মার্চ মাসে দেশে করোনার প্রকোপ দেখা দিলে যখন আমাদের আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা অনির্দিষ্ট কালের জন্য পিছিয়ে যায়, তখন বাকি সকল পরীক্ষার্থী/শিক্ষার্থীর মতো আমিও অফুরান অবসরের সাথে সাথে একফালি বিষণ্ণতা উপহার পাই। পরীক্ষা কবে হবে ঠিক নেই, দেশের পরিস্থিতি ভালো না, মা যেখানে থাকেন সেখানকার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক-- সব মিলিয়ে আমার সময়টা তখন ভীষণ খারাপ কেটেছে। মার্চ-এপ্রিল-মে... তিনটে মাস আমি হেলায় হারাই। কিছু পড়ি কি পড়ি না, লেখি কি লেখি না... সারাদিন পরিবারের সাথে সময় কাটানো, নাটক দেখা আর দিনশেষে বিষণ্ণতার সাগরে ডুবে যাওয়া আমার নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে।
কিন্তু অতঃপর জুন মাসের শুরুতে আমার দিনলিপি আস্তে আস্তে বদলানো শুরু করে। দিনটা আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমার ধারণা এই দিনটি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই দিনটা না এলে হয়তো একজন সুন্দর মনের মানুষ এবং আমার লেখালেখির অন্যতম অনুপ্রেরণাদাতাকে আমি পেতাম না! এলোমেলো জীবনকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলার পথ আমার চোখে পড়তো না।
দীর্ঘদিন নতুন বই কেনা হয় না। কারণ ঘর থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে রকমারি.কমের হোম ডেলিভারি সার্ভিসও তখন বন্ধ ছিলো। আমার পিপাসার্ত মন যখন জানতে পারলো যে ‘পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র’ খুলবে, আমি পাগল হয়ে গেলাম বই কিনতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তার আগে ওখানে একটা কল দিয়ে শিওর হওয়া প্রয়োজন। তাই আমি ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রের যোগাযোগ নাম্বার যোগাড় করলাম। নাম্বারটা কার তখনও জানা ছিলো না। কিন্তু একজন ভদ্রলোক ভীষণ সুন্দরভাবে আমার থেকে জানতে চাইলেন আমি হঠাৎ এর মধ্যে পাঠক সমাবেশে কেন যেতে চাচ্ছি, কার সাথে যাবো, কিভাবে যাবো ইত্যাদি ইত্যাদি। মায়ের সাথে যাবো শুনে তিনি আম্মুর সাথে কথা বলতে চাইলেন। মায়ের থেকে জানতে পারলেন আমার বই পড়ার নেশা এবং লেখালেখি করার কথা। ভীষণ খুশি হলেন। আমার সাথে পুনরায় কথা বলার সময় আমাকে বললেন, ‘দোলা, শোনো, আমাদের দেশে ভালো নারী লেখকের সংখ্যা খুবই কম। তুমি যদি এখন থেকে ভালোভাবে চর্চা করো, ভালো ভালো বই পড়ো তবে তুমি ইনশাআল্লাহ একদিন অনেক দূর যেতে পারবে। তবে, তার আগে তুমি আমাকে কথা দাও, কখনো নিজের খরচে বই বের করবে না। পড়বে। লিখবে। লিখতে লিখতে যখন ভালো করবে তখন দেখবে কোনো না কোনো প্রকাশনী-ই চাইবে তোমার লেখা বই আকারে বের করতে।’ আমি সম্পূর্ণ অচেনা-অজানা মানুষকে সেদিন অকপটে কথা দিয়েছিলাম। অতঃপর যখন তাঁর সাথে আমার পরিচয় হলো, আমি জানতে পারলাম, ইনি আর কেউ নন, পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রের স্বত্ত্বাধিকারী শহীদুল আলম বিজু স্যার। এরপর স্যারের থেকে আমি যে পরিমাণ অণুপ্রেরণা পেয়েছি, তা কখনো কালো কালিতে প্রকাশ করা যাবে না। স্যারের দেওয়া উৎসাহতেই আমি ধীরে ধীরে একটি অন্ধকার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলাম। আবারো লিখতে বসলাম। লিখতে লিখতে ১৫-১৬ দিনের মাথায় আমি শেষ করলাম আমার প্রথম উপন্যাস ‘সময়ের স্পন্দন’।
বছর দুই আগেও আমি একজন স্কুল শিক্ষার্থী ছিলাম। স্কুল জীবনের বন্ধুত্ব, ভালোলাগা-ভালোবাসা, আবেগ অনুভূতির খেলা... আমার মনে হলো আমার প্রথম উপন্যাসের প্লট এমনটাই হওয়া উচিৎ। কলেজ-ভার্সিটির গল্প-উপন্যাস আমরা সবাই কম-বেশি পড়েছি। কিন্তু একজন সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া কিশোরীর অনুভূতি, তীব্র আবেগমিশ্রিত বন্ধুত্বের গল্প আর প্রথম গোপন প্রেম কিংবা এক লুকায়িত ভালোলাগার কথা- এমন কিছু নিয়েও লেখা উচিৎ। আর এই লেখার সমস্তটা জুড়ে রাজত্ব করবে শুধু স্কুল পড়ুয়া একদল ছেলে-মেয়ে।
আমার লেখাটা সম্পন্ন হলে আমি উপন্যাসের প্রথম পাঠক হিসেবে আমার ব্লগার বন্ধু প্রান্তকে বেছে নেই। আমি জানতাম, প্রান্ত আমার এমন একজন বন্ধু, যার থেকে আমি সঠিক প্রতিক্রিয়াটাই পাবো। শুধু উৎসাহ দেওয়ার জন্য ‘ভালো লিখেছো’ এটা সে কখনোই বলবে না। বরং একজন নিরপেক্ষ পাঠক হিসেবে আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আমার ধারণা সঠিক হলো। সে উপন্যাসটা পড়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার সাথে আলোচনা করলো এবং তার মতামতের অনেকটা অংশ-ই ইতিবাচক ছিলো বলে আমি ভরসা পেলাম। ‘সময়ের স্পন্দন’ ব্লগে দেওয়া শুরু করলাম। আর তারপর ব্লগ এবং প্রিয় ব্লগার বন্ধুদের থেকে আমি কতটা সাহায্য পেয়েছি, উৎসাহ পেয়েছি তা নতুন করে উল্লেখ করার কোনো পথ নেই। আছে শুধু একরাশ ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা...
তারপর হঠাৎ একদিন জনতা প্রকাশ থেকে আমার পান্ডুলিপি চাওয়া হয় এবং শুরু হয় আমার ‘সময়ের স্পন্দন’ এর মলাটবন্দি হওয়ার পালা। আমি মনে মনে সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি, বিজু স্যারকে দেওয়া কথা রাখতে পেরেছি বলে।
গতকাল বাংলাবাজারে আমার বইয়ের কাছে ছুটে যাই। বইয়ের মলাট, প্রতিটি পৃষ্ঠা, বাঁধাই... আমাকে মুগ্ধ করে। এত যত্ন নিয়ে প্রকাশনী থেকে বইটা করা হয়েছে, আপনা আপনি ভালোলাগা কাজ করে। প্রকাশক সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা আসে।
আজ সকালে বাবার সাথে আবার ফিরে যাই সেখানে, যেখানে আমার উপন্যাস লেখার ভিত রচিত হয়েছিল। পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে...
এই হচ্ছে আমার ‘সময়ের স্পন্দন’ এর সাথে পথচলার গল্প। এখন এই গল্পের সাথে যুক্ত হবেন আমার প্রিয় পাঠকেরাও। আশা করি, হতাশ হবেন না। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই ভালোলাগা কাজ করবে একজন নবীন লেখকের প্রথম উপন্যাসটি পড়া শেষ হলে।
প্রাপ্তিস্থান:
১. আমার ফেসবুক পেইজ: মৌরি হক দোলা
২. পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র
১৭, আজিজ মার্কেট (নিচ তলা), শাহবাগ, ঢাকা
ফোন: ৯৬৬২৭৬৬, ০১৮৪১২৩৪৬০৩
৩. রকমারি.কম:
৪. প্রকাশনী: জনতা প্রকাশ
স্বত্বাধিকারীঃ রফিকুজ্জামান হুমায়ুন
৩৮/২ক বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০ ৷
মোবা. ০১৭১৮০১১২৮৭, ০১৫৫২৪০৯১৯১
[প্রকাশনী থেকে সরাসরি কুরিয়ারের মাধ্যমে বই পেতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৭১১৩৫৬৩১৮ নাম্বারে।]
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৯