somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও দুই পরদেশীর চোখে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শীতের সকালের মিষ্টি ঘুমটা ফোনের বিকট চিৎকারে ভেঙ্গে গেল, ঘড়িতে তখন সকাল ৭ টা। বাধ্য হয়ে কলটি গ্রহন করতেই ভেসে এল রাষ্ট্রপ্রধানের ভারী গলা। সকাল ৮টার মধ্যে তৈরি হয়ে বাস স্টপেজ এ যেতে হবে। পরিকল্পনাটা রাতেই করা হয়েছিল,তাই কথা না বাড়িয়ে চা খেয়ে বের হয়ে গেলাম। জায়গামত রাষ্ট্রপ্রধানকে পেলাম এবং দ'জন একসাথে একটা লোকাল বাসে চেপে বসলাম, উদ্দেশ্য শহীদ মীনার, ভাষা আন্দোলনে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সেই সাথে কিছু আবেগীয় ছবি ফ্রেমবন্দী করে রাখা।

রাস্তা খালি থাকায় দ্রুতই পৌঁছে গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকায়, কিছুটা পথ নিরাপত্তার কারনে হেটে যেতে বাধ্য করল আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। পলাশীর মোড় গিয়েই থমকে যেতে হল এক অতি দারুন দৃশ্য থেকে। হাজার হাজার মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে, কারো মধ্যে কোন তাড়া নেই, পরিবারের সবাই মিলে এসেছে মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। ছোট ছোট শিশুগুলোর চোখ-মুখ থেকে একটা কৌতূহলী আভা বেরুচ্ছিল, নিসংকোচ চাহনি বলে দিচ্ছিল এখানে কি হচ্ছে সেটা সে বুঝতে চাচ্ছে, তবে সেও পাশের মানুষগুলোর গৌরবের আঁচ পাচ্ছিল তা স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছিল ।আবেগ আর ভালবাসায় অবনত মানুষগুলোর সাথে আমরাও একটু একটু করে এগুচ্ছিলাম শহীদ মিনারের দিকে। আর মনের ভেতর বাড়ছিল শ্রদ্ধার উষ্ণতা, আবেগ আর ভালবাসার সম্পূর্ন বহিপ্রকাশ হয়ত সম্ভব না কিন্তু তার জ্যামিতিক ক্রমবর্ধমানতা ঠিকই বুঝতে পারছিলাম।


শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ হলে নজর দিলাম এ আবেগের বহপ্রকাশকে ফেমবন্দি করার দিকে। সে জন্যেই শহীদ মিনারের মূল বেদীতে উঠে গেলাম। তবে সেখানে উঠে মনটা একটু খারাপ হল কারন ফুলগুলো যত্রতত্র ছড়ানো, যে যেভাবে পারছে খালি ছবি তুলছে, শহীদ মিনারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর কথা যেন ভুলে গেছে সবাই। সেচ্ছাসেবীরা আপ্রান চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছিল ফুলগুলো ঠিক করে রাখার জন্য , কিন্তু তারা ঠিক কুলিয়ে উঠতে পারছিল না। এই পরিস্থিতি কারোই কাম্য নয়।


এদিকে আমাদের ক্লিক ক্লিক চলছেই। হঠাত চোখ পড়ল এক বিদেশীনির দিকে, বিশাল বড় এল লেন্স নিয়ে ছবি তুলছে। চোখে মুখে বাচ্চাদের মত এক ধরনের আগ্রহ-কৌতূহল। কাছে গিয়ে জানতে পারলাম তার নাম ক্যাট। জার্মানী থেকে এসেছে বাংলাদেশে একটা কাজে, তিন মাস ধরে বাংলাদেশে আছে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্পর্কে কিছু জানে কিনা? উত্তরে সে বলল “ সে এই দিবসটাকে শ্রদ্ধা করে আর সে জন্যেই এখানে এসেছে ছবি তুলে দৃশ্যগুলো ধরে রাখতে।“ বাংলা ভাষা নিয়ে তার মাঝে বেশ উচ্ছ্বাস দেখলাম। বাংলাদেশ নিয়ে তাকে প্রশ্ন করতেই বলল যে এখানের মানুষ খুবই আন্তরিক আর বাঙ্গালী জাতি মহান জাতি সে জন্যেই ভাষার জন্য এত মানুষ প্রান দিতে পেরেছিল। এক পরদেশীর মুখে এ ধরনের কথা শুনে বুকটা গর্বে দশ হাত হয়ে গেল।

তারপর আবার ছবি তুলতে লাগলাম, আবার এক পরদেশীর দিকে চোখ পড়ল। হাসি হাসি মুখ নিয়ে ছবি তুলেই যাচ্ছে। তাকে দেখে বেশ আগ্রহ বোধ করলাম, এগিয়ে গিয়ে জানতে পারলাম তার না ম্যারিও। কাকতালীয়ভাবে সেও জার্মানীতে থাকে, বাংলাদেশে এসেছে এক মাস হল। তাকেও একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম , উত্তরে সে বেশ উচ্ছাস আর আনন্দ নিয়ে বলতে লাগল “ সে বাংলাদেশের নাম অনেক শুনেছে, এই দেশের বীরত্বগাঁথা ইতিহাসও কিছু কিছু জানে, আর যতটুকুই জানে তার উদযাপন দেখতে এখানে আসা এবং এসে রীতিমত বিস্মিত হওয়া। “ তারপর জিজ্ঞেস করলাম বাংলাদেশ সম্পর্কে , উত্তরটা শুনে প্রান জুড়িয়ে গেল “ বাংলাদেশ অনেক সুন্দর একটা দেশ , তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চেয়েও এখানে মানুষ বেশি গুরুত্বপূর্ন, পৃথিবীর সবচেয়ে আন্তরিক এবং সরল মানুষের বাস এখানে। এ দেশের মানুষের আথিতেয়তায় আমি মুগ্ধ।“ আরো বলল অফিসের চাপ না থাকলে সে এদেশে বেশ লম্বা সময় পার করতে আগ্রহী। ক্রিকেট বিশ্বকাপ উদবোধনী নিয়েও উচ্ছ্বিসিত প্রশংসা করল মারিও। তারপর হাসিমুখে বিদায় নিলাম ।


আরো কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করে বাড়ির পথ ধরলাম এক বুক গর্ব আর আবেগ নিয়ে, দেশের প্রতি দেশের ঐতিহ্যের প্রতি ভালবাসার আরো বৃদ্ধি পেল । আর সে জন্যেই বোধহয় প্রত্যেক বাঙ্গালীর উচিত এ ধরনের জাতীয় দিবসগুলো আন্তরিক ভাবে উদযাপন করা, দেশের প্রতি কিছু করার অনুপ্রেরনা পাওয়া।



( ছবিগুলো যে সাইটে আপ করেছিলাম তা মুছে গেছে, তবে সবগুলো ছবি পাওয়া যাবে এখানে, আমার ফ্লিকর একাউন্টে )




***************************************************

বাঙ্গালীর আবেগ নিয়ে বুর্জোয়া শ্রেনীর নোংরা ব্যবসায়ীক ধান্ধা ও কিছু আবেগের নির্মম ধামাচাপা।

***************************************************
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৪
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাধু সাবধান

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:৪০






বেশ হতবাক হয়ে চেয়ে রইলাম খবরটার দিকে । চাল ডাল মাংসের স্বাধীনতা চাওয়া শীর্ষক খবর ছাপানোর অপরাধে সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার জুল ভার্ন এর চলে যাওয়া ও কিছু ক্ষোভ

লিখেছেন অধীতি, ২৯ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:৫০


ছবিঃ pinterest
জুল ভার্ন ভাইয়ের চলে যাওয়া উপলক্ষে এই কথাগুলো।
আমি অনুজ তাই অগ্রজদের নিয়ে বলছিনা কিছুই। একটা পরিবারে যদি বাবা মার ভেতর সুসম্পর্ক না থাকে তাহলে সন্তানের মানসিকতার উপর বিভক্ত রেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুল ভার্নের প্রতি

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১২:৩১




জুল ভার্ন বিদায়েতে নক্ষত্র পতন
ঘটলো ব্লগের রাজ্যে। হতবাক সব
সুবোধ ব্লগার বৃন্দ; করে অনুভব
তারা তাঁর সুবচন হারানোর শোক।
রতন কথনে ভরা ছিল যাঁর মন
তাঁর অনুপস্থিতির বেদনা নিরব
যন্ত্রণা বিস্তারে খুব।যতটা সম্ভব
বিলাতেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন ব্লগারের বিষাদময় প্রস্থান ও কিছু কথা

লিখেছেন বিষাদ সময়, ৩০ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১২:৪৩




ব্লগার জুল ভার্ন এর ব্লগ ছেড়ে যাওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাঁর মতো গভীর বোধ এবং তা প্রকাশের দক্ষতা খুব কম ব্লগারেরই আছে। সেদিক বিবেচনা করলে ব্লগ তার ঐশ্বর্যকে হারালো। যদিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ ব্লগার 'জুল ভার্ন'

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:১৭



আমি প্রথমেই বলতেই চাই-
শ্রদ্ধেয় জুল ভার্ন আপাতত সামুতে নেই। এজন্য বেশ কয়েকজন ব্লগার জোরজবরদস্তি করে শ্রদ্ধ্যেয় চাঁদগাজীর উপর দোষ চাপাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। ইহা দুঃখজন। এবং নিম্মমানের আচরণ। আমরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×