সূরা আল হিজর কুরআনের ১৫তম সূরা।
এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৯৯টি। এই সূরার ৮০ নং আয়াত থেকে আল হিজর শব্দটি থেকে সূরার নামকরণ হয়েছে। হিজর অর্থ পাথর। সত্যকে অস্বীকার করার ফলে পাথর হৃদয়ের মানুষের এবং ইবলিসের কি হাল হয়েছিল তা বর্ণনা করা হয় এই সূরাতে। সূরা হিজর অনলাইনে বাংলা অর্থসহ পড়তে চাইলে।
হিজর সূরাটি সূরা ইবরাহীমের সমসময়ে নাযিল হয়।
এ পটভূমিতে দু’টি জিনিস পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। (১) নবীজির দাওয়াতের একটি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে। যে জাতিকে তিনি দাওয়াত দিয়েছিলেন তাদের অবিরাম হঠকারিতা, বিদ্রূপ, বিরোধিতা, সংঘাত ও জুলুম– নিপীড়ন সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো।
(২) নিজের জাতির কুফরী, স্থবিরতা ও বিরোধিতার পাহাড় ভাংতে ভাংতে নবীজি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। মানসিক দিক দিয়ে তিনি বারবার হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তা দেখে আল্লাহ তাঁকে সান্তনা দিয়েছেন এবং তাঁর মনে সাহস যুগিয়েছেন।
সূরা হিজর এর বিষয় বস্তুতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, আল্লাহর প্রত্যাদেশ ও আল্লাহর সত্যকে রক্ষা করার উপরে। সমস্ত পাপের উৎস বা জন্ম হয় অহংকার এবং আল্লাহর ইচ্ছাকে বিকৃত করার মাধ্যমে। কিন্তু তা থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে আল্লাহর দয়া ও করুণা ভিক্ষা করা। এ কথার সত্যতা প্রতিফলিত হয়েছে হযরত ইব্রাহিম, হয়রত লূতের জীবনে। 'আইকা' বাসী এবং হিজর বাসীদের জীবনে একথা সত্য হতো যদি তারা শুধুমাত্র আল্লাহর করুণার প্রত্যাশা করতো। আল্লাহ কাউকে ধ্বংস করেন না। জাতি বা ব্যক্তি যখন পাপে, অনাচারে লিপ্ত হয়- তার ফল স্বরূপ "নির্দিষ্ট মেয়াদ অন্তে" নিজের ধ্বংস নিজেই ডেকে আনে। এই হচ্ছে আল্লাহর হুকুম বা আইন। প্রতিটি কাজেরই প্রতিফল আছে। ভালো কাজের ভালো প্রতিফল, মন্দ কাজের প্রতিফল ধ্বংস। সব কিছুর জন্য "নির্দিষ্ট সময়কাল" নির্ধারিত আছে। আল্লাহর এই শ্বাশত আইন প্রত্যাদেশের মাধ্যমে পূর্বেই সকলকে সতর্ক করে দেয়া হয়ে থাকে।
ইসলাম বিরোধীদের অবমাননামূলক আচরণ ও কথাবর্তা প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে। সত্য অস্বীকারকারীদের জেদ একটা সময়ে এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, তারা নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী বলে মনে করে এবং আল্লাহর প্রেরিত পুরুষদের পাগল বলতেও দ্বিধা করে না। হিজর’ হেজাজ ও সিরিয়ার মধ্যস্থলে অবস্থিত একটি উপত্যকার নাম। এখানে সামুদ জাতির বসতি ছিল। এ বিষয়ে আলোচ্য সুরার ৮০ নম্বর আয়াতে আলোচনা আছে। সে হিসেবে ‘হিজর’ নামে এ সুরার নামকরণ করা হয়েছে। সুরা হিজরের বিষয়বস্তু অনেকটা সুরা ইবরাহিমের মতো। এ সুরায় মহান আল্লাহর একত্ববাদ, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়ত, পরকালের প্রতিদান ও প্রতিফল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি বহু জায়গায় মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে, উপদেশ দেওয়া হয়েছে ও সচেতন করা হয়েছে।
এ সুরায় অতিসংক্ষেপে হজরত আদম (আ.) ও অভিশপ্ত শয়তানের মধ্যকার ঘটনার দিকে মানুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে। এ সুরায় জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। পাশাপাশি জাহান্নাম ও জাহান্নামবাসীদের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। এ সুরার বিভিন্ন স্থানে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে। ঈমানদারদের সঙ্গে বিনয়সুলভ আচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সবাই বুঝে কোরআন পড়ুন। বাংলা অর্থ ব্যাখ্যাসহ পড়ুন। শানে নুযূল পড়ুন, তাফসীর পড়ূন, সূরার ফজিলত জানুন। একজন বাঙ্গালী হয়ে শুধু কোরআন গড়গড় করে মুখস্ত পড়ে গেলে হবে না। কোরআনের গভীরে প্রবেশ করতে হবে।
আগের পোষ্ট গুলোঃ
১। সূরা আল ফাতিহা
২। সূরা বাকারা
৩। সূরা আল ইমরান
৪। সূরা আন নিসা
৫। সূরা মায়েদা
৬। সুরা আন’য়াম
৭। সূরা আল আরাফ
৮। সূরা আনফাল
৯। সূরা আত-তাওবা
১০। সূরা ইউনুস
১১। সূরা হুদ
১২। সূরা ইউসুফ
১৩। সূরা রাদ
১৪। সূরা ইবরাহীম
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৮