somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাভারতের গপ্পো - ০১৩ : যযাতির জরা

১৭ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাজা যযাতির সাথে মিলনের পরে শর্মিষ্ঠার ফুটফুটে একটি ছেলে হলো। শর্মিষ্ঠা ছেলেকে দেখে দেবযানী পাপী, কামুকি, নষ্টা ইত্যাদি বলে গালমন্দ করলো। তখন শর্মিষ্ঠা জানালো সে অন্যায় কিছু করেনে, একজন ধর্মাত্মা বেদজ্ঞ ঋষি তার কাছে এসে তাঁকে বর দিয়েছে বলেই তাঁর এই ছেলে জন্মেছে। এই মিথ্যে কথা দেবযানী বিশ্বাস করে নিয়ে চুপ করে গেলো।

কালক্রমে যদু ও তুর্বসু নামে দেবযানী দুই ছেলের জন্ম দিলো। আর শর্মিষ্ঠার গর্ভে জন্ম নিলো দ্রুহ্যু, অনু ও পুরু নামে তিন ছেলে। তাদের সকলের পিতা ঐ রাজা যযাতি। একদিন দেবযানী স্বামী যযাতির সঙ্গে বাগানে বেড়াতে এসে দেখলো ফুট ফুটে ৩টি বাচ্চা ছেলে খেলা করছে। দেবযানী বাচ্চাগুলির কাছে তাদের বাবা-মার নাম জানতে চাইলো, তখন বাচ্চাগুলি যযাতি আর শর্মিষ্ঠাকে দেখিয়ে জানালো এরাই তাদের বাবা-মা।



তখন দেবযানী শর্মিষ্ঠাকে পাপী, কামুকি, নষ্টা ইত্যাদি বলে গালমন্দ করলো। তখন শর্মিষ্ঠা জানালো দেবযানী যখন রাজা যযাতিকে বিয়ে করে তখন শর্মিষ্ঠাও তাকে মনে মনে পতিরূপে বরণ করে নিয়েছিলো। আরো বললো- যিনি আমার সখীর পতি, ধর্মানুসারে তিনি আমারও পতি

স্বামী যযাতির এমন পরনারী আশক্তি দেখে দেবযানী রাজার সাথে রাগ করে বাবার বাড়ি চলে গেলো। দেবযানী পিছন পিছন রাজা যযাতিও শুক্রাচার্যের কাছে পৌছলো। দেবযানী তার বাবাকে রাজার অপকর্মের কথা জানালো। সব শুনে শুক্রাচার্য ক্রুদ্ধ হয়ে
যযাতিকে দুরারোগ্য বার্ধক্যে আক্রান্ত হওয়ার অভিশাপ দিলেন।



রাজা তখন বার্ধক্যে আক্রান্ত হয়ে অভিশাপ প্রত্যাহারের জন্য বহু অনুনয় করলে শুক্রাচার্য জানালো সে চাইলে তার দুরারোগ্য বার্ধক্য তার কোনো ছেলেকে দিতে পারবে। যযাতি বললেন- "আমার যে ছেলে আমাকে তার যৌবন দেবে সেই ছেলে রাজ্য পাবে এবং পুণ্যবান কীর্তিমান হবে।"



যযাতি রাজধানীতে এসে তার বড় ছেলে যদুকে বললেন- "আমি শুক্রের অভিশাপে জরাগ্রস্ত হয়েছি কিন্তু যৌবনভোগে এখনও তৃপ্ত হইনি। আমার জরা নিয়ে তোমার যৌবন আমাকে দাও, হাজার বছর পরে আবার তোমাকে যৌবন ফিরিয়ে দিয়ে নিজের জরা ফিরিয়ে নেব।"
যদু বাবার প্রস্তাবে রাজি হলো না, বললো অন্য ছেলেদের কাছে যৌবন চাইতে।
রাজা অসন্তুষ্ট হয়ে যদুর সন্তানদের রাজ্যের উত্তরাধিকারী থেকে বঞ্চতি করলেন।
তারপর যযাতি একে একে তার অন্যান্য ছেলে তুর্বসু ,দ্রুহ্যু এবং অনুকে একই প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু কেউই জরা নিয়ে যৌবন দিতে রাজি হলো না। যযাতি তুর্বসুকে আভিশাপ দিলেন সে অন্ত্যজ ও ম্লেচ্ছ জাতির রাজা হবে এবং তাঁর বংশলোপ হবে। দ্রুহ্যুকে অভিশাপ দিলেন অতি দুর্গম দেশে গিয়ে ভোজ উপাধি নিয়ে বাস করবে এবং কখনও অভীষ্ট লাভ করবে না। অনুকে অভিশাপ দিলেন শীঘ্রই জরান্বিত হবে ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াহীন হবে এবং তার সন্তানেরা যৌবনলাভ করেই মারা যাবে।

অন্যদিকে যযাতির সবচেয়ে ছোট ছেলে পুরু তার বাবার অনুরোধ শুনে তখনই বাবাকে তার যৌবন দিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলো।
রাজা যযাতি খুশী হয়ে আশীর্বাদ করলেন পুরুর রাজ্যে সকল প্রজা সর্ব বিষয়ে সমৃদ্ধি লাভ করবে

পুরুর যৌবন পেয়ে রাজা যযাতি প্রাণভরে ভোগ করলেন, প্রচুর ধর্মকর্মের অনুষ্ঠান করলেন। এইভাবে হাজার বছর পার হয়ে গেলে তিনি পুরুকে বললেন-

ন জাতু কামঃ কামানামুপভোগেন শাম্যতি।
হবিষা কৃষ্ণবর্ত্মেব ভূয় এবাভিবর্ধতে ।।
যৎ পৃথিব্যাং ব্রীহিযবং হিরণ্যাং পশবঃ স্ত্রিয়ঃ ।
একস্যাপি ন পর্যাপ্তং তস্মাৎ তৃষ্ণাং পরিত্যজেৎ ।।


অর্থ- "কাম্য বস্তুর উপভোগে কখনও কামনার শান্তি হয় না, ঘৃতসংযোগে অগ্নির ন্যায় আরও বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীতে যত ধান্য, যব, হিরণ্য, পশু ও স্ত্রী আছে তা একজনের পক্ষেও পর্যাপ্ত নয়, অতএব বিষয়তৃষ্ণা ত্যাগ করা উচিত"

তারপর রাজা যযাতি পুরুকে তাঁর যৌবন ফিরিয়ে দিলেন। পুরুকে নিজের রাজ্য বুঝিয়ে দিয়ে যযাতি কিছু দিন বনে বাস করলেন। বন বাসের পরে তিনি স্বর্গলোকে গেলেন। কিন্তু স্বর্গে গিয়ে তিনি ইন্দ্রের কাছে গর্ভ করে বলেলেন যে দেবতা-মানুষ-গর্ন্ধব আর ঋষিদের মধ্যে সেই সবচেয়ে বেশী তপস্যায় করেছে। এই আত্মপ্রশংসার ফলে ইন্দ্র যযাতিকে স্বর্গচ্যুত করলেন। তখন যযাতি ভূতলে না পড়ে কিছুকাল অন্তরীক্ষে অষ্টক, প্রতর্দন, বসুমান ও শিবি এই চারজন রাজর্ষির সঙ্গে ধর্মালোচনায় কাটালেন। এরা ছিলো যযাতিরই নাতি। অতঃপর যযাতি পূনরায় স্বর্গলোকে গেলেন।


====================================================================

বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।

লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।


====================================================================

সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯, মহাভারতের গপ্পো - ০১০, মহাভারতের গপ্পো - ০১১, মহাভারতের গপ্পো - ০১২

===================================================================
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:৪৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×