somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আঙুল কাটা জগলু – হুমায়ূন আহমেদ (কাহিনী সংক্ষেপ)

২৮ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বইয়ের নাম : আঙুল কাটা জগলু
লেখক : হুমায়ূন আহমেদ
লেখার ধরন : হিমু আলি বিষয়ক উপন্যাস



সতর্কীকরণ : কাহিনী সংক্ষেপটি স্পয়লার দোষে দুষ্ট

কাহিনী সংক্ষেপ :
মতি নামের একজন লোক হিমুকে বললো আঙুল কাটা জগলু তাকে ডেকেছে। জগলু শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় আছে। জগলুর সামনে গিয়ে হিমু দেখলো জগলুর সবগুলি আঙুলই আছে, আসলে অন্যের আঙুল কাটে বলে তার নাম হয়ে গেছে আঙুল কাটা জগলু। জগলু গত কয়েক দিনে তার আশেপাশে হিমুকে ৫ বার দেখেছে। তাই তার ধারনা হয়েছে হিমু হয় পুলিশের লোক না হয় বোমা মিজানের লোক। হিমুর কাছ থেকে সত্যি কথা আদায়ের জন্য জল চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হল। একটা চৌবাচ্চার মধ্যে পানি ভরে এক মিনিট সেই পানিতে মাথা চুবিয়ে রাখা হবে। যতক্ষণ সত্যিকথা না বলবে ততক্ষণ এই জল চিকিৎসা চলতে থাকবে।

একটা ঘরে হিমুকে আটকে রেখে চৌবাচ্চায় পানি ভরা হচ্ছে। ঘরে হিমুর সাথে আর একজন লোককেও আটকে রেখেছে। তিনি মনসুর গ্রুপের মালিক মনসুর খান। খান সাহেবের কাছে ২০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল। তিনে সেই টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন বলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছিল, কিন্তু দেখা গেলো খান সাহেবের মেয়ে মিতু সেই টাকাটা দেয়নি। তাই খান সাহেবকে ছাড়া হলো না। তাই জগলু ভাইয়ের হিসাব হচ্ছে এবার টাকা আদায় করে খান সাহেবকে শেষ করে দিবে। জগলু ভাইয়ের দলের লোকেরা কিছুতেই খান সাহেবের মেয়েকে ফোনে ধরতে পারছিলোনা। হিমু একবারের চেষ্টাতেই তাকে ফোনে ধরতে পারলো। হিমু তাকে পরিস্থিতির কথা জানিয়ে বললো প্রথমবার টাকা না দেয়ার কারণে এবার ২০ এর পরিবর্তে ২৫ লাখ দিতে হবে।

পরিস্থিতির কারণে হিমু জগলু ভাইকে রাজি করাতে পারলো টাকাটা হিমু সংগ্রহ করে আনবে আর একই সাথে খান সাহেবকে ফেরত দিয়ে আসবে। হিমু বৃষ্টির মধ্যে রিকসা করে খান সাহেবকে নিয়ে তার বাড়ির দিকে রওনা হল। সেখানে পৌছে ২৫ লাখ টাকার ব্রিফকেস নিয়ে বেরিয়ে এলো। জগলু ভাইকে ফোন করতেই জগলু ভাই বললেন এখন তিনি একটা ঝামেলায় আছে। টাকাটা যেন হিমু তার কাছেই রেখে দেয়। পরে সময় বুঝে তিনি নিয়ে নিবে। এত টাকা নিয়ে হিমু কোথায় যাবে? শেষ পযর্ন্ত হিমু তার খালাত ভাই বাদলদের বাড়িতে গেল। বাদলের মাথা কিছুটা আউলা হয়ে আছে, তার মাথায় একটা অদ্ভুত গান সব সময় বাজতে থাকে। গানটা হচ্ছে - নে দি লদ বা রয়াওহালা গপা। এই গান নিয়ে বাদল খুব অস্বস্তিতে আছে। হিমু সহজেই এই সমস্যার সমাধান করে ফেললো। “পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে” গানটি উলট করে বাজছে।

এদিকে জগলু ভাই ফোন করে জানান যে তিনি রাতে বা পরদিন এসে টাকাটা নিয়ে যাবেন। কিন্তু পরদিন জগলু ভাই এলেন না। দেখতে দেখতে ৬ দিন কেটে গেলো জগলু ভাইয়ের কোন খবর নেই, তার মোবাইল বন্ধ। জগলু ভাইয়ের ছেলের নাম বাবু, মোবাইলে তার নাম্বার সেভ করা আছে। হিমু বাবুর সাথে আলাপ করে গজলু ভাইয়ের কোন হদিস পেল না, তবে জানতে পারলো কদিন পরে সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখ বাবুর জন্ম দিন। জন্ম দিনে সে তার বাবার কাছে একটা ভূতের বাচ্চা উপহার চাইবে।

হিমু মিতুর সাথে ফোনে আলাপ করে জানতে পারে মিতু আর তার বাবা কদিনের মধ্যেই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। হিমু তাদের সাথে দেখা করে তাদের বাড়িতে টাকা ভর্তী সুটকেস কয়েক দিনের জন্য রেখে আসে। এরপরই জগলু ভাই হিমুর সাথে যোগাযোগ করে সুটকেস চায়। হিমু সুটকেস মিতুদের বাড়িতেই রেখে এসেছে শুনে জগলু ভাই হতভম্ব হয়ে যান। তিনি হিমুকে নিয়ে সুটকেস আনতে রওনা হন, পথে হিমু তার ১০-১১ বছর বয়সী বন্ধু শুভ্রর সাথে দেখা করতে যায়। বৃষ্টির কারণে জগলু ভাইও ভেতরে ঢুকেন। নির্মাণাধীন একটি দালানে শুভ্র একা বসে আছে, তার বাবা এখানকার কেয়ারটেকার। গতকাল তার বাবা বড় সাহেবের সাথে চট্টগ্রাম গেছে বলে তাকে এখন একা থাকতে হচ্ছে। কথায় কথায় জগলু ভাই শুভ্রর সাথে গল্পে মেতে উঠেন, হিমুকে চলে যেতে বলেন, সুটকেস পরে আনবেন।

হিমু একটা কাঁচের বোতলে মারবেল ভরে তার সিপি আটকিয়ে জগলুর ছেলে বাবুকে দিয়ে বললো এর ভেতরে একটা মেয়ে ভূতের বাচ্চা আছে। সেখানে হিমু জানতে পারে জগলুর ডানহাত মতি মিয়া ক্রসফায়ারে মারা গেছে তার ডেডবডি আছে মর্গে। হিমু মতির ডেডবডি রিলিজ করিয়ে নিয়ে চলে যায় মিতুদের বাড়িতে সুটকেস নিতে। এদিকে জগলু ভাই ফোন দিয়ে বলেন মতির ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে তার গ্রামের বাড়ী নেত্রকোনাতে দাফন করতে। হিমু বাদলকে নিয়ে একটি মাইক্রবাসে মতির ডেডবডি নিয়ে রওনা হয়, আরেকটি গাড়িতে মিতু আর তার বাবাও তাদের সাথে চলে। মতির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সেখানকার গ্রামবাসী তাদের গ্রামে মতিকে দাফন করতে দিতে রাজি নয়, তাই হিমু মতির মামার বাড়িতে যায়, সেখানেও একই অবস্থা। তারা বাধ্য হয়ে সেই রাতের বেলাতেই আবার ঢাকার দিকে রওনা হয় মতির ডেডবডি নিয়ে। হঠাৎ করেই ওদের মনে হলো মতি মিয়ার ডেডবডি কাশি দিচ্ছে। ভয় পেয়ে ওরা মতি মিয়ার ডেডবডি রাস্তার ধারে ফেলে দ্রুত ঢাকার দিকে পালিয়ে এলো।

গভির রাতে জগলু ভাই হিমুর মেসে এলো সুটকেস নিতে, ঠিক তখনই তার ছেলে হিমুর কাছে ফোন করলো। এদিকে হিমু জগলু ভাইকে বললো, তিনি ছেলের জন্ম দিনে পুলিসের হাতে ধরা পরবেন এবং তার ফাঁসি হবে। অনেক রাত হয়ে গেছে বলে জগলু ভাই এতো রাতে টাকা নিয়ে যাবেন না বলে হিমুর কাছ থেকে বিদায় নিলো। এবার হিমু বলল তাহলে সুটকেস মিতুদের বাড়িতেই রেখে আসবে।

এদিকে মিতু আর তার বাবা চিরদিনের মত কানাডাতে চলে যাচ্ছা বলে তাদের সাথে দেখা করার জন্য গেলো হিমু। হিমুর উদ্ভট কান্ডকাখানায় মুগ্ধ হয়ে মিতু হিমুকে ভালোবেসে ফেলে। মিতু সরাসরি হিমুকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলো, কিন্তু হিমু তার স্বভাব মত কিছুক্ষণ ফাজলামি করে সেখান থেকে বেরিয়ে এলো।

দুই বছর পরের কথা, বাদলের বিয়ে ঠিক হয়েছে, মেয়ের নাম আফরোজা। মতির ডেডবডি যেখানে ফেলেছে সেই যায়গা আফরোজাকে দেখানোর জন্য হিমু আর বাদল নিয়ে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখে সেখানে অচিন বাবার নামে মাজার হয়ে গেছে। মিতুরা কানাডায় চলে গেছে, সেখান থেকে প্রতি মাসেই সে হিমুকে চিঠি লেখে। জগলু ভাই ছেলের জন্মদিনে দেখা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পরে, আদালত তাকে ফাসীর হুকুম দিয়েছে। আর হিমু আগের মতই আছে।

----- সমাপ্ত -----


=======================================================================
আমার লেখা অন্যান্য কাহিনী সংক্ষেপ সমূহ:
১৯৭১ - হুমায়ূন আহমেদ
অচিনপুর - হুমায়ূন আহমেদ
অয়োময় - হুমায়ূন আহমেদ
অদ্ভুত সব গল্প - হুমায়ূন আহমেদ
অনিল বাগচীর একদিন - হুমায়ূন আহমেদ
অনীশ - হুমায়ূন আহমেদ
অন্যদিন - হুমায়ূন আহমেদ
অন্যভুবন - হুমায়ূন আহমেদ
অন্ধকারের গান - হুমায়ূন আহমেদ
অনন্ত নক্ষত্র বীথি - হুমায়ূন আহমেদ
অপেক্ষা - হুমায়ূন আহমেদ
অপরাহ্ন - হুমায়ূন আহমেদ
অমানুষ - হুমায়ূন আহমেদ
অরণ্য - হুমায়ূন আহমেদ
অঁহক - হুমায়ূন আহমেদ
আকাশ জোড়া মেঘ - হুমায়ূন আহমেদ
আগুনের পরশমণি - হুমায়ূন আহমেদ
আজ আমি কোথাও যাব না - হুমায়ূন আহমেদ
আজ চিত্রার বিয়ে - হুমায়ূন আহমেদ
আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রণ - হুমায়ূন আহমেদ
গৌরীপুর জংশন - হুমায়ূন আহমেদ
হরতন ইশকাপন - হুমায়ূন আহমেদ

ভয়ংকর সুন্দর (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
মিশর রহস্য (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
খালি জাহাজের রহস্য (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
ভূপাল রহস্য (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সবুজ দ্বীপের রাজা (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


তিতাস একটি নদীর নাম - অদ্বৈত মল্লবর্মণ

ফার ফ্রম দ্য ম্যাডিং ক্রাউড - টমাজ হার্ডি
কালো বিড়াল - খসরু চৌধুরী
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:৫৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×