somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইহতিশাম আহমদ
একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে ক্যামেরাপারসন হিসাবে চাকুরীরত। ত্রিকোন চলচ্চিত্র শিক্ষালয় নামে একটি ফিল্ম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক। গল্প, কবিতা লেখা ও অভিনয়ের অভ্যাস রয়েছে।

প্রজাপতি স্বপ্নেরা (পর্ব ১১)

২৩ শে আগস্ট, ২০১১ ভোর ৬:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(পর্ব ১) (পর্ব ২) (পর্ব ৩) (পর্ব ৪) (পর্ব ৫) (পর্ব ৬) (র্পব ৭) (পর্ব ৮) (পর্ব ৯) (পর্ব ১০)

১১

দুই প্রেমিকের ক্লান্ত বিদ্ধস্ত চেহারা দেখে অবাক হল আরিফ। নয়নকে তাদের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে দেখে অনুমান করল কিছু একটা ঘটেছে। কাদের ভাইও হাসছে। তারমানে বড় রকমের কিছু। মীমের পাশে বসল আরিফ। পিঠ চাপড়ে বলল,
“কি রে? তোদের মুড অফ ক্যান?”
ফস করে একটা র্দীঘশ্বাস ছাড়ল মীম। আরিফের দিকে তাকালো না। আসলে তাকাতে পারছে না সে। এতবড় একটা ট্রেজেডির পরে কারো সাথে চোখ মেলানো সম্ভব? ডানে বাঁয়ের তাকাতে লাগল মীম।
“আমাদের সব আশা ভরশা,” ম্লান কন্ঠে বলল মীম, “প্লান প্রোগ্রাম সব শেষ।”
নয়নের দিকে তাকালো আরিফ। নয়ন প্রাণপণ স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে। পারছে না। অর্থাৎ তার কাছ থেকে কিছু জানার সুযোগ নেই। তাই সাগরের দিকে তাকালো আরিফ। জানতে চাইল,
“কিসের প্লান?”
সাগরও আরিফের দৃষ্টিকে এড়িয়ে গেল। বিরক্ত ভঙ্গিতে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল।
“শেয়ারে বিয়ে করার।” বলল সাগর।
হঠাৎ গোটা ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে গেল আরিফের কাছে। চেঁচিয়ে উঠল সে।
“রুমার বিয়ে হয়ে গেছে?”
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না নয়ন। হা হা হা করে হাসিতে ফেটে পড়ল। আরিফ উত্তেজনায় লাফাতে লাগল। এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ঘটনা এটা। সাগররা অস্বস্তিতে পড়ে গেল। কোথায় তাদের কষ্টে বন্ধুরা একটু সমবেদনা দেখাবে তা না আনন্দ করছে। এমন কি কাদের ভাইও হাসছে। উস, রূমা তুমি আমাদের এত বড় দাগা দিতে পারলা? ভাবল সাগর। মেয়েরা আসলে এমনই হয়। আমাদের ঘুরাঘুরি ঠিকই ইনজয় করছে মেয়েটা এখন আবার নির্দি¦ধায় অন্যে সাথে বিয়ে বসল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সাগর। আরো কত দীর্ঘশ্বাস যে এই কপালে আছে আল্লাহই মালুম।
“হাসবি না দোস্ত।” বলল সাগর। “মনের মধ্যে বড় কষ্ট। এত চিন্তা ভাবনা করে আমরা দরিদ্র যুব সমাজের জন্যে বিয়ে করার একটা সহজ উপায় বের করলাম...”
হতাশায় র্জজরিত সাগর আর কথা শেষ করতে পারল না। মীম আফসোসের সাথে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল,
“হ্যাঁ। ব্যাপারটা হাইপো থিসিস পর্যায়েই থেকে গেল। বাস্তবায়নের সুযোগ পাওয়া গেল না। এইটাই যা দুঃখ।”
আরিফদের হাসি থামছে না দেখে মাটিতে একটা লাথি মারল সাগর। আরিফরা তাদের কষ্টের মূল কারণটা ধরতেই পারছে না। পারলে আর এভাবে হাসত না।
“হ্যাঁ। মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে এই নিয়ে আমাদের কোন দুঃখ নাই।” ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করল সাগর। “সুন্দরী মেয়ে বিয়ে তো হবেই। কিন্তু আমাদের এই যে প্রত্যেক দিনের অভ্যাস, এইটার কি হবে বল?”
“চিন্তা করিস না দোস্ত।” আরিফ এবার সহানুভুতিশীল বন্ধু। “তোরা খুব শিগগিরই অন্য কাউকে পায় যাবি। আমার কথার উপর তোরা ভরশা রাখতে পারিস।”
আরেক দফা হাসল নয়ন। কাদের ভাইও হাসল। সাগর এবার আরিফের দিকে কড়া চোখে তাকাল। ছেলেটাকে আর অপমান করতে দেয়া যায় না। যুদ্ধের ময়দানে পরাজিতদেরও কিছু অধিকার থাকে। প্রেমের ক্ষেত্রে তো আরো বেশী। তাই প্রতিবাদ আবশ্যক।
“তুই কি আমাদেরকে অপমান করতে চাচ্ছিস?” মার মুখি ভঙ্গিতে বলল সাগর।
“একদম না।” শুরুতেই আরিফের আত্মসর্মপণ। “পাগল আমার সেই সাহস আছে?”
কাদের ভাই কিছুক্ষণ উসখুস করে শেষে নয়নকে ডাকল।
“নয়ন ভাই।”
“হ্যাঁ?” হাসতে হাসতে কাদের ভাইয়ের দিকে ঘুরে তাকালো নয়ন। তাকিয়েই মনে পড়ল খানিক আগে কাদের ভাইয়ের দেয়া প্রস্তাবটা।
“ও হ্যাঁ।” আরিফের দিকে ঘুরল নয়ন। “আরিফ, কাদের ভাই বলতেছিল তুই তোর মুরগীর ব্যাবসায় উনার ছোট ভাইকে নিবি কিনা?”
“আমার ভাইটা ব্যাবসা করতে চাচ্ছে।” কাদের ভাই বলল। “ভাবলাম আপনার সাথে যদি করে তাইলে ভাল হয়।”
কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না আরিফ। তার নিজেরই এখনও টাকার জোগাড় ঠিক মত হয়নি। কবে শুরু করতে পারবে জানে না। তাছাড়া কাদের ভাইয়ের ভাই যে কেমন ছেলে, কিছুই তো জানে না।
“আমার কাছে প্রস্তাবটা ভাল লাগছে।” নয়ন বলল। “কাদের ভাই তো নিজেদের লোক। তোর ব্যাংক লোনটা যদি হয়ে যায়, আর কাদের ভাইয়ের ভাইও কিছু পয়সা দিল। একটা বড় করে কিছু শুরু করলি।”
নয়ন এখানে সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ। তার পরার্মশই যথেষ্ট ছিল আরিফের কাছে। সেই সাথে বাকি দুই বন্ধুর মাথা ঝাঁকানো দেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল আরিফ।
“ঠিক আছে।”
“তাইলে আমার ভাইকে বলি।” সন্তুষ্ট কন্ঠে বলল কাদের ভাই, “কালকে আপনার সাথে দেখা করবে।”
“ওকে।” মাথা কাৎ করল আরিফ।


পরদিন সকাল বেলা আরিফের বাসায় এসে হাজির হল কাদের ভাইয়ের ছোট ভাই ফারুক। অল্প বয়স। দেখে মনে হয় কি এক কারণে সারাক্ষণই ছটফট করছে। বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আরিফকে উঠান পেরিয়ে আসতে দেখে তার ছটফটানি আরো বেড়ে গেল। এক জায়গায় ঠিক মত দাঁড়াতেই পারছে না ছেলেটা।
“স্লামালেকুম আরিফ ভাই।” তড়বড় করে বলল ফারুক। “আমাকে বড় ভাইয়া পাঠাইল আপনার কাছে।”
হঠাৎ করে ঠিক ধরতে পারল না আরিফ ছেলেটার কথা। পরে কাদের ভাইয়ের দেয়া গতকালকে প্রস্তাবটার কথা মনে পড়তেই প্রশ্ন করল, “কাদের ভাই?”
“হ্যাঁ।” পায়ের ভর ক্রমাগত পরির্বতন করেই যাচ্ছে ফারুক।
“ভিতরে আস।” দরজা ছেড়ে দাঁড়ালো আরিফ।
“আজকে ভিতরে আর যাব না।” আবারও তড়বড় করে উঠল ফারুক। “আমি আপনাকে একটা কথা বলতে আসছিলাম।”
বাইরে এসে দাঁড়ালো আরিফ। ছেলেটা এত ছটফট করছে কেন? কি সমস্যা? আরিফকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নার্ভাস হয়ে গেল ফারুক। ফটাস ফটাস করে হাতের আংগুল ফুটাতে লাগল।
“আমরা কয়েক বন্ধু মিলে কিছু টাকা জোগাড় করছি।” বলল ফারুক। “কিন্তু ভাইয়া ওদের সাথে আমার ব্যবসা করাটা পছন্দ করতেছে না। বলে, তোরা সবাই ছোট মানুষ লস খাবি। ভাইয়া আপনার সাথে বিজনেস করতে বলতেছে।”
আরিফ কিছুটা বিভ্রান্ত বোধ করল। ঠিক কি চাচ্ছে ছেলেটা তার কাছে? চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,
“তুমি কি আমার সাথে বিজনেস করতে রাজি না?”
“না না, রাজী আমি।” লাফিয়ে উঠল ফারুক। “মানে বলতেছিলাম কি আমার বন্ধুদেরকেও যদি আপনি নিতেন।”
এবার চিন্তায় পড়ে গেল আরিফ। কাদের ভাইয়ের ভাই পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু আরো কয়েকজনকে নেয়াটা কি উচিৎ হবে? তাছাড়া তারাও কি এই ছেলেটার মত এই রকম অস্থির মানষিকতার? কথা বলতে হবে কাদের ভাইয়ের সাথে। আরিফ র্নিঝঞ্ঝাটে ব্যাবসা করতে চায়।
“কত আছে তোমাদের কাছে?” জানতে চাইল আরিফ।
“৩০ হাজার। ক্যাশ।” বলল ফারুক। “আরিফ ভাই, ওরা খুব ভাল ছেলে। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।”
৩০ হাজার। সংখ্যাটা বেশ লোভনীয়। তার যদি ব্যাংক থেকে ২০/২৫ হাজার টাকা আসে তাহলে পুরা ৫০/৫৫ হাজার। বুকটা ধ্বক করে উঠল আরিফের। খোদা তুমি কি তাহলে আমার দিকে তাকাতে শুরু করছ।
“ঠিক আছে।” বলল আরিফ। “একদিন নিয়ে আস ওদেরকে।”
“আচ্ছা।” আনন্দে ছটফটানী বেড়ে গেল ফারুকের। “আমি তাইলে আজকে আসি।”
“ভিতরে আসবা না?” আবারও বলল আরিফ।
“না। স্লামালেকুম।”
সালাম দিয়েই ভেগে গেল ফারুক। আরিফ ভাবতে লাগল। ৫০ হাজারে কতগুলো মুরগীর বাচ্চা কেনা যাবে। মুরগীর ঘর বানাতে কিছু লাগবে, কিছু ঔষধ পত্র, খাবারের খরচ, ইলেক্টিক ব্লাব। মনে মনে বাজেট বানাতে লাগল আরিফ।


১২

আরিফদের রান্না করার চালাঘরের দরজায় উঁকি দিল স্বপ্না। বীথি একমনে ভাতের মাঢ় গালাচ্ছিল। ঘরে আলো চলাচলে বাঁধা পড়ায় স্বপ্নার দিকে তাকিয়েই উৎফুল্ল হয়ে উঠল বীথি। হাতে ভাতের ডেকচিটা না থাকলে হয়ত লাফিয়েই উঠত।
“ওমা, স্বপ্না আপু।” কলকল করে উঠল বীথি। “কত দিন পর?”
বীথির উচ্ছাসকে পাত্তা দেয় না স্বপ্না। উঠানের দরজা দেখিয়ে বলল,
“উঠানের দরজা খোলা ছিল।”
“থাক খোলা।” ডেকচি রেখে উঠে দাঁড়াল বীথি। “তুমি এতদিন পরে ক্যান সেইটা বল?”
“দরজা খোলা থাক মানে?” ভ্রু কুঁচকায় স্বপ্না। “যদি চোর আসে?”
হাসল বীথি। যেন স্বপ্না কোন আজব কথা বলেছে। স্বপ্নার হাত ধরে বারান্দার উদ্দেশ্যে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
“আমাদের বাড়িতে চুরি করার মত কিছু নাই।”
কথাটা পছন্দ হল না স্বপ্নার। হয়ত বীথি ঠিকই বলেছে। কিন্তু আরিফ যেখানে থাকে সে জায়গাটাকে স্বপ্না এভাবে দেখতে চায় না। ভাল লাগে না তার।
আরিফদের উঠানটা অনেক বড়। উঠানের এক পাশে রান্না করার চালাঘর। বাড়িটা আরিফের দাদা বানিয়েছিলেন। তখন সব কিছুই সস্তা ছিল তাই যতটা সম্ভব জমি কিনেছিলেন দাদা। তবে পুরো পাকা বাড়ি বানাতে পারেননি তিনি। টিন শেড বাড়ি বানিয়েছেন। হয়ত ভেবেছিলেন জমি থাকলে বাড়ি হতে কতক্ষণ। তাই বেশীর ভাগ টাকা জমির পিছনেই ব্যয় করেছেন। বোধহয় আশা ছিল বাকিটা তার সন্তানেরা করবে। বাড়ির কিছু পরিবর্তন অবশ্য হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন পরির্বধন হয়নি। বারান্দায় উঠতে উঠতে স্বপ্নার হাতে ধরা একটা মিষ্টির প্যাকেটার দিকে চোখ গেল বীথির।
“মিষ্টি ক্যান?” জানতে চাইল বীথি।
“আমার চাকরীর প্রথম বেতন।” প্যাকেটটা বাড়িয়ে ধরল স্বপ্না। “ভাবলাম তোদের জন্যে মিষ্টি নিয়ে যাই।”
“হুঁ।” দুষ্টুমি ভঙ্গিতে হাসল বীথি। “তেল দিচ্ছো। বুঝলাম।”
“একটা মারব।” বীথির মাথায় হালকা একটা চাঁটি মারল স্বপ্না। “চাচা আছে বাসায়?”
“আব্বাকেও তেল দিবা নাকি?” চোখ বড় বড় করল বীথি। উপর নিচ মাথা ঝাঁকালো স্বপ্না। হাসল বীথি। স্বপ্না আপু তার ভাবী হলে খারাপ হয় না। ভাবল বীথি। ভাইয়ার ব্যাবসাটা দাঁড়িয়ে যাক। সোজা তাকে বলে দেবে। এই সংসারের এত দায়িত্ব সে আর নিতে পারবে না। স্বপ্না আপু এসে নেবে না কে নেবে নেক। তার আর ভাল লাগে না এত দায় দায়িত্ব। সুখস্বপ্ন সব সময়ই মানুষকে আলাদা একটা তৃপ্তি দেয়। চোখে মুখে একগাদা ভাল লাগা নিয়ে মিষ্টির প্যাকেটটা হাতে নিল বীথি। মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
“আব্বাও বাসায় আছে। ভাইয়াও আছে। চল।”
হাত ধরে স্বপ্নাকে আব্বার ঘরে নিয়ে গেল বীথি। আব্বার সাথে স্বপ্নার প্রথম দেখা হতে যাচ্ছে। আগে যে কয়বার স্বপ্না এই বাসায় এসেছিল প্রতিবারই আব্বা অফিসে ছিলেন। স্বপ্নার চেয়ে বীথির উত্তেজনা বেশী। স্বপ্না আপুকে দেখলে র্নিঘাত ভড়কে যাবে আব্বা। তার তো ধারণা ভাইয়াকে কোন মেয়ে বিয়ে করতে রাজীই হবে না। ঘরে ঢুকেই মুখ খুলল বীথি। হাত পা নেড়ে বলল,
“আব্বা, এইটা হইল স্বপ্না আপা। ভাইয়ার বন্ধু।”
আব্বা নয়, স্বপ্না ভড়কে গেল। সে জানতো একদিন না একদিন এই মানুষটার মুখোমুখি তাকে হতে হবেই। কতদিন মনে মনে প্র্যাকটিসও করেছে দেখা হলে কি বলবে, কি করবে। কিন্তু এখন কেন যেন সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
এই তাহলে আরিফের আব্বা। কই আরিফ যতটা বলে ততটা কাঠখোট্টা আর জালিম তো মনে হচ্ছে না। হ্যাঁ, দুশ্চিন্তার একটা ছাপ আছে চেহারায়। এছাড়া তো আর দশটা বাবার মতই তো স্নেহময় দেখতে লোকটা। অসুবিধা নাই, ভাবল স্বপ্না। আমি আগে এসে নেই, আপনাকে আর দুশ্চিন্তা করতে দেব না।
“চাচা, আমি আরিফের সাথে পড়তাম।” মৃদু কন্ঠে বলল স্বপ্না।
“বস।” সোফায় বসে বই পড়ছিলেন আব্বা। বইটা কোলের উপর নামিয়ে রাখতে রাখতে স্বপ্নাকে ভাল দেখলেন। অস্বস্তিতে পড়ে গেল স্বপ্না। অন্য একটা সোফায় গুটিসুটি হয়ে বসল। বীথি মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে চলে গেল।
“চাচা,” স্বপ্না বলল, “আজকে আমি প্রথম বেতন পাইছি। তাই ভাবলাম..”
কথা শেষ করল না স্বপ্না। চাকরীর কথা শুনে তার দিকে আব্বাকে নুতন করে তাকাতে দেখে স্বপ্নার মনটা খারাপ হয়ে গেল। চাকরীর কথায় কি কষ্ট পেল মানুষটা?
“তুমি চাকরী কর?” আব্বা বললেন।
“জ্বী।” ছোট্ট করে বলল স্বপ্না।
হঠাৎ করেই যেন আব্বার কাছে স্বপ্নার একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হয়ে গেল। হয়ত এই পৃথিবীতে যারা যারা চাকরী জোটাতে পেরেছে এই মুহূর্তে তাদের সবাই আব্বার কাছে গ্রহণযোগ্য। উদাস কন্ঠে বললেন,
“হ্যাঁ .. সবারই চাকরী হয় শুধু আমার ছেলেরই....” একটা র্দীঘশ্বাস ছাড়লেন আব্বা।
মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল স্বপ্নার। তারচেয়েও বেশী বেকায়দায় পড়ে গেল এই মুহূর্তে তার কিছু করার নাই দেখে। তাই চুপচাপ মাটির দিকে তাকিয়ে বসে থাকল স্বপ্না। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আব্বা বললেন,
“যাও, ও ঘরেই আছে। মুরগীর খামার না কি যেন করবে। আজকাল বাড়িতেই থাকে। যাও।”
কথা না বড়িয়ে চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে এল স্বপ্না। আরিফের ঘরের চৌকাঠে এসে দাঁড়াতেই তার মনটা ভাল হয়ে গেল। ভিতরে ঢুকল না স্বপ্না। খোলা দরজার গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। এই ঘরটা কয়েকদিন পরেই তার হবে। টেবিলের সামনে বসে আছে আরিফ। কিছু কাপজ পত্র আর এক প্লেট মিষ্টি টেবিলের উপর। স্বপ্নার আনা মিষ্টি ওগুলো। বেশ তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছিল আরিফ। স্বপ্নাকে দেখে চেয়ারে হেলান দিল সে।
“হাই।” বলল স্বপ্না।
“তো, তুই বেতন পাইছিস।” স্বপ্নে ভরা চোখ দুটো নিয়ে মজা করে বলল আরিফ। “গুড। আমিও শুরু করে দিচ্ছি। আর বেশী দিন লাগবে না। বড় লোক হয়ে যাব।”
“আমি জানি।” ফিসফিসে কন্ঠে বলল স্বপ্না।


আজকের দিনটা খুব ভাল গেছে বীথির। আব্বা স্বপ্না আপুকে নিয়ে কিছু বলেনি। রাতে খাওয়ার সময় আব্বা আর ভাইয়ার নিয়মিত লড়াইটা হয়নি। এবং ভাইয়া এখনও এত রাত জেগে জেগে তার খামারের জন্যে হিসাব নিকাশ আর প্লান প্রোগ্রাম করছে। ভাইয়াকে কাজ করতে দেখলে যে তার এতটা ভাল লাগে আগে কখনও সেটা বোঝার সুযোগ হয়নি। হঠাৎ করেই তার মনে হল আরিফের একটু যত্ন আত্তি দরকার। তাই এক কাপ চা বানিয়ে ভাইয়ার টেবিলে এনে রাখল বীথি।
“থ্যাংকিউ।” উচ্ছাসিত কন্ঠে বলল আরিফ। “এইটার আমার এখন ভীষণ দরকার।”
“ইউ আর ওয়েলকাম।” কেতা দুরস্তর ভঙ্গিতে মাথা ঝুঁকিয়ে বলল বীথি।
আরিফ হাসল বোনের ছেলে মানুষীতে। তারপর চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আবার কাজে ডুবে গেল। তার কাজ করা দেখতে দেখতে বীথির হঠাৎ মনে হল। ব্যবসাটা শুরু হলে ভাইয়া বিয়ে করবে স্বপ্না আপুকে। খুব ভাল মেয়ে স্বপ্না আপুটা। আচ্ছা, তার জন্যে কি কোন ভাল ছেলে নেই? যে তাকে স্বপ্না আপু যে ভাবে ভাইয়াকে ভালবাসে সেভাবে ভালবাসবে? বুকের ভিতরে একটা বাস্প দানা বাঁধতে লাগল বীথির।
“ভাইয়া?” ইতস্তত করে বলল বীথি।
“উুঁ..” বোনের দিকে না তাকিয়ে সাড়া দিল আরিফ। এই হিসাবটা তাকে শেষ করে ফেলতে হবে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। বীথি একটু ক্ষণ চুপ থেকে খুব পরিষ্কার কন্ঠে বলল,
“তোর একজন বন্ধু বোধ হয় আমাকে পছন্দ করে।”
এবার বীথির দিকে তাকালো আরিফ। বুঝতে চেষ্টা করল বীথির কথাটা। হঠৎ মনে পড়ল কদিন আগে বাসায় তারা চার বন্ধু মিলে যখন আড্ডা মারছিল তখন নয়ন বারবার বীথিকে খেয়াল করছিল।
“কে? নয়ন?” জানতে চাইল আরিফ। আস্তে করে মাথা ঝাঁকালো বীথি। নয়ন ভাল ছেলে। ভাবল আরিফ। আর বীথি যখন বিষয়টা তাকে জানাচ্ছে, তার মানে বীথিও তাকে অপছন্দ করে না। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল সে। ছোট বোনের পিঠে হাত রেখে ছোট্ট বলল,
“নয়ন আমার মতই বেকার।”
আর কিচ্ছু বলল না আরিফ। কাজে মন দিল। তবে বীথির যেন এক মুহূর্তেই বোঝা হয়ে গেল বেকারত্ব কি জিনিস।

(পর্ব ১২) (পর্ব ১৩)
(শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২১
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোকাকোলা সহ সকল কোমল পানীয় বর্জন করুন। তবে সেটা নিজের স্বাস্থ্যের জন্য, অন্য ব্যবসায়ীর মার্কেটিং কৌশলের শিকার হয়ে না।

লিখেছেন নতুন, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

মার্কেটিং এর ম্যাডাম একবার বলেছিলেন, "No publicity is bad publicity." প্রচারের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের মনে ব্র্যান্ডের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া। কিছুদিন পরে মানুষ ভালো কি মন্দ সেটা মনে রাখে না,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা আমাদের ঐতিহ্যের পোশাককে নোংরা পোশাক হিসেবে পরিচিত করতে চায়। ওরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে গ্রাস করতে চায়।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০


"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি'মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।"

এক মৌলভী পোস্ট দিয়েছেন
"শাড়িকে একটি নোংরা পোশাক বানিয়ে দিয়েন না।
শরীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমূদ্র-সৈকতে - ১৬

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯



ছবি তোলার স্থান : মেরিনড্রাইভ, কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : পহেলা অক্টোবর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।

বেড়াবার সবচেয়ে আকর্ষণীয় যায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমূদ্র সৈকত। কখনো কখনো আমারও সুযোগ হয় বেড়াতে যাবার।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেইন্ট মার্টিন ও কোক ইস্যু

লিখেছেন নিবারণ, ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪

বিগত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে চর্চিত বিষয়, কোকের বয়কট ও গত দুই দিন ধরে সেইন্ট মার্টিন মায়ানমার দখল করে নেয়ার খবর।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্রিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, মায়ানমার সেইন্ট মার্টিন দখল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গান গাইলাম (সাময়িক)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:০৮

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমি আদর করে 'আই' ডাকি। আইকে দিয়ে অনেক কাজই করাতে হয়। এবারে, আমাদের ৫ ভাইদের নিয়ে একটি গান বুনেছি। আমরা ৫ ভাই অনেক দিন একসাথে হই না। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×