১ম পর্ব ১ম পর্ব এখানে...
২য়পর্বের পর ২য় পর্ব এখানে...
................এ সময়েই, বাসের গতির কারনে হোক অথবা অন্য কোন কারনে হোক হঠাৎ পেছনের একটা জানালা খুলে গেল। এক ঝলক দমকা বাতাস বয়ে গেল বাস জুড়ে আর সেই দমকা বাতাসের তোড়ে এক পাশ হয়ে পতপত করে উড়তে লাগলো সাদা কাপড়টি। হায় খোদা - হায় খোদা, আমি একি দেখছি - একটা বাচ্চা ছেলের লাশ। সে লাশের পাশ থেকে হাত বের হয়ে ঝুলে পড়লো একদিকে! ! !
কন্ডাক্টর ঝুলে পড়া লাশের সে হাতটাকে ধরে আগের মতো করে দিতে চাইছে - কিন্তু পারছে না - ।
এবার সে হাত থেকে বাচ্চা ছেলেটার লাশ ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো, কিছুটা সময় কী যেন ভেবে নিলো - আমি কিন্তু সেই আগের মতোই আক্ষরিক বলুন আর বাস্তবিক বলুন - ফ্রিজ হয়ে আছি, সিটের উপর হাঁটু গেড়ে পাশ ফিরে বাসের পেছনের সব দেখছি - হয়তো শুধুমাত্র চিন্তা আর দৃস্টি শক্তিটুকু আমার শরীরে বয়ে চলেছিলো সেই সময় আর সব বোধশক্তি লোপ পেয়ে গেছে আগেই। যাক, আমি সিনেমার মতো দেখে চলেছি .....খুব স্পষ্ট দেখতে পেলাম(এমন আঁধার আর কুয়াশা ঢাকা পরিবেশে এমন ষ্পস্ট দেখতে পাওয়ার কথা না যদিও..।) কন্ডাক্টর তার হাত থেকে বাচ্চার লাশটা ফেলে দিয়ে কিছুটা সময় নিয়ে নিলো আর হেঁটে হেঁটে আরো তিন ধাপ পেছনে গিয়ে আবারো একটা সিটের পাশে মাটিতে বসে পড়লো - এবার সে আবারো আগের মতো করে বের করে আনলো আরেকটা লাশ, সাদা কাপড়ে জড়নো - তবে এটা আগেরটার চেয়ে অনেক বড় - মোটামুটিভাবে কিশোর একটা লাশ বলেই মনে হলো। এবার আর তাকে কাপড়ের গিট খুলতে কস্ট করতে হলো না - পটাপট খুলে ফেললো সবকটি গিট - লাশটাকে কাপড় থেকে বের করে সে দাঁড় করানো চেস্টা করলো কিন্তু পারলো না - বার বার লাশটা সিট ঘেঁষে বসার ভন্গিতে পড়ে যাচ্ছিলো - এরপর সে আর চেস্টা না করে বসার ভন্গিতেই সিটের সাথে ঠেশ দিয়ে ধরলো। এসময় বাসের গতি কমে আসছে বলে মনে হলো - কমতে কমতে তা থেমে যাবে বলেই মনে হচ্ছিলো। আমি ভাবছিলাম - একবার থেমে গেলেই হলো আমি চিৎকার দিতে দিতে দৌড় দিবো দরজা বরাবার। আমার হঠাৎ মনে হলো আগুনের এক হল্কা যেন আমার সারা শরীর পুড়িয়ে দিয়ে চলে গেল। পরক্ষনেই খেয়াল করলাম, আসলে আমাদের বাস ড্রাইভার, যে এতোক্ষন কোন কথা ছাড়াই বাস চালাচ্ছিলো, সে উঠে এসে আমার পাশ দিয়ে দৌড়ে কন্ডাক্টরের কাছে চলে গেল। তার চলে যাওয়ার বাতাসই আমাকে আরেকটু হলে পুড়িয়েই দিচ্ছিলো - আমি জড়োসড়ো হয়ে শুধু দেখেই যাচ্ছি - পা নড়াতে চাইলাম - পাথরের মতো হয়ে আছে - চিৎকার করতে চাইলাম - গলা দিয়ে ঘরঘর শব্দ করে কিছু একটা বের হলো বটে - তবে যেটা বের হলো সেটা নিজের কানেই শুনতে অদ্ভুত লাগলো - খুবই নিম্নমাত্রার সে আওয়াজ। আমি দেখলাম বাস ড্রাইভার আর কন্ট্রাক্টর প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে - দুজনই খুব হাত নেড়ে কথা বলছে - দারুন তর্ক বাঁধলে যেমন হয় অনেকটা তেমনি - দুজনেই বাসের সিট ধরে তুলে ফেলতে চাইছে - জানালা খুলে ফেলতে চাইছে - আরেকটু হলে হাতাহাতি করবে - এমন উপক্রম। এরই মধ্যে আরেকটা কান্ড ঘটে গেলো - প্রথম যে শিশুর লাশটা বাসের মেঝেতে পড়েছিলো, যার গায়ে আধ খোলা সাদা কাপড় লেগে আছে তাতে ড্রাইভার যাওয়ার সময় একটা ধাক্কা খেয়েছিলো - সে লাশ এখন উঠে দাঁড়িয়েছে - হেঁটে হেঁটে সে ঝগড়ার কেন্দ্রে যাচ্ছে। লাশটা যে উঠে দাঁড়িয়েছে এটা প্রথম খেয়াল করলো কন্ডাক্টর, ড্রাইভার খেয়াল করার কথা না - সে ছিলো লাশটাকে পেছনে রেখে - কন্ডাক্টরের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত। কন্ডাক্টরের ইশারায় কিনা বুঝতে পারলাম না, সে পেছনে ফিরে যেই দেখলো বাচ্চা লাশটা হেঁটে হেঁটে তাদের দিকে আসছে তখুনি সে ঝগড়া থামিয়ে কাপড় সমেত বাচ্চাটাকে ধরে ফেললো। ধরেই সে আধখোলা কাপড়টুকু মুড়িয়ে দিয়ে সেটাকে বেঁধে ফেললো আর কন্ডাক্টরের হাতে ধরিয়ে দিতে চাইলো কিন্তু কন্ডাক্টর সেটা না ধরে আগে থেকেই খোলা, সিটে ঠেশ দেয়া কিশোর লাশটাকে ধরতে গেল। এটা দেখে ড্রাইভার দুটো লাশই তার দখলে নেয়ার চেস্টা করলো আর বারবার কন্ডাক্টরকে সরিয়ে দিতে চেস্টা করছিল - যেন তার চাওয়া ছিলো - একটা দিলাম ধরলে না সুতরাং এখন কোনটাই পাবে না - এরকম।
এবারতো তাদের ঝগড়া আরো বেড়ে গেল - হাতাহাতি শুরু হলো - একদম চোখের পলকে। একবার কন্ডাক্টর পিছু হটে যাচ্ছে আরেকবার ড্রাইভার। ছোট্ট লাশটা এখন আধ বসা কিশোর লাশের কোলে ! ! ! ! একসময় না পেরে কন্ডাক্টর হাতাহাতি করা ছেড়ে দিয়ে যেন চাইলো বের হয়ে যাবে বাস থেকে - এমন ভাব করে চলেই যাচ্ছিলো আমার পাশ ঘেঁষে...আবার শীত শীত অনুভব করলাম - কাছে আসছে কন্ডাক্টর - আমার খুব শীত করছে - না সে আমাকে পাশ কাটিয়ে না গিয়ে আমার সিটের পাশে এসে দাঁড়িয়ে গেল - আমার তখন প্রচন্ড শীত লাগতে শুরু করেছে আবার - প্রচন্ড শীত- ভয়ের চোটে কাঁপছি প্রচন্ডভাবে - সে এসে আমার গলার কাছে তার দুহাত দিয়ে চেপে ধরলো - অসুরের শক্তি যেন তার গায়ে - আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে - চোখ বুজে আসছে , প্রানপনে চাইছি তার থেকে বাঁচতে - হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছি - জ্ঞান হারাতে শুরু করছি - জ্ঞান হারানোর আগে শুধু শুনতে পেলাম - হ্যাঁ, এই প্রথম শুনতে পেলাম তাদের কথা - এই প্রথম বুঝতে পারলাম তাদের কথা - ড্রাইভার বলছে - " কসম লাগে, ওকে মারিস না - সে তার মায়ের দুধ খেয়েছে - সে মায়ের কাছে ছিলো, মায়ের কাছে ফিরে যাচ্ছে - তার মায়ের দোয়া আছে তার সাথে - তাকে মারিস না - সে কোন অন্যায় করে নি ! ! ! আজকের দুটোই তুই নিয়ে যা - তারপরও ওকে মারিস না !! "
এরপরের আর কিছুই আমার মনে নেই - প্রচন্ড জ্বর নিয়ে নাকি পড়ে ছিলাম মহীপাল বাসস্ট্যান্ডে - রাস্তার পাশে। আমার জ্ঞান ফিরেছিল সে ঘটনার প্রায় দিন চারেক বাদে - চোখ মেলতেই দেখি আমার মমতাময়ী মা উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে আছেন আমার মুখ-পানে। আমি আবার চোখ বন্ধ করলাম - পরম আশ্বস্থতায়, পরম নির্ভরতায়। আমার আর ভয় নেই! !
(এ ভূত কাহিনীর একটা সমাধান আমি পেয়েছিলাম, পাঠক আগ্রহ থাকলে পরবর্তীতে তাও শেয়ার করবো.......।)
১ম পর্ব ১ম পর্ব এখানে...
২য়পর্বের পর ২য় পর্ব এখানে...
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:২৪