বাংগালীরা পড়তে ও লিখতে জানতেন না, যারা সামান্য লেখাপড়া জানতেন, তাঁদের বড় অংশ ছিলেন দরিদ্র, যাদের সামর্থ ছিলো, তারা বই কিনতো না; এই কারণে, কবির তেমন আয় ছিলো না। তখনকার সব স্বচ্ছল বাংগালী যদি উনার ১'টি বই কিনতেন, কবির হাতে চলার মতো পয়সা থাকতো।
শেখ সাহেব জীবনে যেসব কাজের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন, সেগুলোর মাঝে সবচেয়ে বড় কাজটি হলো, আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামকে (১৮৯৯ - ১৯৭৬) কলিকাতার দরিদ্র জীবন থেকে মুক্ত করে ঢাকায় নিয়ে আসা; কবির বাকী জীবনটা কিছুটা প্রশান্তির ছিলো। আমাদের জাতির ২ মহাকবির মাঝে একজনের অবস্হা থেকে আপনারা বুঝতে পারছেন, ১২০ বছর আগে বাংগালীদের অবস্হা কেমন ছিলো; ইহার মাঝে আমাদের বর্তমান অবস্হারও ব্যাখ্যা আছে।
নজরুল ইসলাম দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন; দারিদ্রতার কারণেই পড়ালেখা ফেলে যুদ্ধে গেলেন সামান্য বেতনে। ১ম বিশ্বযু্দ্ধ থেকে ফেরার পর, জীবনের সামান্য অংশ তিনি একটু ভালো অবস্হায় ছিলেন, এরপর তিনি আসলে আগের থেকেও ভয়ানক রকম অসহায় অবস্হায় ছিলেন; উনি দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাবার জন্য অনেক চেষ্টা করেও মুক্ত হতে পারেননি; কবি সব সময় দারিদ্রতার বিপক্ষে লিখেছিলেন, কিন্তু বাংলার নিরক্ষর দরিদ্ররা উনার কবিতাগুলো কখনো পড়ার সুযোগ পাননি; আজো, বাংলাদেশের ৫০ ভাগ মানুষ হয়তো জানেন না যে, কবি সাধারণ মানুষের অধিকারের জন্য লিখেছিলেন।
ব্লগের লোকজন উনাকে বুঝার কথা; অসুস্হ হওয়ার আগ অবধি (১৯৪১ সাল) উনাকে যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা উনাকে ততকালীন সময়ের যৌবনের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মনে হয়, উনার স্ত্রীর অসুস্হতা (১৯৩৯ সাল ) উনাকে অসহায় করে তোলে; সময়টাও খারাপ ছিলো, কলোনীর শাসকেরা ২য় বিশ্বযুদ্ধে জড়িত; উনার আয়ের পথ ছিলো না, পাশে দাঁড়ানোর মতো লোকজনও তেমন ছিলো না।
কবি ভারতের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন; নিজের লেখায়, কবিতায়, বক্তব্যে তিনি কলোনিয়েল সিষ্টেমের বিরোধীতা করায়, উনাকে জেলে যেতে হয়েছিলো। ৭০'এর বাংগালীরা উনার মতো স্বাধীনচেতা ছিলেন, আমাদের জাতি স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন, স্বাধীনতা অর্জন করেছেন; কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও অর্ধেক মানুষ কবি থেকেও দরিদ্র। শেখও এই জাতিকে দারিদ্রতা থেকে বের করতে পারেননি; কবির ইতিহাস ও জাতির ইতিহাস, এক বিশাল দারিদ্রতার ইতিহাস।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০২২ রাত ২:৩৭