somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - সমাধান - ৫

২৯ শে মে, ২০০৯ বিকাল ৫:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব - ১ | পর্ব - ২ | পর্ব - ৩ | পর্ব - ৪

বোবার কোন শত্রু নেই এই তত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে আমি এখন নির্বাক শ্রোতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছি। সবার সব কথাই শুনছি কিন্তু কোন উত্তর দিচ্ছি না। ব্যাপারটি আমার জন্য আরো সহজ হয়ে গেছে কারণ বাসার সবাই আমাকে দেখা মাত্র একটাই প্রশ্ন করছে মেয়ে কেমন লাগলো? কিন্তু আমার নির্বাক ভূমিকায় কেউ নিরুৎসাহিত হচ্ছে বলে মনেহচ্ছে না বরং তারা আরো দ্বিগুণ উৎসাহে আমাকে প্রশ্নের বাণে জর্জরিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অবস্থা দেখে মনেহচ্ছে আমার উত্তরের উপর তাদের জীবন মরণ নির্ধারিত হয়ে আছে। তাদের এই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কতদিন আমি টিকে থাকতে পারবো তা নিয়ে নিজের মনেই সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে মনেমনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি বিয়ে আমি করছি না।আজ অফিসে এসে টানা ১২ ঘন্টা নির্বাক থাকার ইতি ঘটালাম। যদিও ১২ ঘন্টার ৭ ঘন্টাই ঘুমের রাজ্যে বিচরণ করেছি। ঘুমের যে কি পরিমাণ উপকারীতা আছে তা এই মুহুর্তে আমার চেয়ে ভাল কেউ বুঝতে পারবে বলে মনেহয় না।

প্রকৃতি ভারসাম্যে বিশ্বাসী। কিন্তু একমাত্র আমার ক্ষেত্রেই বোধহয় প্রকৃতি বিরূপ আচরণ করছে। টানা ১২ ঘন্টা কথা না বলার পর আমার এখন ভারসাম্যজনিত কারণে অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করার কথা। কিন্তু আমার মোটেই কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। অফিসে আজকে বলার মত তেমন কোন কাজই করতে হয়নি। এসি'র ঠান্ডা হাওয়ার প্রাণটা জুড়িয়ে গেল ভাব নিয়ে বসেছিলাম অনেকটা সময়। কয়েকটি ফাইল সই করলাম। আর ৫টা বাজতেই উঠে রওনা দিলাম। মনেমনে সিদ্ধান্ত নিলাম আজ সন্ধ্যায় অনেক হাঁটবো। হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেই ঘুমের জগতে ফিরে যাব। এতে অন্তত বাসার সবার সেই বিরক্তিকর প্রশ্নের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। আমি এটুকু বুঝতে পারছি, সবাইকে একটা উত্তর দিয়ে দিলেই ঝামেলা চুঁকে যাবে। আমি যতই নির্বাক থাকব সমস্যা ততই ঘনীভূত হবে। তবে কেন যেন নির্বাক থাকতে ভালই লাগছে। বাসার সবার আকুতি মিনতি আর কৌতুহল ভালই উপভোগ করছি। বাসায় ফিরে কাপড় বদলেই বেরিয়ে পড়লাম।

বৈদ্যুতিক নিয়ন আলোয় শহরটাকে বেশ সুন্দর লাগছে। গ্রামের সন্ধ্যার চাইতে শহরের সন্ধ্যার পরিবেশটা আমার বেশি ভাল লাগে। শহরে কৃত্রিম আলোর সাথে প্রকৃতির অন্ধকার মিশে এক অদ্ভুত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পূর্ণিমায় চাঁদের আলো যখন শহরের কৃত্রিম আলোর সাথে মিশে একাকার হয়ে যায় সাথে যোগ দেয় তখন সেই আলোতে আমার সাথে আঁধারও বিভ্রান্ত হয়। আজ হাঁটতে হাঁটতে আবার সেই ডাস্টবিনের সামনে হাজির। আজ এক লোককে দেখলাম ডাস্টবিনের স্তুপ করা ময়লার উপর খুব আরাম করে শুয়ে আছে। লোকটির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মনেহলো তার চেয়ে সুখী এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই। হায়! আমরা কত আরামে এসি রুমে ঘুমাই তবুও আমরা কি এই লোকটার মত সুখী?

জীবনে প্রথমবারের মত আজ ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম। এতদিন সিনেমা নাটকে দেখে এবং লোকমুখে শুনে এসেছি। নায়িকার ব্যাগ ছিনতাই করা হল আর অমনি নায়ক হাজির হয়ে সেই ছিনতাইকরীকে অসাধারণ (?) দক্ষতায় রামধোলাই দিল। আমার মনেহয় সিনেমা নাটকগুলো অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের মনোকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই যেমন এই মাত্র আমার সামনে ছিনতাই-এর ঘটনা ঘটল। কিন্তু আমি নির্বিকার দাঁড়িয়ে ছিলাম কিছুই করতে পারলাম না। আসলে করার কিছুই ছিল না। ছিনতাইকারীরা ছিল সিএনজি-তে সুতরাং আমি চাইলেও তাদেরকে তাড়া করে ধরতে পারতাম না। আর আমিতো প্রথমে খেয়ালই করিনি। একটি মেয়ের চিৎকার শুনে ফিরে তাকাতেই দেখি কেল্লাফতে হয়ে গেছে। আর যদি ছিনতাইকারীদের ধরতেও পারতাম তাদের কাছে নিশ্চই অস্ত্র থাকবে। অন্তত পক্ষে ছুঁড়িতো থাকবেই। এমনও শোনা যায় ৪-৫ জনের একটি দল ছিনতাই করছে কিন্তু আশেপাশের মানুষ নির্বাক দাঁড়িয়ে আছে। কারণ কে নেবে ঝুঁকি? যেসব মানুষ নির্বাক তাকিয়ে থাকে আমার ধারণা তারা যথেষ্ট মনোকষ্টে ভোগেন। আমরা সিনেমা নাটক দেখে এতই প্রভাবিত হই যে বাস্তবতার মুখোমুখি হলে বড়সড় ধাক্কা খাই। তখন নিজেকে খুব ছোট মনেহয়।

অনেকক্ষন হাঁটা হাঁটি করতে করতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। যে গলি দিয়ে আমি হাঁটছি তা একেবারে ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার। অতি সাবধানে হেঁটে একটা বাড়ির সামনে আসলাম। এখানে অন্ধকার আলকাতরার রূপ ধারণ করে আছে। নিজের হাতও নিজে দেখতে পাচ্ছি না। হঠাৎ কোথা থেকে যেন খুবই সুরেলা কন্ঠে গেয়ে উঠলো "অরুণকান্তি কে গো যোগী ভিখারী......."। আমি শব্দের উৎস লক্ষ্য বের করার জন্য গানটির প্রতি খুবই মনোযোগ দিলাম। তখনো গানটি শুনতে পাচ্ছি স্পষ্ট "শ্যামল কিশোরো রূপ সুগঠিনি............."। অনেক চেষ্টা করে বুঝতে পারলাম আমি যে বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকেই কেউ একজন গাইছে গানটি। এটি আমার খুবই প্রিয় একটি গান। অনেক চেষ্টা করেও যিনি গান গাইছেন তাকে দেখতে পেলাম না। বাড়িটি যেন ঠিক ভুতুড়ে একটি বাড়ি। কোথাও এক চিলতে আলোও নেই। গানটি শুনে মন ভরে গেল যদিও গানের উৎস সম্পর্কে কোন ধারনা পেলাম না। আনন্দ চিত্তে বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলাম। তখনও কানে বাজছে সেই সুরেলা কন্ঠে গান "অরুণকান্তি কে গো যোগী ভিখারি..........."।

চলবে ...............
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×