somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইহতিশাম আহমদ
একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে ক্যামেরাপারসন হিসাবে চাকুরীরত। ত্রিকোন চলচ্চিত্র শিক্ষালয় নামে একটি ফিল্ম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক। গল্প, কবিতা লেখা ও অভিনয়ের অভ্যাস রয়েছে।

প্রজাপতি স্বপ্নেরা (পর্ব ৪)

১২ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৩:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(পর্ব ১) (পর্ব ২) (পর্ব ৩)

মিম কি যেন একটা উত্তর দিতে যাচ্ছিল। লাবু ভাইকে দেখে থেমে যেত হল। হেটেলের ভিতরে ঢুকছে লাবু ভাই। ঢোকার ভঙ্গিই বলছে তাদেরকে দেখেই ঢুকছে সে।
“কি রে?...” হাসল লাবু ভাই। বরাবরের মত নিয়ন্ত্রিত মসৃণ দরদী কন্ঠ তার।
আরিফরাও হাসল। এক সাথে দাঁড়ানোর ভঙ্গি করল সবাই। তবে কেউ দাঁড়ালো না। লাবু ভাইকে দেখলে বরাবরই তারা এমনটা করে। পুরোপুরি দাঁড়ায় না। তাতে অবশ্য লাবু ভাইয়ের কিছু যায় আসে না। রাজনীতিবিদদের প্রথম যে গুণটা থাকা দরকার তা হল সহজে মাইন্ড না করা।
“তোরা সব বান্দরগুলা দেখি এক জায়গায়, হ্যাঁ?” বন্ধু বৎসল ভঙ্গিতে আরিফদের টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো লাবু ভাই।
“স্লামালেকুম লাবু ভাই।” লোকটাকে নয়নের পছন্দ না তেমন একটা। তারপরও নেহাৎই ভদ্রতা করে পাশের খালি টেবিলটা দেখিয়ে বলল।
“বসেন। কাদের ভাই একটা চা। চিনি ছাড়া।”
“না রে,” বসতে বসতে বলল লাবু ভাই। হাঁপিয়ে গেছে হাঁটতে হাঁটতে। বাকিরাও দাঁড়ানো আর বসার মাঝামাঝি ভঙ্গি করে থাকা থেকে মুক্তি পেল। ভঙ্গিটা বেশ কষ্টকর।
“বসার আর উপায় নাই আমার।” লাবু ভাইয়ের কন্ঠে হতশা। “ডায়বেটিসটা এত বাড়ছে...”
“তাইলে তো লাবু ভাই,” ঝট করে বলল মিম, “আপনাকে সারাক্ষণ লেফট রাইটের উপর থকতে হবে।”
“সেটাই তো করতেছি।” লাবু ভাইয়ের মনটা খারাপ হয়ে যায়। তাকে নিয়ে মজা করছে ছেলেগুলো । তারপরও অভ্যাস বশে ব্যাপারটাকে পাত্তা দিল না লাবু ভাই। ছেলেগুলো ভাল। তাছাড়া বিরোধী দল বা কোন রাজনৈতিক কর্ম কান্ডের সাথে কখনও জড়ায় না। নিতান্তই আম জনতা। এদের উপর রাগ করে লাভ নাই। বরং মাঝে মাঝে এরা বেশ কাজে আসে।
“ডাক্তার বলছে..” কথা বলা শুরু করতেই চায়ের গ্লাসটা লাবু ভাইয়ের দিকে বাড়িয়ে ধরল কাদের ভাই।
“চিনি ছাড়া তো?” নিশ্চিত হবার ভঙ্গি লাবু ভাইয়ের। এবং যথারীতি দরদী কন্ঠ। তৃণমূল পর্যায়ের লোকদের সাথে যে ভাল ভাবে মেলামেশা করতে পারে সেই তো বড় নেতা।
“হ্যাঁ।” কাদের ভাইয়ের কন্ঠে কোথায় যেন সামান্য কৃতজ্ঞতার ছোঁয়া পাওয়া যায়। তৃপ্ত হয় লাবু ভাই। চায়ের গ্লাসটা নেয়। একজন চায়ের দোকানদারের সাথে সবাই এতটা আন্তরিক ভাবে কথা বলে না। খুব ছোট ছোট ব্যাপার অথচ এগুলো দিয়েই তো জনপ্রিয়তা। অন্য কাস্টমারদের নিয়ে ব্যস্ত হবার পরেও কাদের ভাই একবার লাবু ভাইয়ের দিকে তাকায়। হ্যাঁ, অষুধ কাজে লেগেছে। এবার ছেলেগুলোর দিকে ঘুরে লাবু ভাই। এদের জয় করা অতটা সহজ হবে না।
“ডাক্তার বলল,” আড্ডার সুরে শুরু করল লাবু ভাই, “এখনই যদি কন্ট্রোল না করতে পারি তাইলে ইনসুলিন নেওয়া ছাড়া কোন গতি থাকবে না।”
“আমার খালু ইনসুলিন নিত।” চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল সাগর। “মারা গেছে গত বছর।”
চায়ের গ্লাসটা মাত্র মুখের কাছে তুলেছিল লাবু ভাই। থমকে গেল। চোখ দুটো গোল গোল হয়ে গেছে লাবু ভাইয়ের। সাগর তখনও নিজের মনে চা নিয়ে ব্যস্ত। লাবু ভাইয়ের দিকে মনোযোগ দেবার সময় নেই তার। মিম প্রাণপণ নির্বিকার থাকার চেষ্টা করছে। আরিফের নিজের উপর অতটা নিয়ন্ত্রন নেই। তাই সে অন্যদিকে মুখ ঘুরালো। বিরক্ত লাগল নয়নের। ইনসুলিন নিলে যে কেউ মরে না এই সামান্য ব্যাপারটাও লাবু ভাই জানে না। তার আসনের কোথায় কে কেমন আছে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবে কেমন করে এই লোক। হঠাৎ যেন খেয়াল করেছে এমন ভাবে লাবু ভাইয়ের দিকে তাকালো সাগর। সাথে সাথেই মুখ খুলল।
“না, ইনসুলিন নিয়ে মরে নাই।” কৈফিয়ৎ দেবার ভঙ্গি সাগরের। “খালু বহুদিন ইনসুলিন নিছে। ভাল ছিল। মারা গেছে হার্ট এ্যাটাকে।”
লাবু ভাইয়ের চেহারা ঠিক হয়। তবে আরিফরা হেসে ফেলে। বিব্রত বোধ করে লাবু ভাই। ছেলেগুলো আসলেই বাঁদর। কিছু লেখাপড়া করেছে তো, এদের এত সহজে কায়দা করা যায় না। তার উপর আবার বেকার। বেকারদের তো চান্স পেলেই সরকার, মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ এদের গালি দেবার একটা সহজাত অভ্যাস রয়েছে। এখন তো আবার দেশে নুতন একটা ফ্যাশন বেরিয়েছে। আমারা এই দলেও না, ঐ দলেও না। ননপলিটিক্যাল।
“তাই বল।” আলাপী ভঙ্গিটা ধরে রাখে লাবু ভাই। হারানো অবস্থান ফিরে পেতে চেষ্টা করে। তার চোখে মুখে নিজের অজ্ঞতার স্বীকারুক্তি ফুটে ওঠে। এই ভঙ্গিটা বেশ কাজে দেয়।
“আমি তো ভয় পায় গেছিলাম।” হাসিতে সরলতা আনবার আপ্রাণ চেষ্টা চালায় লাবু ভাই। তবে আরিফদের মত বেকার এবং নিয়মিত বাবা মায়ের গালি খাওয়া ছেলেদের উপর লাবু ভাইয়ের এইসব সরল মার্কা হাসির প্রভাব তেমন একটা পড়বার কথা নয়। পড়েও না। তবে হাল ছাড়ে না লাবু ভাই। এটাও বড় রাজনীতিবিদ হওয়ার আরেকটা গূরুত্বপূর্ণ শর্ত।
“তারপরও বড় খারাপ রোগ।” বলতে থাকে লাবু ভাই। “এই দেখ সকাল বিকাল রুটিন করে হাঁটতে হচ্ছে। কোন মাফ নাই। কত শখের মটর সাইকেলটা আমার... চালানো হয় না। তোদের ভাবীকে বলছিলাম আল্লাহ চাহে তো আমাদের গাড়ীও হবে একদিন।”
নিজের র্দূদশায় কাতর হয় লাবু ভাই। আরিফদের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করে।
“যদি পায়ে হেঁটেই বেড়াইতে হয় তো গাড়ি কিনে আর কি করব বল?”
দুঃখ বোধটা অকৃত্রিম ছিল। কিন্তু সেটা ভূল জায়গায় দেখানো হয়ে গেছে। এবার মিম মুখ খোলে।
“জ্বী, লাবু ভাই” মিম বলল, “ডায়বেটিস ধরলে গরীব বড়লোক সব সমান। খালি লেফট রাইট। তবে আপনার প্রফেশনের জন্যে ব্যাপারটা বেশ ভাল।”
“কি রকম?” সাবধান হবার তাগিদ অনুভব করে লাবু ভাই। এবার তার বয়সটাকে কাজে লাগায়। গম্ভীর হয় বাচ্চা ছেলেগুলোর সামনে। তবে মুরুব্বী মানার অভ্যাস কোনদিনই মিমের ছিল না। দুষ্ট ছেলের প্রশ্রয় আদায়ের ভঙ্গিতে হাসল মিম। বলল,
“এই দেখেন সারা বছর আপনি মটর সাইকেল চালায় বেড়ান।” হাসিটা বিস্তৃত হয় মিমের। “খালি ভোটের সময় হাঁটেন। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরা ফিরা করেন। এইটা নিয়ে লোকজন বড় কথা বলে। এখন আর মানুষের সেই চান্সটা থাকল না।”
আবারও হাসে আরিফরা। লাবু ভাইও হাসে। বিব্রত হাসি। ছেলেটার গালে যদি কষে একটা চড় মারা যেত তবে শন্তি পেত লাবু ভাই। তাকে নিয়ে ইয়ার্কি? তবে কথাটা সত্য। তার বিরূদ্ধে লোকজন এই অভিযোগটা প্রায়ই তোলে। এবং আম জনতা যখন সত্য কথা বলে তখন তা চুপচাপ মেনে নেয়াই ভাল। সুতরাং রাগটাকে হজম করতে চেষ্টা করে লাবু ভাই।
“তুই ছেলেটা বড় বদমাইশ হই গেছিস।” সাধ্যমত হাসে লাবু ভাই। তবে অপমানটা বেশ লেগেছে। তাই হাসিটা ঠিক আসে না। একবার মনে হয় এদের সাথে কথা বলতে আসাটাই উচিৎ হয়নি তার। তবে এত সহজে হাল ছাড়ার অভ্যাস তার নেই। এবার লাবু ভাই আরিফদের একজন হয়ে যায়। রাজনীতি করবার এটা আরেকটা অতি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।
“তবে ভাল, স্পষ্ট কথা বলতে পারা ভাল।” লাবু ভাইয়ের কন্ঠে প্রশংসা ঝরে পড়ে। “আমি যখন তরুণ ছিলাম তখন আমিও তোদের মত ডাইরেক্ট কথা বলতাম। ৫২ বল, ৬৯ বল, ৭১ বল, যত বড় বড় আন্দোলন আমাদের দেশে হইছে, সব তো প্রগতিবাদী তরুণদের জন্যেই হইছে। নেতারা তো মাঠে নামে না। আহা.... আমাদের ছাত্র জীবনটা আমরা অন্য ভাবে পার করছিলাম। তোরা তো সব ঝিমানো প্রজন্ম।”
আরিফরা প্রায় মেনেই নিয়েছিল লাবু ভাইকে। শেষের কথাটা প্যাঁচ লাগিয়ে দিল। চায়ের গ্লাসে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেল নয়ন। চোখ সরু করে বলল,
“কেন? ৯০এর আন্দোলন?”
ভুলটা বুঝতে পারে লাবু ভাই। এবং নিজের উপরই বিরক্ত হয়। আজ খালি ভুলই হচ্ছে তার।
“হ্যাঁ, ঠিক আছে।” পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করে লাবু ভাই। কিন্তু ৭১ সালে আমরা তখন ...”
আরেকটা ভুল। গ্লাসটা টেবিলের উপর নামিয়ে রাখল নয়ন। সরাসরি তাকাল লাবু ভাইয়ের চোখে।
“তখন ক্যান লাবু ভাই?” স্থির কন্ঠ তার। “শুধু তখন ক্যান? এখন না কেন?”
নয়নের দিকে তাকালো আরিফ। নয়ন সাধারণত তর্কে জড়ায় না। তবে আজকে পাগল ক্ষেপেছে।
“দেখ নয়ন,” স্বীকারোক্তির মত শোনায় লাবু ভাইয়ের কন্ঠ। “সব সময় কি আর মানুষ এক রকম থাকে?”
ঠিক যেন এটারই অপেক্ষায় ছিল নয়ন।
“তার মানে আপনি এখন নেতা হইছেন।” বলল নয়ন। “তাই আর মাঠে নামেন না।”
ধাক্কা খায় লাবু ভাই। এভাবে ভাবেনি কখনও নিজেকে নিয়ে। কেন যেন রাগ করতে পারে না নয়নের উপর। বরং এখানে বসবার পর থেকে এই প্রথম পাড়ার এই বেকার ছেলেগুলোর প্রতি একটা দায় অনুভব করে। তাকায় তাদের দিকে। সাগর আর মিমের চা খাওয়া শেষ। তারা বোধ হয় খুব একটা আগ্রহী নয় এই সব আলোচনায়। বেকারত্ব তাদের মাঝে কেমন একটা নিষ্পৃহ ভাব এনে দিয়েছে। হাসে লাবু ভাই। পরাজয়ের হাসি।
“তোরা সবাই বড় বদমাইশ হই গেছিস রে।” লাবু ভাইয়ের এবারে দরদটুকু জোর করে তৈরী করা নয়। “আমরা আর কত করব বল? এখন যা করার তোরা করবি। বুড়া হই গেছি, আর কত মাঠে নামতে বলিস?”
“সেই হিসাবে কিন্তু লাবু ভাই,” ফোড়ন কাটে মিম। মুখে আগের মতই প্রশ্রয় আদায়ের হাসি। “ডায়বেটিস হয়ে আপনার ভালই হইছে। মাঠে না হোক অন্ততঃ রাস্তায় তো নামতেছেন।”
হাসির রোল ওঠে। লাবু ভাইও তাতে যোগ দেয়।
“বড় বদমাইশ হই গেছিস তোরা,” বলল লাবু ভাই। “খুব বদমাইশ হই গেছিস।”
তার এবারের হাসিটাতে কোন রাজনীতি নেই। রাজনীতিবিদরাও মাঝে মাঝে আম জনতা হয়ে ওঠে। তবে তার স্থায়িত্ব বেশীক্ষণ হয় না। হলে ভাল হত।
“তা তোরা এখন করতেছিস কি, হ্যাঁ?” লাবু ভাই এবার পাড়ার গার্জিয়ান। “আরিফ, তোর আব্বা তো বোধ হয় এইবার রিটায়ার্ড করল?”
“হ্যাঁ।” বলল আরিফ, “এল পি আর এ আছে।”
“কোন চাকরী বাকরী হইল তোর?” অনেকক্ষণ পরে চায়ে চুমুক দেয় লাবু ভাই।
“লাবু ভাই,” মিম উত্তর দেয়। “এইসব প্রসঙ্গ তুলিয়েন না তো। বেকার, মন খারাপ হয়ে যায়। আপনারা নেতারা আছেন আমাদের পাড়ায়, কোথায় সাহায্য টাহায্য করবেন, তা না...”
“হ্যাঁ, লাবু ভাই, এইটা ঠিক না।” আরিফের চোখে মুখে কৌতুক খেলে যায়। “আপনি থাকতে মীম আর সাগরকে শেয়ারে বিয়ে করার কথা ভাবতে হচ্ছে।”
“এ্যাই, চুপ।” আরিফের উরুতে চাপড় মারে মিম। বিব্রতকর পরিস্থিতি।
“কি?” হতভম্ব হয় লাবু ভাই। “শেয়ারে বিয়ে?”
মিম আর সাগরকে ফাঁসিয়ে দিয়ে আরিফ চায়ে মনোযোগ দেয়। আর মাত্র এক চুমুক বাকি তার চায়ের। নয়নের চা শেষ। কাদের ভাই মুচকি হেসে চা বানাতে বানাতে একবার লাবু ভাইয়ের দিকে তাকায় তার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্যে। সাগর পরিস্থিতি হালকা করার উদ্যোগ নেয়। হাত নেড়ে লাবু ভাইকে বোঝানোর চেষ্টা করে।
“আচ্ছা দেখেন লাবু ভাই,” বলল সাগর, “আমাদের না হয় রোজগারপাতি কিছু নাই, তাই বলে কি বিয়ে করার সাধটা অপূর্ণ থাকবে, আমরা কি মানুষ না বলেন?”
“তোদের রোজগার থাকবে না ক্যান?” বিরক্ত হয় লাবু ভাই। ধমকে ওঠে। “কেমন পুরুষ মানুষ তোরা? হ্যাঁ? আরে, আমাদেরকে তো ২০/২২ বছর বয়সে রোজগার শুরু করতে হইছে। তোরা তো অনেক সুখে আছিস রে।”
চুপসে যায় সাগর আর মিম। নয়ন আর লড়াইয়ে আগ্রহী নয়। তবে আরিফ এবার নয়ন হয়ে যায়। হালকা চালে বলে,
“কি করব লাবু ভাই আপনাদের সরকার তো আমাদের জন্যে মিছিল মিটিং ছাড়া আর কিছুই করতেছে না।”
অর্থাৎ এদের কাছে লাবু ভাই এই মুহূর্ত থেকে আবার রাজনীতিবিদ। এবং এবার আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না লাবু ভাই। রেগে যায়।
“কথায় কথায় সরকারকে টানবি না তো।” বলল লাবু ভাই। “চাকরী পাইস না ব্যবসা কর। গরু ছাগল লালন পালন কর। হাঁস মুরগীর খামার কর। না, এইসব করতে তো আবার তোদের ইজ্জ্বতে লাগে। কথায় কথায় সরকারের দোষ দেওয়া একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে।”
টেবিলের উপর শব্দ করে গ্লাস নামিয়ে রাখল লাবু ভাই। উঠে দাঁড়িয়ে কাদের ভাইয়ের দিকে তাকাল।
“বিল কত হইল রে?”
উঠে দাঁড়ায় নয়ন। যে লাবু ভাই আম জনতা তাকে এভাবে খোঁচানোটা ভাল লাগে না তার। যত যাই হোক লোকটা তো প্রায় তাদের বাবার বয়সী।
“লাগবে না লাবু ভাই?” বলল নয়ন।
“কত?” মানি ব্যাগ বের করল লাবু ভাই।
“২০ টাকা।” বলল কাদের ভাই।
বিল দিয়ে সোজা বেরিয়ে গেল লাবু ভাই। কারো দিকে তাকাল না।
“স্লামালেকুম লাবু ভাই।” পেছন থেকে বলে নয়ন। কোন উত্তর পেল না। “রাগ করছে।”
“করুক।” বিরক্ত কন্ঠে বলল সাগর।
“কোন ব্যাপার না।” মিম নির্বিকার কন্ঠে বলল, “কালকে বাসায় যা, দেখবি ঠিকই তোর সাথে আগের মত কথা বলতেছে।”
“যাবি না কি?” মৃদু কন্ঠ আরিফের।
“কি জন্যে?” অবাক হয় সাগর।
বাকিরাও অবাক হয়েছে। ইতস্ততঃ করল আরিফ। বলল,
“ঐ গরু ছাগল... হাঁস মুরগী..”
“শালার তুই ও আরেক...” রেগে গেল সাগর। “লাবু ভাই বলল, আর তুই... ঐ লোকের কথার কোন দাম আছে?”
“চল,” উঠে দাঁড়ায় মিম। “আমরা আমাদের মিশনে যাই।”
“চল।” সাগরও উঠে দাঁড়ায়।
আরিফের প্রলাপ শোনার চেয়ে রুমার চেহারা দেখা অনেক ভাল। দোকান থেকে বের হয় দুজনে। চায়ের দোকানের বেড়ার গায়ে হেলান দিয়ে রাখা সাইকেলটার তালা খুলে। মিমকে আজ সাইকেল চালাতে হবে।
“তখন যে তুই বললি,” জানতে চাইল সাগর, “ডায়বেটিস ধরলে গরীব বড়লোক সব সমান। গরীব মানুষের কি ডাইবেটিস হয়?”
“তাই তো?” সাইকেলে চড়ে বসে মিম। “সুন্দর কথা বলছিস। রুমাকে জিজ্ঞাস করতে হবে কথাটা।”
“দোস্ত,” সাইকেলের সামনে বসল সাগর। “রুমার কি ডায়বেটিস আছে? আজকাল অল্প বয়সেও মানুষের ডায়বেটিস হচ্ছে।”
সাইকেল চালানো শুরু করে মিম। কথা বলতে বলতে চলে যায় তারা।
“ভালই আছে দুজনে।” নয়ন বলল “পুরি খাবি? চায়ের টাকাটা তো বেঁচে গেল।”
মাথা ঝাঁকায় আরিফ। চিন্তিত সে। নয়ন অর্ডার দেয়।
“কাদের ভাই পুরি দেন।”
“আমি কিন্তু সিরিয়াস, নয়ন।” বলল আরিফ। সাগরদের সামনে যা বলা যায় না তা নয়নকে বলা যায়। “ভাল্লাগে না আর। স্বপ্নাও কিছু একটা করার কথা বলতেছিল।”
পুরি দেয় কাদের ভাই। নয়ন একটা পুরি তুলে নিয়ে কামড় বসায়।
“কালকে সকালের দিকে একবার যাওয়া যায়।”

(পর্ব ৫) (পর্ব ৬) (র্পব ৭) (পর্ব ৮) (পর্ব ৯) (পর্ব ১০) (পর্ব ১১) (পর্ব ১২) (পর্ব ১৩) (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৩:৪১
১৩টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাঁআআআচ্চুউউউ! :) :D ;)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:৩৩



হাঁচতে নাকি জানে না কেউ,
কে বলেছে বোন
এই দেখোনা কত্ত হাঁচির
ওজন শত টন।

কিম হাঁচে বাড়া ভাতে,
বাইডেন হাঁচে তার সাথে সাথে,
লালচে চীনের জোরসে হাঁচি,
কাঁদে সবুজ ঘাস।
মাদার রুশের হাঁচি দেখে
হয় যে বনবাস!!

বনবিবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেইন্ট মার্টিন ও কোক ইস্যু

লিখেছেন নিবারণ, ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪

বিগত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে চর্চিত বিষয়, কোকের বয়কট ও গত দুই দিন ধরে সেইন্ট মার্টিন মায়ানমার দখল করে নেয়ার খবর।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্রিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, মায়ানমার সেইন্ট মার্টিন দখল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গান গাইলাম (সাময়িক)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:০৮

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমি আদর করে 'আই' ডাকি। আইকে দিয়ে অনেক কাজই করাতে হয়। এবারে, আমাদের ৫ ভাইদের নিয়ে একটি গান বুনেছি। আমরা ৫ ভাই অনেক দিন একসাথে হই না। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্যারাভান-ই-গজল - তালাত আজিজ

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৬:৩১


ভারতীয় অন্যতম গজল শিল্পীদের তালিকায় তালাত আজিজের নাম অবশ্যই থাকবে বলে আমার ধারনা। তার বেশ কিছু গান আমার শোনা হয়েছে অনেক আগেই। জগজিৎ সিং, পঙ্কজ উদাস ও গুলাম আলী সাহেবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×