(পর্ব ১) (পর্ব ২) (পর্ব ৩) (পর্ব ৪) (পর্ব ৫) (পর্ব ৬) (র্পব ৭) (পর্ব ৮)
৯
অফিস ছুটির পরে স্বপ্নার সাথে হাঁটতে বেরিয়েছে আরিফ। ইদানিং আর যখন তখন বেড়ানোর সুযোগ হয় না তাদের। স্বপ্নার পাশে পাশে হাঁটলেও আরিফের মন অন্যখানে। ৪০০ টাকা জোগাড় করতে হবে তাকে। চা আর পুরি খাওয়ার পাঁচ দশ টাকা জোগাড় করা সমস্যা না। কিন্তু ৪০০ টাকা তাকে এত অল্প সময়ে কে দেবে? আজ মনে হল প্রতিদিন চা না খেয়ে যদি টাকাটা জমাতো। নিজের উপর খুব রাগ হল আরিফের। গরীব মানুষের এত চা খাওয়ারই বা কি দরকার? তাও ভাল সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস নাই। কথাটা ভেবে মনের মাঝে একটু শান্তি পেল আরিফ।
হঠাৎ করে মনে হল একটা টিউশনিও যদি করত তাহলে আজকে মাত্র ৪০০ টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হত না। ভাবনাটা মাথায় আসতেই মেজাজটা আবারও খারাপ হয়ে গেল তার। নিজের ক্লাসের পড়া বুঝতেই তো তার প্রাণ ঝালাপালা হয়ে যেত। কাউকে যে পড়া বুঝিয়ে দিতে পারবে এই ভরসা তার নিজের উপর কোন দিনই ছিল না। শুধু সে কেন তাদের চার বন্ধুর কারোরই সেই সাহস নেই। টাকা জোগাড়ের চিন্তা আরিফের মাথায় ঘুরপাক খেতেই থাকল।
তবে স্বপ্নার মনটা আজকে খুব ভাল। বহুদিন নিজেকে এতটা হালকা মনে হয় নি তার। শেষ পর্যন্ত আরিফের একটা কিছু হতে যাচ্ছে। আরিফের পাশে হাঁটতে হাঁটতে হালকা চালে স্বপ্না বলল,
“তাইলে তোকে এখন ৪০০ টাকা খরচ করে মুরগীর ডানা কয়টা, ঠ্যাং কয়টা এই সব শিখতে হবে।”
কথাটা র্নিদোষ ইয়ার্কি ছিল। সেটা বোঝে আরিফ। কিন্তু ৪০০ টাকা শব্দটা ঠিক সহ্য করতে পারল না সে। খেঁকিয়ে উঠল,
“ইয়ার্কি করবি না।”
বেশ মিষ্টি করে ঘাড় বাঁকিয়ে আরিফের দিকে তাকালো একবার স্বপ্না। তারপর আবার ঘাড় সোজা হয়ে প্রশ্ন করল,
“নয়ন নাকি টাকা?”
“কি?” প্রশ্নটা বুঝল না আরিফ। বরং বিরক্ত বোধ করল মেয়েটার আচরণে।
“তোর টেনশন?” স্বপ্না এখনও উৎফুল্ল। “কি নিয়ে?”
“দুটোই।” তেতো মুখে বলল আরিফ।
“তাইলে চার মাস পরে কর।” এবার স্বপ্না সিরিয়াস।
আরিফ তাকালো স্বপ্নার দিকে। সেদিন রাতে তাদের বাড়ির ঝগড়ার কথাটা স্বপ্নাকে বলেনি আরিফ। তার আর আব্বার যে প্রায়ই ঝগড়া হয় এটা স্বপ্না জানে। সেটা যে এখন হঠাৎ করে ত্রিমুখী ঝগড়ায় পরিণত হয়েছে এটা স্বপ্নার নিজে থেকে অনুমান করে নেয়ার কথা নয়। স্বপ্নার কাছে আরিফ কখনও কিছু গোপন করে না। কিন্তু আজ কেন যেন বীথির কথাটা বলতে ইচ্ছা করছে না। স্বপ্নার কাছে বীথি খুব শান্ত আর নরম একটা মেয়ে। থাক না সেভাবেই। একটা র্দীঘশ্বাস ফেলল আরিফ। বলল,
“না। করব যখন, তখন এখনই করব। কোন কিছু একবার ঝুলে গেলে সেইটা আর আমার হয় না।”
“হুঁ।” স্বপ্নার চোখে মুখে কৌতুক খেলে গেল। “একমাত্র ব্যতিক্রম আমি। তোর সঙ্গে ঝুলে আছি তো আছি তো আছিই।”
এবার হেসে ফেলল আরিফ। এই একটা জায়গায় সে গরীব না। প্রতিদিন হোটেলে গিয়ে চা খাওয়াটা হয়ত তার জন্যে বিলাসিতা। কিন্তু স্বপ্নার সাথে তার সম্পর্কটা কোন ভাবেই বিলাসিতা নয়। বরং স্বপ্না আছে বলেই এখনও সে সব কিছু সহজ ভাবে নিতে পারছে। কথাটা স্বপ্নাকে বলতে চেয়েও বলা হল না। শুধু বলল,
“জীবনে কিছু কিছু ব্যাতিক্রম থাকা ভাল।”
আরিফের হাসিটুকুই যথেষ্ট স্বপ্নার জন্যে। মনটা তার অরো ভাল হয়ে গেল। এই মুহূর্তে সে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ। কন্ঠে উচ্ছাস নিয়ে বলল,
“বসবি কোথাও?”
“না।” বলল আরিফ, “হাঁটতেই ভাল লাগে।”
কোথা থেকে যেন একটা প্রজাপতি এসে তাদেরকে ঘিরে উড়তে লাগল। কখনও উপরে কখনও নীচে কখনও ডানে কখনও বাঁয়ে ইচ্ছা মত ঘুরছে প্রজাপতিটা। আচ্ছা, প্রজাপতিরা কি কখনও এক তালে চলতে পারে না। এত লাফাঝাপা করে কেন? ভাবল আরিফ। হাত বাড়াতে গেল প্রজাপতিটার দিকে। তবে তার আগেই স্বপ্না হাত বাড়িয়েছে। হেসে ফেলল আরিফ। নিজের হাতটা সরিয়ে নিল। ছেলে মানুষের মত করে বেশ কিছুক্ষণ প্রজাপতিটার পিছনে ছুটল স্বপ্না। স্বপ্নার সারা অস্তিত্ব থেকে যেন সুখ ফুটে বের হচ্ছে। সে দিকে তাকিয়ে আরিফের মনে হল বীথির জন্যে হোক আর স্বপ্নার জন্যেই হোক তাকে কিছু একটা করতেই হবে।
প্রজাপতি ধরতে না পেরে শেষে ক্লান্ত হয়ে শেষে আবার আরিফের পাশাপাশি এল স্বপ্না। আরিফকে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পেয়ে গেল। চোখ সরিয়ে নিলে আরিফ। সহজ হওয়ার জন্যে কথা শুরু করল স্বপ্না।
“আমাদের ট্রেইনার,” সামনের দিকে তাকিয়ে বলল স্বপ্না, “সে দিন দেখল যে আমাদেরকে অফিসের সামনে...”
“হ্যাঁ,” সামান্য ভ্রু কুঁচকালো আরিফের। “কি হইছে?”
“তোর কথা জিজ্ঞাস করতেছিল?” সহজ ভাবে বলল স্বপ্না।
“ক্যান?” আরিফের ভ্রু দুটো আরো কুঁচকালো।
“এমনি।” হালকা চালে বলল স্বপ্না।
তবে আরিফ সন্তুষ্ট হতে পারল না। আগের মতই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকল। আরিফের দিকে তাকিয়ে নিজের ভুলটা ধরতে পারল স্বপ্না। হেসে ব্যাখ্যা দেয়ার ভঙ্গিতে বলল,
“নুতন চাকরীতে ঢুকছি তো একটু খোঁজ খবর নিচ্ছিল। আমি মানুষটা কেমন, আমাকে দিয়ে তাদের কাজ কর্ম চলবে কিনা, একটু বুঝতে চেষ্ট করতেছিল বোধ হয়।”
এবার আগ্রহ হারালো আরিফ। ছোট্ট করে বলল,
“ভাল।”
কিছু ক্ষণ চুপচাপ হাঁটল দুজনে। ভাল লাগছে এভাবে হাঁটতে। সব কিছু যেন অন্য রকম আজ। নিজের ব্যাগ খুলে ৪০০ টাকা বের করল স্বপ্না। বাড়িয়ে ধরল আরিফের দিকে।
“নে।”
“কি?” অবাক হল আরিফ।
“টাকা।” চোখের দিকে তাকাল স্বপ্না। “তোর কাছে তো নাই। আমি জানি।”
হঠাৎ করে সেদিনকার অনুভুতিটা আবার ফিরে আসল আরিফের মাঝে। মেয়েরা কত সহজেই জীবনের সহজাত পর্যায়গুলোতে একের পর এক পৌঁছে যেতে পারে। ছেলেরা পারে না। মেয়েরা যৌবন আগে পায়, সংসার আগে পায়, অনেক ক্ষেত্রে চাকরীও আগে পায়। ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে এক বান্ধবী বলেছিল, দুদিন পরে আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে। আমরা এখন রীতিমত মহিলা। আর তোরা তো এখনও পিচ্চি ছেলে। বড় অপমানে লেগেছিল সেদিন কথাটা। তবে আজ স্বপ্নার বাড়িয়ে দেওয়া টাকাটা যেন আরো বেশী অপমান করল আরিফকে।
চাকরীর প্রথম বেতনটাও পায়নি এখনও স্বপ্না। তারপরও তার কাছে টাকা আছে। অবশ্য মেয়েদের ব্যাগে সব সময়ই টাকা থাকে। এটা আরিফের ছাত্র বয়সের অভিজ্ঞতা। স্কুল জীবনে তারা যখন খালি পকেটে পায়ে হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে বেড়াতো তখনও তাদের ক্লাসের মেয়েদের ব্যাগে টাকা থাকত। রিকশা ভাড়া বা অরো অন্য জরুরী প্রয়োজনের জন্যে। তাদের তো আর সাইকেল নেই। তাছাড়া বিড়ি সিগারেটের খরচও নেই তাদের। তাই বাড়ি থেকে দেওয়া টাকার সবটা খরচ হয় না তাদের।
মেয়েদের ব্যাগে টাকা কোন না কোন ভাবে থাকেই। এটা আরিফ জানে। আজ হয়ত কোন কারণে বেশীই টাকা আছে স্বপ্নার ব্যাগে। সবই বোঝে সে। তারপরও একটা দূরত্ব অনুভব করে স্বপ্নার প্রতি।
“নিব না।” গম্ভীর ভাবে বলল আরিফ।
“ক্যান?” অবাক হল স্বপ্না। কি হল আবার ছেলেটার? টাকা ধরা হাতটা বাড়িয়েই রাখল সে।
দাঁড়াল আরিফ। শালার এই টাকা নিয়েই তো এত কিছু। টাকা রোজগার করেই তো তাকে এই সমাজের বুকে প্রমাণ করতে হবে যে সে পুরুষ না অন্য কিছু। মেয়েদের এত শত লাগে না। বয়স হলেই তারা যোগ্য। মুখটা তেতো হয়ে যায় আরিফের। আর টানতে পারে না সে। খেঁকিয়ে ওঠে।
“আমি মানুষটা বেকার হইতে পারি, কিন্তু তাই বলে কি আমার পৌরুষ নাই? একটা মেয়ের কাছে আমি টাকা নিব?”
ঝোঁকের মাথায় কি বলা হয়ে গেল তা এখনও ধরতে পারেনি আরিফ। পারার কথাও না। সেই দিনকার সেই ঝগড়া তার ভিতরের কোথায় যেন কি একটা পাল্টে দিয়েছে। তবে কথাটা স্বপ্নার মাথার ভিতরে বোমা ফাটালো। প্রথমটায় রাগে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারল না স্বপ্না। ছেলেটা এর আগেও মাঝে মধ্যে লাগাম ছাড়া কথা বলেছে। কিন্তু তাই বলে..
“আরিফ,” হিসহিসিয়ে উঠল স্বপ্না। “তোকে কষে একটা চড় লাগাবো আমি। আমার কাছে টাকা নিতে পৌরুষে লাগে তোর?”
“অবশ্যই।” নিজের জেদে আটকে রইল আরিফ।
চড় মারবে আমাকে। গার্জিয়ানগিরি। এখানেও তোমরা আগে আগে, না? আমার গার্জিয়ান হতে এখনও অনেক বাকি। আর তুমি সেই আমল থেকে আমার উপর গার্জিয়ানগিরি করেই যাচ্ছে। বাহ্ ..
“পুরুষ মানুষ কখনও,” বলল আরিফ, “মেয়ে মানুষের কাছে টাকা নেয় না।”
বলেই মনে হল ডায়লগটা বোধ হয় একটু ফিল্মী হয়ে গেল। হোক। গোঁয়ারের মত ভাবল আরিফ। এখন আর এখান থেকে নড়া যাবে না। আরে, উপরওয়ালা পর্যন্ত মেয়েদের পক্ষে। সব কিছুই তাদের আগে আগে দিয়ে দিচ্ছে। সাধে কি আর চান্স পেলেই পুরুষরা মেয়েদের উপর অত্যাচার করে। মেয়েরা হচ্ছে সুবিধা ভোগী সম্প্রদায়। কিছু হলেই বলবে ‘বিয়ে দিয়ে দাও, চলে যাই।’ আজ বাপের ঘাড়ে, কালকে স্বামীর ঘাড়ে। আরামেই আছো তোমরা। আরিফের রাগটা মেয়েদের উপরে না অন্য কারো উপরে সেটা বলা মুশকিল। তবে তার রাগের মাত্রটা ক্রমশঃ বাড়তেই থাকল।
“মেয়ে মানুষ মেয়ে মানুষ করবি না।” স্বপ্না এবার গলা চড়াল।
“ক্যান করব না।” সমান তেজে বলল আরিফ। “যেইটা সত্য সেইটা সত্য। আমি যদি পুরুষ মানুষ হয়ে থাকি তো কোনদিনও কোন মেয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিব না।”
“উফ ... অসহ্য...” মাটিতে পা ঠুকল স্বপ্না।
ব্যাস, আর না। অনেক হয়েছে। আরিফকে সাহায্য করতে চাওয়াটাই তার ভুল হয়েছে। করুক ছেলেটা যা ইচ্ছা। মেয়েদের টাকা নিতে তোর সম্মানে লাগে। আগে জানলে তোর মত জানোয়ারের সাথে আমি মেলামেশাই করতাম না। সব সময় তুই আমার ভাল ভাল সময়গুলোকে নষ্ট করে দিস। ইচ্ছা করছে ছেলেটার গলা টিপে ধরে...
“তোকে আমি ....ইইই..”
গলা টিপে ধরতে না পারার অক্ষমতায় চেঁচিয়ে উঠল স্বপ্না। ব্যাগে টাকা ঢোকাতে ঢোকাতে গট গট করে হাঁটা শুরু করল। এবার হুঁশ হল আরিফের। পিছন থেকে চেঁচাল,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
উত্তর দিল না স্বপ্না। একবার মেয়েটার পিছু নেবার কথা ভেবেও শেষে দাঁড়িয়েই থাকল আরিফ। চোখের কোন দুটো কুঁচকে স্বপ্নার দিকে তাকিয়ে থাকল সে। তার ব্যবসাটা শুরু হলেই মেয়েটা আজকের সব কিছু ভুলে যাবে। টাকা অনেক বড় জিনিস। দু হাতে মাথার চুলগুলো পিছন দিকে টেনে ধরে আকাশের দিকে তাকালো সে। তার বুকের ভিতরে কেমন যেন একটা অচেনা অনুভুতি চেপে বসেছে।
রাতের খাবারের আয়োজন করছিল বীথি। এসময় আরিফ তার কাছে টাকার প্রসঙ্গটা তুলল। টাকার যোগাড় হয়নি এখনও কোনখান থেকে। মেয়েদের প্রতি দূরত্ব যে এখন আর অনুভব করছে না তা নয়। তবে ব্যবসাটা তাকে শুরু করতেই হবে। তা সে যেভাবেই হোক। টেবিলে খাবার সাজাতে সাজাতে আরিফের কথায় অসহায় বোধ করল বীথি। হাতের কাজ থামিয়ে বলল,
“হবে না যে রে ভাইয়া।”
দমে গেল আরিফ। তারপরও জানতে চাইল, “কোন ভাবেই হবে না?”
“না।” বুকের ভেতরে কষ্ট হতে লাগল বীথির। তারা এত গরীব কেন? মাত্র ৪০০ টা টাকার ব্যবস্থা সে করে দিতে পারছে না। অথচ এই ব্যবসাটা শুরু হওয়া কত জরুরী। ধীরে ধীরে বলল,
“আর দুই দিনের চাল আছে। কালকে বাজার করতে হবে।”
সবই বোঝে আরিফ। তারপরও বীথি মাঝে মাঝে এই সংসারে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। আর তো মাত্র কয়েকটা দিন। এতদিন যখন সংসারটাকে তুই টানছিস, এই শেষ কাজটা তুই করে দে। এটাই শেষ। তারপর থেকে তোর ছুটি। আমি সব কিছু সামলাবো। তোকে আর কিছু করতে হবে না। ল্যাংড়া খোঁড়ার সাথে বিয়ে করতে হবে না। তোর ক্লাশ নষ্ট হবে না। আর দশটা মেয়ের মত তুই রোজ কলেজে যাবি। পড়াশুনা করবি, আড্ডা মারবি। শুধু এই শেষ একটা দায়িত্ব তুই নে। মাত্র ৪০০টা টাকা।
“তুই কারো কাছ থেকে জোগাড় করতে পারবি না?” আগ্রহ নিয়ে বলল আরিফ।
আরো অসহায় বোধ করল বীথি আরিফের বলার ভঙ্গিতে। উত্তর দিতে গিয়ে ছোট্ট বুকটা ফেটে গেল বীথির।
“রুবী খালা আমার কাছে ৫০০ টাকা পায়।”
এবার ভেঙ্গে পড়ল আরিফ। আব্বা ঘরে ঢুকতেই চুপ হয়ে গেল দুজনে। চেয়ারে বসলেন আব্বা। বীথি ব্যস্ত হাতে থালা এগিয়ে দিল আব্বার সামনে। আরিফ বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। সেদিকে তাকিয়ে আব্বা জানতে চাইলেন,
“আরিফ খাবে না?”
আব্বার কথায় থমকাল বীথি। আজ বোধ হয় ভাইয়া আর খাবে না।
“ভাইয়া পরে খাবে।” বিষন্ন মুখে ভাত বেড়ে দিতে শুরু করে সে। “তুমি খাও।”
আব্বা এবার বীথির দিকে তাকালেন। সে রাতের ঝগড়ার পর থেকে আরিফের সাথে আব্বার আর কোন কথা হয়নি।
“ওর গরুর ট্রেনিংএর কি হইল?” জানতে চাললেন আব্বা।
আব্বার দিকে তাকাল না বীথি। থালায় তরকারী তুলে দিতে দিতে মৃদু কন্ঠে বলল,
“শনিবার থেকে শুরু হওয়ার কথা।”
“হুম।” একটা র্দীঘশ্বাস ছেড়ে খাওয়ায় মন দিলেন আব্বা।
ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে আরিফ। স্বপ্নার কাছ থেকে টাকা নিতে হলে নেবে। ব্যবসাটা শুরু করতে যা যা দরকার করবে সে। দুনিয়াটা সফল মানুষদের জায়গা। কিভাবে তুমি সফল হলে তাতে যায় আসে না। তাই পরদিন দুপুরে স্বপ্নার অফিসে গিয়ে হাজির হল আরিফ। ভেবেছিল মেয়েটা তার সাথে কথা বলবে না। কিন্তু তাকে দেখেই হাসিতে ভেঙ্গে পড়ল স্বপ্না। আরিফের দিকে তাকিয়ে ডানে বাঁয়ে মাথা নাড়িয়ে জানতে চাইল টাকার জোগাড় হয়েছে কিনা? আরিফ কোন উত্তর দিল না। চুপচাপ ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে থাকল। স্বপ্নার হাসি আরো বেড়ে গেল। ছেলেটার ছেলেমানুষী কোন দিনই যাবে না। কালকে কি কি সব বলল পুরুষ মানুষ মেয়ে মানুষ। পাগল কোথাকার। ব্যাগ হাতড়ে টাকা বের করল স্বপ্না। যা তোর তা যদি আমার হয় তবে আমারটা কেন তোর হবে না? আসলে ছেলেটা অস্থির হয়ে আছে। আর এই অস্থিরতাটা ভাল লাগল স্বপ্নার। কোথাও একটা দাঁড়াতে চাইছে ছেলেটা। দাঁড়া তুই। আমি আছি তোর সঙ্গে। পরে সব শোধ তুলব। টাকাটা নিয়ে ঘুরে হাঁটতে লাগল আরিফ। কোন কথা বলল না। আবারও হাসল স্বপ্না। পাগল।
(পর্ব ১০) (পর্ব ১১) (পর্ব ১২) (পর্ব ১৩)
(শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১২