"আমের ফোর্ট" বা "আম্বার ফোর্ট" যে নামেই তাকে ডাকি না কেন, এই দূর্গ জয়পুরের পর্যটনের মূল আকর্ষণ। রাজা প্রথম মান সিং দ্বারা নির্মিত পাথরের এই দূর্গের গুরুত্ব বুঝার জন্য একটি তথ্য শেয়ার করা যায়, "আমের ফোর্টকে বাইরের শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করতে পরবর্তীতে ১৭২৬ সালে জয়গড় দুর্গ আর ১৭৩৪ সালে নাহারগড় দুর্গ নির্মিত হয়।"। তো সেবারের ভারতবর্ষে ভ্রমণের আনুষ্ঠানিক শেষ গন্তব্য ছিলো এই বিখ্যাত আমের ফোর্ট। "জয়পুর সিটি প্যালেস" ভ্রমণ শেষে আমরা পুরো দল চলে এলাম আমের ফোর্ট দর্শনে। প্রবেশমুখে টিকেট কেটে নিয়ে সাথে নিয়ে নিলাম একজন পঞ্চাশোর্ধ বয়সের গাইড ভদ্রলোককে। কারন, গাইড ছাড়া "ফাতেহপুর সিক্রি" ভ্রমণ করে বুঝেছি, ইতিহাস আর তথ্য না জানলে ঐতিহাসিক স্থান দেখে মজা পাওয়া যায় না।
ভারতে মীনা নামক একটি বিশেষ উপজাতি রয়েছে যাদের অবস্থান মূলত ভারতের রাজস্থান এবং মধ্য প্রদেশ অঞ্চলে দেখা যায়। এই মীনা উপজাতিরা নিজেদের বিষ্ণুর মাতস্য অবতার এবং প্রাচীন মাত্স্য রাজ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে দাবি করেন। জয়পুর রাজ্যটি আগে অম্বর বা ধুন্ধর নামে পরিচিত ছিল এবং পাঁচটি ভিন্ন উপজাতির মীনা প্রধানদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। এই ভিন্ন উপজাতির প্রত্যেকটি ছিল দেওতির বরগুর্জার রাজপুত রাজার অধীনস্থ। সবশেষ এই অম্বর এলাকাটি মীনা উপজাতির সুসাওয়াত বংশ দ্বারা শাসিত ছিল। পরবর্তীতে এই সুসাওয়াত বংশকে পরাজিত করে দুলহেরি এর পুত্র কাকিল দেও এই অম্বর এলাকার দখল নেয় এবং তার ধুন্ধর (Dhundhar) রাজ্যের রাজধানী "খোহ" থেকে সরিয়ে অম্বরে নিয়ে আসেন।
মাওতা লেক (Maota Lake) এর পাদদেশে নির্মিত আমের (Amer) ফোর্টকে ঘিরে একটা শহর গড়ে উঠেছিলো যার আয়তন ৪ বর্গকিলোমিটার, এখনও জয়পুর মূল শহর থেকে আমের (Amer) এলাকাটি আলাদাভাবে লোকে গণ্য করে থাকে। রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর থেকে আমের (Amer) এর দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার। আমের (Amer) দূর্গের সুবিশাল প্রাচীর এবং পাথর নির্মিত পথের সাথে অনন্য নির্মানশৈলী এবং এর শৈল্পিক সৌন্দর্যের কারণে জয়পুরের প্রধান পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে এই ঐতিহাসিক দূর্গটি।
আমের (Amer) ফোর্ট রাজপুত স্থাপত্যের একটি অনন্য নিদর্শন। এই দূর্গের অনেক ভবন এবং স্থাপনায় মুঘল স্থাপত্যের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। লাল বেলেপাথর এবং সাদা মার্বেল দিয়ে নির্মিত এই আকর্ষণীয় এবং ঐশ্বর্যশালী প্রাসাদটি চারটি স্তরে নির্মিত হয়েছে যার প্রতিটিতে রয়েছে একটি করে উঠোন। এটি দিওয়ান-ই-আম (হল অফ পাবলিক অডিয়েন্স), দিওয়ান-ই-খাস (হল অফ প্রাইভেট অডিয়েন্স), শীশ মহল (আয়না প্রাসাদ) এবং সুখ নিবাস (যেখানে একটি শীতল জলবায়ু কৃত্রিমভাবে প্রাসাদের মধ্যে একটি জল ক্যাসকেডের উপর দিয়ে প্রবাহিত বাতাস দ্বারা তৈরি করা হয়) নিয়ে গঠিত। এই (Amer) আমের দুর্গটির অভ্যন্তরের প্রাসাদসমূহের জন্য একে আমের (Amer) প্রাসাদ নামেও অভিহিত করা হয়। প্রাসাদটি ছিল রাজস্থানী বংশ রাজপুতানা মহারাজা ও তাদের পরিবারের আবাসস্থল।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত এই ফোর্টগুলো একটা সারাদিন সময় নিয়ে ধীরে ধীরে দেখার, সাথে প্রতিটি বিষয়ের ইতিহাস জানার জন্য একজন ট্রাভেল গাইড। তাহলে এসকল ঐতিহাসিক স্থান দেখার আসল মজা পাওয়া যাবে। আমাদের হাতে সময় ছিলো ঘন্টা দুয়েক, এই সময়ের মধ্যেই তড়িঘড়ি করে আমরা দেখতে লাগলাম অবাক করে দেয়া স্থাপত্যশৈলীর নানান স্থাপনা।
আম্বার ফোর্টটি মূলত নির্মিত হয় রাজা প্রথম মান সিং এর দ্বারা ১৫৯২ সালের দিকে। পরবর্তীতে রাজা প্রথম জয় সিং এটা আরও বিস্তৃত করেন। পরবর্তীতে ১৭২৭ সালে সওয়াই জয় সিং দ্বিতীয় এর সময় কাচওয়াহা বংশ তাদের রাজধানী জয়পুরে স্থানান্তরিত করার আগ পর্যন্ত পরবর্তী 150 বছরে ধারাবাহিকভাবে এই দূর্গের নানান উন্নয়ন এবং সংযোজন ধারাবাহিকভাবে চলে আসছিলো। আমের ফোর্টের অভ্যন্তরে জালেবি চক বলে একটি জায়গা রয়েছে যেটা ছিলো মূলত সৈন্যদের একত্রিত হওয়ার জায়গা। এটি আমের প্রাসাদের চারটি প্রাঙ্গণের মধ্যে একটি, যা সওয়াই জয় সিং-এর রাজত্বকালে নির্মিত হয়েছিল। সেনা কমান্ডার এর নেতৃত্বে মহারাজার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীরা এখানে কুচকাওয়াজ করত। মহারাজা প্রহরীদের দল পরিদর্শন করতেন। উঠানের পাশেই ছিল ঘোড়ার আস্তাবল এবং উপরের স্তরের কক্ষগুলো বরাদ্দ ছিলো প্রহরীদের জন্য। এই জলেবি চক থেকে একটি চিত্তাকর্ষক সিঁড়ি মূল প্রাসাদের মাঠে গিয়ে মিশেছে যেখান থেকে সিঁড়ির ধাপের ডানদিকের প্রবেশপথে রয়েছে সিলা দেবী মন্দির যেখানে রাজপুত মহারাজারা পূজা করতেন।
গনেষ গেট
আমের ফোর্টের চার ফটকের আরেকটি ছিলো গণেশ গেট, হিন্দু দেবতা ভগবান গণেশের নামে যার নামকরণ করা হয়েছিল। এই গেটের উপরে রয়েছে সুহাগ মন্দির যেখানে রাজপরিবারের মহিলারা "জালিস" নামে জালিযুক্ত মার্বেল জানালা দিয়ে দিওয়ান-ই-আম-এর অনুষ্ঠান দেখতেন।
জলেবি চকের ডানদিকে, একটি ছোট কিন্তু একটি মার্জিত মন্দির আছে যাকে বলা হয় সিলা দেবী মন্দির (সিলা দেবী ছিলেন কালী বা দুর্গার অবতার)। মন্দিরের প্রবেশদ্বারটি একটি রুপা দিয়ে আবৃত উত্থিত ত্রাণ আকৃতির দুটি দরজার দিয়ে গঠিত আর এর ভেতরে রয়েছে রুপা নির্মিত দুটি সিংহ। এই মন্দিরের দেবতা স্থাপন করেছিলেন মহারাজা মান সিং যখন বাংলায় যশোরের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ের জন্য কালীর কাছে আশীর্বাদ চেয়েছিলেন। দেবী স্বপ্নে রাজাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, সমুদ্রের বিছানা থেকে তার মূর্তিটি পুনরুদ্ধার করতে এবং এটি স্থাপন করে পূজা করতে। রাজা ১৬০৪ সালে বাংলার যুদ্ধে জয়লাভ করার পর, সমুদ্র থেকে মূর্তিটি উদ্ধার করে মন্দিরে স্থাপন করেন এবং এটি একটি একক পাথরের স্ল্যাব থেকে খোদাই করা হয়েছিল বলে এটিকে সিলা দেবী নামে অভিহিত করেন। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে, প্রবালের এক টুকরো দিয়ে তৈরি ভগবান গণেশের মূর্তিও খোদাই করা রয়েছে।
তবে এই সিলা দেবী মন্দির স্থাপনের আরেকটি গল্প প্রচলিত রয়েছে। সেখানে বলা হয়, রাজা মান সিং যশোরের রাজাকে পরাজিত করার পর একটি কালো পাথরের স্ল্যাব উপহার পেয়েছিলেন। এই কালো পাথরটির সাথে মহাভারতের মহাকাব্যের একটি যোগসূত্র ছিল, ধারণা করা হয় এই পাথরেই কংস ভগবান কৃষ্ণের বড় ভাইবোনদের হত্যা করেছিলেন। এই উপহারের বিনিময়ে মান সিং তার জয়ী রাজ্য বাংলার রাজাকে ফিরিয়ে দেন। আর এই পাথরটিতে দুর্গা মহিষাসুরমর্দিনীর মূর্তি খোদাই করে দুর্গের মন্দিরে সিলা দেবী হিসাবে স্থাপন করেছিলেন। সিলা দেবী তখন থেকেই জয়পুরের রাজপুত পরিবারের বংশের দেবতা হিসেবে পূজিত হওয়া শুরু করেন।
উল্লেখ্য যে, ষোড়শ শতকে মহারাজা মানসিংহ থেকে শুরু করে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত রাজপরিবারের দ্বারা মহিষ বলি দেয়ার রীতি প্রচলিত ছিলো; যা পরবর্তীতে সরকারি আদেশে নিষিদ্ধ করা হয়।
এই মন্দিরের সাথে একটি প্রথা ছিলো, আর তা হল নবরাত্রির উৎসবের দিনগুলিতে পশু বলির ধর্মীয় আচার (বছরে দুবার পালিত নয় দিনের উৎসব)। প্রথাটি ছিল মন্দিরের সামনে উৎসবের অষ্টম দিনে একটি মহিষ এবং ছাগল বলি দেওয়া, যা রাজপরিবারের উপস্থিতিতে করা হবে, ভক্তদের একটি বিশাল সমাবেশ তা প্রত্যক্ষ করবে। এই প্রথাটি 1975 সাল থেকে আইনের অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়, যদিও তারপরেও এই প্রথা চালু থাকে জয়পুরের প্রাসাদ মাঠের অভ্যন্তরে কঠোরভাবে গোপন এবং নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান হিসাবে যেখানে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রাই শুধু উপস্থিত থাকতেন। যাই হোক, এখন মন্দির প্রাঙ্গণে পশু বলিদানের প্রথা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়েছে এবং দেবীর উদ্দেশ্যে প্রদত্ত নৈবেদ্য শুধুমাত্র নিরামিষ হয়ে থাকে।
শিশ মহল বাইরে থেকে
ফোর্টের তৃতীয় প্রাঙ্গণটি ছিল মহারাজা, তার পরিবার এবং পরিচারকদের ব্যক্তিগত কোয়ার্টার যেখানে গণেশ পোল বা গণেশ গেট দিয়ে প্রবেশ করা যেত। এই প্রাঙ্গণটিতে দুটি ভবন রয়েছে, একটি অন্যটির বিপরীতে, মুঘল উদ্যানের আদলে একটি বাগান দ্বারা যা পৃথক করা। প্রবেশদ্বারের বাম দিকের বিল্ডিংটিকে জয় মন্দির বলা হয়, যার আরেক নাম "শিশ মহল" যা কাচের প্যানেল এবং বহু-আয়নাবিশিষ্ট সিলিং দিয়ে চমৎকারভাবে অলঙ্কৃত। আয়নাগুলি উত্তল আকৃতির এবং রঙিন ফয়েল এবং পেইন্ট দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে যা ব্যবহার করার সময় মোমবাতির আলোতে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এই শীষ মহল ষোড়শ শতকে রাজা মান সিং দ্বারা নির্মান শুরু হয় এবং ১৭২৭ সালে তা সম্পন্ন হয়েছিল। জয় মন্দিরের উপরে রয়েছে জস মন্দির, ফুলের কাঁচের ইনলে এবং অ্যালাবাস্টার রিলিফ ওয়ার্ক সহ ব্যক্তিগত দর্শকদের একটি হল।
শিশ মহলের ভেতর অংশ
এই দূর্গের অভ্যন্তরে এর বাইরেও আমরা দেখলাম জাদুর ফুল, বাগান, ত্রিপোলিয়া গেট (ত্রিপোলিয়া গেট মানে তিনটি গেট। পশ্চিম দিক থেকে প্রাসাদে প্রবেশ করা যায়। এটি তিনটি দিকে খোলে, একটি জালেব চকের দিকে, অন্যটি মান সিং প্রাসাদের দিকে এবং তৃতীয়টি দক্ষিণে জেনানা দেওরহির দিকে।), সিংহ গেট, চতুর্থ প্রাঙ্গন, প্রথম মান সিং এর প্যালেস প্রভৃতি।
আয়না মহলের ভেতর ভাগ
এত দ্রুত সব দেখা হচ্ছিলো আর বয়স্ক গাইড ভদ্রলোক একসাথে হরবর করে এতো এতো তথ্য দিচ্ছিলেন যে, মাথা চক্কর দিচ্ছিলো। এই লেখা লেখার সময় উইকি বস এর শরণাপন্ন হলাম তথ্যগুলো একত্রিত করতে। তবে ফোর্টে দেখা রাজা রানী'দের নানান ব্যবহার্য, পোশাক যা মুগ্ধ করেছে। একই সাথে প্রায় সাঁইত্রিশ কেজি ওজনের রাণীর পোষাক এবং তা পরিহিত অবস্থায় তাকে বহন করার জন্য রিকশার ন্যায় যান, এবং সেই যান চলার জন্য ঢালু গলিপথ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। আরও মুগ্ধ করেছিলো চারশত বছর আগে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনের কৌশল যা আজকের শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রকে হার মানাবে। ঘরের নীচ দিয়ে সারাক্ষণ পানির প্রবাহ দিয়ে গরমের দিনে ঘরকে শীতল করা আবার সেই একই ঘরে কাঁচের এমন কারুকাজ যেগুলোতে জানালাগুলো দিয়ে আসা সূর্যকিরণ প্রতিফলিত হয়ে ঘরকে গরম রাখবে।
জলরঙ্গে আঁকা মাওতা লেকের পাড় হতে আমের ফোর্টের বাহির হতে দেখা রূপ। ছবিটি একেছিলেন William Simpson ১৮৬০ সালে।
বিকেলের আগে আগে আমরা বের হয়ে এলাম ফোর্ট থেকে। ফোর্টের লাগোয়া রেস্টুরেন্ট এ ঢুকলাম দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে। বিগত দিনের আমার রাগান্বিত অগ্নিমূর্তির কথা ভেবেই বুঝি আমাদের ড্রাইভার ব্যাটা কোন টু শব্দ করলো না; সে তারমত করে কোন ফাঁকে লাঞ্চ সেরে নিলো টেরই পেলাম না। সেদিনের সেই দুপুরের আহার ছিলো আমার ভারত ভ্রমণের অন্যতম সেরা লাঞ্চ, প্রায় দশ বারো পদের নানান ভেজ আইটেম দিয়ে সারা সেই লাঞ্চের বেগুণের ভর্তা জাতীয় একটা পদ আর ঘন ডাল ফ্রাই এর স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে যেন। দুপুরের খাবার শেষে গাড়ীতে উঠে সোজা জয়পুর থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলা্ম.....
প্রথমেই দেখুন সেই বেগুণ ভর্তার ছবি, এরপর ফোর্টের নানান জায়গার ছবি। ক্যাপশন দিতে পারবো না, সব ভুলে গেছি
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ
পোষ্টের শুরুর ফুল ওয়াইড পিকচার ছাড়া বাকি সকল ফুল ওয়াইড পিকচার উইকিপিডিয়া এবং উইকিকমন্স হতে নেয়া।
পোষ্টের শেষের সকল ছবি বোকা মানুষের তোলা, Xiaomi Redmi Note 3 মোবাইল দিয়ে তোলা।
তথ্য এবং লেখনী (আংশিক) কৃতজ্ঞতাঃ
উইকি পিডিয়া
ডেইলি বাংলাদেশ ডট কম
প্রিয় ডট কম
উৎসর্গঃ আমার ভারত ভ্রমণের এই সিরিজটি ব্লগার "কামরুন নাহার বীথি" আপাকে উৎসর্গ করছি। উনি আমার এই ট্যুরে ট্যুরমেট ছিলেন। গত পহেলা জানুয়ারী রাত এগারো ঘটিকায় বীথি আপা আল্লাহ্র ডাকে সারা দিয়ে পরপারে চলে গেছেন আমাদের সবাইকে ছেড়ে। আল্লাহ্ তার শোকার্ত পরিবারকে এই শোক সইবার ধৈর্য দাণ করুন। আর আপাকে পরপারে আল্লাহ্ সকল গুনাহ (যদি থাকে) মাফ করে তার কবরে আজাব মাফ করুন এবং আখেরাতে বেহেশত নসীব করুন।
প্রথম পর্ব থেকে বীথি আপার এই ট্যুরে যুক্ত হওয়ার ঘটনাটা আবার তুলে ধরলামঃ
ঈদের কয়েকদিন আগে আমি কোন একটা কাজে নীলক্ষেত মোড়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি, একটি অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো, কল রিসিভ করতে অপরপাশ থেকে অচেনা কণ্ঠস্বর। আমাদের দলের সাথে যুক্ত হতে চায় এই ট্রিপে। “সামহোয়্যার ইন ব্লগ” এ তখন পর্যন্ত আমার পূর্বপরিচিত কেউ ছাড়া আর কারো সাথে পরিচয় ছিলো না। “সাদা মনের মানুষ” খ্যাত কামাল ভাই এর সাথে পরিচয় ভ্রমণ বাংলাদেশ থেকে। সেই কামাল ভাই এর কাছ থেকে খবর পেয়ে ফোন দিয়ে প্রিয় ব্লগার কামরুন নাহার বীথি আপা। উনি এবং ভাইয়া যুক্ত হতে চাচ্ছেন আমাদের সাথে। আমি একদিন সময় নিয়ে উনাকে কনফার্ম করলাম উনাদের যুক্ত হওয়ার ব্যাপারটা। এরপর উনাদের এয়ার টিকেট এর ব্যবস্থা করা হলো। দল গিয়ে দাড়ালো দশজনের। সিদ্ধান্ত হল চারজনের একটা দল ঈদের দিন রাতে রওনা হয়ে যাবো কলকাতার উদ্দেশ্যে। একদিন পরে বাকী ছয়জন রওনা হবে, যেহেতু কোরবানী ঈদের ছুটি, তাই অনেকেই সারাদিনের কোরবানীর হ্যাপা পোহানোর পর সেদিন রাতেই রওনা হতে রাজী হলো না। ফলে আমরা যে চারজন আগে রওনা হবো, তারা একরাত কলকাতা থেকে পরেরদিন সরাসরি বিমানবন্দর চলে যাবো। অপর দলও সরাসরি বেনাপোল বর্ডার হতে দমদম বিমানবন্দর চলে আসবে। এরপর ঢাকা থেকে সকলের কলকাতার বাসের টিকেট এবং আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ করে অপেক্ষার পালা চলতে লাগলো...
ভ্রমণকালঃ সেপ্টেম্বর ২০১৬
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর, ২০১৬ এর সকল পর্বঃ
* যাত্রা শুরুর আগের গল্প (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ০১)
* কলকাতায় অপেক্ষা... (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ০২)
* ফ্লাইট মিসড তো ট্যুর ক্যান্সেলড... টেনশনিত অপেক্ষার শেষে (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ০৩)
* আগ্রার পাণে যাত্রা (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ০৪)
* আগ্রার ঘাগড়ায়, দেখা হলো না নয়ন জুড়িয়া (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ৫)
* তাজমহলে পদধূলি (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ৬)
* আগ্রা ফোর্ট - বহু ইতিহাসের সাক্ষী (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ৭)
* কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা "ফাতেহপুর সিকরি" ভ্রমণ (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ৮)
* পিঙ্ক সিটি জয়পুর ভ্রমণে চলে এলাম "হাওয়া মহল" - (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ৯)
* "সিটি প্যালেস - জয়পুর" অনবদ্য রাজকীয় কীর্তি (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ১০)
* “যন্তর মন্তর” ফুঁ (থুক্কু) টু “জল মহল” (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ১১)
* আম্বার ফোর্ট - জয়পুরের মূল আকর্ষণ এবং ঐতিহাসিক মূল্য বিচারে রাজাস্থানের প্রধান দূর্গ (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ১২)
এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২৩ রাত ১২:৪০