এরশাদ যখন ক্ষমতায় আসার জন্য প্রেসিডেন্ট সাত্তারের ( ১৯৮২ সাল ) সাথে বাটপাড়ি শুরু করেছে, তখন আমি বাংলাদেশে চাকুরী করতাম; কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নই, এরশাদের কান্ড-কীর্তন দেখে বুঝা যাচ্ছিল যে, মিলিটারী ২ ভাগে বিভক্ত হয়েছে: জিয়া গ্রুপ ও এরশাদ গ্রুপ; এরশাদের পক্ষ বড়। এরশাদ মিডিয়ায় বিএনপি'র সরকারকে দেশ চালনায় অপারগ ঘোষণা করে চলছে, রাখাল বালকের মতো ডোডগিরি করছে, কথাবার্তা শুনলে জেনারেল তো দুরের কথা, সিপাহী বলেও মনে হতো না; তবে শিয়ালের মতো ধুর্ত ছিলো। বিএনপি'র কিছু লোকজনকে সে বাগানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, সাত্তার ( আইনবিদ ) দেশের সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে; কিন্তু জিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে, মিলিটারীর বিপক্ষে উনার আইনী কথার শ্রোতা কোথায়?
যাক, যা হবার তাই হলো; জিয়ার পর, সাত্তার ( সিভিলিয়ান ) কেন দেশ চালাবে? মিলিটারীই দেশ চালাবে; এরশাদ শুভদিন দেখে, মার্চের ২৪ তারিখ, ১৯৮২ সালে নিজকে রাজা ঘোষণা করলো, সাত্তার সাহেব পেনসন পেলেন। আমার চলাফেরা ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে; তখন মুক্তিযোদ্ধারা দেশের জন্য কিছু করেছে বলে গণ্য করা হতো না; ওরা নিজেরাই নিজেদেরকে ( বেশ বড় অংশ ) "সৈনিক" মনে করে কিছুদিন জিয়াকে সাপোর্ট দিয়েছে; পরে জিয়া নেই দেখে এরশাদকে সাপোর্ট দেয়ার শুরু করলো! বেচারাদের পড়ালেখা ছিলো না, রাজনীতি বুঝতো না; বুঝতো শেখকে; শেখ যখন খোঁজ খবর নেয়নি, তারা মনে করেছিলো জিয়াই তাদের লোক হবে; তারা বুঝতো না, জিয়া কি করে বেড়াচ্ছে সেনানিবাসগুলোতে। জিয়াও যে মরণশীল প্রাণী তা বুঝতে তাদের বেশ সময় লেগেছে। এবার তারা এরশাদের সাথে।
আমি ঠিক করলাম, আমার আরেকটু পড়ালেখা করার দরকার; আমেরিকা যেতে হবে। কর্পোরেশনের হেডক্লার্ককে বললাম যে, নিজ খরচে বিদেশে পড়তে যাবো ছুটি মুটি দিয়ে কাগজপত্র তৈর করে দেন। উনি বললেন যে, সামরিক সরকার ঘোষণা করেছে যে, "সরকারী ইন্জিনিয়ারদের চাকুরী জরুরী, এরা কোথায় যেতে পারবে না"। উনি বুদ্ধি দিলেন, পাসপোর্ট বদলাতে হবে, পেশা বদলাতে হবে, মিথ্যা কোন পেশা দিয়ে নতুন পাসপোর্ট করতে হবে; এয়ারপোর্টে মিলিটারী আছে, মিলিটারীর সব লোকজন তখনো ঘুষ খায় না।
হেডক্লার্ক সরকারী চাকুরে হিসেবে দুনিয়ার খারাপ বুদ্ধির ডিকসনারী ছিলো; সেই অনুসারে লোকজনও ঠিক করে দিলো; আমার কোন ছুটি ছিলো না, ২ মাসের ছুটি নেয়ার ব্যবস্হা করে দিলো। সর্বশেষ দরকার হলো, সরকারের থেকে থেকে "নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট" নিতে হবে; সেটা নিতে হবে স্বয়ং মিনিষ্টার থেকে। মিনিষ্টার নাকি সৎ মানুষ ও কবি; কুমড়া ফুল নিয়ে কি ১ কবিতা লিখে নাকি বিখ্যাত হয়ে গেছে; এরশাদের জন্য নাকি ফরমায়েসী ( এরশাদের কবিতা হিসেবে ) কবিতা লিখতেন। ঢাকায় কোথায় যেন উনার সরকারী বাসায় গিয়ে সাইন নিতে হবে, নিজকে যেতে হবে। সন্ধ্যায় বাসায় গেলাম; দেখি, লোকে লোকারণ্য! মিনিষ্টারের পিএ'র রুমে গিয়ে উনাকে কাজের দায়িত্বটা দিলাম; হাতে দিলাম ততকালীন সময়ের ২০০ টাকা; বয়স্ক মানুষ, নিতে চাইলেন না; আমি বললাম,
-বাসায় যেতে বাচ্ছাদের জন্য কিছু আম ও মিষ্টি নিয়েন; সন্ধ্যায় বিনা ওভারটাইমে কাজ করছেন, সামান্য টাকা আপনি পেতেই পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০২