somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুবাদ গল্পঃ ♣♣কাহলিল জিবরানের তিনটি গল্প♣♣

৩১ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
♣♣♣♣THE TWO PRINCESSES♣♣♣♣



বহুদিন আগে শাওয়াকিস রাজ্যে এক রাজকুমার বাস করতেন। নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সবাই তাকে ভালবাসত। এমনকি বনের পশুপাখিরাও রাজকুমারের প্রতি নিজেদের ভালবাসা জানাতে মাঝে মাঝে তার দরবারে এসে উপস্থিত হত।

কিন্তু সবাই বলত, তার স্ত্রী, রাজ্যের রানী তাকে একদম ভালবাসত না। বরং রানী তাকে ঘৃণা করত।

একদিন পাশের রাজ্যের রানী এলেন শাওয়াকিসের রানীর প্রাসাদে বেড়াতে। দুই রানী একসাথে খাওয়াদাওয়ার আমি তুমি আমরা পর গল্পগুজবে মেতে উঠলেন। স্বাভাবিকভাবেই একসময় আলোচনা মোড় নিল নিজেদের স্বামীর মধ্যে তুলনায়।

শাওয়াকিসের রানী বললেন, তোমাদের সুখ দেখে আমার ঈর্ষা হয়। বিয়ের এত বছর পরও তোমাদের মাঝে কি ভালবাসা! আর আমাকে দেখ। কি কপাল আমার! নিজের আপন মানুষটাকেও আপন করে পেলাম না। তাকে ভাগ করে নিতে হচ্ছে রাজ্যের সবার সাথে। আমি লোকটাকে ঘৃণা করি।

নীরবে তার কথাগুলো শুনলেন পাশের রাজ্যের রানী। মুচকি হেসে জবাব দিলেন, বন্ধু, সত্যি বলতে স্বামীকে তুমি প্রচণ্ড ভালবাস।যদি নিজে এখনো সেটা বুঝতে পারনি। আর তাইতো স্বামীকে আর কারো সাথে ভাগ করে নিতে চাও না। একান্তই নিজের করে পেতে চাও।

আর আমাকে দেখ। আমাকে তো তোমার করুণা করা উচিত।আমি আর আমার স্বামী- পরস্পরকে আমরা শুধু নীরবে সহ্য করি।আর তাকেই তোমরা সবাই ভালবাসা ভেবে ভুল কর।


♣♣♣♣YESTERDAY, TODAY AND TOMORROW♣♣♣♣



বন্ধুকে বললাম, দেখেছিস, ও লোকটার কাঁধে মাথা রেখেছে। গতকাল ওর মাথা আমার কাঁধে ছিল।
বন্ধু বলল, আগামীকাল সে আমার কাঁধে মাথা রাখবে।
বন্ধুকে বললাম, দেখ না, কিভাবে ও লোকটার পাশ ঘেঁষে বসে আছে। গতকাল ও এভাবেই আমার পাশে বসে ছিল।
বন্ধু জবাব দিল, আগামীকাল ও আমার পাশে বসবে।
আমি বললাম, দুজন এক গ্লাসে ওয়াইন খাচ্ছে। গতকাল ও আমার সাথে এক গ্লাস থেকে ওয়াইন খেত।
বন্ধু বলল, আর আগামীকাল আমার গ্লাস থেকে।
এবার বন্ধুকে বললাম, কেমন প্রেমময় চোখে ও লোকটাকে দেখছে।গতকাল ও আমার দিকে এভাবেই চেয়ে ছিল।
বন্ধু বলল, আগামীকাল এই প্রেমময় চাহনি থাকবে আমার দিকে।
ওর ঠোঁটের দিকে ইঙ্গিত করে বললাম, দেখ না, কিভাবে লোকটাকে ও ভালবাসার গান শোনাচ্ছে।আমি তুমি আমরা ঠিক এই গানটাই ও শুনিয়েছিল আমাকে।
বন্ধু বলল, আর আগামীকাল এই গান শুনব আমি।
-দেখ, দেখ, কিভাবে ও লোকটাকে ভালবেসে জড়িয়ে নিচ্ছে। মাত্র গতকালই ও এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল।
-আগামীকাল ও আমাকে এভাবে জড়িয়ে রাখবে।
আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, কি অদ্ভুত মহিলা।
কিন্তু বন্ধু জবাব দিল, মেয়েটি ঠিক আমাদের জীবনের মত, ওকে প্রত্যেক পুরুষ পায়। ও ঠিক মৃত্যুর মত, প্রত্যেক পুরুষকে জয় করে নেয়।ও মহাকালের মত, প্রত্যেক পুরুষকে জড়িয়ে রাখে।


♣♣♣♣THE GOLDEN BELT♣♣♣♣



সালামী শহরে যাওয়ার পথে দুই পথিকের দেখা হল।পরস্পর কুশল বিনিময় করে তারা একসাথে সালামী'র পথে রওয়ানা হল।ঠিক মধ্য দুপুরে তারা এক প্রশস্ত নদীর পাড়ে এসে উপস্থিত হল। নদী পারাপারের জন্য সেখানে কোন সেতু ছিল না।সাঁতরে নদী পার হওয়া ছাড়া তাদের সামনে আর কোন পথ নেই-কেননা বিকল্প কোন পথ তাদের জানা নেই।

প্রথম জন বলল, নদীটা তেমন প্রশস্ত না। চল, আমরা সাঁতরে পার হয়ে যাই।এই বলে প্রথম জন নদীর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তার দেখাদেখি দ্বিতীয় পথিকও নদীতে লাফ দিল।

প্রথম পথিক তার সারা জীবন কাটিয়েছে নদীর পাড়ে। কিন্তু মাঝ নদীতে এসে হঠাৎ সে তাল হারিয়ে ফেলল, ভেসে যেতে শুরু করল প্রচণ্ড স্রোতের সাথে।

দ্বিতীয় পথিক জীবনে কখনো পানিতে নামেনি। অথচ সে সহজেই সাঁতরে পার হয়ে গেল। পাড়ে উঠে দেখল প্রথম পথিক ভেসে যাচ্ছে স্রোতের তোড়ে।
সহযাত্রীকে বাঁচানোর জন্য বিন্দুমাত্র দেরি না করে সে ঝাঁপিয়ে পরল নদীর বুকে।

একটু পর দুজনেই পাড়ে উঠে এলো। প্রথম পথিক বলল, তুমি যে বললে জীবনে কখনো পানিতে নামোনি। তাহলে নদী পার হলে কিভাবে? আমিতো নদী পাড়ের মানুষ হয়েও পারলাম না।

শুনে দ্বিতীয় পথিক জবাব দিল, বন্ধু তুমি কি আমার কোমরে বেল্টের সাথে আটকে থাকা এই থলেটাকে দেখতে পাচ্ছ? এই থলেটা সোনায় ভর্তি- এই সোনা আমার সারা জীবনের কামাই। এই সোনা আমি কামিয়েছি আমার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা'র জন্য।এই সোনাভর্তি বেল্টই আমি তুমি আমরা আমাকে নদী পার করিয়েছে যাতে আমি নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারি।আজ শুধু আমি নদী পার হইনি, সাথে আমার কাঁধে বসে আমার পরিবারও এই নদী পার হয়েছে।


♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦


আমার অনুবাদ করা কাহলিল জিবরানের আরো কিছু গল্পঃ

১.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-১: The Field of Zaad
২.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-২: The Eagle and the Skylark
৩.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৩: The King
৪.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৪: History and the Nation
৫.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৫: She Who Was Deaf
৬.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৬: Lady Ruth
৭.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৭: SATAN
৮.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের গল্প-৮: THE KING OF ARADUS
৯.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের দুইটি গল্প
১০.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের তিনটি গল্প-১
১১.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের তিনটি গল্প-২
১২.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের তিনটি গল্প-৩
১৩.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের তিনটি গল্প-৪
১৪.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের চারটি গল্প
১৫.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের পাঁচটি গল্প-১
১৬.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের পাঁচটি গল্প-২
১৭.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের পাঁচটি গল্প-৩
১৮.অনুবাদ গল্পঃ কাহলিল জিবরানের পাঁচটি গল্প-৪
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৪৮
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×