আমাদের গ্রামের ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।
নবম শ্রেণীতে পড়ি; এক সকালে আমি স্কুলে যেতে প্রস্তুত, মা বললেন, ঘরে সরিষার তেল নেই; হাতে সময় নেই, দৌঁড়ে আমু ভাইয়ের দোকানে গেলাম; উনার দোকানটার একভাগ চা'দোকান, অন্যভাগে মুদী দোকান। মানুষজন নেই, পশ্চিমপাড়ার কিশোরী, বেছু দোকানের সামনে দাঁড়ায়ে দোকানের জিনিষপত্র দেখছে; সে আমাকে বললো,
-কাকু পয়সা থাকলে, আমাকে ১টা লজেন্স কিনে দাও।
আমি আমু ভাইকে বললাম,
-আমু ভাই, বেছুকে ৪টি লজেন্স দেন।
-ছোটভাই, এই মেয়ের উপর জ্বিনের আছর আছে; ওর সাথে তোমার কিসের কি?
-আমুভাই, আপনি আজগুবি সব কথা বলেন; ওকে ১ কাপ চা ও ১টি বেলা বিস্কুটও দেন।
-ছোটভাই, চাচীর কানে এসব একদিন যাবে।
-মা এতে অসন্তষ্ট হবেন না।
বেছু বাহিরের টুলে বসে চা'এর জন্য অপেক্ষা করছে, আমি তেল নিয়ে দৌঁড়ায়ে বাড়ী ফিরলাম। বেছু আমাদের গ্রামের পশ্চিম পাড়ার এক গ্রাম্য-ভাইয়ের বড় মেয়ে; বেছুর মা খুবই সুন্দরী, বেছু মায়ের থেকেও সুন্দরী। বেছুর ফুফুর বাড়ী আমাদের থেকে ২ বাড়ী পরে; বেছু সকাল, বিকেল ফুফুর বাড়ী আসা-যাওয় করে, প্রায় আমার সামনে পড়ে, হাসে, কথা বলে। আজকাল আমাকে আমুভাইয়ের দোকানে দেখলে বেছু বাইরের বেন্চে বসে পড়ে।
সেবার শীতেরদিনে, পড়ন্ত বিকেলে আমি খামারের দিকে যাচ্ছি, দুর থেকে দেখলাম, বেছু তার ছোট ফুফাতো বোনকে কোলে নিয়ে খামারে ঢুকছে; আমি খামারে এসে তাকে কোথাও দেখতে পেলাম না; ডাকলাম, খবর নেই। সবাই বলে, ওর সাথে জ্বীন আছে, আমার কাছে মনে হয় যে, সে আদুরে ও একটু হেঁয়ালীপুর্ণ কিশোরী মেয়ে। আমি গরু ঘরে ঢুকে, বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখি, সে গরুঘরের পেছনে; আমি বললাম,
-বেছু, তুই ওখানে কি করছিস?
-তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছ? আমি ইচ্ছা করলে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারি, আমার সাথে জ্বীন আছে।
-তা জ্বীন থাক, ওখানে গুই সাপ থাকে।
সে এক দৌড়ে গরুঘরের সামনে চলে এলো। আমাকে বললো,
-পুকুর থেকে আমাকে কয়েকটা সিংগারা তুলে দাও।
-এই শীতের মাঝে, সাঁঝের বেলায় আমি পুকুরে নামবো না; তোর জ্বীনকে বল।
-ঠিক আছে, আমি নিজে নামবো; তুমি আমার বোনটাকে কোলে রাখ।
-তুই ঠান্ডায় ডুবে মরবি।
-মরলে মরলাম, তুমি তো পানিতে নামতে চাচ্ছ না।
আমি নেমে কয়েকটা সিংগারা নিয়ে এলাম, সে খামারঘর থেকে আমার লুংগি ও টাওয়েল নিয়ে এলো; বাচ্ছাটাকে আমার কোলে দিয়ে সিংগারা খেতে মনোযোগ দিলো। আমি বললাম,
-তোর জ্বীনের ব্যাপারটা কি?
-তুমি জ্বীন মিন বিশ্বাস করো?
-না।
-তুনি তো শুনেছ, গত বছর আমাকে বড় পুকুরের জংগলে জ্বীনে পেয়েছিলো; আসলে জ্বীনমিন কিছু না; সেদিন দুপুরে আমি ফুফুর ছাগলটাকে মাঠে ছেড়ে দিয়ে, বড় পুকুরের জংগলের জাম গাছের নীচে গেলাম; জাম পেকে কালো হয়ে আছে। দেখি, উত্তর বাড়ীর আকবর ভাই গাছের উপরের ডালে বসে জাম খাচ্ছে; আমাকে দেখে ডাল নেড়ে দিলো, জাম পড়ে টাল হয়ে গেছে, আমি খাচ্ছি আর আঁচলে ভরছি। আকবর ভাই নীচে নেমে এসে, আদর করে আমার মাথায় হাত বুলায়ে দিলো; তারপর হঠাৎ করে আমাকে জড়ায়ে ধরলো; ভয়ে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো; আমি জোরে জোরে ফুফুকে ডাকলাম; আকবর ভাই আমাকে ছেড়ে, দৌঁড়ে জংগল দিয়ে উত্তর দিকে পালিয়ে গেলো; আমি জংগল থেকে বের হয়ে জমিতে এলাম, ভয়ে আমার হাত-পা কাঁপছিলো, আমি বসে পড়লাম। পশ্চিম বাড়ীর হাদি কাকু ছাগল নিয়ে বাড়ী ফিরছিলেন, আমার অবস্হা দেখে ভয় পেয়ে গেলেন, আমাকে কোলে করে ফুফুর ঘরে নিয়ে এলেন। আমি পানি টানি খেয়ে সুস্হ হলাম। সবাই জানতে চাচ্ছে কি হয়েছিলো। আমি জানালাম, আমি জাম কুড়াতে জংগলের বড় গাছটার নীচে গেছি, উপরে তাকিয়ে দেখি এক বিশাল কালো মানুষ ডালে বসে জাম খাচ্ছে; আমি কিছু বলার আগেই, বিশাল লম্বা হাত বাড়িয়ে আমাকে উপরে তুলে নেয়; আমি ফুফুর নাম ধরে চীৎকার করছি, চীৎকার করছি, লোকটি আমাকে মাটিতে রেখে দেয়; আমি দৌঁড়ায়ে জমিতে নেমে কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যাই।
-তুই আকবরের কথা বলিস নাই?
-তোমার মাথায় কিছু আছে, বদনামটা কার হতো, আকবর ভাইয়ের, নাকি আমার? এখন তো উহা জ্বীনের ঘাঁড়ে!