কাপড় কাটা শেষ। এবার সেলাইয়ের পালা।
আমি কেবল মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম।হঠাৎ কোন রকম চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম মা বিছানায় পায়ের কাছে বসে আছেন।
গত কয়েকদিন থেকে আমার ভীষন জ্বর। নিয়ম করে জ্বর আসে নিয়ম করে যায়। জ্বর আসলে ঘুমাতে পারি না। মনে হয় সমস্ত পৃথিবী আমার চোখ চিড়ে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে।তাকিয়ে থাকতে হয়।সামান্য চোখ বন্ধ করলেও থাকা যায় না।রাতে যখন জ্বর ওঠে তখন ঘুমাতে পারি না। চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মনে হয় সমস্ত পৃথিবী আমার মাথার ভেতরে প্রবেশ করছে। আর তখনি আমি বমি করতে শুরু করি।
একসাথে বমি হয় না। প্রথম দিকে একটু একটু করে তারপর হঠাৎ শুরু হয় বমি।নাক মুখ দিয়ে বমি ওঠে। পেটে কিছু না থাকলে কষ্ট অনেক বেশী হয়। বমি করতে করতেই আমি বেহুঁশ হয়ে যাই।
কাল রাতে আমি এভাবে বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলাম। এইমাত্র আমার ঘুম ভাঙলো।
আমার মা আমার দিকে তাকালেন না। গুন গুন করে গান গাইছেন আর সেলাই মেশিন ঘুরাচ্ছেন।
"আমারো পরানো যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাইগো
আমারো পরানো যাহা চায়......."
আমি মার মায়াভরা কন্ঠে গান শুনে যাচ্ছি। মা এত সুন্দর করে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে পারেন ভেবে অবাক লাগছে।সমস্যা হল মা কখনই সামনাসামনি গান গাবেন না।তার গান শুনতে হলে তিনি যখন কোন কাজ করেন তখন তার অজান্তে তার পেছনে বসে গান শোনা। যদি সে টের পান তবে গান সেখানেই শেষ। মা প্রায় সময়ই এভাবে গান করেন গুন গুন করে। ভালো লাগে শুনতে।
আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি। মাকে আর ডাক দিলাম না। গান শুনতে শুনতে আমার চোখ জড়িয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল স্বর্গীয় আলো এসে পড়েছে ;পৃথিবীতে সে আলোয় বসে কেউ বীনা বাজিয়ে ইচ্ছে করে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে চাচ্ছে।আমার চোখ ঘুমে জড়িয়ে যাচ্ছে। মা কে আমি আর দেখতে পাচ্ছি না। গভীর ঘুমে আমি তলিয়ে যাচ্ছি।গভীর ঘুমে। ধীরে ধীরে।
এরপর আমার আর কিছু মনে নেই।
ঘুম ভাঙলো খুব ভোরে সম্ভবত পরের দিন। সকালের সূর্যের আলো জানালা দিয়ে চোখে এসে পড়লো। আমি হাত দিয়ে চোখ ঢেকে কোন ভাবে উঠলাম।এরপর চোখ পরিস্কার করতে করতে নাস্তা খেতে চলে গেলাম।দেখি খুব রাগ করে আছেন মা।
"সারাদিন খালি কাজ কাজ আর কাজ!!!এত ব্যস্ত হলে আমাকে কেন বিয়ে করল?এই যে আজকেও সে আসতে পারল না। অপারেশন ছিল অপারেশন!!।সারারাত অপারেশন করা লাগে??? এত টাকার কি দরকার??? কতবার বলেছি আমাদের এত টাকার দরকার নেই তা না তার টাকা লাগবেই!! কবে নিজের কি হয় কে জানে!!!!"
বাবার উপর মা'র মেজাজ গরম। গতকাল প্রক্টিসে গিয়েছেন বিকেলে রাতে ফেরেননি। সে আর তার দুই বন্ধু মিলে অনেক গুলো অপারেশন করবে নাকি। তাই আসতে পারেননি।
আমার বাবা একজন সার্জন।এমনিতেই ডাক্তারদের লাইফ বলে কিছু থাকে না। তার উপর সার্জনদের আরো খারাপ অবস্থা। বাবার অবস্থা আরো ভয়াবহ। গ্রামে অনেক ভাইবোনের পরিবার। একমাত্র তিনিই উঠে এসেছেন পরিবার থেকে। তাই সারাদিনই তাকে এই নিয়েই থাকতে হয়। এই কারনেই এমবিবিএস পাশ করে আর কোন বড় ডিগ্রী নেওয়ার সুযোগ পাননি তিনি। চেম্বারে বসেছেন। টাকার পর টাকা পাঠিয়েছেন বাড়িতে।নিজের শরীর যে ভেঙে পড়েছে সেদিকেও খেয়াল নেই।মার রাগ হওয়ার কারণ আছে।
মা'র মেজাজ আরো গরম হয়ে গেল যার প্রভাব পড়ল আমার ৪ বছরের ছোট বোনটার উপর। কাঁদতে কাঁদতে সে আমার রুমে আসছে।হাত দিয়ে চোখের পানি মুছছে।
আহারে। এত ছোট মানুষটার সাথে এরকম কেন করল মা? আহারে!
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। মা'র সাথে সামান্য রাগারাগি করলাম। যার রাগ তার সাথে মিটাও আমাদের সাথে কি!!!
তারপর ছোটবোন টাকে নিয়ে ঘুরলাম। রাগের মাথায় মা যে কি করেন ঠিক নাই। আমার এই বোনটা এত্ত কিউট যে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। সে মেয়েরে এভাবে কেউ বকা দেয়। মনটা খুবই খারাপ লাগছে। স্কুলে গেলাম না। বাসায়ই বসে রইলাম।
বিকেলে মা আমাদের অবস্থা বুঝতে পেরে আমাদের ঘুরতে নিয়ে গেলেন। আইসক্রিম খাওয়ালেন।
রাতে বাবা এলেন। আমরা টিভির রুমে টিভি দেখছিলাম। মা আমাকে দরজা খুলতে বলে নিজে ভেতরের রুমে চলে গেলেন।
বাবা কোন কথা না বলে মা যে রুমে আছেন সে রুমে গেলেন।তার সাথে আমরাও ভেতরের রুমে গেলাম একটা বিশেষ কারণে । বাবা এসে সরাসরি মা'র সামনে দাঁড়িয়ে একটা গিফট বের করে বলেন,
"হ্যাপি ম্যারেজ ডে"!!!
মা'র চেহারা দেখার মত ছিল। মা মনে হয় জীবনে এত বড় ধাক্কা খায় নি।
আমি অবাক হওয়ার ভান করে উঠলাম,"আজকে তোমাদের ম্যারেজ ডে জানতামই না"!! দুই ভাইবোন হাততালি দিলাম যদিও পিচ্চি জানে না ম্যারেজ ডে কি তারপরও বুঝেছে কিছু একটা মজার হবে।
বাবাকে যেমন বলেছি সে তেমনি করেছে। একটা কেক ও এনেছে। অসাধারণ একটা মুহুর্ত। জীবনে এমন কিছু মুহুর্ত আছে যা বারবার আসে না এবং একবার এসেই সেটা মনে খুব বড় জায়গা দখল করে নেয়। আজকের মুহুর্তটা সেরকম। এই মুহুর্তগুলো ছবির ফ্রেমে বাধিয়ে রাখতে সবাইই চায় কিন্তু একসময় এসব স্মৃতিই মন খারাপের কারণ হয়। তাই চাইলেও এসব মুহুর্ত মনে রাখতে নেই।
সেদিন মা'র মন ভাল হয়ে গেল। সবকিছু ঠিক হয়ে গেল ম্যাজিকের মত। ভাল লাগছে খুব। রাতে অনেক আনন্দ করে এরপর ঘুমিয়ে গেলাম।
তারপর খুব তাড়াতাড়িই যেন ঘুম ভাঙলো। মা আমার হাত ধরে ডাকছেন
"ওঠ জলদি। তোর বাবার কি যেন হয়েছে। ওঠ ওঠ।"
আমি খুব দ্রুত উঠলাম। দৌড়ে বাবার কাছে গেলাম। মনে হচ্ছিল যেন শ্বাস নিতে পারছেন না।গা ঘামছে।তারপর অনেক দৌড়াদৌড়ি, হাসপাতাল, কান্নাকাটি। সবকিছুই যেন কেমন ধুসর হয়ে আসছিল।আই সি ইউ তে ভর্তি ছিলেন বহুদিন। প্রতিটা দিন যেন একেকটা বছর। খারাপ সময়গুলো সহজে শেষ হতে চায় না যেন।
সেবার বাবা বেঁচে গিয়েছিলেন। হার্টে ব্লক ছিল বেশ কয়েকটা।আল্লাহই বাঁচিয়েছেন। মা সারাদিন কাঁদতেন বাবার জন্য। সারাদিন এত অভিযোগ যার প্রতি সেই বাবার জন্য মায়ের মনে এত ভালবাসা আমি কখনই দেখি নাই। ভালবাসা এরকমই হয়ত। কাছে থাকলে সেটা কখনই প্রকাশ হয়না। কেউ একজন দূরে চলে গেলেই তখনই অন্যজন তার অভাববোধ করে আর এই অভাববোধ, দূরত্ব থেকেই ভালবাসার জন্ম। ভালবাসা তার মানে পুরোপুরি মানসিক বা হৃদয় এর কোন ব্যাপার না।
ঘুম ভাঙলো একটা ঝাঁকুনি খেয়ে। আমি তাকালাম। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আমি একটা সিএনজি তে বসে আছি। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে আছি যেন। আমি এখানে কেন বুঝলাম না।
-কি হয়েছে? কোন সমস্যা?
-না না,একটু মাথা ঘুরাচ্ছিল।
-তুমি আমাকে কি যেন বলবে বলেছিলে। কি বলবে বলো?
এমন সময় সিএনজি জ্যাম এ আটকা পড়লো। মনে পড়ল আমি জিয়া উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলাম। আর ওকে আজ আমি আমার মনের কথাগুলো বলব। একটা বছর হয়ে গেল আমাদের বন্ধুত্বের।অনেকবার আমিও ওকে বুঝিয়েছি যে আমি ওকে পছন্দ করি, ও আমাকেও বুঝানোর চেষ্টা করেছে যে সেও আমাকে পছন্দ করে।আমার মনে হচ্ছে আজই সেই সময় এসেছে ওকে বলার।
-স্যার স্যার ফুল রাখবেন স্যার।
দেখলাম একটা মেয়ে হাতে কয়েকটা গোলাপ নিয়ে সিএনজির বাইরে দাড়িয়ে আছে।
আমার কি মনে হল আমি ১০ টাকা দিয়ে ৪ টা বড় দেখে গোলাপ কিনলাম।
জ্যাম ছেড়ে গেল।আমি গোলাপ গুলো হাতে নিয়ে ভাবছি আর ঘামছি। কিভাবে কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমি হঠাৎ ওর দিকে তাকালাম। দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কি মনে হল আমি গোলাপ ফুল গুলো দিতে শুরু করলাম।
প্রথম গোলাপ দিয়ে বললামঃ আমি
দ্বিতীয় গোলাপ দিয়ে বললামঃ তোমাকে
তৃতীয় গোলাপ দিয়ে বললামঃ ভাল
চতুর্থ গোলাপ দিয়ে বললামঃ বাসি
"আমি তোমাকে ভালবাসি"
গোলাপ গুলো হাতে নিয়ে ও সেগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিল একদৃষ্টে। কি ভাবছিল জানি না,কিন্তু খুব লজ্জা পেয়েছিল ও। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষন হতবুদ্ধি হয়ে।কি করব বুঝছিলাম না। অনুতপ্ত হচ্ছিলাম কেন কাজটা করতে গেলাম। ও যদি না করে দেয় তবে আমাদের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যেতে পারে।আমি ওর বন্ধুত্ব হারাতে চাই না।
আমিই জিজ্ঞেস করে বসলাম,"তুমি কি আমাকে ভালবাস???"
ও কিছু বলল না কিন্তু কিছুক্ষণ পর আস্তে করে আমার কাধে মাথা রাখল ও আমার একটা হাত ওর কোলের উপর নিয়ে রাখল।আমি কিছু বললাম না শুধু অন্য হাতটা ওর মাথার উপর বুলাতে থাকলাম।
এরপর আমরা জিয়া উদ্যানে পৌছে ঘুরাঘুরি করলাম,হাসাহাসি করলাম এবং দুনিয়ার সবচেয়ে দামি ফুচকা খেলাম সেদিন। এরকম ধরা খাব বুঝি নাই। এরপর বাসায় ফিরলাম একই ভাবে।
সারারাত আমরা অনেক কথা বললাম। এত এত কথা জমে ছিল আমাদের। ভোররাতের দিকে ও আমাকে বলল "ভালবাসি " এটাই আমার জীবনে শোনা সবচেয়ে মধুর শব্দ।
এরপর সময়ের সাথে সাথে আমাদের সম্পর্ক ও এগিয়ে চলে।কখনও ওর গালভরা অভিমান, কখনও মুখের ওই স্নিগ্ধ হাসি,কখনও ঝগড়া কখনও কাছাকাছি বসে বহুদূরে হারিয়ে যাওয়া দুজনের। কত যে প্লান আমাদের মনে পড়ে হাসি পায় এখনও।ওকে একটা গোলাপি রঙের টেডি দিয়েছিলাম, বলেছিলাম এটা আমাদের বড় ছেলে। ও সেটার নাম দিয়েছিল পিকু! কিন্তু কখনও ভাবি নি বসন্তের এই সোনালী দিনগুলোর পরে আবারও শীতের পাতাঝরা শুষ্ক দিন আসতে পারে।
একদিন ওর সাথে প্রচন্ড ঝগড়া হয় আমার।সামান্য কারণে। দোষটা আমার ছিল, কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি ও এত সিরিয়াস হয়ে যাবে ব্যাপারটায়। ও আমার সাথে ব্রেকআপ করে বসে হঠাৎ। আমি ভেবেছিলাম এটা তেমন কোন ব্যাপারই না,রাগ ভাঙলে সে ফিরে আসবেই। ওর ফোনের অপেক্ষায় বহুদিন ছিলাম কিন্তু ও আর ফোন দেয়নি।এত অভিমান!!
বহুদিন পর ও ফোন করেছিল আবার। নিজের দোষ স্বীকার করে নিলাম আমি কিন্তু আমরা কেমন যেন নিজেদের মত হয়ে গিয়েছিলাম ততদিনে। তবুও আবারো শুরু করলাম। এরপর কি হল একটা কালবৈশাখী ঝড়ের ঝাপটায় আমরা ছিটকে পড়লাম। ওর ফোন বেশ কিছুদিন ব্যস্ত পাই। এরপর একদিন বলেই দিল আমাকে তার আর প্রয়োজন নেই। কি জানি সে তার মত থাকতে চেয়েছিল,আমিও তাকে থাকতে দিয়েছিলাম।তার কাছে আমি একটা মিন মাইন্ডেড,একটা ইম্যাচিওর একজন ছেলে।
আমাদের সম্পর্কে কোন ১৪ ফেব্রুয়ারি আসেনি। ব্রেকআপের কয়েকমাস পরে এক ১৪ ফেব্রুয়ারি ওকে আমি একটা গিফট পাঠাই। আমাদের কিছু মজার মজার মুহুর্তের ছবিগুলি কোলাজ করে ইডিট করে সেটা দিয়ে বানানো একটা ম্যাজিক মগ পাঠাই। প্লান ছিল দুজনে এরকম দুটি মগে ওই দিনে একসাথে ওর হাতের বানানো চা খাব। আমার খাওয়া শ্রেষ্ঠ চা হচ্ছে ওর চা। কিন্তু তা আর হয়নি।হয়ত ও জানেই না ম্যাজিক মগের ব্যাপারে,জানে না তাতে গরম কিছু দিলে কাল মগের নিচে ছবিগুলি ধীরে ধীরে ভেসে ঊঠবে। যতই আমি ওর কাছে খারাপ হই আমি ওর জন্য অপেক্ষায় আছি সেই কবে থেকে। আমি জানি ও আসবে আবারো, আমাদের আবার দেখা হবে হোক সেটা মৃত্যুর পরে আমি জানি আমাদের দেখা হবেই। তখন আমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলব,"এই দেখ,আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম"
"তুমি একটা মিন মাইন্ডেড!!! "
"তুমি আগলি ইম্যাচিওর!!!! "
"তুমি জান না কিভাবে ভালবাসতে হয়!!!"
উফফ!! অসহ্য!! মাথা ঘুরাচ্ছে!!! বমি আসছে আমার।
বুঝছি না কিসব চিন্তা মাথায় আসছে। ওহ!!! মাথা ঘুরাচ্ছে। বারান্দায় যাই। প্রচন্ড মাথা ঘুরায়।আমি বমি করে বেহুশ হয়ে পড়লাম।
এরপর আবার জ্বর ওঠে। সেই ছোটবেলার মত।
নিয়ম করে জ্বর আসে নিয়ম করে যায়।
চোখ বন্ধ করলে মনে হয় সমস্ত পৃথিবী চোখ চিড়ে মাথার ভেতর ঢুকে যাচ্ছে।
আমি সাথে সাথেই বমি করি।
কানের কাছে শব্দ শুনি, মনে হয় মানুষ গিজগিজ করছে আশেপাশে।
চোখ খুলে সামান্য দেখার চেষ্টা করি।
পাশে বসা মেয়েটা জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদছে। আমি ওকে চিনতে পারি।ও আমার বোন মিলি।বোকা নাকি???
"এই মেয়ে তুমি বিয়ের শাড়ি পড়ে আছ ক্যান????"
মিলি কিছু বলল না।শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।
আশেপাশে অনেক মানুষজন।
কিছু মুখ চেনা,কিছু অচেনা।
সমস্ত পৃথিবী যেন আমার বুকের উপর চেপে উঠে বসতে শুরু করেছে। বুকটা ফেটে যাচ্ছিল যেন।প্রচন্ড পানির পিপাসা পেয়েছে।মনে হলো কেউ একজন এসে পানি খাওয়াল আমাকে।
চোখের সামনে এভাবে একের পর এক স্মৃতি গুলো একটা কালো ব্যাকগ্রাউন্ড এর সামনে কতগুলো ছবি হয়ে ফটো ইডিটর দিয়ে ইডিট করা কোলাজ হয়ে বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে আর সেইসব দিনগুলোয় ফিরে যাওয়ার তীব্র আকাংখা জন্মাচ্ছে আমার।
মিলির বিয়ের জন্য আমরা যখন যাচ্ছিলাম তখন মাঝে একটা ট্রাকের সাথে আমাদের মাইক্রো বাসের সংঘর্ষ হয়।মা বাবা ওখানেই মারা যান। আমি শুধু তাদের মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে ছিলাম,যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না।এরপর প্রতিটা দিন কোলাজ করা ছবির মত স্মৃতিগুলো একটার পর একটা মনের পর্দায় ভেসে উঠতে থাকে।।
এরপর একদিন আমি আমার মাকে দেখতে পাই যেন। পায়ের কাছে বসে সেলাই মেশিন ঘুরাচ্ছেন।সাদা একটা কাপড় হাতে নিয়ে সেলাই করছেন আর সেই ছোটবেলার মত গুন গুন করে গান গাইছেনঃ
"আমারো পরানো যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাইগো
আমারো পরানো যাহা চায়।
তুমি ছাড়া আর এই জগতে মোর কেহ নাই
কিছু নাইগো, আমারো পরানো যাহা চায়..........."
মনে হচ্ছিল স্বর্গের দেবীরা বীনা বাজিয়ে আমাকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে।চোখের সামনে যেন আলো ছায়ার খেলা শুরু হল এই সুরের তালে তালে।আমার চোখ জড়িয়ে যাচ্ছে।চোখে ভেসে থাকা কোলাজের কাল ব্যাকগ্রাউন্ড সামনের ছবিগুলো ছাপিয়ে আমার চোখের উপর ভর করছে।আমি আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছি যেন। রাজ্যের ঘুম এসে জড়ো হয়েছে আমার চোখে। ধীরে ধীরে আমি তলিয়ে যাচ্ছি। মা আমি আসছি.......
ছবিঃ গুগল ইমেজয
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:০২