সূরা ইব্রাহীম কুরআনের চৌদ্দ তম সূরা।
এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৫২ টি। এ সূরায় ইব্রাহীম জীবন বৃত্তান্ত বর্ণনা করা হয়েছে। ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে মানুষের ভালো ও মন্দ কাজের প্রতিদান হিসেবে পুরস্কার ও শাস্তি দেয়ার লক্ষ্যে কেয়ামতের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সেখানকার বিচারপতি থাকবেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ। নবী রাসূলগণ যে শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাদের প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিজ্ঞজনদের জন্য রয়েছে শিক্ষণীয় বিষয় এবং অপরাধী ও সীমা লংঘনকারীদের জন্য রয়েছে সতর্কবার্তা। নবী রাসূলগণ না আসলে মানুষ অজ্ঞতায় ডুবে যেতো এবং যে কোন পাপাচার ও ভ্রান্তির দিকে পা বাড়ানোর পথে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকতো না। সূরা ইবরাহীম অনলাইনে পড়তে চাইলে।
সুরা ইব্রাহিমের ৩৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেনঃ
'(স্মরণ কর সে সময়ের কথা) যখন ইব্রাহীম বললেনঃ হে পালনকর্তা, এ শহরকে তথা মক্কাকে শান্তিময় ও নিরাপদ করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তান-সন্ততিকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন।'
মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে সংগ্রামে অভিজ্ঞ হযরত ইব্রাহীম (আ.) সত্য-সন্ধানী মানুষের হৃদয়কে তৌহিদের বাণীর মাধ্যমে আলোকিত করেছেন এবং অজ্ঞতার আঁধারে ডুবে-থাকা একদল মানুষকে আলোর পথে এনেছেন। বিবি হাজরার গর্ভে ইব্রাহিম (আ.)'র পুত্র ইসমাইল (আ.) জন্ম নেয়ায় এই মহান নবীর প্রথম স্ত্রী ইর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। ফলে মহান আল্লার নির্দেশে হাজরা ও শিশু ইসমাইলকে পাথুরে-পাহাড়ে ভরা মক্কার শুকনো ও তপ্ত প্রান্তরে রেখে আসেন ইব্রাহিম নবী। পানিশুন্য এ অঞ্চলে ঘাসও জন্মাত না। তৃষ্ণার্ত শিশুকে পানি দেয়ার জন্য মা হাজেরা এখানে ওখানে অনেক ছুটাছুটি করতে থাকেন। ফলে আল্লাহর ইচ্ছায় ইসমাইলের পায়ের নীচ থেকে উথলে ওঠে জমজম নামক ঝর্ণা। পানির সন্ধান পাওয়ায় মরূচারী গোত্র গুলো এখানে বসতি গড়ে তোলে। মহান আল্লাহ'ই চেয়েছিলেন এ অঞ্চলটি ইবাদতের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠুক। মহান আল্লাহর নির্দেশে ইব্রাহিম (আ.) পুত্র ইসমাইলের সহায়তায় এখানে কাবা ঘরের ভিত্তি গড়ে তোলেন। এরপর তিনি ওই দোয়াসহ ও নানা মুনাজাত পেশ করেন আল্লাহর দরবারে। একত্ববাদের এই কেন্দ্রে তথা কাবাঘরে ইবাদত করতে বিশ্বাসীদের আহ্বান জানান ইব্রাহিম (আ.)।
আমাদের মনে রাখা দরকার-
আল্লাহ্ তা’আলা যা চান, তাই করেন। তিনি চাইলে কাউকে তাওফীক দেন, কাউকে তাওফীক থেকে বঞ্চিত করেন। কাউকে সুদৃঢ় রাখেন। কাউকে পদস্খলিত করেন। কাউকে আযাব দেন, কাউকে পথভ্রষ্ট করেন। তাঁর ইচ্ছাকে রুখে দাঁড়ায়, এমন কোন শক্তি নেই। উবাই ইবনে কা’ব, আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ, হুযাইফা ইবন ইয়ামান প্রমুখ সাহাবী বলেনঃ মু’মিনের এরূপ বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য যে, তার যা কিছু অর্জিত হয়েছে, তা আল্লাহ্র ইচ্ছায়ই অর্জিত হয়েছে। এটা অর্জিত না হওয়া অসম্ভব ছিল। এমনিভাবে যে বস্তু অর্জিত হয়নি, তা অর্জিত হওয়া সম্ভব ছিল না। কুরআনে বর্ণিত জাতিগুলোর পরিণতি থেকে শিক্ষা নেয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এছাড়া কাফেররা গোঁড়ামি ও একগুয়েমির কারণে সত্যের সন্ধান পায়নি এবং হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
অবিশ্বাসীরা নবী রাসূলদেরকে তাদের বক্তব্য সঠিকভাবে উপস্থাপনের সুযোগ দিত না। তাদের এই কাপুরুষোচিত কাজের জবাবে নবী রাসূলগণ বলতেন, তোমরা হয়তো আমাদের অস্বীকার করতে পারছো, কিন্তু তোমরা কি আল্লাহকেও অস্বীকার করতে চাও? তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং এখন সঠিক পথের দিকে আহ্বান করছেন। যদি সে আহবানে সাড়া না দাও তবে নির্দিষ্ট সময়ের পর আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তওবা করার সুযোগটুকুও পাবে না। তখন তোমাদেরকে আল্লাহর মহাক্রোধে পড়তে হবে। কাজেই সময় থাকতে সত্য গ্রহণ করে আল্লাহর ক্ষমা লাভের যোগ্যতা অর্জন করো।
আগের পোষ্ট গুলোঃ
১। সূরা আল ফাতিহা
২। সূরা বাকারা
৩। সূরা আল ইমরান
৪। সূরা আন নিসা
৫। সূরা মায়েদা
৬। সুরা আন’য়াম
৭। সূরা আল আরাফ
৮। সূরা আনফাল
৯। সূরা আত-তাওবা
১০। সূরা ইউনুস
১১। সূরা হুদ
১২। সূরা ইউসুফ
১৩। সূরা রাদ
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:৫৩