somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক গল্পঃ পরভৃতা ১২

০৯ ই মে, ২০২১ সকাল ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পর্ব ১১


রসুল এত সহজে দমবার পাত্র নয়। মালিকের বিপদকে সে বরাবরই নিজের বিপদ মনে করে এসেছে। এক্ষেত্রে ও ব্যাতিক্রম হলো না। সে এদিক ওদিক চরকির মত দ্রুত তালে ঘুরতে লাগলো। যে কোন মূল্যে স্নেহলতাকে তাকে খুঁজে বের করতেই হবে।

কিন্তু এই এলাকাটি তার কাছে যথেষ্ট পরিচিত নয়। বহু আগে সে এদিকে কোন একটা কাজে এসেছিল। তখন কার পরিবেশ আর এখনকার পরিবেশ অনেকটাই আলাদা। তখন দিগন্ত বিস্তৃত ফাঁকা মাঠ ছিল। এলোমেলো বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু বাড়ি ছিল ঠিকই। এখন রীতিমত পাড়া গলি উপগলিতে ভরপুর । কোন পথ যে কোথায় গিয়ে শেষ তার হদিস বের করা মুশকিল। সে এই গলি ঘুপচির মধ্যে এসে বেশ খানিকটা হকচকিয়েই গেল।

এ গলি ও গলি করতে করতে এই চড়া রোদে সে বেশ হাঁপিয়ে উঠলো। কারো কাছে প্রশ্ন করে কিছু জানবে সে সুযোগও নেই আপাতত। প্রচন্ড রোদে লোক সমাগম নেই বললেই চলে।

ফিরবে কি সে? ফিরে গেলে কি কৈফিয়ত দেবে সে সিকদার সাহেবকে?

শেষ বয়সে এসে সে দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার দায় সে নিতে চায় না।

যাহোক সে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলো কিন্তু তার কাছে যে সমস্ত পথই একরকম মনে হচ্ছে। কেমন যেন গোলকধাঁধা।

কিছুটা পরে দুটো গলি ঘুরে একটা চিপা গলির মুখে এসে সে ঠিক করলো এবার ফিরবে।যত দ্রুত সম্ভব সবকিছু জানাতে হবে সিকদার সাহেবকে। হঠাৎ শিশু কন্ঠের কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। সেই সুত্রে সেই চিপা গলির মুখে উঁকি দিয়ে দেখতে পেল খোলা একটি জায়গা।

রসুল খানিকটা আগ্রহী হয়ে এগিয়ে গেল।

এলাকাটি একেবারে নতুন বসতি,কিছু ঝুপড়ি ঘর দেখা যাচ্ছে । কাছেই অবস্থিত বিশাল ময়লাখানা, সেখান থেকে মারাত্মক রকমের বিশ্রী দুর্গন্ধ আসছে।

প্রতিদিন নিয়ম করে সিটি করপোরেশনের গাড়ি এখানে শহরের যাবতীয় ময়লা আবর্জনা ফেলে যায় এটা সেই জায়গা।

সেখানে একদল মানুষ গোল হয়ে কিছু একটা ঘিরে আছে আর ঠিক সেখান থেকেই কান্নার আওয়াজটা ভেসে আসছে।

স্নেহলতা কি?

ছোটখাটো টোকাইদের ভীড় ঠেলে রসুল এগিয়ে গিয়ে ছোট্ট বাচ্চাটিকে দেখতে পেল। যদিও স্নেহলতাকে বার কয়েক দেখেছে তবু তার কাছে সব বাচ্চাদের একই রকম দেখতে লাগে।কিছুক্ষণ আগে দুর থেকে আনন্দমোহনের কোলে স্নেহলতাকে লাল পোষাকে দেখেছে। অতএব চিনতে ভুল হলো না। সেই লাল ছাপার প্রিন্টেড পোষাক। অতএব চেনা মাত্র রসুল এক ছুটে গিয়ে বাচ্চাটিকে কেড়ে নিতে গেল।

স্নেহলতা তখন বেশ ডাকসাইটে এক মহিলার কোলে রয়েছে । রসুলের এরকম আবেগমাখা আচরণে শুরু হয়ে গেল তর্কাতর্কি ,হাতাহাতি। কিছু ক্ষণ তর্কাতর্কি হাতাহাতির পর মহিলাটির সুযোগ মত দাবি করে বসল এ বাচ্চাটি তার। সাথের টোকাই শ্রেনির বাচ্চাগুলোকে সাক্ষী মানলে তারা সহজে তার পক্ষে রায় দিয়ে দিল।

কি আশ্চর্য!

কিন্তু রসুল তা মানবে কেন? সে অবুঝের মত কাড়াকাড়ি শুরু করল।এক সময় কাড়াকাড়ি বিশ্রী আকার ধারণ করলো। এদিকে স্নেহলতা চিৎকার দিয়ে কাঁদছে আর দুজনে সমানতালে গলা ফাটাচ্ছে।

মহিলাটির সাপোর্ট প্রায় সবাই। একে তো শিশু সংক্রান্ত বিষয়,তার উপর মহিলাটি এই এলাকারই।তার পক্ষে সবাই হবে এটাই স্বাভাবিক।
জনতার আদালত বড় আদালত। সে রায়কে উপেক্ষা করে কার এত সাহস। সবাই মহিলার পক্ষে রায় দিল। বাচ্চাটি যেভাবেই আসুক তার জিম্মাদার আপাতত মহিলাটি। বরং রসুলের দিকে সবার সন্দেহের তীর।

আর রসুলও তা মানবে কেন?

সে আবারও জোর করে বাচ্চা কেড়ে নিতে গেলে , কে যেন ছেলেধরা ছেলেধরা বলে চিৎকার করলো।মুহুর্তে ছেলেধরা কথাটি মুহুমুহু বাজতে লাগলো ভীড়ের মধ্যে থেকে।

রসুল আবারও জোর দিয়ে বলল,
- আমি ছেলেধরা না।

মহিলাটি দ্বিগুণ শক্তি ফিরে পেল যেন,দারুণ এক মোক্ষম অস্ত্র পাওয়া গেছে যেন।

- তুই ছেলেধরা না বুঝলাম, ভালো মাইনষের পো ,তো খা*কির বাচ্চা এইহানে কি করস? এইহানে মরবার আছস ক্যাঁ, চল ফোট।

- ফুটমু মানে? এই বাচ্চা আমার। আমারে ফিরাইয়া দে।

- তোর বাচ্চা প্রমান কি? তোর সাথে এই বাচ্চার সম্পর্ক কি ? তুই এর বাপ লাগোস? চেহারার মিল তো আকাশ পাতাল। যা হের মারে লইয়া আয় তখন দিমুনে ?

রসুল চুপ করে গেল বুঝলো কোথাও একটা ভুল হয়ে গেছে।

মহিলাটিও বুঝলো প্রতিপক্ষ বেকায়দায়, সে আবার শুরু করলো।
-তোরে তো দেখলেই চোর চোর লাগে। শালা চোর কোনহানকার, সোজা হাট নাইলে কইলাম কালুরে খবর দিমু। চিনস কালুরে,ওই চু* মা*নির পো চিনস? হের মাইর তো খাস নাই। এক থাবায় হাইগ্যা মুইত্যা দিবি। এই জাহাঙ্গীর, যা তে কালুরে ডাইক্কা লইয়া আয়। এই হালার পো হালারে সাইজ করন লাগবো। বহুত বাড় বাড়ছে। আমার এলাকায় রঙবাজি।

মেঘ না চাইতে জল আসার মত কালু উদয় হলো ঠিক সে সময়। সে হেড়ে গলায় জানতে চাইলো কি হইছে রে কমলা, কামের সুম এত গ্যাঞ্জাম কিসের? তোরা কি একটু চুপচাপ কাম করতে পারোস না।

- আরে কইয়ো না কালু ভাই। এই হালায় আইছে। কয় নাকি হেই বাচ্চা ওর। আরে বুইড়া হাবড়া শুইতে পারে না কয় নাকি এইটুকু বাচ্চার বাপ হইছে।

- বাচ্চা? বাচ্চা আইলো কোন হান তন?

-আরে আমার বইনের বাচ্চা। আমার কাছে থুইয়া কামে বাইর হইছে। আর এই শু*রের বাচ্চা কয় বাচ্চা নাকি হের! হুমকি ধামকি দেয়।

রসুল নিজেকে সামলিয়ে জোর দিয়ে বলে ওঠে,

- আরে আমার বাচ্চা না? আমি তো কইছি...

- এই না কইলি তোর বাচ্চা? কথা কয় রকম কস? কালুরে দেইখা বিচি শুকাইয়া গেছে গা। বান্দীর পো বান্দী ছুইলা ফালামু কইলাম। নখরামী মারোস? সত্যি কথা ক তুই ক্যাডা? কই তন আইছোস? খবরদার একটা মিথ্যা কথা কইছস তো খবর আছে। ক সত্যি কইরা বাচ্চা তর? একটু আগে না কইলি। কথা ঘুরাস? এবার সে কালুর দিকে ঘুরে বলল,
কালু ভাই দেখছো,ওর মতি গতি কিন্তু আমার মোটেও ভালা ঠেকতাছে না। ওই হালা ঠিক বাচ্চাচোর।

রসুল মাথা নাড়ে তার কিছু একটা ভুল হয়ে গেছে,

মাথা নাড়স ক্যা? কথা ক খা*কির পো।নাটক চু*স

রসুল শুধরাতে চায়,
- আমার বাচ্চা না তয়...

- তয় কার? কার কাছ তন চুরি কইরা আনছস? আরেকটা নাটক? শালা গল্প বানাস।

- আমি চুরি করুন ক্যান? আমি কি চোর? আমারে চোর মনে হয়?এডা কি কস? কথাবার্তা ভালো কইরা ক কইলাম।

- হ তুই চোর। চোর !চোর!! চোর!!!

-মুখ সামলাইয়া কথা ক কইলাম মাতারি।

- এ হালারে ধর তো হালার পো হালারে,চোরের মায়ের বড় গলা। আমারে কয় মাতারি,নে হাত লাগা পিটা হালারে... পিটা.. মার মার.. মার।

বেশ খানিকটা বাদে রসুল মারের কোপে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। কালু আর তার দল ময়লাখানার গভীরে রসুলের আধমরা দেহটাকে এই গনগনে দুপুর রোদে ছুড়ে ফেলে দিল। ততক্ষণে তার নাক মুখ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে...
চলবে

© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

১ম পর্ব

২য় পর্ব

৩য় পর্ব

৪র্থ পর্ব

৫ম পর্ব

৬ষ্ঠ পর্ব

৭ম পর্ব

৮ম পর্ব

৯ম পর্ব

১০ম পর্ব

১১তম পর্ব



আগের পর্বগুলো পড়তে লিঙ্কে ক্লিক করুন।








সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৬:৪৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×