somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধকারের বাসিন্দা

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা
তোমার বেলায় নেব সখী তোমার কানের সোনা
সখী গো, আমি প্রেমের ঘাটের মাঝি
তোমার কাছে পয়সা নিব না

ও সুজন সখীরে
প্রেমের ঘাটে পারাপারে দরাদরি নাই
মনের বদল মন দিতে হয়।

চলচিত্র - সুজন সখী
শিল্পী - আব্দুল আলীম ও সাবিনা ইয়াসমিন
পরিচালক - খান আতাউর রহমান

জনবসতি আর নিত্য বাজারের পণ্য, গবাদি পশু ও মানুষ পারাপারের ঘাটকে কেন্দ্র করে রঙিন আলোয় আলোকিত বন্যায় প্রেমের ঘাট তৈরি হয়েছে। এই প্রেমের ঘাট নিয়ে ১৯৪৭ থেকে বা তারও আগে থেকে ঘাটের মাঝি মাল্লা আল্লা জাল্লাদের মাঝে পাগলা গারদের পাগলের কামড়া কামড়ি চলছে। অথচ সকল মাঝি মাল্লা সুস্থ। অন্তত শারীরিকভাবে যে সুস্থ তার প্রমাণ বাজারের রদ্দি পত্রিকা ম্যাগাজিন সহ অনলাইন ভূবনে পাই। কিছুদিন পর পর তাদের শারীরিক কসরতের নুমনা পাওয়া যায়। তবে মানসিকভাবে সুস্থ কিনা তা জানার উপায় নেই। প্রেমের ঘাটের মাঝি মাল্লা হতে আর যাই লাগুক মানসিক সুস্থতার সনদপত্র লাগে না। আর নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের তো কোনো প্রয়োজনই নেই। শিক্ষাগত যোগ্যতা আবার কি? কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে একটি ছুঁচালো সুক্ষ মারপ্যাঁচ আছে - প্রেমের ঘাটের মাঝি মাল্লাদের মাঝে উকিল ব্যারিস্টার, ডাক্তার, মাস্টার / শিক্ষক আর সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের পাওয়া যায়।

উকিল ব্যারিস্টারদের কথা বাদ। কিন্তু এই প্রেমের ঘাটের মাঝি মাল্লাদের মতো উন্মাদের সাথে চিকিৎসক, শিক্ষক ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাগণ কি করছেন? ভাবতেও কষ্ট লাগে এবং লজ্জা লাগে এই প্রেমের ঘাটের মাঝি মাল্লাদের সাথে চিকিৎসক, শিক্ষক ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাগণ প্রেমের ঘাট নিয়ে একই কাজ করছেন - পাগলের কামড়া কামড়ি। একজন আরেকজনকে কামড় দিয়ে গালের মাংস, হাতের মাংস, পিঠের মাংস খেয়ে ফেলছেন। মানুষ কি মাংসাশী প্রাণী? এই ব্যাখ্যা অনেক অনেক বড়। তবে এই জলাদেশে মানুষ মানুষের মাংস কামড়িয়ে খেয়ে ফেলেছেন তার নমুনা দেশের হাসপাতাল, থানা ও কোর্টে বান্ডেল বান্ডেল প্রমাণ সহকারে দলির দস্তাবেজ আছে। মনে হয়, মানুষের গালের মাংস, হাতের মাংস, পিঠের মাংস খুবই মজাদার মাংস! যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে নিজ জাতির মাংস কেনো এইভাবে কামাড়াবেন? মানুষ তো মানুষ। মানুষ তো চারপেয়ে জানোয়ার না।

প্রেমের ঘাটের তথাকথিত ইজারা, দখল ও পারাপার নিয়ে লুটতরাজ, চুরি ডাকাতি, লাম্পট্য, মারপিট খুনাখুনি আজ নতুন কিছু নয়। ইজারা ও দখল নিয়ে যা ইচ্ছে চলুক, কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে যারা পারাপার হবেন তারা অর্থের বিনিময়ে পরাপার হতে গিয়ে ইন্ধনদাত্রী সখীর মতো শুধু কানের সোনা নয়! - হাতের, গলার, কানের সোনা সহ অতি ছোট নাক ফুল (সকল প্রকার আর্থিক ক্ষতি) হারাচ্ছেন। অথবা মন! - না, মন সঠিক নয়, প্রাণ হারাচ্ছেন অকাতরে।

পরিশিষ্ট: আমরা সাধারণ মানুষ। পারপারের যাত্রী মাত্র। আমরা সুজনও নই আবার সখীও নই। আমরা কেনো ভুক্তভোগী হবো। তবে যেইদিন সুজনদের ইজারা নিয়ে ১৯-২০ হবে, সেই ১৯-২০ এর মাঝে মাত্র ১ এর শূন্যস্থানে ভয়ংকর মূল্য দিতে হবে কোনো একদিন। সেই সুজন আর সখী - যারা এসি রুমে বসে বসে রঙিন কাঁচের বোতল আর গ্লাস নিয়ে প্রেমের ঘাঠের মাঝি মাল্লা হয়ে মজমা করেছে। সুজন সখী মিলে যেই ঘাটকে প্রেমের ঘাট করেছে এই ঘাট সুজন সখীর নয়। এই ঘাট সাধারণ জনগণের পারপারের ঘাট। সুজন সখীর কোনো ঘাট নেই, প্রেমের ঘাটতো অনেক অনেক দূরের কথা। সুজন সখী হচ্ছে অন্ধকারের বাসিন্দা - তাদের স্থান গঞ্জের বাজারের রঙ মহল অথবা কারাগার।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতা দিয়ে লেখা শেষ করছি।

দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে!
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার।

দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ-
ছিঁড়িয়াছে পাল কে ধরিবে হাল, কার আছে হিম্মত।
কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত,
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।

তিমির রাত্রি, মাতৃ-মন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান-
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া ওঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদেরে পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ-
কান্ডারী, আজি দেখিব তোমার মাতৃ-মুক্তি-পণ।
হিন্দু না ওরা মুসলিম-ওই জিজ্ঞাসে কোন্‌ জন,
কান্ডারী, বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র।

গিরি-সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গরজায় গুরু বাজ-
পশ্চাৎ পথ যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ।
কান্ডারী, তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চল টানি’-নিয়েছ যে মহাভার।

ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান-
আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা দিবে কোন বলিদান!
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতেরে করিবে ত্রাণ,
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুঁশিয়ার।

কাণ্ডারী হুশিয়ার
কাজী নজরুল ইসলাম


বিশেষ দ্রষ্টব্য: বাংলা চলচিত্র - সুজন সখী, পরিচালক খান আতাউর রহমান পরিচালিত বাংলাদেশ চলচিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অনবদ্য একটি সৃষ্টি। এই লেখাটির সাখে চলচিত্র সুজন সখী’র কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই। জলাদেশের পটভূমি নির্মাানে সুজন সখী চলচিত্রের চরিত্রের নাম ও গান উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র। লেখাটি অত্যন্ত সাংঘর্ষিক। তথাপি, চলচিত্র সুজন সখী’র সাথে কোনো প্রকার সংঘর্ষ পোষণ করে না। এবং বাংলার মাটির প্রাণ অত্যন্ত পরিশ্রমী মাঝি ও মাল্লাদের ছোট করার জন্যও লেখা হয়নি। লেখাটি শুধুমাত্র সেই লোকদের জন্য যারা এই দেশের নন, এই মাটির নন। কখনো এই দেশের এই মাটির ছিলোও না।





সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×