somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Comedy of Errors: ত্রিমুখী চাপে অধ্যাপক ইউনূস- কে কার লোক ?

২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আহা, কী চমৎকার দৃশ্য! অন্তর্বর্তী সরকার এখন যেন একটা জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো হয়ে উঠেছে - "কে বেশি নিরপেক্ষ?" শিরোনামে। তিনটি রাজনৈতিক দল : বিএনপি, জামায়াত আর এনসিপি - এখন প্রধান উপদেষ্টার দরজায় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হাতে তালিকা নিয়ে, যেন স্কুলে শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করতে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের দল। বিএনপি বলছে, "স্যার, জামায়াতের লোক আছে সরকারে!" জামায়াত বলছে, "না না, বিএনপির লোকই বেশি!" আর এনসিপি? তারা তো একদম ফাটিয়ে দিয়েছে - "আরে ভাই, দুইজনই মিলে ভাগবাটোয়ারা করছে, আমরা তো বাদই পড়ে গেলাম !"

বিএনপির অভিযোগ শুনলে মনে হবে সরকারে জামায়াত-শিবিরের লোকে ভরপুর। তারা বলছে জনপ্রশাসন কমিটির একজন উপদেষ্টা নাকি ছাত্রশিবির করতেন। এখন সব জেলা প্রশাসকের পদায়নে তার হাত আছে। ভাবুন তো, একজন মানুষ নাকি পুরো দেশের প্রশাসন কন্ট্রোল করছেন! সুপারহিরো মুভিতেও এত পাওয়ার দেখা যায় না। অন্যদিকে জামায়াত বলছে সম্পূর্ণ উল্টো কথা। তাদের মতে, সরকারে বিএনপির তিনজন উপদেষ্টা আছে যারা একদম নিরপেক্ষ না। আরেকজন উপদেষ্টা নাকি সোশ্যাল মিডিয়ায় বসে জামায়াতকে হেয় করছেন। আর তার পরিবারের কেউ বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন । ওহ্‌, কী ভয়ংকর ষড়যন্ত্র ! যেন বলিউডের থ্রিলার মুভির প্লট।

এনসিপি? তারা তো আরও এগিয়ে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, দুইজন উপদেষ্টা বিএনপির শীর্ষ নেতার বন্ধু, একজনের জামায়াত-সংশ্লিষ্টতা আছে, দুইজন নারী উপদেষ্টার একটা দেশের দূতাবাসের সাথে সখ্য আছে। আরে বাবা, এত তথ্য তারা কোথা থেকে পেল? গোয়েন্দা সংস্থা খুলে বসেছে নাকি? সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, সবাই অভিযোগ করছে কিন্তু কেউ নাম বলছে না! বিএনপি প্রধান উপদেষ্টাকে নাকি নাম বলেছে, কিন্তু জনসমক্ষে বলছে না। জামায়াতের নায়েবে আমির বলে দিলেন, "আপাতত কারও নাম বলছি না। উপদেষ্টারা শোধরাবেন, না করলে তারপর নাম প্রকাশ করব।" এটা যেন এক ধরনের রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল! "শোধরাও, নাহলে নাম প্রকাশ করে দেব" : সিনেমার ভিলেনরাও এভাবে কথা বলে।

আসিফ মাহমুদ আর মাহফুজ আলম - এই দুইজন এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত। সেপ্টেম্বরেই নাকি তাদের পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা "আরও সময় চান"। মাহফুজ আলম তো নিজেই বলে দিয়েছেন, "দুই মাস ধরে আমি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি যে আমি কখন নেমে যাই।" ভাই, অনিশ্চয়তা তো আমরা সবাই আছি ! পুরো দেশই অনিশ্চয়তায় আছে যে আপনারা কখন নামবেন! এনসিপি বলছে, কেবল ছাত্র প্রতিনিধিদের কেন টার্গেট করা হচ্ছে? অন্য উপদেষ্টারা কি খুব নিরপেক্ষ? কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই দুইজন এনসিপির সাথে যুক্ত বলে মনে করা হয়, তাই বাকি দলগুলো তাদের বের করে দিতে চায়।

এদিকে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান একদম জিনিয়াস সমাধান বের করলেন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বললেন, "একটি দলের তালিকায় আমার নামও আছে। তবে আমি পক্ষপাতদুষ্ট নই।" তারপর চমৎকার সমাধান দিলেন - একটা অধ্যাদেশ জারি করো যে, কোনো উপদেষ্টা পরবর্তী সরকারের লাভজনক পদে যেতে পারবে না! বাহ! এটা যেন "আমরা কেউ কিছু পাবো না, তাই তোমরাও পেও না" টাইপের সমাধান। তবে শর্ত আছে - নির্বাচনের তফসিলের আগে পদত্যাগ করলে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। মানে নিজের জন্য পিছনের দরজা খোলা রাখলেন !

গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর তো একদম সরাসরি কথা বলে দিলেন। তিনি বললেন, "তিন দলই ভাগবাটোয়ারা করেছে। এনসিপিও জাজ নিয়োগ দিয়েছে। তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার কাছে লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছে।" ভাই, এই কথাটাই তো সত্যি! সবাই নিজেরা যখন সরকার গঠনের সময় লিস্ট দিয়েছিল, লোক ঢুকিয়েছিল, এখন নির্বাচন আসছে দেখে সবাই "নিরপেক্ষতা" খুঁজছে !

পুরো বিষয়টা দাঁড়িয়েছে এমন - সবাই সবাইকে দোষারোপ করছে, কিন্তু কেউ নিজের দোষ স্বীকার করছে না। বিএনপি বলছে জামায়াতের লোক বেশি, জামায়াত বলছে বিএনপির লোক বেশি, এনসিপি বলছে দুইজনেই মিলে সব ভাগ করে নিয়েছে। আর মাঝখানে অন্তর্বর্তী সরকার? তারা এখন যেন তিন পক্ষের চাপে পিষ্ট অবস্থায়। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নিশ্চয়ই ভাবছেন, "নোবেল পুরস্কার পাওয়া সহজ ছিল, এই সরকার চালানোর চেয়ে !"
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:১১
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×