somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি চতুষ্পদ ভালবাসা - ৭ (শেষ পর্ব)

০৫ ই মে, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ষষ্ঠ পর্ব পঞ্চম পর্ব চতুর্থ পর্ব তৃতীয় পর্ব দ্বিতীয় পর্ব প্রথম পর্ব

আমি একটি বাসার সামনে দাড়িয়ে। এত বড় বাসা অথচ প্রাণের কোন ছিটেফোটা নেই। দোতালার খোলা জানালায় মোটা পর্দার আড়ালে এক রহস্য জমাট বেঁধে থাকে। সেই রহস্য জানার কৌতূহলে বাতাস আমার সঙ্গি হয়। মৃদুমন্দ হাওয়ায় সেই পর্দা সামান্যই কাঁপে কিন্তু রহস্যের পর্দা উন্মোচিত হয় না। আমি সামান্য ইতস্তত করে কলিংবেলে হাত রাখি।

খুট করে একটা শব্দ হয়। দরজা সামান্য ফাঁক করে একজন মধ্যবয়সী মহিলা শূণ্যদৃষ্টিতে আমাকে দেখেন। আমি কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই দরজাটা আরেকটু খোলে । মাথার উপরে মধ্যদুপুরের সূর্যটা কোথাও গনগন করছে। তার উত্তাপের খানিকটা আমার কপাল ভিজিয়ে দেয়। আমি কপাল মুছে মহিলাটির ঘাড়ের উপর দিয়ে পেছনে তাকিয়ে কন্ঠের ক্লান্তির মাঝেও একটা অস্পষ্ট মলিন উচ্ছাস জোর করে টেনে এনে বলি, ভালো আছো?
কয়েক বছর আগে এমনি একটি দিনে শৈশবের নদী তীরে তাকে বিস্মিত করে আমি বিব্রত হয়েছিলাম। আজও তার চোখে সেই বিস্ময়ই খেলা করে। শুধু এবারের বিস্ময় আমাকে করে মোহাবিষ্ট। আমি তাই সেদিনের মত চলে না গিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তার বিস্মিত মুখটা দেখি।

***

কিছু কিছু স্বপ্ন হয় বড়ই সুন্দর। সেখানে জীবনের সব অপ্রাপ্তিই প্রাপ্তি হয়ে স্বপ্নচারীর হাত ধরে। সময়টুকু কাটে স্বর্গসুখে। ক্ষণস্থায়ী স্বপ্নযাত্রায় একজন নিঃসঙ্গ মানুষ তার সঙ্গীকে কাছে পায়। কিন্তু অচিরেই এক স্রোত এসে তাদের আলাদা করে। তাকে নিয়ে ফেলে বাস্তবের পরিচিত বালুকাবেলায়। স্বপ্ন কেটে যায় তবু পড়ে থাকে তার ছায়া। যে ছায়া মন বিষন্ন করে। বাকিটা দিন তাই এলোমেলো কাটে।

সেগুন বাগিচায় দুদক অফিসের সাথের রাস্তাটায় বছরের বেশিরভাগ সময়ই প্রচন্ড বাতাস থাকে। আজকের দিনটিতেও তার ব্যতিক্রম হয় না। আশে পাশে বিশাল সব এপার্টমেন্ট। এত বাতাস হয় কিভাবে কে জানে। হুশ করে একটা মোটর সাইকেল আমার পাশ দিয়ে চলে যায়। একটি মেয়ে, চালক ছেলেটির বাম কাঁধে তার ডান হাত রাখে। মোটামুটি ফাঁকা রাস্তায় মোটর সাইকেলের তীব্র গতি মেয়েটিকে একই সাথে উৎকন্ঠিত ও শিহরিত করে। অবাধ্য চুলগুলো বাতাসের হাতে ছেড়ে সে ছেলেটির কাঁধ আরো জোরে খামচে ধরে। বাড়তি সেই ছোঁয়ায় মোটর সাইকেলের গতি আরো বেড়ে যায়। এ সবকিছু মেয়েটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ। একদল পথচারী মোটর সাইকেলের গতিপথ অনুসরণ করে তাই গোপন দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

সন্ধ্যা নামে ধীরে। সেই সাথে প্রচন্ড বাতাসে ধূলিঝড় ওঠে। আমি ঘরে ফেরার সিদ্ধান্ত নেই। শান্তিনগর মোড়ে সব রিক্সাচালক নিরাপদ আশ্রয়ে। তাই হেটেই রওনা দেই। কাকরাইলের মোড়ে আসতে আসতেই বৃষ্টি শুরু হয়। দিনের অন্যান্য সময়ে ব্যস্ত এই মোড় এখন প্রায় ফাঁকা। প্রায় সবাই বিভিন্ন আশ্রয়ে ভিড় করেছে। তাদের জীবন আশ্চর্য ছকে বাঁধা বড়ই অর্থময়। আর আমার এলোমেলো জীবনটা বৃষ্টির মাঝে কি এক অর্থহীন আনন্দ খুঁজে ফিরে -

When I was wandering in the desert
And was searching for the truth
I heard a choir of angels calling out my name
I had the feeling that my life would never be the same again
I turned my face towards the barren sun

And I know of the pain that you feel the same as me
And I dream of the rain as it falls upon the leaves
And the cracks in our lives like the cracks upon the ground
They are sealed and are now washed away..

You tell me we can start the rain
You tell me that we all can change
You tell me we can find something to wash the tears away
You tell me we can start the rain
You tell me that we all can change
You tell me we can find something to wash the tears.....

তুমি বলেছিলে এমন বৃষ্টি জীবনের যেকোন শূণ্যতা ভরিয়ে দিতে পারে। অন্তরের সব কান্না ধুয়ে মুছে নিয়ে যেতে পারে। আজ আমার জীবন শূণ্য হয়েছে। হৃদয় উপচানো কান্না জমেছে। যাবে কি বৃষ্টিতে আজ সব ধুয়ে?

প্রেস ক্লাবের কাছে সৌভাগ্যক্রমে একটা রিকশা পেলাম। বৃদ্ধ রিকশাচালকের ঠান্ডায় কেপে কেপে ওঠা আমার দেহটি দেখে বোধ হয় মায়াই হল। সকালের স্বপ্নের ছায়া সরে গিয়ে অদ্ভুত এক ঘোর আমার সঙ্গি হয়। আমি হুড তোলা রিকশার একপাশে মাথা রেখে সামনে তাকাই। এই ঘোর এক জ্বরের পূর্বাভাস যা হয়তো আজকে রাতেও আমাকে নতুন একটা স্বপ্ন দেখাবে। যে স্বপ্ন কোন এক মনোমুগ্ধকর স্বর্গলোকে আমাকে নিয়ে যাবে। আমি মন প্রাণ উজাড় করে চাইবো যেন তার প্রতিটা অংশই সত্যি হয়।

***

একটি মেয়ে আমার লেখা পড়ে। তার চোখে মুখে অকারণ রুদ্ধশ্বাস ভঙ্গি। মেয়ে বলা কি ভুল হল? তার শরীর কিছুটা ভারী হয়েছে। তার ভিতরে ভয়হীন অথচ নিচ্ছিদ্র অন্ধকারে কেউ একজন তাকে মা বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একসময় সে লেখা থেকে মুখ তুলে বলে, আমি বেঁচে আছি এটা তোমার কাছে স্বপ্ন? মরে যাওয়াটাই সত্যি?

কি সুন্দর একটা দৃশ্য ! এও কি তবে স্বপ্ন? তার মোহনীয় ভঙ্গিতে বসে থাকা, গোলাপি শাড়ির রূপালি পাড়, অভিমানে ফুলে ফুলে ওঠা গাল, চোখের গভীর বিষাদে ঝিকমিক করতে থাকা নক্ষত্রবীথী - আমার কল্পনার গহীন জগত থেকে কি তবে প্রকৃতি সব প্রিয় দৃশ্যগুলো একসাথে তুলে এনে আমাকে দেখাচ্ছে ? আমার জানতে ইচ্ছে হয়।

যদি বাস্তব হয় তবে তার হাতটা ধরলেও সে মিলিয়ে যাবে না। চিবুক তুলে আমি পারবো এরপর তার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে। সেই ছোঁয়ায় তার সারাটি শরীর পরিচিত ভঙ্গিতে কেঁপে কেঁপে উঠবে, আমার বুকের কাছে তার বুক ছন্দহীন উঠবে নামবে, তার শরীর থেকে আসা এক মায়াবী গন্ধ আমাকে আরো কিছু পাওয়ার নেশায় বিভোর করবে। প্রকৃতি পারবে না নির্ভুল ভাবে নকল করে আমাকে এত কিছু দেখাতে।

আমি এগিয়ে যাই। সে মুখ তুলে তাকায়। কি মায়া তার চোখে ! স্বপ্ন কি এত সুন্দর, এত বাস্তব হয়? আরেকটু এগোলেই তার হাতটা ধরতে পারবো। বাস্তব আর স্বপ্নের রহস্য ভেদ হবে তখন।

অপেক্ষা করে আমার কাশবনের পরী। আমার চতুষ্পদ ভালবাসা।





সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০০৮ ভোর ৪:২৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×