somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - সমাধান - ৮

০৩ রা আগস্ট, ২০০৯ রাত ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব - ১ | পর্ব - ২ | পর্ব - ৩ | পর্ব - ৪ | পর্ব - ৫ | পর্ব - ৬ | পর্ব-৭
মানুষের মস্তিষ্ক এমন ভাবে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন যে, কষ্টের স্মৃতিগুলো সহজেই মানুষ ভুলে যায়। আবার খুব সহজেই কষ্টের স্মৃতিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। কিন্তু সুখময় স্মৃতিগুলোর রেশ অনেকদিন থেকে যায়। যতই দুঃখ-কষ্ট আসুক সুখময় স্মৃতিগুলোর রেশ কেঁটে যায় না।

সুখময় স্মৃতির রেশ ধরেই এখন আমি সেই বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সেদিন ছিল ঘুটঘুঁটে অন্ধকার কিন্তু আজ এসেছি দিনের বেলা। দিনের আলোয় চারিদিক আলোকিত। বাড়িটির দোতলার বারান্দায় এক বৃদ্ধা মহিলা বসে আছেনা। রোদের আঁচে তার চোখ মুখ কুঁচকে আছে। আজ এখানে আসার উদ্দেশ্য হল সেদিন ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে যার গান শুনেছিলাম তার সাথে পরিচিত হওয়া। একবার ভাবলাম ওই বৃদ্ধা মহিলাকে জিজ্ঞেস করব। আবার ভাবলাম না থাক জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। এমনিতে মানুষ বুড়ো হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, তার উপর আমার প্রশ্ন শুনে হয়তো আরো রেগে যাবে। তারচেয়ে বরং নিচে কাউকে জিজ্ঞেস করাই ভাল হবে। বাড়ির গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। আশেপাশে দাঁড়োয়ান শ্রেণীর কাউকে না উপরে যাওয়ার মনস্থির করলাম। সিঁড়িতে উঠতে গিয়ে দেখলাম এক ভদ্রলোক নিচে নামছেন। ভদ্রলোকের উচ্চতা প্রায় ছয় ফিটের কাছাকাছি। পরনের টি-শার্টের উপরদিয়ে ফুলে থাকা পেশী দেখে বোঝা যাচ্ছে ভদ্রলোক অত্যন্ত সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী। আমাকে দেখে বললেন -

"কোথায় যাচ্ছেন আপনি?"

ভদ্রলোকের কন্ঠস্বর শুনেই বোঝা যাচ্ছে ভদ্রলোক অত্যন্ত কতৃত্বপরায়ন। মানুষজনকে হুমকি-ধমকি আর আদেশ দিতে অভ্যস্ত। এটাও বোঝা যাচ্ছে ভদ্রলোক এই বাড়ির মালিক শ্রেণীর কেউ হবেন। এই ধরণের মানুষকে বশে আনতে হলে তার কতৃত্ব ক্ষর্ব করতে হয়। যাকে বলে পাল্টা এ্যাকশান। কিন্তু আমি পাল্টা এ্যাকশানে না গিয়ে অত্যন্ত মার্জিত স্বরে বললাম -

"এই বাড়িতে একজন গান করেন। আমি তার সাথে দেখা করতে এসেছি"

ভদ্রলোক তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। দেখে মনেহচ্ছে তিনি আমার অন্তরভেদ করে মনের কথা পড়ার চেষ্টা করছেন। কিছুক্ষন নিরবতার পর ভদ্রলোক বললেন -

"তার সাথে আপনার কি কাজ?"

"সেটা আমি তাকেই বলি?"

"আমি ওর চাচা। আপনি আমাকে বলতে পারেন"

এবার বুঝতে পারলাম ভদ্রলোককে আক্রমন করে কথা বলতে হবে। নয়তো ভদ্রলোক আমার উপর চেপে বসবেন। সেক্ষেত্রে আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। আমি কঠিন স্বরে বললাম -

"গানতো আপনি করেন না তাই না? যিনি করেন তার সাথে দেখা করব আমি এবং যা বলার তাকেই বলব"

ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম তিনি কিছুটা থতমত খেয়ে গেছেন। তার সাথে বোধহয় কেউ এভাবে কথা বলে না। পাশাপাশি ভদ্রলোকের চেহারায় অনিশ্চয়তার ভাব দেখা যাচ্ছে। বোধহয় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। আরো কিছুক্ষন নিরবতার পর ভদ্রলোক বললেন -

"আসুন আমার সাথে"

ভদ্রলোকের পিছু নিয়ে একটা ঘরে প্রবেশ করলাম। খুবই সাধারণ একটি ঘর। কোন জাঁকজমক কিছুই নেই। তবে ঘরটিতে এক ধরনের প্রশান্তির ভাব লক্ষ্য করলাম। ভদ্রলোক আমাকে বসতে বলে ভেতরে চলে গেলেন। আমি মনে মনে কিছুটা শংকিত হয়ে আছি। ভদ্রলোকের সাথে যেভাবে কথা বললাম এরপর যদি এখানে আসার যৌক্তিক কোন কারণ দেখাতে না পারি তাহলে কপালে খারাবি আছে। কিছুক্ষন পর ভদ্রলোক আসলেন তার পিছু নিয়ে আসলো একটি মেয়ে। আমি মেয়েটির দিকে ভাল করে তাকালাম। মেয়েটির গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। বেশ লম্বা-চওড়া। মেয়েটির চোখের দিকে তাকাতেই আমি কিছুটা কুঁকড়ে গেলাম। তার চোখ দু'টো জ্বল জ্বল করছে। আমার মনে হল সে বুঝি আমাকে খোলা বইয়ের মত পড়তে পারছে।

"আপনি কি আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছেন?" মেয়েটি বলল।

"গানি কি আপনি করেন?"

"জ্বী আমিই গান করি"

"আসলে সেদিন সন্ধ্যায় আপনাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আপনার গান শুনলাম। অন্ধকার থাকায় আপনাকে দেখতে পারিনি। আজ তাই আপনার সাথে পরিচিত হতে আসলাম"

কথাটি বলেই মেয়েটির চাচার দিকে তাকালাম। স্বস্তির সাথে লক্ষ্য করলাম ভদ্রলোক অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে বসে আছেন। মেয়েটি বলল -

"ওহ! এই ব্যাপার? আমিতো ভাবলাম কি না কি কাজে এসেছেন"

মেয়েটিকে তার গানের জন্য প্রশংসায় ভাসিয়ে দিয়ে তাদের বাড়ির চা ও বিস্কিট খেয়ে বিদায় নিলাম। মেয়েটির চাচাও আমার সাথে নিচে নামলেন। আমি খুবই শংকিত হয়ে আছি। এই বুঝি আমাকে ধরে ধোলাই দেয়। নিচে নামতেই দেখলাম একজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন। মেয়েটির চাচা তার এখানে আসার কারণ জানতে চাইলে লোকটি বলল ঘর ভাড়া দেয়া হইবে সাইনবোর্ড দেখে এসেছেন তিনি। মেয়েটির চাচা বললেন -

"ঘর ভাড়া হয়ে গেছে"

"ঘর ভাড়া হয়ে গেছে যখন তাহলে আর সাইনবোর্ড লাগিয়ে রেখেছেন কেন?"

এরপর যা ঘটল আমি কল্পনাও করিনি। মেয়েটির চাচা লোকটিকে ধাক্কা দিয়ে বললেন - "তোকে বলতে হবে? ......এর বাচ্চা তুই আমাকে চিনিস? আমার সাথে এভাবে কথা বললি কেন? তোকে আজকে পুলিশে দেব। বলব তুই বাড়িতে ডাকাতি করতে এসেছিস, এই রফিক (রফিক ওনাদের বাড়ির দাঁড়োয়ান) আমার ইনডেক্সটা আন। এখনই থানায় ফোন করব"।

ওই ভদ্রলোক পুরা অবাক হয়ে গেছে। তিনি বললেন - "আপনি এমন ব্যবহার করছেন কেন?"

কথা শেষ করতে যা দেরী মেয়েটির চাচা লোকটিকে মারধোর করা শুরু করলেন। সাথে অকথ্য ভাষায় গালি দিচ্ছেন। কেউ ওনাকে ধরে রাখতে পারছে না। মেয়েটির চাচা তার বিভিন্ন নামী দামী আত্নীয়ের নাম নিচ্ছেন আর লোকটিকে বলছেন "তুই জানিস আমি কে? পুলিশ কমিশনার আমার খালাতো ভাই। অমুক এম.পি আমার ফুফাতো ভাই" ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেক কষ্টে এলাকার লোকজন ভদ্রলোককে শান্ত করলেন। এতক্ষন আমি এক কোনায় দাঁড়িয়ে সব দেখছিলাম। খেয়াল হতেই দেখলাম মেয়েটিও উপর থেকে নিচে নেমে এসেছে। চাচাকে বকা ঝকা করছে। আমি বিদায় নেয়ার আগে বললাম -

"আচ্ছা আপনারতো অনেক নামী-দামী মানুষের সাথে পরিচয়। ইনফ্যাক্ট তারা আপনার আত্মীয় হয়। আপনার আত্মীয়ের মধ্যে কোন মানসিক রোগের ডাক্তার নেই?"

ভদ্রলোক বললেন - "কেন?"

"আপনার মানসিক চিকিৎসা দরকার" বলেই আর ওখানে দাঁড়ানোর ঝুঁকি নিলাম না। বলা যায়না এবার হয়তো আমার উপরে পরবে। বাড়ির গেট থেকে বের হয়েই হন হন করে হাঁটা দিলাম। হঠাৎ দেখলাও ওই বাড়ির দাঁড়োয়ান দৌড়ে আসলো। বলল -

"আফা কইছে আফনের মোবাইল নাম্বার দিতে"

আমি আমার মোবাইল নাম্বার একটি কাগজে লিখে দিলাম। বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটছি আর ভাবছি বড় বাঁচা বেঁচে গেছি আজকে। আরেকটু হলেই মেডিকেলের ইমর্জেন্সি ওয়ার্ডে ভর্তি হতে হত।

চলবে............
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×