somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - সমাধান - ৭

০১ লা জুন, ২০০৯ রাত ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব - ১ | পর্ব - ২ | পর্ব - ৩ | পর্ব - ৪ | পর্ব - ৫ | পর্ব - ৬

অন্ধকারে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি আমি। এখানে দাঁড়িয়ে আমি এমন কিছু ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম যা দেখতে হবে বলে আশা করিনি। নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে আজকের এই ঘটনাগুলো। দু'চোখ ফেটে কান্না আসছে আমার। কিন্তু আমি চেষ্টা করছি নির্বিকার থাকতে। কেন জানি না। তবে এটুকু জানি আজকের এই ঘটনা আমার সারাজীবন মনে দাগ কেঁটে থাকবে।

সকালে অফিসে পৌছে নিজের চেম্বারে প্রবেশ করা মাত্র আমার সহকারী স্বাতী হোসেইন আসলেন। ভদ্রমহিলা তার বিখ্যাত হাসিতে উদ্ভাসিত মুখে প্রশ্ন করলেন -

"কেমন আছেন স্যার?"

"জ্বী ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন? আর আমি এখনো বিয়ে করিনি সুতরাং ভাবীর জিজ্ঞেস করার দরকার নেই"

ভদ্রমহিলা জোরে হেসে উঠে বললেন "জ্বী স্যার আমিও ভাল আছি। স্যার আপনি বলেছিলেন না আমার শ্বশুড়ের মৃত্যুতে আমি আনন্দিত কেন? আজকে আপনাকে বলব"

"আচ্ছা বলেন" কথাটি বলা মাত্রই আমার মোবাইল বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শুনলাম -

"এই আমি তোমার ভাবী বলছি। মামার অবস্থা খুব খারাপ। সবাইকে দেখতে চাচ্ছেন। তুমি তাড়াতাড়ি চলে আস"

"ঠিক আসে আসছি আমি" বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। স্বাতী হোসেইনকে বললাম "আজকে আপনাকে একটু বেশি কষ্ট করতে হবে। এদিকে খেয়াল রাখবেন। আমার মামা খুবই অসুস্থ আপনি ম্যানেজার স্যারকে বলবেন আমি চলে গেছি। আর একটা দরখাস্ত দিয়ে দিবেন আমার নামে" বলেই আর অপেক্ষা করলাম না। অফিস থেকে বের হয়েই সোজা মামার বাসায় উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

মামার বাসায় পৌছে দেখি হুলুস্থুল কান্ড। সবাই কান্নাকাটি করছে। মামার বিছানার চারপাশে সবাই ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই এমনভাবে কান্নাকাটি করছে যেন কান্না করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে কে কার চেয়ে বেশী জোরে চিৎকার করে কান্না করতে পারে। মামাকে দেখলাম শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমার রাগ এমনিতে খুবই কম। মাঝে মাঝে রাগ লাগলেও আমি চেপে রাখি। কিন্তু আজকে আমার এমন রাগ লাগলো বলার মত না। মানুষটার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আর সবাই চিৎকার চেঁচামেচি করছে। ঘরটা গরম হয়ে আছে। মামা দরদর করে ঘামছে। রাগ আর চেপে রাখতে পারলাম না। সবাইকে বললাম -

"আপনারা এমন মরা কান্না জুড়ে দিলেন কেন? মানুষটা মরার আগেইতো মেরে ফেলছেন। সবাই বের হন ঘর থেকে। অন্য রুমে যান"

আমার কথায় সবাই খুবই অবাক হয়েছে কিন্তু কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। এক এক করে অধিকাংশ লোকজনই রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি মামার মাথার কাছে বসলাম। কি বলব বুঝতে পারছিনা। মামার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। আম্মাকে বললাম বাতাস করার জন্য। বলে আমি বের হয়ে আসলাম ঘর থেকে। সবার কাছ থেকে শুনলাম ডাক্তার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। বুকের ভেতর কোথায় যেন মোচড় দিয়ে উঠল। আমার মামার দুই মেয়ে এক ছেলে। মামার সাথে তার সন্তানদের সম্পর্ক হল টাকা পয়সার। মামার সম্পত্তির দিকে সবার লোভ। সন্তানদের সবকিছু দিয়ে মামা এখন নিস্ব। অনেক ধার দেনাও করেছেন। কিন্তু সন্তানরা তার ধার দেনা পরিশোধে অনিচ্ছুক। হায়রে দুনিয়া বাবা-মা সন্তানদের কষ্ট করে মানুষ করেন কি শুধু মরার আগে লাঞ্ছিত হওয়ার জন্য?

রাত আটটায় মামা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। কান্না কাটি আর আহাজারীতে সারা বাড়ি ভরে উঠলো। আমার কান্না কাটি সহ্য হয় না। তাই বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষন পর কান্নাকাটির রোল একটু কমতেই বাড়ির ভেতর ঢুকলাম। সবাই লাশ দাফন করার জন্য ব্যস্ত। দেখলাম আমার বড় খালা এক কোণায় বসে ভাবীর সাথে কথা বলছে। কাছে গিয়েই বুঝলাম খালা ওনার ছোট ছেলের গুণ কীর্তণ করছেন। ভাবী অস্বস্তি ভরা মুখ নিয়ে বসে আছে। বুঝতে পারলাম খালা ওনার স্বভাবসিদ্ধ কাজ করে যাচ্ছেন। কে মারা গেল না গেল তাতে ওনার কিছুই আসে যায় না। আমি ভাবী কে ওখান থেকে ডেকে নিয়ে আসলাম। বললাম -

"মামার মাথার কাছে বসে কাউকে কোরআন শরীফ পড়তে বলেন" বলে আমি আবার বাইরে চলে আসলাম। ঘরের ভেতর দম বন্ধ হয়ে আসছে। ঠিক হল রাত যতই হোক লাশ আজকেই দাফন করা হবে। সব প্রস্তুতি শেষ। এখন শেষবারের মত মামার মৃত মুখটি সবাইকে দেখতে দিয়েই কবরস্থানের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। ঠিক তখনই দেখি অনেকগুলো মানুষ একসাথে এগিয়ে আসছে এদিকে। সবার সামনে আমার মামার ছোট মেয়ের জামাই। আমি মনে করলাম তারা বোধহয় জানাজায় শরিক হতে এসেছে। কিছুক্ষন পরে তাদের আসার যে কারণ জানতে পারলাম তাতে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। মামার কিছু ধার দেনা আছে। যারা মামার কাছে টাকা পাবে তাদেরকে ডেকে নিয়ে এসেছে মামার ছোট মেয়ের গুণধর জামাই এবং সেই দেনাদারদের দাবী তাদের পাওনা টাকা মিটিয়ে দিতে হবে নয়তো লাশ দাফন করতে দিবে না। শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম !!!! হায়রে মানুষ।

এদিকে আমার মামার গুণধর ছেলে মেয়েরা কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করছে। আর জটিলতা বেড়েই যাচ্ছে। তাদের কথা শুনে কষ্টে আমার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কোন সূরাহা হচ্ছে না এদিকে রাত দু'টা বাজে। আমি ভাইয়াকে ডেকে বললাম -

"তুমি বল টাকা আমি দিব। কালকে এসে যেন আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। এখন লাশ দাফন করতে দিতে বল"

"তুই কেন দিবি, আমি দিয়ে দিব তোকে চিন্তা করতে হবে না"

হিসেব করে দেখা গেল এক লক্ষ আটত্রিশ হাজার টাকা পাবে পাওনাদাররা। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম এই সামান্য টাকা কি মামার সন্তানরা দিতে পারছে না !!!! হায়রে মানুষ !!! অবশেষে ওই পাওনাদার লোকগুলোকে বুঝিয়ে পরদিন সকালে আসতে বলা হল। এবার লাশ নিয়ে যাওয়ার পালা। এখনেও বিপত্তি। খাটিয়া ধরার জন্য আমি, ভাইয়া আর আমার মামাতো ভাই ছাড়া আর কেউ নেই। আরো একজন লাগবে। আজ শুধু অবাকই হচ্ছি। মামার গুণধর কণ্যাদের গুণধর স্বমীরা কেউই এলো না খাটিয়া ধরতে। অবশেষে আমার এক বন্ধু ছিল সেখানে তাকে ডেকে বললাম খাটিয়া ধরতে। বুক ফেটে কান্না আসছে। কিন্তু কাঁদতে পারছি না। কি যে কষ্ট।

মামাকে দাফন করে আমি আর ভাইয়া বাসায় উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। তখন বাজে ৩.৩০ টা। রাস্তায় কোন যানবাহন নেই। অগত্য হেঁটে রওনা দিলাম। রাস্তায় টহল পুলিশ থামালো আমাদের।

"আপনারা এত রাতে কি করছেন এখানে?"

"আমাদের মামা মারা গেছেন ওনাকে দাফন করে আসছি" ভাইয়া বলল

"ওনার কি হয়েছিল?"

"বয়েস হয়েছে তো আর হার্ট এ সমস্যা ছিল" ভাইয়া বলল "খুব টায়ার্ড আমাদেরকে যেতে দিন"

একজন পুলিশ বললেন "আমাদেরকে চা নাস্তা খাওয়ার টাকা দেন"

আমি কোন তর্ক না করেই পকেট থেকে একশ টাকার একটা নোট বের করে দিয়ে দিলাম। জানি তর্ক করে কোন লাভ হবে না। আমার কখনও কারো প্রতি কোন ক্ষোভ জন্মায়নি। কিন্তু আজকে সারা পৃথিবীটার উপর ক্ষোভ হচ্ছে। ইচ্ছা করছে সব ভেঙে ফেলতে। আর পারলাম না রাস্তাতেই কেঁদে ফেললাম। ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরল।

"আর বোকা কাঁদছিস কেন?"

"ভাইয়া বলতে পারো আমরা কবে মানুষ হব?"

ভাইয়া চুপ হয়ে গেল। আসলেইতো কেউ জানে না আমরা কবে মানুষ হব।

চলবে.................অন্ধকারে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি আমি। এখানে দাঁড়িয়ে আমি এমন কিছু ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম যা দেখতে হবে বলে আশা করিনি। নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে আজকের এই ঘটনাগুলো। দু'চোখ ফেটে কান্না আসছে আমার। কিন্তু আমি চেষ্টা করছি নির্বিকার থাকতে। কেন জানি না। তবে এটুকু জানি আজকের এই ঘটনা আমার সারাজীবন মনে দাগ কেঁটে থাকবে।

সকালে অফিসে পৌছে নিজের চেম্বারে প্রবেশ করা মাত্র আমার সহকারী স্বাতী হোসেইন আসলেন। ভদ্রমহিলা তার বিখ্যাত হাসিতে উদ্ভাসিত মুখে প্রশ্ন করলেন -

"কেমন আছেন স্যার?"

"জ্বী ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন? আর আমি এখনো বিয়ে করিনি সুতরাং ভাবীর জিজ্ঞেস করার দরকার নেই"

ভদ্রমহিলা জোরে হেসে উঠে বললেন "জ্বী স্যার আমিও ভাল আছি। স্যার আপনি বলেছিলেন না আমার শ্বশুড়ের মৃত্যুতে আমি আনন্দিত কেন? আজকে আপনাকে বলব"

"আচ্ছা বলেন" কথাটি বলা মাত্রই আমার মোবাইল বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শুনলাম -

"এই আমি তোমার ভাবী বলছি। মামার অবস্থা খুব খারাপ। সবাইকে দেখতে চাচ্ছেন। তুমি তাড়াতাড়ি চলে আস"

"ঠিক আসে আসছি আমি" বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। স্বাতী হোসেইনকে বললাম "আজকে আপনাকে একটু বেশি কষ্ট করতে হবে। এদিকে খেয়াল রাখবেন। আমার মামা খুবই অসুস্থ আপনি ম্যানেজার স্যারকে বলবেন আমি চলে গেছি। আর একটা দরখাস্ত দিয়ে দিবেন আমার নামে" বলেই আর অপেক্ষা করলাম না। অফিস থেকে বের হয়েই সোজা মামার বাসায় উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

মামার বাসায় পৌছে দেখি হুলুস্থুল কান্ড। সবাই কান্নাকাটি করছে। মামার বিছানার চারপাশে সবাই ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই এমনভাবে কান্নাকাটি করছে যেন কান্না করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে কে কার চেয়ে বেশী জোরে চিৎকার করে কান্না করতে পারে। মামাকে দেখলাম শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমার রাগ এমনিতে খুবই কম। মাঝে মাঝে রাগ লাগলেও আমি চেপে রাখি। কিন্তু আজকে আমার এমন রাগ লাগলো বলার মত না। মানুষটার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আর সবাই চিৎকার চেঁচামেচি করছে। ঘরটা গরম হয়ে আছে। মামা দরদর করে ঘামছে। রাগ আর চেপে রাখতে পারলাম না। সবাইকে বললাম -

"আপনারা এমন মরা কান্না জুড়ে দিলেন কেন? মানুষটা মরার আগেইতো মেরে ফেলছেন। সবাই বের হন ঘর থেকে। অন্য রুমে যান"

আমার কথায় সবাই খুবই অবাক হয়েছে কিন্তু কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। এক এক করে অধিকাংশ লোকজনই রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি মামার মাথার কাছে বসলাম। কি বলব বুঝতে পারছিনা। মামার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। আম্মাকে বললাম বাতাস করার জন্য। বলে আমি বের হয়ে আসলাম ঘর থেকে। সবার কাছ থেকে শুনলাম ডাক্তার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। বুকের ভেতর কোথায় যেন মোচড় দিয়ে উঠল। আমার মামার দুই মেয়ে এক ছেলে। মামার সাথে তার সন্তানদের সম্পর্ক হল টাকা পয়সার। মামার সম্পত্তির দিকে সবার লোভ। সন্তানদের সবকিছু দিয়ে মামা এখন নিস্ব। অনেক ধার দেনাও করেছেন। কিন্তু সন্তানরা তার ধার দেনা পরিশোধে অনিচ্ছুক। হায়রে দুনিয়া বাবা-মা সন্তানদের কষ্ট করে মানুষ করেন কি শুধু মরার আগে লাঞ্ছিত হওয়ার জন্য?

রাত আটটায় মামা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। কান্না কাটি আর আহাজারীতে সারা বাড়ি ভরে উঠলো। আমার কান্না কাটি সহ্য হয় না। তাই বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষন পর কান্নাকাটির রোল একটু কমতেই বাড়ির ভেতর ঢুকলাম। সবাই লাশ দাফন করার জন্য ব্যস্ত। দেখলাম আমার বড় খালা এক কোণায় বসে ভাবীর সাথে কথা বলছে। কাছে গিয়েই বুঝলাম খালা ওনার ছোট ছেলের গুণ কীর্তণ করছেন। ভাবী অস্বস্তি ভরা মুখ নিয়ে বসে আছে। বুঝতে পারলাম খালা ওনার স্বভাবসিদ্ধ কাজ করে যাচ্ছেন। কে মারা গেল না গেল তাতে ওনার কিছুই আসে যায় না। আমি ভাবী কে ওখান থেকে ডেকে নিয়ে আসলাম। বললাম -

"মামার মাথার কাছে বসে কাউকে কোরআন শরীফ পড়তে বলেন" বলে আমি আবার বাইরে চলে আসলাম। ঘরের ভেতর দম বন্ধ হয়ে আসছে। ঠিক হল রাত যতই হোক লাশ আজকেই দাফন করা হবে। সব প্রস্তুতি শেষ। এখন শেষবারের মত মামার মৃত মুখটি সবাইকে দেখতে দিয়েই কবরস্থানের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। ঠিক তখনই দেখি অনেকগুলো মানুষ একসাথে এগিয়ে আসছে এদিকে। সবার সামনে আমার মামার ছোট মেয়ের জামাই। আমি মনে করলাম তারা বোধহয় জানাজায় শরিক হতে এসেছে। কিছুক্ষন পরে তাদের আসার যে কারণ জানতে পারলাম তাতে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। মামার কিছু ধার দেনা আছে। যারা মামার কাছে টাকা পাবে তাদেরকে ডেকে নিয়ে এসেছে মামার ছোট মেয়ের গুণধর জামাই এবং সেই দেনাদারদের দাবী তাদের পাওনা টাকা মিটিয়ে দিতে হবে নয়তো লাশ দাফন করতে দিবে না। শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম !!!! হায়রে মানুষ।

এদিকে আমার মামার গুণধর ছেলে মেয়েরা কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করছে। আর জটিলতা বেড়েই যাচ্ছে। তাদের কথা শুনে কষ্টে আমার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কোন সূরাহা হচ্ছে না এদিকে রাত দু'টা বাজে। আমি ভাইয়াকে ডেকে বললাম -

"তুমি বল টাকা আমি দিব। কালকে এসে যেন আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। এখন লাশ দাফন করতে দিতে বল"

"তুই কেন দিবি, আমি দিয়ে দিব তোকে চিন্তা করতে হবে না"

হিসেব করে দেখা গেল এক লক্ষ আটত্রিশ হাজার টাকা পাবে পাওনাদাররা। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম এই সামান্য টাকা কি মামার সন্তানরা দিতে পারছে না !!!! হায়রে মানুষ !!! অবশেষে ওই পাওনাদার লোকগুলোকে বুঝিয়ে পরদিন সকালে আসতে বলা হল। এবার লাশ নিয়ে যাওয়ার পালা। এখনেও বিপত্তি। খাটিয়া ধরার জন্য আমি, ভাইয়া আর আমার মামাতো ভাই ছাড়া আর কেউ নেই। আরো একজন লাগবে। আজ শুধু অবাকই হচ্ছি। মামার গুণধর কণ্যাদের গুণধর স্বমীরা কেউই এলো না খাটিয়া ধরতে। অবশেষে আমার এক বন্ধু ছিল সেখানে তাকে ডেকে বললাম খাটিয়া ধরতে। বুক ফেটে কান্না আসছে। কিন্তু কাঁদতে পারছি না। কি যে কষ্ট।

মামাকে দাফন করে আমি আর ভাইয়া বাসায় উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। তখন বাজে ৩.৩০ টা। রাস্তায় কোন যানবাহন নেই। অগত্য হেঁটে রওনা দিলাম। রাস্তায় টহল পুলিশ থামালো আমাদের।

"আপনারা এত রাতে কি করছেন এখানে?"

"আমাদের মামা মারা গেছেন ওনাকে দাফন করে আসছি" ভাইয়া বলল

"ওনার কি হয়েছিল?"

"বয়েস হয়েছে তো আর হার্ট এ সমস্যা ছিল" ভাইয়া বলল "খুব টায়ার্ড আমাদেরকে যেতে দিন"

একজন পুলিশ বললেন "আমাদেরকে চা নাস্তা খাওয়ার টাকা দেন"

আমি কোন তর্ক না করেই পকেট থেকে একশ টাকার একটা নোট বের করে দিয়ে দিলাম। জানি তর্ক করে কোন লাভ হবে না। আমার কখনও কারো প্রতি কোন ক্ষোভ জন্মায়নি। কিন্তু আজকে সারা পৃথিবীটার উপর ক্ষোভ হচ্ছে। ইচ্ছা করছে সব ভেঙে ফেলতে। আর পারলাম না রাস্তাতেই কেঁদে ফেললাম। ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরল।

"আর বোকা কাঁদছিস কেন?"

"ভাইয়া বলতে পারো আমরা কবে মানুষ হব?"

ভাইয়া চুপ হয়ে গেল। আসলেইতো কেউ জানে না আমরা কবে মানুষ হব।

চলবে.................
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×