চলচ্চিত্র মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। ১৯৫৬ সালে তৎকালীন পূর্ব-বাংলায় নির্মিত প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ নির্মিত হওয়ার পর থেকেই বাংলা ছবির সমৃদ্ধির যুগ শুরু হয়, যা ৯০’র এর দশক পর্যন্ত বজায় ছিলো। স্বাধীনতার পর থেকেই হিন্দি ছবির হুবহু নকল করে ছবি নির্মাণের কারণে এবং পরে অশ্লীলতার কারণে বাংলা ছবির জমজমাট ব্যবসা সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। বাংলাদেশের চেয়ে তিনভাগের একভাগ জনসংখ্যার তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানার তামিল-তেলেগু চলচ্চিত্র যখন সারা পৃথিবী কাপাচ্ছে, তখন বাংলাদেশে ছবি চালানোর প্রায় সব প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে নকলবাজির কারণে এফডিসির ছবি নির্মাণ প্রায় বন্ধ হয়ে গেলেও দেশে সরকারী অনুদানের ছবি নির্মাণ অব্যহত আছে। ১৯৭৯ সালে প্রথমবারের মতো অনুদান প্রথা চালু হওয়ার পর পথের পাচালীর অনুকরণে মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী নির্মিত সূর্য দীঘল বাড়ী নামে দারিদ্রের জঘন্য প্রদর্শিনী নির্মিত হয়, যেটা ছিলো ব্যবসায়িকভাবে চরম ব্যার্থ একটা চলচ্চিত্র।
একমাত্র বাদল রহমানের এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী (১৯৮০) ছাড়া আজ পর্যন্ত সরকারী অনুদানে একটা মানসম্মত বা ব্যবসা সফল ছবিও নির্মিত হয়নি। বরং সরকারী অনুদান নিয়ে নির্মিত অনেক ছবির টাকা পরিচালক আত্মসাৎ করলেও সেই ছবি ১০-১২ বছরেও নির্মিত হয়নি।
এরপরও সরকারী অনুদান প্রদান অব্যহত আছে। এই সুযোগে চলছে অনুুদান নিয়ে ছবি না বানয়ে বা নামমাত্র ব্যায়ে ছবি নির্মাণ করে অনুদানের প্রায় পুরো টাকা আত্মসাৎ করার প্রক্রিয়া।
২০০৯-১০ অর্থবছরে অনুদান পাওয়া মুক্তি পাওয়া সূচনারেখার দিকে ছবিটা মুক্তি পায়নি পরিচালক আখতারুজ্জামান ২০১১ সালে মারা যাওয়ার কারণে ।
স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের কাল না বানানোর কারণে তথ্য মন্ত্রণালয় পরিচালক জুনায়েদ হালিমের বিরুদ্ধে মামলা করে। এই পরিচালক বলেন, ‘আমি একাধিকবার অনুদানের টাকা ফেরত দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মন্ত্রণালয় মামলা করে। আমি মামলা ফেস করব না। হয় ছবি বানিয়ে শেষ করব বা টাকা ফেরত দেব।’টাকা নিয়ে কাজে গড়িমসি চলছেই
চা বাগানের শ্রমিকদের জীবনকাহিনী নিয়ে নির্মিত হচ্ছে সরকারি অনুদানের ছবি ‘ছায়াবৃক্ষ’। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পূর্ণদৈর্ঘ্য বিভাগে ৫০ লাখ টাকা অনুদান পায় ছবিটি। তানভীর আহমেদের চিত্রনাট্যে এটি পরিচালনা করছেন বন্ধন বিশ্বাস। এ ছবি দিয়ে প্রথমবার জুটি বাঁধেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস ও চিত্রনায়ক নিরব হোসেন। চলতি মাসের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের রাঙ্গনিয়া কোদালা চা বাগানে শুরু হয় ছবির দৃশ্যধারণ। প্রথম লটের শুটিং শেষ করে নিরব-অপু ঢাকায় ফিরেছেন সোমবার। মঙ্গলবার ‘ছায়াবৃক্ষ’ ইউনিট ঢাকা ফেরার কথা থাকলেও তারা ফিরেন বুধবার সকালে। শুটিং ছাড়া বাড়তি একদিন থাকতে হয় রাঙ্গুনিয়া। কারণ রিসোর্ট ভাড়ার টাকা না দিতে পারায় টেকনিশিয়ানদের একদিন আটকিয়ে রাখেন রিসোর্টের মালিক। পরে টাকা দিয়ে বুধবার সকালে ঢাকা ফিরেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ‘ছায়াবৃক্ষ’ সংশ্লিষ্ট পরিচালকের ঘনিষ্ট দুই জন বলেন, ছবিটি নিয়ে সবাই খুব আশাবাদী ছিলাম তবে যেভাবে এর নির্মাণ কাজ হয়েছে তাতে বড় জোর টেলিফিল্ম হবে। অথচ শিল্পী থেকে শুরু করে টেকনিশিয়ান সবাই না খেয়ে দিন রাত সর্বোচ্চ শ্রম দিয়েছে কাজটি ভালো ভাবে শেষ করার জন্য। পরিচালকের কাজে আরও মনোযোগী হওয়া দরকার ছিল। এটি সরকারি ছবি হলেও প্রযোজক নিজের মতো করে টাকা পকেটে নেওয়ার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করছেন। ছবির কাজ শেষের দিকে হলেও টেকনিশিয়ান কেউ এখনও টাকা পায়নি। রিসোর্ট ভাড়া দিতে না পারায় রাঙ্গুনিয়া একদিন আটকে থাকে ‘ছায়াবৃক্ষ’ ইউনিট
সম্পতির টোকন ঠাকুর নামে অনুদানপ্রাপ্ত এক ব্যাক্তিকে অনুদান নিয়েও ছবি নির্মাণ না করার অপরাধে মামলা হওয়ায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ৭ বছরেও যখন কেউ অনুদানের টাকা নিয়ে একটা ছবির কাজ শেষ করতে পারেনা, তখন তার দুর্নীতির বিষয়টা ষ্পষ্ট হয়ে উঠে।সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, টোকন ঠাকুর গ্রেফতার
২০২০-২১ সালে এমন একজন ব্যাক্তি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য অনুদান দেয়া হয়েছে, যে একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় গোপনে বাইরে ক্যামেরা ভাড়া দিতো। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়। শুধূ তাই না, এই ব্যাক্তি ২০১৪ সালে এক ছাত্রীকে কু-প্রস্তাব দিয়ে ছাত্র আন্দোলেন মুখে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বিতাড়িত হয়েছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মচারীরা এ ঘটনার সাক্ষী। জীবনে একটা টিভি নাটকও না বানানো এই দুর্নীতিবাজ ও চরম লম্পট ব্যাক্ত অনুদানের ৭৫ লাখ টাকা পেলে যে কি করবে, সেটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হতে হয় না।
টেলিফিল্ম বানিয়ে চলচ্চিত্র বানানো হয়েছে বলে অনুদানের টাকা চুরির অভিযোগও উঠেছে।
বাংলাদেশ এখনো চরম দরিদ্র একটা দেশ। সরকারী অনুদানের ছবি মানেই জনগণের কষ্টার্জিত করের টাকার অপচয় আর নির্মাতাকে চুরির সুযোগ করে দেয়া। তাই প্রতিবছর সরকারী অনুদান না দিয়ে টাকার অপচয় না করে এই অর্থ দারিদ্র নির্মূলের কাজে লাগানো হোক
একারণে চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারী অনুদান প্রথা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার দাবী জানাচ্ছি।
আর সেটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে যেনো অন্তত পরিচালকদের নগদ টাকা হাতে না দিয়ে ছবির সব অভিনেতা-কলাকুশলী এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যায় সংশ্লিষ্ট পক্ষদের চেকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।
তাহলে পরিচালকরা অনুদানের টাকা চুরি করার সুযোগ পাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ২:৩৭