গতরাতে একটি সংবাদ পড়ে খুবই মর্মাহত হলাম। তীব্র গরমে মারা গেছে এগারো বছরের স্কুল পড়ুয়া এক কিশোরী। একটি অনলাইন পোর্টাল থেকে বিস্তারিত যা জানা যায়- কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গৌরীপুর সুবল-আফতাব উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রচণ্ড গরমের কারণে ‘হিট স্ট্রোকে’ হাবিবা (১২) মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, হাবিবা স্কুলেই মাথা ঘুরে পড়ে যায়। এরপর কমনরুমে গিয়ে তার মাথায় পানি ঢালা হয়। অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে হেলথ কমপ্লেক্সে ও পরে ঢাকায় রেফার করা হয় হাবিবাকে। হাবিবার চিকিৎসকদের মধ্যে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার একটি বক্তব্য অনলাইনে এসেছে। উনি বলেন বলেন, হাবিবাকে যখন পাই তখন তার শিরা চলছিলো না। দূর থেকে সম্পূর্ণ ঘটনাটি ও ও মৃত্যুর লিখিত কারণ পর্যালোচনা করলে, এটাকে untreated Heat exhaustion এর কারণে পরবর্তীতে Heat stroke বলা যেতে পারে। Heat stroke একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। আমরা জানি, আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের নিজস্ব একটি পদ্ধতি হচ্ছে Sweating বা ঘামানো। কিন্তু তীব্র দাবদাহে অনেক সময় শরীর ঘাম দিয়েও তার নিজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তীব্র গরমের সাথে যদি ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা ও শারীরিক পরিশ্রম যোগ হয় তাহলে তা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে Heat stroke এর দিকে ধাবিত করতে পারে। সাধারণত শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে এই Heat exhaustion ও Heat stroke এর ঝুঁকি বেশী।
দেখি লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ
যদি তীব্র গরমের সাথে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, ঘন ঘন শ্বাস নিতে হয়, প্রচুর ঘামের সাথে সাথে মাংসপেশিতেও ব্যথা করে, বমি বমি ভাব ও শারীরিক দুর্বলতা অনুভব হয়, কিন্তু পূর্ণ সচেতনতা থাকে তাহলে ওই অবস্থাকে Heat exhaustion ধরে নিয়ে প্রাথমিক কিছু চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। এই প্রাথমিক ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে আছে - শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা স্থানে নিয়ে যাওয়া, সুপেয় পানি ও খাবার স্যালাইনের ব্যবস্থা করা, সারা শরীরে ভেজা কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দেওয়া বা স্পঞ্জিং করা, আরমপিটে আইস প্যাক এপ্লাই করা। খুব দ্রুততার সাথে নেওয়া এই পদক্ষেপগুলো শরীরে হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়া তাপমাত্রার সাথে সাথে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ক্ষয়ের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এই অবস্থায়ও পূর্ণ পর্যবেক্ষণ জরুরী। প্রয়োজনে অবশ্যই নিকটস্থ হাসপাতালে যাওয়া উচিত।
আবার যদি তীব্র গরমে উপরে বর্ণিত উপসর্গগুলোর সাথে হঠাৎ সচেতনতার মাত্রা কমে যায়, মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়, কথা বলতে কষ্ট হয় কিংবা খিঁচুনি দেখা দেয় তাহলে ওই অবস্থাকে Heat stroke ধরে নিয়ে দ্রুত নিকটস্থ well-equipped হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। Heat stroke এ সাধারণত শারীরিক তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশী হয়ে যায়। ফাস্টএইড কিট বক্সে থাকা ডিজিটাল থার্মোমিটার এ ক্ষেত্রে ব্যবহ্যত হতে পারে।
Heat exhaustion ও Heat stroke কে যেভাবে দূরে রাখা যেতে পারে
সরাসরি সূর্যের নিচে ভারী কাজ পরিহার করা উচিত। যদি নিতান্তই এমন কাজ করতে হয়, তবে প্রতি ঘণ্টায় অন্তত এক গ্লাস করে খাবার পানি পান করা দরকার। হালকা ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করলে ভালো। ক্যাফেইন ডিহাইড্রেশন করে, কফি পানে বিরত থাকা এমনকি চা পান না করাও ভালো পদক্ষেপ।
গতকালের বৃষ্টির কারণেই বোধহয় আজ আমার এলাকায় তুলনামূলক কম গরম। বেশ কয়েকদিন পর স্বস্তি পাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৬