somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিজের ভাষায় ছড়া বা কবিতা লেখা

৩১ শে মে, ২০২২ সকাল ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উৎসর্গ

লাবণ্যপ্রভা গল্পকার আপুকে কিছুদিন ধরে ব্লগে দেখছি হঠাৎ হঠাৎ। তার মতো সৃজনশীল ও ভালো কবির খুবই অভাব আজকাল ব্লগে। আপু যেন ব্লগে সময় দেন। আপুর সম্মানার্থে এ বিশাল পোস্টটি।

--

স্কুলকলেজে বাংলায় প্রায়ই একটি প্রশ্ন থাকতো - ‘অমুক’ গল্পটি নিজের ভাষায় লেখো। একবার আমাদের এক শিক্ষক পাঠ্যবইয়ের একটা কবিতাকে নিজের শব্দে পুনর্লিখন করতে বলেছিলেন। কয়েকটা ছেলেমেয়ে বেশ ভালোই লিখেছিল, তবে শিক্ষক ওদেরকে ‘গাধা’ বলেছিলেন।

হোসনে আরার একটি অতি প্রিয় ছড়া ‘সফদার ডাক্তার’; বাল্যকালে এটি আমাদের পাঠ্যসূচিতে ছিল; খুব মজা পেতাম ছড়াটি পড়ে; এবার এবার আমার নিজের ভাষায় লেখা ছড়াটি পড়ুন আর স্মৃতির সাথে মিলিয়ে নিন।

কামিনী রায়ের ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটা নিজের ভাষায় লিখলে কেমন হয়? ‘কেউ যদি কিছু ভাবে’ শিরোনামে লিখেও ফেললাম কিছু একটা, তারপর ব্লগে পোস্ট করলাম। আমাকে অবশ্য অবাক হতে হয়েছিল এজন্য যে, মুষ্টিমেয় দু-একজন ছাড়া কোনো ব্লগারই বুঝতে পারেন নি এটা একটা অনুলিখিত কবিতা মাত্র। ফেইসবুকে কেউ কেউ আমাকে সান্ত্বনাও দিলেন। এবার দুটো কবিতা পাশাপাশি মিলিয়ে দেখুন- কোথায় তালতলা, আর কোথায় তেঁতুলিয়া।

একবার ‘পরী’ গানটাকে উলটো করে লিখলাম ‘ঝড়ো’ শিরোনামে। আমার ব্লগের কোনো পাঠকই বুঝতে পারলেন না কবিতাটার গূঢ় রহস্য।

‘যেতে নাহি দিব’ কবিতার কয়েকটা পঙ্‌ক্তি আমরা অনেক পড়েছি ও শুনেছি :

এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গ-মর্ত্য ছেয়ে
সবচেয়ে পুরাতন কথা, সবচেয়ে
গভীর ক্রন্দন, ‘যেতে নাহি দিব।’ হায়,
তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।
এমনি ঘটিতেছে অনাদিকাল হতে
প্রলয় সমুদ্রবাহী সৃজনের স্রোতে।

এ থেকে লিখলাম ‘মগের মুল্লুক’। কয়েকজন পাঠক কড়া সমালোচনা করলেন আমার লেখা নিয়ে, কিন্তু সবারই অগোচরে থেকে গেল এ কবিতার জনকের নাম। যদি ‘মগের মুল্লুক’ পড়ে আপনাদের মনে হয় কবিতায় সত্যিই এখন মগের মুল্লুক কায়েম হচ্ছে, আমি বলবো, ওসব মগা-টগার কথা বাদ দিয়ে ব্লগিঙে বড়শি ফেলুন, অনেক কাজে লাগবে।

স্কুলে সারমর্ম ও ভাবসম্প্রসারণে পড়েছি ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখিবে তাই...’। এটা থেকে অনুলিখিত হল ‘বড়ো’র মোহ’। প্রিয় ব্লগাররা অবশ্য পজিটিভ ছিলেন, কিন্তু এটাও কেউ ধরতে পারলেন না।

দয়া করে এগুলোকে কেউ প্যারোডি বলবেন না; এগুলোকে ‘প্যারোডি’ বলা যায় না, কারণ, মূল-কবির প্রভাব ছাড়া মৌলিক লেখার যাবতীয় বৈশিষ্ট্য এতে বিদ্যমান; তবে, এটাও বলে রাখি, দয়া করে কেউ এতে নিখুঁত শিল্পগুণ খুঁজতে যাবেন না! কেউ হয়ত ‘নকল’ অভিহিত করতে পারেন। কিন্তু নকলও না। রবীন্দ্র-নজরুল যুগে তাঁদের প্রভাব-বলয় থেকে বাইরে বেরুতে পেরেছিলেন খুব কম কবিই। অনুলিখিত কবিতাগুলো সেজন্য প্রভাব-অমুক্ত, কিংবা বলতে পারেন ‘প্রভাবিত কবিতা’ বড়োজোর, কিন্তু নকল নয় কোনোভাবেই। এখানে মূল কবির ক্রেডিট ও মূল কবিতার নাম সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নকল কবিতায় এগুলো করা হয় না। এবং এগুলোকে নকল বলা হলে ঐ যুগের কবিরাও নকল কবিই ছিলেন বৈকি, এবং এখনো আমরা সবাই নকল কবিই :)

কিছু কিছু জায়গায় খুব গম্ভীর শব্দগুচ্ছের মাঝখানে নিছক আনকোরা, বেঢপ, বেমানান ও ইমম্যাচিউর শব্দমালা ঢুকে গেছে। সেখানে ফিক করে হেসে উঠলে আমার কিছু বলারও নাই, করারও নাই।

ব্লগার লুৎফুর মুকুল, বিএম বরকতউল্লাহদীপংকর চন্দ’র ছড়ার ফ্যান আমি; তাঁরা বিশুদ্ধ ছড়া লেখেন, কিন্তু অধুনা তাঁরা ডুমুরের ফুল। পুরোনো আরো দু-একজন ছড়াকার ছিলেন, যেমন ব্লগার ’পাহাড়ের কান্না’ (নাকি লুৎফুর মুকুলের পূর্ব-নিকনেইম এটা, মনে নেই), তাদের এখন দেখা যায় না। ব্লগে বর্তমানে ভালো ছড়ার খুব আকাল। অনেকেই লিখছেন, কিন্তু সেগুলো গুণে-মানে খুব দুর্বল, যদিও ’কি করে আজ ভেবে না পাই’-এর হাত ধীরে ধীরে শাণিত হচ্ছে।

অনেকের ছড়ার হাত ভালো, কিন্তু কদাচিৎ তারা ছড়া লিখতেন; লিখতেন কবিতা বা গদ্য। সবাক, রাগ ইমন, সুরঞ্জনা’র কথা মনে পড়ে। আমিও দেখতে দেখতে কম ছড়া লিখি নি কিন্তু :) শায়মা মণির সাথে দ্বৈরথে প্রচুর ছড়া লিখেছি :) ছড়ার যুদ্ধ বা ছড়িয়াল নামে আমার একটা পোস্ট ছিল, যেখানে অনেকে ছড়ার হাট বসিয়েছিলেন, সে পোস্টটা পাচ্ছি না এখন। পেলে জুড়ে দিব নে।

আমার ছড়ার পোস্টগুলো নীচে দিলাম। কেউ যদি নিজের খাইয়া কষ্ট করতে চান, তাইলে এই পোস্টে যাইয়া কষ্ট কইরা পইড়া আইসেন।

১। ছড়ার পাহাড়

২। আজগুবি ছড়া - দ্বিতীয় কিস্তি

৩। ছড়ার খেলা - ইচ্ছে হলেই এখানে একটা ছড়া লিখে ফেলুন

৪। আজগুবি ছড়া - একটা বই বের করার প্রস্তুতি

৫। প্রচলিত ছড়া


একটা ছড়ার প্রধান আকর্ষণ হলো এর ছন্দ। ছড়া পড়তে গিয়ে হোঁচট খেলে সেটা ছড়া হয় নি। ছন্দ বলতে আবার বেশিরভাগ ছড়াকার ও পাঠক শুধু অন্ত্যমিল বা শেষের শব্দের মিলকেই বুঝে থাকেন; যার ফলে দেখা যায় প্রথম লাইনে ১৪ মাত্রা, পরের লাইনে ১১ বা ১২ বা ১৫/১৬ মাত্রা বসিয়ে কোনোরকমে শেষের শব্দের মিল করেই খালাস হয়ে যান, এই নিন – খাসা একটা ছড়া লিখেছি। ছড়ার ছন্দ বোঝার জন্য আগ্রহীরা আমার এই পোস্টটা পড়তে পারেন। কবি ও পাঠক। ছন্দ সম্পর্কে পড়তে চাইলে বাংলা কবিতার ছন্দ - প্রাথমিক ধারণা – আমার এ পোস্টটি।

একটা কবিতা বা ছড়ার প্রথম দু-একটা লাইন পড়ে, কবিতার শিরোনাম পড়ে কবি বা ছড়াকারের কবিত্ব বোঝা যায়। কবিতা প্রতিদিন বদলায়। নিজের প্রথম কবিতাটা আর আজকের কবিতাটার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য থাকবে। এই পার্থক্য আপনা-আপনিই হয় না; কবিতা পড়তে হবে, বুঝতে হবে – আধুনিক কবিতার কথা বলছি। কবিতার লাইন পড়ে যেন মনে না হয়, আমি রবীন্দ্র-পূর্ব যুগের কবিতায় ঢুকছি। একটা অশিক্ষিত লোকও অনেক ভালো কথা বলতে পারেন, আপনিও পারেন। কবিতার বিষয়বস্তু কবি ’ক’ এবং কবি ’খ’-এর কবিতায় মোটামুটি একই। তাহলে পার্থক্য কোথায় হবে? পার্থক্য হবে আপনার লেখনির সাবলীলতায় ও সৃষ্টিশীলতায়। এজন্য চেষ্টার ত্রুটি করা যাবে না। আপনার প্রথম দিনের কবিতা আর আজকের কবিতায় যদি কোনো পার্থক্য না থাকে রচনাশৈলিতে, তাহলে আপনার কোনো উন্নতি হয় নাই, খামোখা কবিতার পেছনে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। এই শ্রমের মূল্য একটাই – আমি ঘরে বসে না থেকে কিছু খই ভাঁজছি। আমার কিছু সাঙ্গপাঙ্গ সেগুলো পড়ে উল্লাসে ফেটে পড়ছে – আরে, আমি দ্বিতীয় নজরুল হইয়া গেছি রে :) :)

এ ব্যাপারে পড়ুন নীচের কয়েকটা পোস্ট :

নবীন কবিদের কঠিন কবিতা

নবীন কবিদের কঠিন শব্দ

আমার কবিতা ভাবনা

কবিতার প্যাটার্ন

শব্দকবিতা

আপনাদের জন্য কিছু উপকারী পোস্ট

এবার চলুন, যাওয়া যাক আমার নিজের ভাষায় লেখা ছড়া ও কবিতাগুলোতে।


সফদার ডাক্তার

সফদার ডাক্তার মাথা ভরা চুল তার
খিদে পেলে ভাত খায় গিলিয়া
ছিঁড়ে গেলে কী উপায় এই ভয়ে রাস্তায়
হাঁটে জুতা বগলেতে তুলিয়া

প্রিয় তার টক শো, মহিষের মাংস
অটবির ছিমছাম খাটিয়া
সাঁচা কথা কয় সে, কারণটা এই যে
খায় নাকি ফ্রুটিয়া সে চাটিয়া

সফদার ডাক্তার ইয়া বোঁচা নাক তার
শুলে শুধু দেখা যায় ভুঁড়িখান
কিপটে সে আদৌ নয়, এই তার সদা ভয়-
ঘরে বুঝি এলো কোনো মেজবান

সফদার ডাক্তার খুব ‘ফানি’ কাজ তার
ডিনারের পরে করে কুস্তি
মাঝরাতে ওঠে ঘেমে তারপর খালে নেমে
স্নান করে হয় তার স্বস্তি

সফদার ডাক্তার মাথা ভরা টাক তার
কেঁচোকাটা কাঁচি তার পকেটে
চেঁছে ফেলা ভুরু তার চোখ দুটো সরু তার
পান খেয়ে হেঁটে যায় শকেটে

সফদার ডাক্তার ইদানীং সাধ তার
ব্লগে নাকি অ্যাকাউন্ট খুলিবেন
অনলাইন সাজেশন করিবেন বিতরণ
মাস্টার কার্ডে ফি তুলিবেন

৩০ নভেম্বর ২০০৯ রাত ২:৫১
মূলঃ হোসনে আরার ’জবর ডাক্তার’ বা ’সফদার ডাক্তার’


কেউ যদি কিছু ভাবে

সাধ হয় কিছু করি
রিকশা বা বাসে চড়ি
তখনই মন বলে, থামো
কেউ যদি কিছু ভাবে!

গোপনে গোপনে হাঁটি
সুনসান পরিপাটি
কীভাবে জনসমক্ষে যাব?
কেউ যদি কিছু ভাবে!

কত কী যে ভাবি মনে
আলো দেব জনে জনে
সব আশা মুকুলেই মরে
কেউ যদি কিছু ভাবে!

কখনো-বা বেদনায়
বুক যদি ভেঙে যায়
কাঁদতে পারি না প্রাণ খুলে
কেউ যদি কিছু ভাবে!

মানবিক কোনো কাজে
সবে জোটে একসাথে-
আমিও সে-দলে যেতে চাই;
কেউ যদি কিছু ভাবে!

হায়রে নিঠুর বিধি
আজব তোমার রীতি-
মরবার ভয়ে আড়ালে লুকাই,
কেউ যদি কিছু ভাবে!

১ নভেম্বর ২০১১ রাত ১২:১৯

মূলঃ কামিনী রায়ের ’পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতা

সবার উপরে নারীরা সত্য, নরেরা খড়ের ছাই

নারীদের গান গাই
পৃথিবীর বুকে নারীদের চেয়ে মাননীয় কিছু নাই
অথচ আজিকে বড়ো অসহায় রমণীরা বাংলার
পদে পদে দেখি খুন ধর্ষণ অন্যায় অবিচার
নারীর জন্ম যেন-বা সহিতে নরের অত্যাচার
বাংলা জুড়িয়া ঘটিতেছে তাহা, নাই কোনো প্রতিকার

দেখিনু সেদিন বাসে
নারীরা দাঁড়িয়ে, পুরুষ মানুষ সিট চেপে বসে আছে।
চোখ ফেটে এলো জল,
জগৎ জুড়িয়া এমন করিয়া পুরুষ খাটাবে বল!
পাষাণ পুরুষ দেখিল না চেয়ে ঘাড়ের উপর তার
একটি অবলা রমণী দাঁড়িয়ে, শরীর কম্পমান
কে জানে হয়ত, গর্ভে তাহার ‘সুপুরুষ’ সন্তান-
তিলতিল করে কষ্ট সহিয়া বহিতেছে দেহভার।

হায়রে অবলা নারী,
তোমার সাহসে ঝলসিয়া ওঠে পুরুষের তরবারি;
তোমাকে ভাবিয়া কবিতা লিখিয়া পুরুষেরা বিখ্যাত
অথচ তুমিই আড়ালে রহিলে, চিরকাল অজ্ঞাত।

কোনোকালে কিছু করিতে পারে নি পুরুষ লোকেরা একা,
গোপনে নারীরা বুদ্ধি দিয়াছে, বাহিরে যায় নি দেখা।
অথচ নারীরা কোথাও এখন পায় না ন্যায্য দাম
সবকিছুতেই জবরদখল, মগের মর্ত্যধাম।

নারীরা এবার জাগো,
ঢেঁকি-পাটা ও দাও-বটি ফেলে কার-ড্রাইভিং শেখো।
পাইলট হয়ে এফ-সিক্সটিন, বোয়িং চালাতে হবে-
মদন মদন পুরুষ লোকেরা অবাক তাকিয়ে রবে।

প্রতিশোধ হবে নিতে-
নারীরা বাসের সিটে বসিবেক, দণ্ডায়মান নর
অবলা বলিয়া খাইতে হবে না পুরুষ লোকের চড়।
নারীরা করিবে কষিয়া শাসন, পুরুষেরা নতশির
খুন ধর্ষণ তালাকের ভয় থাকিবে না রমণীর
সত্যিকারের সমতা তখন দেখা যাবে ধরণিতে।

শোনো হে পুরুষ ভাই,
সবার উপরে নারীরা সত্য, নরেরা খড়ের ছাই।

১১ অক্টোবর ২০১১ রাত ১০:৪৯

মূলঃ কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কবিতা


আরাধনা

মরিতে চাহি না আমি তোমার ভুবনে
তোমার ভুবনে আমি প্রাণ দেখিয়াছি
তোমা হতে আলোজল, বাতাসের শ্বাসে
দ্বিতীয় জীবন লভি আজো বেঁচে আছি

মানুষেরা ভাবে, তারা সবকিছু বোঝে
সবকিছু জানে, তাই চায় না হারিতে
তোমার সকাশে আমি প্রেম চাহি নাকো
তোমার সকাশে চাই বলিদান দিতে

হে মহান, সুন্দর, আরতির বর
অন্তত ইশারায় দিও উত্তর

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ দুপুর ১২:১৮

মূলঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ’প্রাণ’ – মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে


বসুমতী, তুমি এত কিপ্টে কেন?

বসুমতী, বুঝলে না গরীবের ব্যথা
কত খাটুনিতে জোটে কিছু দানাপানি
বন্ধ রেখে দুনিয়ার খাদ্যের গুদাম
অহেতুক আমাদের কষ্ট দাও, রানি।

সব লোকে ধুঁকে ধুঁকে মরে অনাহারে
তোমার গৌরব তাতে সত্যি কি বাড়ে?
তুমি ভাবো মরে ওরা বেঁচে রবে সুখে
ঈষৎ হাসির রেখা ভেসে ওঠে মুখে।

আর কত কিপ্টেমি, কত ভণ্ডামি?
ভালো হতে টাকা লাগে? আর কী চাও তুমি?
আমি দেব সব টাকা, সোনামুখে চুমু
বিনিময়ে দাও একটি ক্ষুদ্র শান্তি-ভূমি।

২৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ রাত ১১:৪২


মূল কবিতাঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ’ভিক্ষা ও প্রাণ’ - বসুমতী কেন তুমি এতই কৃপণা?



বড়ো’র মোহ

যেখানে দেখিবে খাল ফেলে দেখো ঝাঁকিজাল
পেলেও পেতে পারো ট্যাংরা পুঁটি
কখনো এমনও হবে রুই-কাতলা ধরা খাবে
পোনামাছ পাবে ছুটি।

এ অনন্ত চরাচরে যশোখ্যাতির পুচ্ছ ধরে
ছোটোরাই বড়ো হতে চায়
তাঁকে মানি বড়ো অতি নম্র-ভদ্র-বিদ্যাপতি
তার পানে ধরাধাম ধায়।

৯ অক্টোবর ২০১১ রাত ৮:৫০


মূলঃ যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখিবে তাই (কবি গগন হরকার উক্তি)



মগের মুল্লুক

এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গ-মর্ত্য-ধামে
সবচেয়ে পুরাতন রীতি, সবচেয়ে
গভীর আক্ষেপ, ‘খেতে কেন দেব?’-
আমি রেঁধে কেন তোকে খাওয়াবো বসায়ে?

এমনি চলিছে রীতি অনাদিকাল হতে
রাঁধুনিরা রান্না করে, খায় বেটাছেলে।
কখনো-বা বাড়া ভাত কেড়ে নিয়ে খায়,
কেউ কেউ বাড়া ভাতে ছাই দেয় ফেলে।

কন্যা-জায়া-জননীরা- আর কতকাল
এভাবে বোকার মতো খাওয়াবে রাঁধিয়া?
আর কতকাল তুমি মৎস কুটিবে,
বুয়ার মতন তুমি মরিবে খাটিয়া?

যতদিন বেঁচে রবো এ ধরণিতলে
দেখে নেব বউদের বুয়া কে বানায়!
সেইদিন আমি তবে প্রশান্তি পাব-
পুরুষেরা রান্না করে, নারী কেড়ে খায়।

...

আমি সেইদিন পাব শান্তি-
যবে অত্যাচারিত রমণীকুলের ঘুচিবে যাতনা-ক্লান্তি।
নারীর পায়ের তলায় লুটায়ে পুরুষ মাগিবে দুয়া।
তামাম বিশ্ব নারীর অধীনে, পুরুষ হইবে বুয়া।

১০ অক্টোবর ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৯

মূলঃ ’যেতে নাহি দিব’ এবং ’বিদ্রোহী’ কবিতা


ঝড়ো

আজ তোমার মনে ভয় নেই, ছেলে
তুমি দ্রুতবেগে ছুটে চলছো
আগুন শরীরে, দৃষ্টি প্রখর
আমি তোমার জন্য কপোলে মেখেছি চাঁদের সুষমা
তোমার পেছনে থির পড়ে থাকে অলোক তেপান্তর

আজ তোমার চোখের আলো দীপ্ত
বোশেখের ঝড়ে চূর্ণ হয়ে উড়ে যায় সকল দ্বিধা আমার পথে পথে
তুমি আমার হাতে তুলে এনে দিলে হিমাচল গিরি, তেজস্বী রোদ,
বাজখাই প্রেম, অনন্য ভাস্বর।

১৫ অক্টোবর ২০১১ রাত ১১:১৭


নোটঃ এটি ব্লগার নস্টালজিকের (রানা) ‘পরী’ গানের উলটো করে লেখা হয়েছিল। কিন্তু আমি বলে না দিলে এটা বোঝা প্রায় অসম্ভব, এজন্যই কেউ এটার ক্লু ধরতে পারেন নি।

নিজেকে মেয়ে/‘প্রেমিকা’ কল্পনা করে লেখাটি পড়ুন :)



পথের কাদা

কাদা হেরি ক্ষান্ত কেন রাস্তায় হাঁটিতে?
হাঁটা বিনা যায় কি পৌঁছা দূরের বাটীতে?

২০ অক্টোবর ২০১১ বিকাল ৩:৩৪


মূলঃ কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে


বিশ্বখাদ্যনীতি


এ জগতে হায় সেই বেশি খায়
ক্ষুধা লাগে যার বেশি
রাজার মুখ তো খাবেই গোশতো
ফাটায়ে পেটের পেশি

২১ শে মার্চ, ২০১০ রাত ২:২২


এ জগতে হায় সেই খেতে চায়
খানা নাই যার ঘরে,
ধনীরা করছে ডায়েট কন্ট্রোল
গরীবে না খেয়ে মরে।

২৮ অক্টোবর ২০১১ দুপুর ১২:২২


মূলঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ’দুই বিঘে জমি’


গ্রামের মানুষকে উচ্চ ভাবিব,
সেই কথা আজ মিছে

(গ্রামের সুখী মানুষদের প্রতি শহরের বন্দি মানুষদের ক্ষোভ)

তোমরা রহিবে নয়নাভিরাম চিরসবুজের গাঁয়,
আমরা মরিব পঁচা ডাস্টবিনে, নোংরা নর্দমায়!
তোমরা একাই উপভোগ করো পল্লীর পরিবেশ,
ঘিঞ্জি শহরে ধুঁকিতে ধুঁকিতে আমাদের জান শেষ।
আমাদের দেখে নাক ছিটকাও, করো নাকো সম্মান,
তোমাদের সাথে আমাদের কত বিস্তর ব্যবধান!
গ্রামের মানুষ শোনো,
আমরাও মানুষ এই বাংলার, নই ভিনদেশী কোনো।
তোমরা কাটাবে সুখের জীবন চরণে চরণ তুলে,
তা বলে তোমাদের উচ্চ ভাবিব, সেই কথা যাও ভুলে।
বিদ্রোহ আজ - বিদ্রোহ সবখানে,
আমরাও আজ গ্রামে ঠাঁই চাই, তোমাদের মাঝখানে।
শহরের দিকে তাকিয়ে দেখো, দলে দলে, গানে গানে
ইটের পাঁজর ভাঙিয়া মানুষ ছুটিছে গ্রামের পানে।
আসিতেছে শুভদিন,
কড়ায় গণ্ডায় তোমাদের থেকে শোধিয়া লইব ঋণ।
তোমরা রহিবে শীতল ছায়াতে, আমরা সিদ্ধ হব!
শীঘ্র দেখিবে এই ব্যবধান আচানক ভেঙে দেব।

১২ নভেম্বর ২০১১ রাত ১০:০০

মূলঃ কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কবিতা (তোমরা রহিবে দোতলার ‘পরে আমরা রহিব নীচে)


আমাদের বড়ো নদী

আমাদের বড়ো নদী ভাঙে বাঁকে বাঁকে
ছয়মাস বুকে তার হাঁটুজল থাকে
বর্ষার চারমাস জলে পাড় ভাসে
বুক ফেটে চৌচির গ্রীষ্মের মাসে

আমাদের বড়ো নদী আর বড়ো নেই
নাম তার পদ্মা, চেনে সকলেই

৫ মে ২০১২ রাত ১২:০৯


মূলঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ’আমাদের ছোটো নদী’



কবিতার রূপান্তর : রহস্যময়ী নারী

- বলো তুমি রহস্যময়ী নারী,
কাকে তুমি ভালোবাসো সবচেয়ে বেশি?
সে তোমার মাতাপিতা? ভগ্নি? সহোদর?
নাকি নাড়িছেঁড়া সন্তান?

- এ ভুবনে আমার তো কেউ নেই-
বাবা-মা, বোন অথবা ভাই।
সন্তানের কথা বলছো? ওরা হলো
আল্লাহর দান; আল্লাহই ওদের ঘুম পাড়াবেন,
দেখাবেন বেহেশতের বাগান।

- তাহলে তোমার স্বামী? বন্ধু অথবা
গোপন কোনো প্রেমিক?

-আমাকে এমন কিছু শোনালে, আজ অব্দি
যার কোনো অর্থ এবং মূল্য, কোনোটাই
আমার চিন্তায় উদ্ভাসিত হয় নি।

- কোথায় তোমার জন্মভূমি, গ্রাম, বা শহর,
আছে কি নদীর পাশে শীতল কোনো কুটীর?

- আমি জানি না, পৃথিবীর কোন কোণে এসবের অবস্থিতি।

- তাহলে তোমার রূপলাবণ্য, কাজলমাখা চোখ,
চুলের অন্ধকার - এসব কি তোমার প্রিয় নয়?

- হায়, এসব আমি খুব ভালোবাসি। কিন্তু জানো তো,
রূপ বা সৌন্দর্য খুবই ক্ষণস্থায়ী; দ্রুত সে চলে যায়
বিধাতার গোপন কৌটোয়, যেখানে তার কোনো মৃত্যু
বা বিনাশ নেই, সে অমর।

- সোনার গহনা? হীরা-জহরত তোমাকে উৎফুল্ল করে না,
হে রহস্যময়ী নারী?

- এসব আমি ঘৃণা করি খুব, যেমন তোমরা দুর্বৃত্তদের
ধারালো ছুরিকে খুব ঘৃণা করো, এবং ভয়।

- তাহলে বলো হে অদ্ভুত রহস্যময়ী নারী,
কী তুমি ভালোবাসো?

- আমি ভালোবাসি ঝরনার স্রোত,
পাহাড় গড়িয়ে পড়া জলপ্রপাত।
আমি ভালোবাসি ফুলের সুবাস,
যাতে নেই কোনো পাপ।
আমি ভালোবাসি পাখির হৃদয়,
উষ্ণ পালকে যারা আকাশে মেলে দেয় ডানা।
আমি ভালোবাসি উড়ন্ত রোদ, যারা ধাওয়া করে
ছুটে চলা মেঘ।
আমি ভালোবাসি বৃষ্টিতে ভিজে ধানক্ষেতের
আল ধরে নিরুদ্দেশ হেঁটে যেতে।
আমার রয়েছে এক অনন্য কুটুম-
একমাত্র তাকে আমি ভালোবাসি,
সে আমার একমাত্র বিশ্বস্ত সঙ্গিনী।
সে আমার ছায়া।

৭ ডিসেম্বর ২০১৬

ফুটনোট :

মূল কবিতা শার্ল বোদলেয়ারের The Stranger.

বাংলায় অনুবাদ করেন বুদ্ধদেব বসু ‘অচেনা মানুষ’ হিসাবে।
মূল কবিতায় ‘মানুষ’-কে সম্বোধন করা হয়েছে। আমার কাছে নারীকে অধিক রহস্যময়ী মনে হওয়ায়, এবং নিছক মজা করার জন্যই মূল কবিতাটিকে এভাবে রূপান্তর করে ধাঁধা হিসাবে ব্লগ ও ফেইসবুকে শেয়ার করি। মজার বিষয় হলো, দু-একজন পাঠক ছাড়া কেউ মূল কবিতাটিকে চিহ্নিত করতে পারেন নি।


সবাই ভালো থাকিয়েন, সুস্থ থাকিয়েন ও প্রাণনিঙড়ানো ভালোবাসাসহ শুভেচ্ছা নিয়েন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০২২ সকাল ৯:৪৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিসের সনদের মান নির্ধারণ করা শয়তানী কাজ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪০



সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০১। মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×