করোনা ভাইরাসে মানবজাতীর একটি অংশ কোন না কোন ভাবে আক্রান্ত হয়েই চলছে। আমেরিকার মত দেশে মানুষ সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার পরও লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছে অথচ তাদের প্রায় সকলেই মাস্ক ব্যবহার সহ সর্বোচ্চ সতর্কতার পথ অবলম্বন করছে। সুতরাং সচেতনতার পথ অবলম্বন করলেই মানুষ বেচে যাবে কিংবা কাউকেই আক্রমন করবে না এই ধারণা করাও অযৌক্তিক। কখন কিভাবে কার উপর কোন পরিস্থিতিতে এই ভাইরাস প্রভাব বিস্তার করবে এটা বুঝার কোন যন্ত্র মানুষের কাছে নেই। এই জায়গাটিতে মানুষ বড়ই অসহায়, সে হউক কোন চিকিৎসা বিজ্ঞানী কিংবা কোন মহাসাধক। যদিও মানুষ অসহায় তথাপী সচেতনতার যতগুলো পথ রয়েছে সেগুলোকে অবশ্য অপরিহার্যই মনে করতে হবে।
মহাসাধক ও জোতিষ্যিগণ অনেক কিছুই বলে দিতে পারে তাই না ? আসলে এই দুই শ্রেনীর ব্যবসা আগামীতে খুবই মন্দা যাবে কারণ তারা অনেক কিছু বলে দেওয়ার ব্যপারে দাবীদার, তবে অনেক কিছু ব্যতিত। যারা অনেক কিছু বলে দেওয়ার ব্যপারে দাবি করে থাকে করোনাকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যর্থতা সাতটি। ১। একটি মহামারী আসবে তারা সেটা বলতে পারেনি। ২। মহামারী আসতে পারে সম্ভাব্যটাও বলতে পারেনি। ৩। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কে বাচবে আর কে বাচবে না বলতে পারছে না। ৪। কাকে আক্রমন করবে আর কাকে আক্রমন করবে না এটাও বলতে পারছে না। ৫। কতদিন অবস্থান করবে সেটাও বলতে পারছে না। ৬। পূনরায় তার আগমন হবে কিনা সেটা বলতে পারছে না। ৭। যদি তার আগমন পূনরায় হয় তাহলে সেটা কত সালে সেটাও তারা জানে না। চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ কিংবা যারা ভাইরাস নিয়ে গবেষনা করেন তারাও এই সমস্ত বিষয় জানে না। সুতরাং গায়েবের খবর যে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ব্যতিত আর কেহই জানে না ইসলামের এই ধারণার প্রমান হয়ে গেল। আমি এটাও বলছি না, কোন কিছু বলে দেওয়া সত্যবাদী হওয়ার কিংবা উচ্চতর প্রজ্ঞার মাপকাঠি।
এখন মূল কথাই ফিরে যাচ্ছি। মুসলিম মাত্রই ইহা অবগত যে, ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় জামাতে সালাত আদায়ের গুরুত্ব অনেক তাই এই গুরুত্বকে সামনে রেখে মুসলিমগণ মসজিদে গিয়ে জামাতে সালাত আদায় করবে এটাই স্বাভাবিক, যদিও কোন কোন সময় অবস্থার প্রেক্ষাপটে এই কর্মনীতিকে আবশ্যক পর্যায়ে রাখা হয়নি। এই অবস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ঝড় বৃষ্টি, ভয় শংকা, মহামারী ইত্যাদি। মহানবী হযরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালাম মুসলিম জাতীর জন্য মসজিদে গিয়ে জামাত আদায়ের বিষয়টি শিথিল করতে গিয়ে “ভয় শংকা” শব্দটি সুষ্পষ্টভাবেই বর্ণনা করেছেন সুতরাং “মহামারী” বিষয়টি ভয় শংকার অন্তর্ভুক্ত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এই ভয় শংকা শব্দকে দলিলরূপে গ্রহণ করে যারা মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করবে না তাদের কোন গোনাহ হবে না যদিও সালাত জামাতে আদায় না করলে গোনাহ হবে কি হবে না, এই বিষয়ে পূর্বের ইসলামী স্কলারদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। মসজিদে গিয়ে জামাতে সালাত আদায় করাকে কেউ বলেছেন ওয়াজিব আবার কেউ বলেছেন সুন্নাত। এই সমস্ত আলোচনা আসলে এখানে উদ্দেশ্য নয়। এখন মসজিদে যারা যাচ্ছেন যদিও এখন ব্যবধান রেখেই সালাত আদায় করা হয় তবে এই ব্যবধান ছাড়াও আরও কিছু কর্মপ্রদ্ধতি গ্রহন করা উচিত, যেগুলোর কথা না উলামাগণ বলছে, আর না কোন বিচক্ষন মুসল্লি বলছে। এই সমস্ত বিষয়ে দায়িত্বশীলদের নিরবতা জন সাধারনের জন্য মারাত্মক হুমকি ছাড়া আর কিছুই নয়।
কর্মপ্রদ্ধতি-১। আপাতত সিজদায় গিয়ে মাটিতে নাক লাগানো অনুচিত। আর এটা মুস্তাহাব। কোন মুস্তাহাব ছুটে গেলে সালাতের কোন ক্ষতি হয় না। যেখানে নাক লাগানো হয় সেখানে অন্য মুসল্লিদের নিঃশ^াসের প্রভাব রয়েছে
কর্মপ্রদ্ধতি-২। সিজদার সময় যেখানে রাত রাখা হচ্ছে সেখানেও কারো না কারো নিঃশ^াসের প্রভাব রয়েছে তাই জরুরি হল সালাত শেষ করে হাত ধৌত করে মসজিদ থেকে বের হওয়া।
কর্মপ্রদ্ধতি-৩। জায়নামায নিয়ে গেলে দুইটি সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে তবে অবস্থার প্রেক্ষাপটে এটা সকলের জন্য সহজ নাও হতে পারে।
কর্মপ্রদ্ধতি-৪। যেহেতু মসজিদে অনেক লোক হয় তাদের সকলের শ^াস নিঃশ^াস মসজিদে থাকে তাই ফরজ সালাত শেষ করে সুন্নত এসে বাড়িতে আদায় করা ভাল। মহানবী সাঃ মাঝে মধ্যে সুন্নত এসে বাসায় আদায় করতেন আর বর্তমান মহামারী প্রেক্ষাপটে তার এই মহান কর্মনীতি আমাদের সকলের জন্যই প্রাসঙ্গিক !
কর্মপ্রদ্ধতি-৫। মসজিদে আপাতত মুসাফা বর্জনীয়। কিছু অজ্ঞ সালাত আদায়কারী এই সময়ও এই কাজটি করে থাকে বিষয়টি হাস্যকর।
কর্মপ্রদ্ধতি-৬। দোয়া করে হাত আপাতত মুখে না মোছাই ভাল কারণ যে হাত দিয়ে সমগ্র মুখ মোছা হচ্ছে সেই হাত এমন জায়গার অনেক বার লেগেছে যেখানে মুসল্লিদের শ^াস নিঃশ^াসের প্রভাব ছিল। এই সমস্ত বিষয় হল মুস্তাহাব। সুতরাং নিজের ক্ষতির কথা চিন্তা করে কেউ যদি মুস্তাহাবকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে সেটাও হাস্যকর। আর দোয়ার পর হাত দিয়ে মুখ মাসেহ করার বিষয়েও স্কলারদের মধ্যে মতভেদ আছে আর মুস্তাহাব কোন বিষয়ে গবেষণা করার সময় আর নেই।
কর্মপ্রদ্ধতি-৭। মসজিদে কমপক্ষে এক বল্লম পরিমান দুরত্ব বজায় রাখা ভাল। বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ মুসনাদে বর্ণিত হয়েছে সাহাবাগণ মহামারীর সময় এক বল্লম পরিমান দূরত্ব বজায় রাখতেন। বর্তমান সময়ে ডাক্টারগণ দূরত্ব নির্ধারণ করেছে একটি ঝাড়– পরিমান। এর চেয়ে মুসনাদে বর্ণিত বল্লমের দূরত্ব কিছুটা বেশী। আর বেশীটাই যে সকলের জন্য অধিক কল্যান এ বিষয়ে কেউ দ্বিমত পোষন করবে না।
কর্মপ্রদ্ধতি-৮। মসজিদে গিয়ে যথাসম্ভব হাচি কাশি দেওয়া উচিত নয়। এই সমস্যা থাকলে ভিতরে না প্রবেশ করে বারান্দায় এক সাইটে সালাত আদায় করা উচিত।
কর্মপ্রদ্ধতি-৯। এ্যাজমার এমন রুগি যদি হয় যাদের বেশী কাশি হয় তাদের মসজিদে আপাতত না যাওয়াই উচিত।
কর্মপ্রদ্ধতি-১০। মসজিদে আপাতত ফ্যানগুলো না চালানোই উচিত ছিল। এতে করে মুসল্লিদের শ^াস নিঃশ^াস ফ্যানের বাতাশে অনেক বেশী ছড়িয়ে থাকে এই বিষয়ে মসজিদ কমিটির সচেতন হওয়া উচিত ছিল। ফ্যানের চেয়ে এসি চালালে অনেকটা ভাল হত।
এই আর্টিক্যালে উল্লিখিত বিষয়বস্তুর উপর কোন ভুল পরিদৃষ্ট হলে বা কোন বিষয়ে কেহ দ্বিমত পোষণ করতে চাইলে আমার আপত্তি নেই। কমেন্টের মাধ্যমে আমার ভুল ধরিয়ে দিলে সংশোধন করে দেওয়া হবে। আর্টিক্যালটি উৎস্বর্গ করছি আমার পিতা মাতা সহ দুনিয়ার সকল মৃত মুসলিম নর-নারীর আত্মার মাগফেরাতের জন্য। এই ব্লগের সকল ব্লগারের কল্যান কামনায় আজকের আর্টিক্যাল এখানেই শেষ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০২০ রাত ৩:২৮