somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুবাদ গল্পঃ♣♣কাহলিল জিবরানের চারটি গল্প♣♣

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

♣♣♣♣The Three Gifts♣♣♣♣

এক শহরে এক দয়ালু রাজকুমার ছিলেন।প্রজারা সবাই তাকে অত্যন্ত ভালবাসত আর শ্রদ্ধা করত।কিন্তু সেই শহরে এক দরিদ্র লোক বাস করত যে রাজকুমারকে অত্যন্ত অপছন্দ করত। রাজকুমার সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলে সে তাকে অপমান করার চেষ্টা করত।

রাজকুমার এই লোকটির কথা জানতেন, তবুও তিনি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিলেন।

রাজকুমার অনেকদিন ধরে লোকটির কথা ভাবলেন।অবশেষে এক শীতের রাতে লোকটির ঘরের দরজায় রাজকুমারের এক চাকর উপস্থিত হল। চাকরের সাথে ছিল এক বস্তা আটা, এক বস্তা চিনি আর এক ব্যাগ সাবান।

চাকর তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলল, অভিবাদন, আমাদের রাজকুমার এই উপহারগুলো আপনার জন্য পাঠিয়েছেন।এগুলো আপনি গ্রহন করুন।

চাকরের কথা শুনে লোকটা অত্যন্ত গর্বিত হয়ে উঠল। তার কাছে মনে হল রাজকুমার শেষ পর্যন্ত হার মেনে নিয়েছে, তাই এই উপহার পাঠিয়ে তার সাথে সন্ধি করতে চাইছে।এই আনন্দে শেষ পর্যন্ত লোকটা গির্জার বিশপের কাছে সব জানিয়ে দম্ভসহকারে বলল, দেখেছ, তোমাদের রাজকুমার আমার প্রশংসা পাওয়ার জন্য কত উন্মুখ?

কিন্তু বিশপ খুশি মনে জবাব দিল, ওহ, কত জ্ঞানী আর মহান আমাদের রাজকুমার আর কি অল্প তোমার জ্ঞান! রাজকুমার মুখে নয়, বরং ইশারায় কথা বলেন। এই আটা তোমার খালি পেট ভরানোর জন্য, এই সাবান তোমার নোংরা মন পরিস্কার করবে আর এই চিনি তোমার মুখের মিষ্টতা ফিরিয়ে আনবে।

সেদিন থেকে লোকটা নিজের ক্ষুদ্রতা নিয়ে লজ্জিত থাকত। রাজকুমারের জন্য তার মনে ঘৃনা বেড়ে গিয়েছিল, কিন্তু সে আরো বেশি ঘৃনা করত বিশপকে- যে তাকে তার ক্ষুদ্রতার কথা স্মরন করিয়ে দিয়েছিল।

কিন্তু তার মুখ ছিল একদম বন্ধ।


♣♣♣♣Peace and War♣♣♣♣


তিনটি কুকুর সূর্যের দিকে তাকিয়ে চিতকার করছিল।প্রথম কুকুর স্বপ্নালু চোখে বলল, কুকুরের রাজত্বে বসবাস করাটা সত্যিই এক বিস্ময়।চিন্তা করে দেখ, কত সহজে আমরা সমুদ্রের মধ্য দিয়ে, মাটির ওপর দিয়ে, এমনকি আকাশের বুক চিড়ে ঘুরে বেড়াই। ভেবে দেখ, আমাদের বিনোদনের জন্য নিত্যনতুন কত আবিষ্কার হচ্ছে।

দ্বিতীয় কুকুর বলে উঠল, শিল্পকলায় আমাদের কতটা ঝোঁক দেখ। পূর্বপুরুষদের চেয়ে কত চমতকার ছন্দে আমরা চাঁদের দিকে চেয়ে ডেকে উঠি।পানিতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করি, দিনকে দিন আমরা কত সুন্দর হয়ে উঠছি।

তৃতীয় কুকুর বলল, কিন্তু যেটা আমাকে সবচেয়ে বেশি অবাক আর একই সাথে অনন্দিত সেটা হল আমাদের কুকুরদের মাঝে চমতকার বোঝাপড়া আর আমাদের শান্তিপ্রিয়তা।

এমন সময় তারা দেখল বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের একটা গাড়ি তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।তিন কুকুর লাফিয়ে রাস্তায় নেমে দৌড়াতে শুরু করল। তৃতীয় কুকুরটা বলল, জীবন বাঁচাতে হলে দৌড়াও। সভ্যতা আমাদের পিছু নিয়েছে।


♣♣♣♣The Dancer♣♣♣♣


একদিন বিরাকশা রাজ্যের রাজদরবারে এক নর্তকী উপস্থিত হল তার গানের দল সাথে নিয়ে।বাশি আর সুরের তালে সে নাচ পরিবেশন করল রাজকুমারের সামনে।

আগুনের স্ফুলিংগের সাথে সে নাচল,আর নাচল ঢাল-তলোয়ারের সাথে। এরপর সে নেচে উঠল তারা আর সমগ্র মহাকাশকে সাথে নিয়ে। সবশেষে সে নেচে উঠল হাওয়ার তালে তালে, ফুলগুলোকে সাথে নিয়ে।

নাচ শেষে সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে সে অভিবাদন জানাল রাজকুমারকে।রাজকুমার বললেন, এই সুন্দরী নারী, ভালবাসা আর আনন্দের প্রতীক, কোথা থেকে আসে তোমার এই শিল্প? কিভাবে প্রকৃতির সব উপাদানকে তোমার ছন্দে নাচতে শেখাও?

নর্তকী আবার অভিবাদন জানিয়ে জবাব দিল, হে শক্তিশালী রাজা, আপনার প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।তবে আমি এটা জানি, একজন দার্শনিকের আত্মা থাকে তার মস্তিষ্কে, একজন কবির আত্মা থাকে তার বুকের মাঝে, একজন গায়কের আত্মা থাকে তার গলায় আর একজন নাচিয়ের আত্মা থাকে তার সারা দেহে।


♣♣♣♣The Statue♣♣♣♣


অনেককাল আগে পাহাড়ে এক লোক বাস করত।তার কাছে একটা প্রাচীন মূর্তি ছিল।মূর্তিটা তার ঘরের দরজার সামনে পরে থাকত।লোকটা কোনদিন মূর্তির দিকে ফিরেও তাকাত না।

একদিন তার ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল এক শহুরে লোক।লোকটা ছিল জ্ঞানী।মূর্তিটা দেখে সে জানতে চাইল মূর্তিটা বিক্রি হবে কিনা।

পাহাড়ী লোকটা হেসে জানতে চাইল, এই পুরনো নোংরা পাথরখন্ড কে কিনবে?

শহুরে লোকটা বলল, এই মুর্তির জন্য আমি তোমাকে একটা রূপার মুদ্রা দেব।

শুনে পাহাড়ী লোকটা অবাক হয়ে গেল আর মূর্তিটা শহরে নিয়ে যাওয়া হল একটা হাতির পিঠে করে।

অনেক বছর পর পাহাড়ী লোকটা শহরে ঘুরতে গেল।রাস্তায় হাটতে গিয়ে একটা দোকানের সামনে প্রচন্ড ভীড় দেখে সে থমকে দাঁড়াল। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে একটা লোক চিতকার করছে, আসুন, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর আশ্চর্য মূর্তিটা দেখে যান।পৃথিবীর সেরা কারিগরের কাজ দেখতে আপনার খরচ হবে মাত্র দুইটি রূপার মুদ্রা।

পাহাড়ী লোকটা তখন দুটি রূপার মুদ্রা খরচ করে দোকানে প্রবেশ করল আর দেখতে পেল সেই পুরনো মূর্তিটা যেটা সে একদিন এক রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে বিক্রি করেছিল।


♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

আমার অনুবাদ করা কাহলিল জিবরানের আরো কিছু গল্পঃ

১.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-১: The Field of Zaad
২.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-২: The Eagle and the Skylark
৩.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৩: The King
৪.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৪: History and the Nation
৫.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৫: She Who Was Deaf
৬.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৬: Lady Ruth
৭.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৭: SATAN
৮.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৮: THE KING OF ARADUS
৯.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের দুইটি গল্প
১০.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের তিনটি গল্প-১
১১.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের তিনটি গল্প-২
১২.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের তিনটি গল্প-৩
১৩.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের তিনটি গল্প-৪
১৪.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের চারটি গল্প
১৫.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের পাঁচটি গল্প-১
১৬.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের পাঁচটি গল্প-২
১৭.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের পাঁচটি গল্প-৩
১৮.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের পাঁচটি গল্প-৪
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৫২
২৪টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×