somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘জিন’ তাঁকে অন্তঃসত্ত্বা করেছে

০৯ ই আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মরক্কো, সুদানসহ মুসলিম বিশ্বে ‘আধ্যাত্মিক কবিরাজ’–এর কাছে সমস্যা সমাধানের নামে নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। এসব দেশের একাধিক নারী এসব কবিরাজের হাতে যৌন নিপীড়নসহ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নারাজ দুই দেশের কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ‘আধ্যাত্মিক কবিরাজ’ হিসেবে কাজ করা এসব পুরুষের যৌন নিপীড়নের বিষয়টি নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি অ্যারাবিক।

আধ্যাত্মিকভাবে রোগ নিরাময় আরব ও মুসলিম বিশ্বের একটি জনপ্রিয় অনুশীলন। এসব দেশের অধিকাংশ নারীই বিশ্বাস করেন, এসব কবিরাজ ‘জিন’ তাড়িয়ে অসুস্থতার নিরাময় করতে পারেন। বিবিসি এক বছরের বেশি সময় ধরে এমন ৮৫ জন নারীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা মরক্কো ও সুদানের ৬৫ জন তথাকথিত কবিরাজের নাম দিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অসুস্থতা নিরাময়ের নামে নারীদের যৌন হয়রানি থেকে ধর্ষণ পর্যন্ত করার অভিযোগ আছে। এই দুই দেশে আধ্যাত্মিক কবিরাজি অনুশীলনের বেশ প্রচলন রয়েছে।

বিবিসি নিউজ অ্যারাবিকের প্রতিনিধি হানান রাজেক বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা বেসরকারি সংস্থা, আদালত, আইনজীবী ও নারীদের সঙ্গে কথা বলে নিপীড়নের তথ্য সংগ্রহ করে তা যাচাই করেছি। এসব কাজে অনেক মাস সময় লেগেছে। তদন্তের কাজে সহযোগিতা করতে একজন প্রতিনিধি এক কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। কবিরাজ ওই নারী প্রতিনিধিকে অনৈতিকভাবে স্পর্শ করেছিলেন। পরে তিনি পালিয়ে এসেছেন।’

দালাল (ছদ্মনাম) নামের এক নারী কয়েক বছর আগে মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কার একটি শহরে বিষণ্নতার চিকিৎসা নিতে এক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ২০–এর মাঝামাঝি। তিনি বলেন, কবিরাজ তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর বিষণ্নতার মূল কারণ ‘জিন প্রেমিক’, যা তাঁকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ওই কবিরাজের কাছে একজন একজন করে যেতে হয়। সে সময় কবিরাজ দালালকে কস্তুরির ঘ্রাণ নিতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি এখন বিশ্বাস করেন, ওই ঘ্রাণ ছিল একধরনের মাদক। কারণ, তিনি ঘ্রাণ নিয়েই চেতনা হারিয়ে ফেলেছিলেন। আগে দালালের যৌনতার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি বলেন, কবিরাজের ডেরায় চেতনা ফিরে এলে তিনি দেখেন, তাঁর অন্তর্বাস খুলে ফেলা হয়েছে। বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ সময় তিনি চিৎকার করে রাকির (আধ্যাত্মিক কবিরাজ) কাছে জানতে চান যে তাঁর সঙ্গে তিনি কী করেছেন। দালাল বলেন, ‘আমি ওই কবিরাজের কাছে জানতে চেয়েছি, কেন আমার সঙ্গে এমন করলেন?’ এর জবাবে কবিরাজ বলেন, ‘তোমার শরীর থেকে জিনদের ছাড়িয়ে নিতেই এমন করা হয়েছে।’

দালাল এ ঘটনার কথা কাউকে জানাননি। এ ঘটনা কাউকে জানালে তাঁকেই দোষ দেওয়া হবে, এই ভয় ছিল তাঁর। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর যখন তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন, তখন আরও ভয় পেয়ে যান। এ সময় তিনি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছেন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কথা দালাল ওই কবিরাজকে জানিয়েছিলেন। কবিরাজ বলেছেন, নিশ্চয়ই ‘জিন’ তাঁকে অন্তঃসত্ত্বা করেছে। এসব ঘটনায় দালাল অনেক ভেঙে পড়েছিলেন। পরে তিনি ওই সন্তানের জন্ম দেন। জন্ম দিলেও ওই সন্তানকে দেখা ও নাম রাখতে অস্বীকার করেছিলেন। পরে ওই সন্তানকে দত্তক দেওয়া হয়। দালাল বলেছেন, এসব ঘটনা যদি তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, তাহলে তাঁরা তাঁকে হত্যা করবেন।

বিবিসি যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছে, তাঁদের মধ্যে অনেক নারীই বলেছেন, তাঁরা এসব ঘটনা বলতে ভয় পান। কারণ, এসব অভিযোগ জানালে উল্টো তাঁদেরই দোষী করা হবে। খুব অল্পসংখ্যক নারীই পরিবারকে জানিয়েছেন। আবার কারও কারও বিশ্বাস, এসব ব্যাপারে অভিযোগ করলে ‘জিন’ প্রতিশোধ নিতে উসকে উঠতে পারে।

সুদানে সাওসান নামের এক নারী বলেছেন, দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে থাকার জন্য তাঁর স্বামী তাঁদের ছেড়ে চলে গেছেন। এ বিষয়ে সাহায্যের জন্য তিনি এক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু সমস্যা সমাধানে তিনি কবিরাজের দেওয়া প্রস্তাব আশা করেননি। কবিরাজ তাঁকে বলেন, এই সমস্যা সমাধানে তাঁর সঙ্গে শারীরিক সংসর্গ করতে হবে। এরপর শরীর থেকে নির্গত তরল দিয়ে তিনি (কবিরাজ) ওষুধ তৈরি করবেন। সেই ওষুধ তাঁর স্বামীকে খাওয়াতে হবে।

সাওসান বলেন, ‘তাঁর (কবিরাজ) আত্মবিশ্বাস ছিল, আমি তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ বা আদালতে বা এমনকি আমার স্বামীর কাছেও কোনো অভিযোগ করব না।’ কবিরাজের প্রস্তাব শুনে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। আর এসব বিষয়ে কারও কাছে কোনো অভিযোগ করেননি।

সুদানে যৌন নিপীড়নের শিকার ৫০ জন নারীর সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। এঁদের মধ্যে তিনজন শেখ ইব্রাহিম নামের আধ্যাত্মিক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলেন। তাঁদের একজনের (নাম প্রকাশ করা হয়নি) সঙ্গে ইব্রাহিম কৌশলে শারীরিক সংসর্গ করেছেন। আফাফ নামের আরেকজন নারী বলেছেন, যখন তাঁকে শারীরিক সংসর্গ করতে বলা হয়, তখন তিনি শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন।আফাফ বলেন, ‘ইব্রাহিম যে এসব বলেন ও করেন, তা কেউ বিশ্বাস করবে না। আমি এই অভিযোগের বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীও খুঁজে পাব না। কারণ, ঘরের ভেতর তাঁর সঙ্গে আমাকে কেউ দেখেনি।’

বিবিসির প্রতিনিধি হানান রাজেক বলেন, ‘এসব তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহে একজন সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে আমাদের দলের হয়ে শেখ ইব্রাহিমের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়ে যান। ওই সাংবাদিকের নাম দেওয়া হয় রিম। বন্ধ্যাত্বে ভুগছেন, এমন একজন রোগী হিসেবে রিমকে ওই কবিরাজের কাছে পাঠানো হয়।’

রিমকে শেখ ইব্রাহিম বলেছিলেন, তিনি রিমের জন্য প্রার্থনা করবেন। রিমকে ‘মাহাইয়া’ নামের এক বিশেষ ধরনের ‘নিরাময় পানি’ খেতে তাঁর বাড়িতে যেতে হবে। রিম বলেছেন, এরপর ইব্রাহিম তাঁর খুব কাছাকাছি এসে বসে পেটে হাত রাখেন। এরপর তিনি সারা শরীরে এমনকি বিশেষ অঙ্গেও হাত দেন। রিম তাঁকে হাত সরিয়ে নিতে বলে দ্রুত ওই ঘর থেকে বেরিয়ে যান। রিম আরও বলেন, ‘আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। তাঁর ওই আচরণ দেখে মনে হয়নি, তিনি এটা প্রথমবার করছেন।’

রিমের সঙ্গে কী করা হয়েছিল, তা শেখ ইব্রাহিমের কাছে জানতে চায় বিবিসি। ইব্রাহিম যৌন নিপীড়নের বিষয়টি অস্বীকার করে দ্রুত সাক্ষাৎকার পর্ব শেষ করেন। এসব বিষয়ে তথ্যপ্রমাণসহ মরক্কো ও সুদানের রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবিসি যোগাযোগ করেছে। এত বেশি নারী যে নিপীড়নের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন, তা প্রাথমিকভাবে বিশ্বাস করতে নারাজ সুদানের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পরিবার ও সমাজ বিভাগের প্রধান আলা আবু জেইদ। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, আধ্যাত্মিক নিরাময়কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণের অভাবে ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি হচ্ছে। আর ‘যারা বেকার বা চাকরি নেই, তাঁরাই এটিকে পেশা’ হিসেবে ব্যবহার করছেন।

মরক্কোর ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ তৌফিক বলেছেন- তিনি বিশ্বাস করেন না, আধ্যাত্মিক কবিরাজের বিষয়ে আলাদা কোনো আইনের প্রয়োজন আছে। এসব বিষয়ে আইনগতভাবে হস্তক্ষেপ করা কঠিন। ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রচারের মধ্যেই এর সমাধান আছে।

বিবিসির প্রতিনিধি হানান রাজেক বলেন, ‘আমরা যত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছি, এসব বিষয়ে মরক্কো ও সুদান কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে নারাজ। তাই নিরাময় পেশার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কথা বলার ভার কেবল নারীদের ওপরই থেকে যাচ্ছে।’ :(

সোর্স: প্রথম আলো

মন্তব্য: বীভৎস। X((

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৫
২০টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×