somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - সমাধান - ৬

৩০ শে মে, ২০০৯ রাত ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব - ১ | পর্ব - ২ | পর্ব - ৩ | পর্ব - ৪ | পর্ব - ৫

ছুটির দিনটাকে আমার মনে হয় খুব বেশি রৌদ্রজ্জ্বল। মনেহয় ছুটির দিনটাতেই বুঝি সূর্য তার সকল তেজ ঢেলে দেয়। গরমও পরে অত্যাধিক। শীতকাল বা বর্ষাকালেও কোন পার্থক্য হয় না। মনেহয় অন্যান্য কর্মদিবসের চাইতে ছুটির দিনটাই বুঝি বেশী রৌদ্রজ্জ্বল হয়। জানালার পাশে বসে চোখ কুঁচকে বাইরে রোদের দিকে তাকিয়ে আছি। ছুটির দিনে নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা থাকেনা আমার। সারাদিন ঘরে বসে থাকি সন্ধ্যায় ঘর থেকে বের হয়ে ঘুরাঘুরি করা। এছাড়া আর কিছুই করার নেই। হঠাৎ মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই এক ভদ্রলোক বললেন-

"কিরে কেমন আছিস?"

"আপনি কে বলছেন?"

"আমাকে চিনতে পারিস নি? আমি রাহাত"

"আরে রাহাত, এতদিন পর? কেমন আছিস?"

"আমি ভাল আছি তোর খবর কি বল?"

"ভালই আছি"

"এই শোন অনেক দিন ধরে একসাথে বন্ধুরা কোথাও যাই না। আজ আমরা এক সাথে ঘুরব। জিসান, রুবায়েত ওরাও আসবে । তুই চলে আয় বিকালে"

"আচ্ছা ঠিক আছে"

কোথায় আসতে হবে বলে রাহাত ফোন কেটে দিল। মনের মধ্যে অনেক স্মৃতি এসে ভিড় করছে। আমি রাহাত, জিসান, রুবায়েত কলেজ জীবনের বন্ধু। আমরা চারজন ছিলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। কোন রেস্টুরেন্টে এক সাথে বসলে চারজনের খাবার হতো চার রকম। কারো সাথেই কারো পছন্দ, রুচি, অভিরুচির মিল নেই কিন্তু তবুও হৃদয়ের কোথায় যেন এক আশ্চর্য শক্তিশালী সংযোগ ছিল। কারো প্রতি কারো ভালবাসা, আন্তরিকতায় কোন খাঁদ ছিল না। রাহাত আমাদের চারজনের মধ্যে সবচেয়ে চঞ্চল ও প্রাণোচ্ছ্বাসে ভরপুর। আমাদের আড্ডার বিষয় যাই হোক না কেন সে সারাক্ষন আড্ডার আসর মাতিয়ে রাখবে। যার কারণে বন্ধ মহলে তার নাম হল লাটিম। লাটিম ঘোরার সময় যেমন ছটফট করে রাহাতও সারক্ষন ছটফট করবে। আজ ওদের সবার সাথে দেখা হবে ভাবতেই খুব ভাল লাগছে। উত্তেজনা বোধ করছি।

জুম্মার নামায পড়ে খাওয়া দাওয়া সারলাম। এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি কখন ৩টা বাজবে। শুয়ে থেকে কিছুক্ষন গান শুনলাম। এরপর উঠে জামা-কাপড় পরেই রওনা দিলাম। খুবই উত্তেজনা অনুভব করছি। আমাদের মিলিত হওয়ার স্থানে পৌছে দেখলাম রাহাত দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো। আমি বললাম -

"বাকীরা সব কোথায়?"

"আসছে। রুবায়েত প্রায় চলে এসেছে। জিসান ব্যাটা ঘুমাচ্ছিল এক ঝারি খেয়ে রওনা দিয়েছে"

দেখতে দেখতে সবাই এসে হাজির। আনন্দঘন এক মুহুর্ত। জিসান বলল -

"কিরে রাহাত তোর রোমিওগিরি কেমন চলছে?"

"তোদের দোয়ায় আর আল্লাহর রহমতে ভালই চলছে" রাহাত বলল, "কাল এক নতুন পাখির দেখা পেয়েছি দোয়া কর যেন খাঁচায় পুরতে পারি"

ওর কথা শুনে সবাই একযোগে হেসে উঠলাম। রাহাত বরাবরই এমন। কলেজের সুন্দরী যে কোন মেয়ে দেখলেই ওর প্রেমে পরা চাই। এরপর শুরু হয় কবিতা লেখার পালা। ওর লেখা খুবই ভাল। তবে সমস্যা একটাই সুন্দরী কোন মেয়ের প্রেমে না পরলে ওর আবার লেখার মুড আসে না। হঠাৎ রাহাত পকেট থেকে কিছু কাগজ বের করেই বলল -

" আজকে আমরা একটা কনসার্টে যাচ্ছি"

শুনেই মনে মনে প্রমাদ গুণলাম। আল্লাহ মালুম আজকে কপালে কি আছে। অতিরিক্ত চিৎকার চেঁচামেচি আমার কোন কালেই ভাল লাগেনি ভাল লাগবে বলে মনে হয় না। আমি অনেক আত্বীয়-স্বজনের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে যাই না শুধু মাত্র ঝামেলা ভাল লাগে না বলে। আমি মৃদু কন্ঠে প্রতিবাদ জানানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কোন লাভ হলো না। আমার কথায় কেউ পাত্তাই দিল না। অগত্য কনসার্টে না যেয়ে কোন উপায় খুঁজে পেলাম না।

কনসার্ট যে জায়গায় হবে তার আশেপাশে আসতেই ভীড় লক্ষ করলাম। ভেতরে ঢুকেই প্রচন্ড ভীড়ের মধ্যে প্রায় চেপ্টা হওয়ার দশা। অনেক কষ্টে একটা ফাঁকা জায়গা খুঁজে পেলাম। কিছুক্ষন পরেই দেখলাম কনসার্ট শুরু হল। গানের তালে তালে কনসার্টের প্রতিটি দর্শক উন্মাতাল হয়ে উঠলো। রাহাত,জিসান,রুবায়েত সবাই নাচছে সমান তালে। আমি শুধু এক কোনায় দাঁড়িয়ে দেখছি। হঠাৎ দেখলাম এক ভদ্রলোক গানের তালে তালে উদ্দাম নৃত্য প্রদর্শন করছেন। মনে হল এই বুঝি মাটি দু'ভাগ হয়ে গেল। আমি অবাক হয়ে গেলাম সব রকম গানের ভদ্রলোক একই রকম করে নাচছেন!! ওনাকে দেখে আমার মনে হল রবীন্দ্র সংগীত এর সাথেও বোধহয় তিনি একই রকম করে নাচতে পারবেন। আল্লাহ যে দুনিয়াতে কত রকম চীজ পাঠিয়েছেন।

কনসার্ট থেকে বের হয়ে আমরা আমাদের সেই পুরানো আড্ডাস্থলে বসলাম। অনেক পুরানো স্মৃতিময় এই জায়গা। অনেক ভাল লাগা নিয়ে আবার মিলিত হব এই কথা দিয়ে আমরা যে যার ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। অনেক অনেক ভাল একটি দিন কাটালাম আজকে। অনেক দিন মনে এর প্রভাব থাকবে। খুবই আনন্দিত চিত্তে বাসায় ফিরলাম।

চলবে .............
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×