিয়ে তালেবানের কাছ থেকে কোনো কথা বা প্রতিশ্রুতি নেই। বিশেষ করে সরকারে কারা থাকবে, কী থাকবে না - তা নিয়ে কোনো কথা তালেবান শুনতে চায় না। আমেরিকানদের সমর্থনে যেসব সরকার ছিল তাদেরকে তালেবানরা বিশ্বাস করে না। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের ধারণাই তারা মানে না । তাদের কথা - এটি একটি ইসলামি সরকার, এর সাথে জাতি-গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের সম্পর্ক নেই।

সরকারে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে সম্প্রতি তাজিকিস্তানের কাছ থেকে এক বিবৃতি নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ তালেবানরা। বিবিসি পশতু বিভাগের সাথে সোমবার এক সাক্ষাৎকারে তালেবানের মুখপাত্র আহমেদুল্রাহ ওয়াসিক বলেন, "যে তাজিকিস্তান আমাদের জন্য সমস্যা তৈরিতে ব্যস্ত তারা আমাদের সরকারের কাঠামো নিয়ে কথা বলার কে? তাদের উচিৎ নিজেদের সমস্যা সমাধান করা। আমাদের সরকার কেমন হবে তা নিয়ে বিদেশিদের কথা বলার কোনো অধিকার নেই।"

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ছাড়া কিভাবে দেশ চালাবে বা টিকে থাকতে পারবে কি তালেবানরা ?

তালেবানরা ভরসা করছে আঞ্চলিক কয়েকটি দেশ বিশেষ করে চীন রাশিয়া, ইরান এবং পাকিস্তান এবং সেই সাথে কাতারের উপর। আফগানিস্তানে নারী অধিকার, নারী শিক্ষা নিয়ে এসব দেশের তেমন কোনো চিন্তা নেই । তালেবান মনে করে এসব দেশে তাদের কৌশলগত স্বার্থ নিয়েই বেশি উৎসাহী। কাবুলের সাথে গোপনে এবং প্রকাশ্যে আঞ্চলিক কয়েকটি দেশের যোগাযোগ যে চলছে তা স্পষ্ট। তালেবান সরকারের দিকে পশ্চিমা নয়, এমন দেশগুলো কিভাবে অগ্রসর হয়েছে তা যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। চীন, পাকিস্তান ইরান সহ আফগানিস্তানের কিছু প্রতিবেশী দেশ তালেবানের কূটনীতিকদের মেনে নিয়েছে। এ তালিকায় আরও আছে মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, রাশিয়া,ভারত ও তুর্কমেনিস্তান এবং তারা আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবানদের নিয়োগ করা কূটনীতিকদের স্বীকৃতিও দিয়েছে।

তালেবানদের সাথে যদিও ইরানের যোগাযোগ আছে তবে সরকারে হাজারা শিয়া সম্প্রদায়কে বাদ রাখায় খুশি হতে পারেনি ইরান তালেবানদের উপর। তাছাড়া ২০২১ সালের আগস্ট থেকেই তালেবানদের সঙ্গে সীমান্তে সংঘর্ষ ও পানির অধিকার নিয়ে বিরোধ চলছে ইরানের। এদিকে, ১৯৯০ এর দশকে তালেবান সরকারকে যে তিনটি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছিল, তার মধ্যে তালেবানের দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তান অন্যতম। কিন্তু এবার তালেবানদের আফগানিস্তান দখল পরবর্তীতে তাদের বড় সমস্যা দেখা দেয়। তালেবান শাসকরা পাকিস্তানি তালেবানদের উৎসাহিত করেছে, যারা টিটিপি হিসেবে পরিচিত এবং আন্তঃসীমান্ত হামলায় জড়িত। এ ব্যাপারেও তালেবানদের উপর খুশি নয় পাকিস্তান।

পশ্চিমাদের মূল চাওয়া নারী শিক্ষাও সরকার কাঠামো নিয়ে রাশিয়া, চীন,ইরান বা পাকিস্তান তালেবানদের সাথে বড় কোনো রকম ঝামেলায় জড়াতে চায় বলে মনে হয় না। যেমন, চীনের বিশেষ দূত উ শাও উং-এর সাথে কাবুলে তালেবান প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে ২৩ শে সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, মি. উ বৈঠকে আবারও আশ্বস্ত করেছেন যে চীন আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মাথা গলাবে না। তবে আফগানিস্তান নিয়ে পাকিস্তানসহ সমস্ত প্রতিবেশীর প্রধান উদ্বেগ সন্ত্রাস এবং তা নিয়ে তারা তালেবানের কাছ থেকে জোড়ালো প্রতিশ্রুতি চায়।এদিকে,কাবুল দখলের বর্ষপূর্তিতে চীন আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবানদের সাথে জড়িত হতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘে চীনের দূত ঝাং জুন নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের বলেন, " নতুন প্রশাসনকে দিকনির্দেশনা এবং আস্থা দেওয়ার জন্য তাদের সাথে জড়িত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ যাতে তারা এগিয়ে যেতে পারে"। ঝাং আরো বলেন,"যারা আফগানিস্তান ছেড়ে গেছে তাদেরও দায়িত্ব পালন করা উচিত। তারা কেবল বলতে পারে না যে, তারা চলে গেছে এবং সবকিছু ভুলে গেছে"। তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মার্কিন যুক্তরাষ্টের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আটক আফগান তহবিল মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন,"আফগানিস্তানের সম্পত্তি জব্দ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই"। - এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

তালেবানদের উপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কি হতে পারে -

পশ্চিমাদের সমস্যা সমাধানে তালেবানদের কোন সাহায্য না করে, বৈদেশিক রিজার্ভ বা অর্থ আটকে রেখে এবং নানা রকম বিধি-নিষেধ নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে তালেবানদেরকে কোণঠাসা করার চেষ্টা কতটা কাজ করবে এবং তা হিতে-বিপরীত হয় কিনা তা নিয়ে এখন পশ্চিমা বিশ্বেও দ্বিধাবিভক্ত মতামত লক্ষ্য করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এক প্রকাশনায় গবেষক ভান্দা ফেলবাব ব্রাউন তার এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, "আর্থিক চাপে এবং নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তালেবানদেরকে উৎখাত বা আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা খুবই কঠিন হবে"। তিনি আরো বলেন, "আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিভেদকে কাজে লাগিয়ে এবং অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির ওপর ভর করে বিশ্বের অনেক দেশের সরকার পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা স্বত্বেও বহুদিন ক্ষমতা রাখতে সক্ষম হয়েছে - যেমন মিয়ানমার, উত্তর কোরিয়া, ভেনিজুয়েলা"।

এমনিতে ভারত ও পাকিস্তানের চির বৈরিতা এবং সম্প্রতি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র করে এশিয়ায় যে ভূরাজনৈতিক দলাদলি শুরু হয়েছে, তাতে তালেবানের পক্ষে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো তেমন কঠিন কিছু নাও হতে পারে।কারন, সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ভারত তালেবানদের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক চালু করতে যাচছে এবং ইরান-পাকিস্তান-চীন-রাশিয়া সবাই নিজেদের প্রয়োজনেই তালেবানদের সাথে সম্পর্ক মেরামতে নজর দিচছে। - বিবিসি বাংলা - https://www.bbc.com/bengali/news-58729673


আফগানিস্তান নিয়ে কিছু লিখতে গেলেই যেতে হবে পিছন দিকে আর তখনই বাস্তবতা হিসাবে সামনে আসবে পুরনো ক্যাঁচাল - সেই তালেবান, আশরাফ গনি সরকার, যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য, মানবাধিকার প্রভৃতি। তবে বাস্তবতা হলো, দেরিতে হলেও ক্ষুদ্র পরিসরে আমেরিকার গলছে আফগান ইস্যুতে। তাদের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংকসহ পশ্চিমা জগৎ আফগান দেশে মানবিক ত্রান দেয়া শুরু করেছে। অর্থাৎ এতদিন তাদের নিজের কার্যক্রম যে, ‘অমানবিক’ বা নিষ্ঠুর ছিল, পক্ষান্তরে এটা স্বীকার করে নেয়া হলো। তা হলে কেন এত বিলম্ব? এক দিকে গণতন্ত্র, অন্য দিকে মানবাধিকারের অবমাননা। তালেবান তো এখন আফগান রাষ্ট্রের বাস্তবতা। তা স্বীকার না করে অন্যদের উপায় কী? আফগান জাতিকে কেউ কষ্টে ফেলার কোনো মানে হয় না। এটা বহু আগেই ভেবে দেখা উচিত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। তা হলে চরম শীতে কারো দুর্ভোগ ঘটত না। তালেবানও কারো সমালোচনার সুযোগ পেত না। মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য হতো প্রশংসিত সবার কাছে। তালেবানদের দুর্ভোগ ঘটাতে তারা সবাই যেন পুরো আফগানিস্তানেকে দুর্ভোগে ফেলে দিচছে তা ভেবে দেখছে না কেউ।


অতি সম্প্রতি কাবুলে আল কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরিকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে আমেরিকা। এর ফলে তালেবান ও পশ্চিমাদের মধ্যে অবিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পাবে,তালেবানরা কূটনৈতিকভাবে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। পশ্চিমাদের দাবি, নারী অধিকারের বিষয়ে শিথিলতা দেখাতে হবে তালেবানদের এবং সরকার হতে হবে অধিক প্রতিনিধিত্বশীল। কিন্তু গত মাসে কাবুলে হত্যা করা হয় জাওয়াহিরিকে। এরপর থেকেই পশ্চিমা সরকারগুলো তালেবানদের দিকে আঙ্গুল তুলেছে। তারা বলছে, দোহা চুক্তিতে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তালেবানরা আল কায়েদা ও সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে দেশে নিরাপদে অবস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। আবার ইসলামিক স্টেট ইন খোরাসা প্রোভিন্স (আইএসকেপি) বেশ কিছু ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে আফগানে। এতে পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে জাওয়াহিরিকে হত্যা করার পর তালেবানদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা রাখা খুবই কঠিন হবে। তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার দাবিতে জোরালো সমর্থন বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পশ্চিমারা অবস্থান দৃঢ় করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এম্বাসেডর এট লার্জ এবং সন্ত্রাস বিরোধী সমন্বয়ক নাথান সেলস বলেন, জাওয়াহিরিকে হত্যার পর ঝুঁকি রয়েই গেছে। তা হলো তালেবানদের কাছে অর্থ ছাড় দেয়া হলে অপরিহার্যভাবে তা সরাসরি চলে যাবে আল কায়েদার পকেটে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক ইব্রাহিম বাহিস বলেন, যদিও পশ্চিমা ও আফগানদের মধ্যে যোগাযোগ খুব নিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে জাওয়াহিরিকে হত্যার মধ্য দিয়ে, তবু এই ঘটনা আঞ্চলিকতার ক্ষেত্রে কি প্রভাব ফেলতে তা পরিষ্কার নয়। আঞ্চলিক অনেক দেশের জন্যই আল কায়েদা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

তালেবানদের নিকট আমেরিকার চাওয়া কি -

আমেরিকার বাইডেন প্রশাসন চাচ্ছে, তালেবানরা যেন নিশ্চিত করে যে, "আফগানিস্তানকে কখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর মিত্রদের বিপক্ষে ব্যবহার করা হবে না অথবা এ দেশ সন্ত্রাসের আখড়া'রূপে যেন অপব্যবহৃত না হয়"। আমেরিকান কর্মকর্তাদের কথা হলো,"তালেবানরা কী অঙ্গীকার করেছিল, যা তাদেরকে পূরণ করতে হবে, তা নিজেদেরই বুঝতে হবে। এখন তারা আইএস-এর মোকাবেলা করছে যে ইস্যুতে আমরা ওদের সাথে অনেকবার আলোচনা করেছি। আইএস-এর হুমকি মোকাবেলার সক্ষমতা নিয়ে আমরা কথা বলেছি তাদের সাথে" ।

আমেরিকার নিকট আফগানিস্তানে তালেবানের চেয়ে অনেক বড় বিপদ, বহু বেশি ভয়ঙ্কর হলো, আইএস-আলকায়েদা প্রমুখ উগ্রবাদী গোষ্ঠী। এখন তারা তালেবান প্রশাসনের জন্যও মাথাব্যথার বিরাট কারণ হয়ে উঠেছে। তাদের ভয়াবহ সন্ত্রাসী তাণ্ডবে সবাই দিশাহারা ও আতঙ্কিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন তাই ‘ইসলামিক’ স্টেট খোরাসান (আইএসকে)-এর মোকাবেলায় আফগানিস্তানের তালেবান শাসক মহলের সাহায্য চাচ্ছে।

আফগানিস্তান থেকে সৈন্য দল সরিয়ে নিলেও এখনো আফগান ইস্যু আমেরিকার বিরাট মাথাব্যথার হেতু। আমেরিকা আফগান ত্যাগ করলেও তারা পুরোপুরি আফগান সমস্যা থেকে নিজেদের বের করে নিতে পারেনি। এ যেন "আমি কম্বল ফেলে দিয়েছি,কিন্তু কম্বল আমাকে ছাড়ে না"। ওয়াশিংটনে এক নিউজ বিফ্রিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন জানায়,"তালেবানদের সহযোগিতা নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের নিজেদের মধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। আইএসকের প্রধান গাফিরি এবং সহযোগীদের ধরার কাজে তালেবানরাও অংশ নিতে পারবে"। উল্লেখ্য, এ জন্য গত ৯ ফেব্রুয়ারি ১০ মিলিয়ন ডলার প্রাইজ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের বক্তব্য, তালেবানের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং ২০২০ সালে (ট্রাম্প আমলে) করা দোহাচুক্তি'র দিকে অগ্রসর হওয়ার প্ল্যান আছে।

আইএসকে সংগঠন সম্পর্কে তথ্য দিলে তাদের পুরস্কৃত করার নিশ্চয়তা দিয়ে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। আইএসকে প্রধান গাফারির অবস্থান এবং ২৬ আগস্টের হামলার ব্যাপারে। এসব বিষয়ে আমরা সবাইকে উৎসাহ জোগাব। এ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী থেকে বিশ্বজনীন জোট বিবৃতি প্রকাশ করেছে যেখানে বলা হয়, আইএসকে সংগঠনটি নির্মূল করতে যাবতীয় উপকরণ ব্যবহার করা হবে। ওদের হুমকির বিলুপ্তি না হওয়া নাগাদ আমরা পিছু হটছি না। প্রশ্ন হলো, ‘এ জন্য কি আবার মার্কিন সেনা বা ন্যাটো জোট আফগানিস্তানে আসছে? তারা কি পুনরায় যুদ্ধে লিপ্ত হবে?

আমেরিকা বা ইউরোপের চাওয়া যেন অনেকটা এরকম, - " আমরা পারিনি তাই ছেড়ে দিলাম তবে এমন পরিস্থিতি তৈরী করব যাতে তোমরা কিভাবে সফল হও তাও দেখে নিব" টাইপের । আর তার জন্যই তালেবানদের সাথে সহযোগীতার পরিবর্তে সর্বক্ষেত্রে অসহযোগীতা তথা বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ ও বৈদেশিক রির্জাভ আটক এবং তাদের স্বীকৃতি না দেয়া সহ এমন সব পদক্ষেপ নিচছে তারা যাতে করে তালেবানরা দেশ শাসনে সফল না হয়। আর এসব সমস্যা থেকে বেরিয়ে তালেবানরা কিভাবে দেশ শাসনে সফল হতে পারে তাই এখন সারা দুনিয়ার কৌতুহল ও দেখার বিষয়।


ছবি - বিবিসি

বিগত ১ বছরে তালেবানরা যা করছে -

আফগানিস্তানে তালেবানদের পুনরায় ক্ষমতা দখলের এক বছর হয়ে গেল। এই এক বছরে দেশটির নাগরিকদের জীবন বদলে গেছে অনেকটাই। বিচরণের ক্ষেত্র সীমিত হয়েছে নারীদের, শিক্ষার সুযোগ হয়েছে সঙ্কুচিত সাথে দারিদ্র্যতাও বাড়ছে দেশটিতে। কিন্তু বিপরীতে সংঘাত-সহিংসতাও কমেছে। যে তালেবান যোদ্ধারা অস্ত্র হাতে লড়ছিলেন, তাদের জীবনেও এখন এসেছে পরিবর্তন। একদিকে তালেবানরা চেষ্টা করছে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষয়-ক্ষতি এড়িয়ে দেশকে পূর্ণগঠন করতে আবার অন্যদিকে সারা দুনিয়ার চাওয়াকে পাত্তা না দিয়ে চেষ্টা করছে আফগানিস্তানে ইসলামিক ব্যবস্থার কায়েম করতে।

নারীদের অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিয়ে তারা এখনো কোন কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে বলে কারো নিকট মনে হয়নি। এ নিয়ে তালেবানদের অস্বস্তিতে আছে, সাথে সাথে সারা দুনিয়ার অস্বস্তিরও কোন পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেয়নি তালেবানরা।যদিও ছোট ছোট মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা করার ব্যবস্থা করে বর্তমান নারী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা শেষ করার সুযোগ করে দিয়েছে তারা তবে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ রাখার বিষয়ে তালেবান নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, আফগানদের বড় একটি অংশের মধ্যে এবং এমনকি তালেবানের বিভিন্ন পর্যায়েও হতাশা রয়েছে।

ক্ষমতা দখলের পর থেকেই তালেবানরা হাবুডুবু খাচছে সমস্যার পাহাড়ে এবং অর্থের অভাবে ভাল কোন সিদ্ধান্তও নিতে পারছেনা তারা। আমেরিকার সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়েছে পড়েছে। যেহেতু বিদেশি সহায়তা আসা বন্ধ হয়ে গেছে, কারণ আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো অর্থ ছাড় আটকে রেখেছে। দেশটির সরকারি খরচের ৭৫ শতাংশই এই বিদেশি সহায়তার উপর নির্ভরশীল। যার কারনে শহর এলাকার মধ্যবিত্ত শ্রেণির আয় নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। এই সঙ্কটের কারণে সরকারি কর্মীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না এবং তাদের বেতনও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা এতদিন দিন আনি, দিন খাই অবস্থায় ছিলেন, তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ। যদিও অনেকেই এখনো মনে করেন যে, তারা দেশ গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তবে নানা সমস্যায় হাবুডুবু খাচছেন।

আবার, আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে এখন পর্যন্ত আমেরিকা বা পশ্চিমাদের মূল যে চাওয়া সেই ব্যাপারে তালেবানরা এমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি বা তালেবানরা এমন কোন কাজ করেনি যাতে তাদের আমেরিকা বা পশ্চিমারা খুশি হতে পারে। আমেরিকা ও পশ্চিমাদের মূল চাওয়া " নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার " - এ দু জায়গাতেই দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ দুয়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচছে যাতে করে তালেবানদের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচছে।। এদিকে মানবাধিকার পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটেছে আফগানে। এ যেন অনেকটাই ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানরা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনকার মতোই পরিস্থিতি। ফলে পশ্চিমা সরকারগুলোর পক্ষে তালেবানদের স্বীকৃতি দেয়া বা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সুযোগ কমে আসছে। তার পরও তালেবানরা বিশ্বাস করে সময় তাদের পক্ষে এবং তাদের শাসন যেমনই হোক পশ্চিমা এবং বাকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তাদেরকে স্বীকৃতি দেয়া। আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো জাভিদ আহমেদ বলেন, তালেবানরা মূলত তাদের তালেবানি অধিকারের পক্ষে। তারা মানবাধিকারের পক্ষে নয়। প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিষয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা মনে করে বিশ্বই তাদের সামনে নত হবে।

তালেবানদের সামনে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা বা আইএস ইস্যু -

তালেবানদের সামনে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জ বা প্রতিপক্ষ বাহিনী থেকে উদ্ভূত তা হলো আইএস ইস্যু। তালেবান ও আইএস উভয়ই সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী, কিন্তু তারা মিত্র নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী । আইএসের উদ্দেশ্য আফগানিস্তানে আইএস খোরাসান প্রদেশ প্রতিষ্ঠা করা। আইএস ও তালেবান ২০১৫ সাল থেকে আফগানিস্তানে আইএস প্রবেশের সময় থেকে যুদ্ধে রয়েছে।বিশ্লেষকরা তালেবানকে আইএসের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে দেখছেন। আফগানিস্তানে আইএসের উপস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের জন্য একটি সাধারণ সম্পর্কের ভিত্তি রচনা করে ফেলেছে। ক’দিন আগে দোহা আলোচনায় আইএস দমনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কমান্ডো পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল যদিও তালেবানরা বাইরের শক্তির প্রয়োজন নেই বলে সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি।

এছাড়াও, জাতিগত তাজিকরা আফগানিস্তানের জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। তালেবান সদস্যরা প্রধানত সবচেয়ে বড় জাতিগত গোষ্ঠী পশতুনদের অন্তর্ভুক্ত। রেষারেষি ও উত্তেজনার মধ্যে তালেবান-তাজিকরা যুদ্ধের দিকে অগ্রসর হলে কেউ সমর্থন পাবে না। তাজিকিস্তানের রাষ্ট্রপতি এমোমালি রাহমন অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আফগানিস্তানে সক্রিয় থাকায় আবারো দেশটি সন্ত্রাসবাদের প্লাটফর্ম হতে পারে।উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের তাখার প্রদেশ তাজিকিস্তানের সাথে আফগান সীমান্ত। তাজিকিস্তানের গোর্নো-বাদাখশান স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে রাশিয়ান সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ভারতেরও শক্তিশালী বিমান ঘাঁটি রয়েছে ওই অঞ্চলে। ভারতের তীর পাকিস্তানের দিকে হলেও এখন পুরো এলাকা তাদের লক্ষ্যবস্তু। উল্লেখ্য, ভারত, রাশিয়া ও তাজিকিস্তান তালেবান সরকারের সমালোচনা করে চলেছে এবং কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। কাবুলকে চাপে রাখতে তালেবান-সীমান্তে উসকানি তাজিকিস্তানের একটি কৌশল।


তালেবানদের সাফল্যের জন্য যা করা প্রয়োজন -

১। ৩০ বছর যুদ্ধ, সঙ্ঘাত, অস্থিরতা ও দুর্নীতির ফলে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়েছে যা কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে এতদিন আমেরিকানরা চালিয়েছিল।এখন তালেবানরা যদি ১৪টি জাতিগোষ্ঠী সমন্বয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন ও পরিচালনায় সফলতা দেখাতে পারে, রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা, সুশাসন ও জননিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে পারে, তবে তিন ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের উত্তোলনযোগ্য যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে এগুলোর প্রযুক্তিভিত্তিক সদ্ব্যবহার করার পথ খুলে যাবে। তখন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসতে আগ্রহী হবে। আর তালেবান শাসিত আফগানিস্তানও অর্থনৈতিকভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।

২। এসবের জন্য তালেবান সরকারকে মুসলিম বিশ্বসহ গোটা দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। আধুনিক বিশ্বে একলা চলো নীতি অচল। ইসলামের বিধিবিধানের আওতায় অবস্থান করলেও তালেবানদেরকে উদারতা দেখাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন বিবেচনায় রাখতে হবে। ন্যায়বিচার, সামাজিক নিরাপত্তা, সুশাসন, নারীশিক্ষা, সংখ্যালঘুর অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখতে হবে অগ্রাধিকারভিত্তিতে। সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হবে ভারতের সাথেও ।এক কথায় , সারা দুনিয়ার সবার সাথে সুসম্পর্ক এবং বাস্তবমুখী সিদ্ধান্তই তালেবানদের সফল হতে সাহায্য করতে পারে।

৩। মোটকথা হলো,বৈদেশিক সাহায্যনির্ভরতা কমিয়ে অর্থনৈতিকভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইলে তালেবানদেরকে আরো দায়িত্বশীল, চৌকস ও কুশলী ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজেদের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠির মধ্যে মধ্যে ঐক্যের বন্ধন তৈরি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী শক্তিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে তালেবানদেরকে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। দেশ পরিচায়নায় ইতিপূর্বে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বকেও এগিয়ে আসতে হবে তালেবানদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য যাতে করে তারা এসব সমস্যার সমাধান করে কাংখিত লক্ষ্যে পৌছতে পারে এবং উপহার দিতে পারে আফগান জনগন ও বিশ্বকে একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ আফগানিস্তান ।


ছবি - এপি

আফগানিস্তানের সর্বশেষ খবর কাবুলে একটি মসজিদে গতকাল বুধবার (১৭/০৮/২০২২) এশার নামাজের সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণে কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ওই মসজিদের ইমামও রয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪০ জন মুসুল্লি। বুধবার সন্ধ্যায় মুসল্লিরা প্রার্থনারত অবস্থায় ওই মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণে আশেপাশে বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাবুল পুলিশ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে। - রয়টার্স

এর আগে, আল জাজিরা এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, নিহতের সংখ্যা ২০ এবং আহত হয়েছেন ৪০ জন। ওই কর্মকর্তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। ঘটনাস্থলে দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছায় এবং আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়। সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, বিস্ফোরণে শিশুসহ ৩৩ জন আহত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি।


ছবি- বিবিসি

পরিশষে - তালেবানরা যদি খারাপ বা মন্দ বলে ধরে নেয়াও হয় তাহলেও বাকীদেরতো তাদের চেয়ে উত্তম বা ভাল হতে বা হওয়া দরকার,এ উপলব্ধি সংশ্লিষ্ট সবার থাকা উচিত। তাদের প্রতি সাহায্য-সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিলে তারা ভাল কিছু করতেও পারে, এ ব্যাপারে তাদের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। কোন প্রকার সুযোগ না দিয়ে শুধু অবরোধ আর সমালোচনায় সমাজ-দেশ-পরিবেশের উন্নয়ন আশা করা যায়না। আবার কোন কিছু না দিয়ে খালি , " যদি তারা এ করে - ও করে তবেই সাহায্য করব" (এ যেন ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই, কিল দেওনের গোসাই এর মত) বলে এবং এ যাবৎ সবাই " যদি ও কিন্তু"র ওপর তাদের ব্যাপারে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা নেই ও অযৌক্তিকও বটে। কারণ, ভবিষ্যতে বা আগামী দিনে কে কেমন হবে, তা আগে থেকে বলা যায় না। আমেরিকা যে সাম্রাজ্যবাদী দেশ হয়ে উঠবে, তা কি আব্রাহাম লিংকন ধারণা করেছিলেন? কেননা, এ দেশের প্রতিষ্ঠাই হয়েছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়ে। অথচ আফগানিস্তানে এই আমেরিকাই চিত্রিত হয়েছে দখলদার হিসেবে। সে জন্যই তালেবানের ক্ষমতারোহণ এবং জনগণের তাতে প্রায় সবার সম্মতি,অথচ সে দেশে যদিও কোনো নির্বাচনও হয়নি তারপরও বাস্তবতা এটাই। আর তালেবানদের অস্বীকার বা অবরোধ করে রেখে নয় বরং তাদের প্রতি সাহায্য -সহযোগীতার বাড়ানো হাতই মাধ্যম হতে পারে পরিস্থিতির উন্নয়নের সূচক। ফলে আসতে পারে আফগানে দীর্ঘমেয়াদে শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং বাকী দুনিয়া পেতে পারে আইএস থেকে মুক্তি।


তথ্যসূত্র ও সহযোগীতায় - রয়টার্স, বিবিসি বাংলা (২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১) ,আল জাজিরা,এপি

===============================================================

পূববতী পোস্ট -

তালেবানদের কাবুল দখল পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট -৮ Click This Link
" আফগানিস্তান তুমি কার " - আমেরিকা - রাশিয়া - ভারত - পাকিস্তানের না আফগানদের ?
তালেবানদের কাবুল দখল পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট - ৭ Click This Link
" আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের ৩ মাস " - কাবুলে কি ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে তালেবানদের জন্য বা আফগান জাতির ভবিষ্যত গন্তব্য কোথায় ?
তালেবানদের কাবুল দখল পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট - ৬ Click This Link
" বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ ও বৈদেশিক রির্জাভ আটক এবং আফিম চাষ বন্ধ " কিভাবে বের হবে তালেবানরা এ অর্থনৈতিক সংকট থেকে ? বিকল্প কোন জিনিষ টেকসই হতে পারে আফগান অর্থনীতির জন্য ?
তালেবানদের কাবুল দখল পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট - ৫ Click This Link
"ঝড়ের গতিতে আফগানিস্তান দখল করা তালেবানদের এক মাসেই ঘরে-বাইরে'র নানা সমস্যায় বেহাল অবস্থা । টিকে থাকতে পারবে কি তালেবানরা বা তাদের টিকে থাকার সম্ভাবনা কতটুকু" ?
তালেবানদের কাবুল দখল পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট - ৪ Click This Link
" আমেরিকার আফগানিস্তান থেকে বিদায় " - এর ফলে বিশ্ব ব্যবস্থা ও পরিস্থিতিতে পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা আছে কি বা বিশ্বে পশ্চিমা আধিপত্যের প্রভাবের পরিবর্তনের সম্ভাবনা কতটুকু?
তালেবানদের কাবুল দখল পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট - ৩ Click This Link
"তালেবানদের আফগান শাসনের রোডম্যাপ (ইশতেহার) প্রকাশ । কোন পথে এবং কতদূর নিয়ে যেতে চাচ্ছে তালেবানরা আফগানিস্তানকে"?
তালেবানদের কাবুল দখল পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট - ২ Click This Link
" তালেবানদের আফগানিস্তান দখল " - কেন এবং কি কারণে আফগান সেনাদের এত দ্রুত পরাজয়?
তালেবানদের কাবুল দখল পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট - ১ Click This Link
" আফগানিস্তানে আমেরিকার ২০ বছর " - আমেরিকা কি নিয়ে এবং আফগানিস্তানকে কোথায় রেখে যাচছে ? এ ব্যাপারে বিশ্ব নেতৃবৃন্দদের প্রতিক্রিয়া কি ?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩২
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×