somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা

১৮ ই মার্চ, ২০১০ বিকাল ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-১
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-২
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-৩
নগ্নবেলা কিস্তি-৪
নগ্নবেলা-৫
নগ্নবেলা-৬
নগ্নবেলা-৭
নগ্নবেলা-৮
নগ্নবেলা-৯
নগ্নবেলা-১০
নগ্নবেলা-১১
কিস্তি-১২

বিকাল সাড়ে পাঁচটা। ভিক্টোরিয়া পার্কের কোণায় এসে দাঁড়াল নিপুণ। পাঁচ মিনিট পর পর মোবাইল ফোনে কার সঙ্গে যেন কথা বলছে।
বৃষ্টি পড়ছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আকাশে মেঘ নেই। একেবারে ফর্সা। তবুও বৃষ্টি পড়ছে। প্রকৃতির এই এক খেলা। কখনও দেখা যায় কালো মেঘে ঢেকে আছে আকাশ। তুমুল বৃষ্টি হবে। আবছা অন্ধকার হয়ে এসেছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আকাশ পরিষ্কার। বৃষ্টির ছিটেফোটাও নেই।
বুড়িগঙ্গা পরিবহনের একটি বাস এসে পার্কের কোণায় থামলো। আঁকা নামলো ওই বাস থেকে। তাকে দেখে এগিয়ে গেল নিপুণ। এক মিনিট কথা হলো দু’জনের মধ্যে। নিপুণ রিকশা ডেকে জানতে চাইলো- যাবে?
কই যাইবেন?
ধানমন্ডি।
যামু।
আঁকাকে ডেকে নিপুণ বললো- ওঠো।
রিকশাওয়ালা বললো- ভাড়া ফুরাইয়া লন।
ভাড়া ফুরাইতে হবে না। চলো।
না, ভাড়া না ফুরাইয়া যামু না। পরে ক্যাচাল লাগে। রিকশাওয়ালাগো দুইডা ট্যাকা দিতে আপনে গো খুব লাগে।
কত নিবা?
চল্লিশ ট্যাকা।
তিরিশ টাকা নিও।
না। কমে যামু না।
পঞ্চাশ টাকা হলে তো স্কুটারেই যাওয়া যায়।
ওইডা তো ঠেইলা নিবো ইঞ্জিনে। ওইটারে পঞ্চাশ ট্যাকা দিতে গায়ে লাগে না। আর গায়ের রক্ত পানি কইরা রিকশা ঠেইল্যা নিমু এইডা কিছু না। আমাগো কষ্ট আপনেরা বুঝবেন না।
আচ্ছা ঠিক আছে। পর্দা আছে তো?
আছে।
আঁকা বললো- চলো স্কুটারে যাই।
নিপুণ বললো- আরে না না। স্কুটারে কি আর রিকশার মজা পাওয়া যাবে। কনজাস্টেড জায়গা। নিবিড় হয়ে বসা যায়। শরীরের সঙ্গে শরীর ঘেঁষে বসা যায়। একটু পুলক, শিহরণ- ওম্মাহ...। তার ওপর বৃষ্টি। পর্দা দিয়ে ঢেকে...।
নিপুণের চোখে-মুখে দুষ্টুমির ঝিলিক। আঁকার মুখে মৃদু হাসি। অভিমানের সুরে নিপুণকে হালকা কিল। তারপর- এসব বললে কিন্তু আমি যাবো না। আহাদ ঝরে পড়ে আঁকার।
নিপুণ হো হো করে হেসে উঠে- নাও নাও, বৃষ্টিতে না ভিজে এবার ওঠো তাড়াতাড়ি।
আঁকা ও নিপুণ রিকশায় ওঠে। এ সময়ে জাফর এসে দাঁড়ায় পার্কের কোণায়। আঁকার সঙ্গে নিপুণকে দেখে তিনি অবাক। তবে কি তারা দু’জন পূর্ব পরিচিত?
রিকশায় বসে আঁকা ও নিপুণ নানা রকম কথা বলে। কখনও হাসি-ঠাট্টা। একে অপরকে ধাক্কা। খুনসুঁটি। বেশ জমে ওঠেছে। রিকশাওয়ালা বেশ মনোযোগ সহকারে তাদের কথাবার্তা শুনছে। সে বারবার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে। মুখে রহস্যঘেরা হাসি। রিকশাওয়ালা তাদের লক্ষ্য করছে, কথা শুনছে- এদিকে খেয়াল নেই আঁকা ও নিপুণের। পেছন ফিরে তাকানোর কারণে একবার প্রায় অন্য গাড়ির সঙ্গে লাগিয়ে দিয়েছিল রিকশাওয়ালা। অল্পের জন্য রক্ষা।
কখন বৃষ্টি থেমে গেছে কারও-ই খেয়াল নেই। তখনও রিকশার পর্দায় ঢাকা ওরা। রিকশাওয়ালা বললো- স্যার বিষ্টি থাইম্যা গেছে।
নিপুণ তার কথা বুঝলো কিনা বোঝা গেল না। সে বললো- আচ্ছা। তুমি চালাও।
রিকশাওয়ালা আবার বললো- বিষ্টি নাই স্যার।
আচ্ছা তুমি চালাও। এত তাড়াহুড়া করছো কেন? আস্তে আস্তে যাও।
ওরা যখন ধানমন্ডি লেকের পাড়ে পৌঁছলো তখন প্রায় সন্ধ্যা। রিকশা থেকে নেমে ওরা স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জানালো। কারণ ধানমন্ডিতে বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টি হলে কাঁদার জন্য বসা যেত না।
রাস্তার নিয়ন বাতিগুলো জ্বলে ওঠেছে। ঘর্মাক্ত ক্লান্ত মানুষ ঘরে ফিরতে ব্যস্ত। বাসস্ট্যান্ডে জটলা। একটা বাস এলে হুড়মুড় করে ওঠার জন্য প্রতিযোগিতা।
প্রচণ্ড গরম লাগছে। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ। রিকশাওয়ালার ভাড়া মেটায় আঁকা। এরপর নিপুণের হাতে পঞ্চাশ টাকার একটি নোট দিয়ে বলে- দু’টো আইসক্রিম নিয়ে এসো। আইসক্রিম নিয়ে ওরা লেকের পাড় ধরে হাঁটতে থাকে। নিপুণ বলে- চলো সুবিধা মতো কোথাও বসি।
আঁকা বলে- একটু হাঁটি। কিছুক্ষণ পরে বসবো।
হাঁটতে হাঁটতে দু’জন কথা বলে। নানা রকম কথা। নিপুণের চাকরি-বাকরির কথা জানতে চায় আঁকা। নিপুণের কণ্ঠে হতাশার সুর বাজে। বলে- আমার চাকরি হবে না। চাকরি হতে মামা লাগে অথবা টাকা। আমার কোনটাই নেই। গত সপ্তাহে একটা অফার পেয়েছিলাম। এক লাখ টাকা চায়।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিপুণ। তারপর বলে- আমার বোধহয় এ জীবনে চাকরি-বাকরি হবে না। আর তোমাকে নিয়ে সংসার করাও হবে না।
আঁকা বলে- ঘাবড়িও না। দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। বিবিএ-টা কম্প্লিট হলে আমার প্রমোশন হবে। আমার আয় দিয়েই ইনশাআল্লাহ সংসার চলে যাবে।
চাকরি না হলে আমি বিয়ে করবো না। কষ্টের সুরে বলে নিপুণ।
কেন?
পুরুষ হয়ে বউয়ের কামাই খাবো, এটা আমাকে দিয়ে হবে না।
নারীরা যদি পুরুষের কামাই খেতে পারে তবে পুরুষের অসুবিধা কি?
অসুবিধা এটাই- কারণ আমি পুরুষ।
নিপুণদের পরিবার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে আঁকা। যেমন- তারা কয় ভাইবোন। তার বাবা কি করেন। ছোট ভাই সামি কি করে। বড় বোন অহনা কি করে- ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রসঙ্গ ঘোরায় আঁকা। বলে-
অহনা আপুর কি খবর। তার পড়াশোনা কেমন চলছে?
ভাল। এক কথায় উত্তর দেয় নিপুণ।
তোমার ইতালি যাওয়ার কত দূর।
আমি ইতালি যাব না।

লেকের পাড়ে এখন প্রায় অন্ধকার। আবছা আলোয় মানুষগুলোকে ছায়ার মতো দেখা যায়। লেকের পাড়ে জোড়া জোড়া কপোত-কপোতির আড্ডা বেশ জমে উঠেছে। কথা বলতে বলতে নিপুণ ও আঁকা এক জায়গায় বসে। নিপুণ পাঁচ টাকার বাদাম কিনে নেয়। আঁকা কথার পুনরাবৃত্তি করে-
ইতালি যাবে না কেন?
না যাব না।
কেন যাবে না। তোমাকে ইতালি পাঠাতে অহনা আপুকে প্রবাসী ছেলের কাছে বিয়ে দিয়েছেন। আর তুমি বলছো যাবে না...।
না যাবো না।
কিন্তু কেন?
তোমার জন্য। তোমাকে ছেড়ে আমি স্বর্গে গিয়েও থাকতে পারবো না।
আঁকার কাঁধে হাত রাখে নিপুণ। কিছুটা ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে। এ সময় নাইট গার্ড হাঁক ছাড়ে-
এ...ই ছাইরা ব।
হোঁচট খায় নিপুণ। নাইট গার্ডের ওপর বিরক্ত। এমন মধুময় একটা পরিবেশ তৈরি করতে অনেক সময় লাগে। হুটহাট সব হয় না। এটা কলা নয় যে ছিললাম আর খেয়ে ফেললাম। পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর কথা হলো- আমি তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু এ কথাটি বলতেও একটা পরিবেশ লাগে। নতুবা হিতে বিপরীত হয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিপুণের মুখ থেকে বেরিয়ে এলো- ইস্‌ শালা আর সময় পেল না।

চলবে
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×